10 Minute School
Log in

Labeo rohita-র শ্বসনতন্ত্র, বায়ুথলি বা পটকা, জীবন চক্র

Labeo rohita-র শ্বসনতন্ত্র

(Respiratory system of Labeo Rohita)

 

যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় কোষমধ্যস্থ খাদ্য জারিত হয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত করে এবং খাদ্যের স্থিতিশক্তিকে গতিশক্তিরূপে মুক্ত করে, সে প্রক্রিয়া শ্বসন (respiration) নামে পরিচিত।

Labeo একটি অস্থিময় মাছ। চারজোড়া ফুলকা (gill) এ মাছের শ্বসন অঙ্গ। এগুলো মাথার দুপাশে দুটি কানকে (opertculum)-তে আবদ্ধ ফুলকা-প্রকোষ্ঠ (branchial chamber)-এর ভিতর রক্ষিত এবং গলবিলের পার্শ্বপ্রাচীরে মেঝেয় অবস্থিত। কানকোর পশ্চাৎ কিনারা একটি পাতলা ব্রাঙ্কিওস্টেগাল ঝিল্পি (branchiostegal membrane) যুক্ত মাথার অঙ্কীয়দেশে সেঁটে থাকে। ঝিল্লিটি কতকগুলো অস্থিনির্মিত দণ্ড বহন করে। এটি কানকোকে দেহপৃষ্ঠে আটকে রেখে ফুলকা প্রকোষ্ঠ বাইরে থেকে বন্ধ রাখে, এভাবে “শ্বাস পানি” আবদ্ধ রেখে মাছকে শ্বসনে সাহায্য করে।

চিত্র : Labeo-র (ক) বামপাশের ফুলকা; (খ) ফুলকা-সূত্রের গঠন; (গ) একটি ফুলকা সূত্রের লম্বাচ্ছেদ

 

ফুলকার গঠন (Structure of Gill)

প্রত্যেকটি ফুলকা দেখতে সুতার মতো এবং একেকটি হোলোব্রাঙ্ক (পূর্ণফুলকা), কারণ প্রত্যেক ফুলকা দুটি সদ্যৃশ অর্ধাংশ নিয়ে গঠিত। প্রত্যেক অর্ধাংশকে বলে হেমিব্রাঙ্ক (অর্ধফুলকা)। প্রত্যেক হেমিব্রাঙ্ক একসারি করে ফুলকা সদ্যৃশ (gill filament) বা ফুলকা ল্যামেলা (gill lamella) বহন করে। এগুলো গোড়ায় যুক্ত, শীর্ষে মুক্ত। প্রতিটি সদ্যৃশ এপিথেলিয়ামে আবৃত অসংখ্য অনুপ্রস্থ প্লেট বহন করে। এপিথেলিয়াম রক্ত-জালিকা সমৃদ্ধ। প্রত্যেক ফুলকা একেকটি অস্থিময় ফুলকা আর্চ (gill arch)-এ অবলম্বিত। এভাবে প্রত্যেকে আর্চে দুটি ফুলকা-সারি যুক্ত থাকে। আর্চের অন্তঃকিনারা প্রসারিত হয়ে কাঁটাযুক্ত পাতলা ফুলকা রেকার (gill raker) গঠন করে।

 

শ্বসন কৌশল (Mechanism of Respiration)

রুই মাছে দুই ধাপে শ্বাসক্রিয়া ঘাটে শ্বাসগ্রহণ ও শ্বাসত্যাগ। এক্ষেত্রে ফুলকা প্রকোষ্ঠ চোষণ পাম্প (suction pump) হিসেবে কাজ করে।

 

১. শ্বাসগ্রহণ বা প্রশ্বাস (Inspiration) : কানকোদুটি যখন উত্তোলিত হয় তখন ফুলকা প্রকোষ্ঠের মুখ ব্রাঙ্কিওস্টেগাল ঝিল্লি দিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এতে গলবিলে একটি চোষণ-বলের সৃষ্টি হয়। ফলে মুখছিদ্র রক্ষাকারী মৌখিক কপাটিকা খুলে যায় এবং পানি মুখের ভিতর দিয়ে মুখগহহ্বরে প্রবেশ করে।

২. শ্বাসত্যাণ বা নিঃশ্বাস (Expiration) : কানকো যখন পেশি-সংকোচনের ফলে নেমে আসে তখন গলবিল ও মুখগহবরে চাপ বেড়ে যায়। সাথে সাথেই মৌখিক কপাটিকা মুখছিদ্রকে বন্ধ করে দেয় এবং ফুলকা প্রকোষ্ঠের ছিদ্র উন্মুক্ত হয়। পানি তখন এ ছিদ্রপথেই বেরিয়ে যায়। মুখ ও গলবিলের ভিতর দিয়ে অতিক্রমের সময় স্রোতপ্রবাহ নিচে অবস্থিত ফুলকাগুলোকে ভিজিয়ে দেয়।

চিত্র : Labeo-র শ্বসন কৌশল : (ক) প্রশ্বাস; (খ) নিঃশ্বাস; তীরচিহ্ন পানির গতি নির্দেশক

 

শ্বসনের শারীরতত্ত্ব (Physiology of respiration)

অন্তর্বাহী ফুলকা ধমনি \mathrm{C}_{2}-সমৃদ্ধ রক্ত বয়ে এনে ফুলকা সূত্রকের কৈশিক জালকে ছেড়ে দেয়। এসময় শ্বাস গ্রহণকালে নেয়া \mathrm{O}_{2} সমৃদ্ধ পানি ফুলকা সূত্রকের উপর দিয়ে বয়ে গেলে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে। রক্ত শানিতে \mathrm{C}_{2}, ত্যাগ করে ও পানি থেকে \mathrm{O}_{2} গ্রহণ করে। \mathrm{O}_{2}-সমৃদ্ধ রক্ত তখন বহিঃফুলকা ধমনির সাহায্যে গৃহীত হয় এবং সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ে।

 

বায়ুথলি বা পটকা (Air bladder/Swim bladder)

Labeo-র মেরুদণ্ডের নিচে এবং পৌষ্টিকনালির উপরে অবস্থিত পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট থলির নাম বায়ুথলি বা পটকাএটি দেখতে চকচকে সাদা থলির মতো এবং বিভিন্ন ধরনের গ্যাসে (অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড) পূর্ণ থাকে। বায়ুথলিটি সম্মুখস্থ ছোট ও পেছনের বড় প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। দুটি প্রকোষ্ঠের মাঝখানে একটি খাঁজ রয়েছে। সম্মুখ প্রকোষ্ঠ একটি সরু নল দিয়ে অন্ননালির সাথে যুক্ত থাকে। এ নলের নাম নিউম্যাটিক নালি (pneumatic duct) এটি অন্তঃকর্ণের ওয়েবেরিয়ান অসিকল (weberian ossicle)-এর সাথে যুক্ত থাকে। বায়ুথলির বাইরের দিক ঘনসন্নিবিষ্ট রক্তজালক সমৃদ্ধ।

এর প্রাচীর দুটি স্তর নিয়ে গঠিত। বাইরে যোজক টিস্যু দিয়ে গঠিত স্তরটি টিউনিকা এক্সটার্না (tunica extema) এবং ভিতরে মসৃণ পেশি নির্মিত স্তর টিউনিকা ইন্টারনা (runica interna)বায়ুথলির অস্তঃপ্রাচীরের এপিথেলিয়াম সংলগ্ন একটি লাল রঙের গ্যাস গ্রন্থি থাকে। এ গ্রন্থিতে ঘনসন্নিবিষ্ট অসংখ্য কৈশিকনালি থাকে যা রেটিয়া মিরাবিলিয়া (retia mirabilia) নামে পরিচিত। সামনের প্রকোষ্ঠের এ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত গ্যাসে বায়ুঘলি পূর্ণ হয়। কিন্তু পিছনের প্রকোষ্ঠে অবস্থিত এ গ্রন্থি গ্যাস শোষণ করে।

 

বায়ুথলির কাজ

১. বায়ুগুলি প্রাবতা রক্ষাকারী অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।

২. বায়ুথলির প্রাচীরে অবস্থিত কৈশিকনালি থেকে বায়ুথলিতে অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ করে অথবা বায়ুথলি থেকে রক্তে গ্যাস শোষণ করে মাছ তার আপেক্ষিক গুরুত্ব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

৩. বায়ুগুলি মাছের আপেক্ষিক গুরুত্ব নিয়ন্ত্রণ করে পানির নিচে বিভিন্ন গভীরতায় মাছকে স্থির থাকতে সাহায্য করে।

৪. মাছ বায়ুথলির মাধ্যমে শব্দ গ্রহণ করতে পারে। বায়ুথলির সাথে ওয়েবেরিয়ান অসিকল (Weberian assicles)- এর মাধ্যমে অন্তঃকর্ণের সংযোগ থাকে। শব্দ তরঙ্গ বায়ুথলি থেকে ওয়েবেরিয়ান অসিকলের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে প্রবেশ করে।

৫. অনেক মাছের বায়ুথলি শব্দ উৎপাদনে সক্ষম।

৬. অক্সিজেনের ভান্ডার হিসেবে বায়ুথলি ব্যবহৃত হয়।

 

রুই মাছের প্রজনন ও জীবনবৃত্তাপ্ত (Reproduction and Life-history)

প্রজনন তন্ত্র (Reproductive system) : জনন ঋতুতে জনন অঙ্গ বা গোনাড (gonad) পূর্ণ বিকশিত হয়। পুরুষ মাছে একজোড়া লম্বা শুক্রাশয় (testis) ও স্ত্রী মাছে একজোড়া লম্বা ডিম্বাশয় (ovary) পটকার নিচে উদরীয় গহ্বরের পিছনে শায়িত। শুক্রাশয় পেরিটোনিয়ামের ভাঁজ মেসোৱকিয়াম (mesorchium) পর্দা দিয়ে দেহপ্রাচীরে ঝুলানো থাকে। ডিম্বাশয় পেরিটোনিয়ামের ভাঁজ মেসোভেরিয়াম (mesovarium) দিয়ে দেহপ্রাচীরে ঝুলানো থাকে। প্রত্যেক শুক্রাশয় থেকে একটি করে শুক্রনালি সৃষ্টি হয়। দুটি শুক্রাশয়ের দুটি শুক্রনালি পেছন দিকে এক হয়ে রেচনজনন রন্ধ্র পথে বাইরে মুক্ত। স্ত্রী মাছ ডিম্বাশয় জোড়া আকারে বড় ডিম্বনালিহীন। পরিপক্ক ডিম্বাশয় থেকে জনন ঋতুতে ডিম দেহগহ্বরে মুক্ত হয়। এখান থেকে ডিম রেচন-জনন সাইনাসের প্রাচীর থেকে অস্থায়ী এজাড়া জনন রন্ধ্র (genita apernure)- পথে দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়। রুই মাছের ডিম প্রচুর কুসুম (yolk) সমৃদ্ধ।

প্রজনন (Reproductive) : রুই মাছ সাধারণত দুবছর বয়সে জননক্ষম হয়ে ওঠে। জনন ঘটে স্রোতযুক্ত নদীর পানিতে, বন্ধ পানিতে নয়। বাংলাদেশে আগে ৩ বছর বয়সে জননক্ষম হতো। কিন্তু অন্তঃপ্রজননের (incoding) কারণে এখন রুই মাছে এক বছর বয়সেই জনন ঘটে। জুন-জুলাই মাসের দিকে এরা প্রজননের জন্য তৈরি হয়। সাধরণত স্ত্রী মাছ ৫১-৭০ সেমি এবং পুরুষ মাছ ৬৫ সেমি লম্বা হলে প্রজননের জন্য তৈরি হয়। এ মাছ প্রতি কেজি দেহ ওজনের জন্য এক লক্ষ থেকে চার লক্ষ ডিম উৎপাদন করে থাকে।

 

চিত্র : Labeo-র রেচন-জনন তন্ত্র (বায়ে-পুরুস ও ডানে-স্ত্রী)

 

নিষেক (Fertilization) : নদীর পানি যখন ফুলে ওঠে তখন রুই মাছ নদীর অগভীর অংশে প্রবল বর্ষণের মধ্যে ঝাঁক বেঁধে ডিম ছাড়তে উদ্বুদ্ধ হয়। প্রজননের সময় নদীর পানির তাপমাত্রা থাকে ২৭৩০^{\circ} সেলসিয়াসের মধ্যে। এসময় পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে এবং পানি ঘোলা থাকে। স্ত্রী মাছ প্রথমে পানিতে ডিম (egg) ছাড়লে পুরুষ মাছ তার উপর বীর্য (sperm) ছড়িয়ে দেয়। রুই মাছের নিয়ে দেহের বাইরে নদীর পানিতে সম্পন্ন হয় বলে একে বহিঃনিষেক (extermal fertilization) বলে। নিষিক্ত ডিমকে জাইগোট বলে।

 

রুই মাছের জীবন চক্র (Life cycle of Labeo Rohita)

জাইগোট সৃষ্টির ৩০-৪৫ মিনিট পরই ক্লিভেজ শুরু হয়। ক্লিভেজ মেরোব্লাস্টিক ধরনের। কোনো প্রাণীর ডিমে যখন ভেজিটাল পোলে (মেরুতে) বেশি পরিমাণে কুসুম থাকায় সম্পূর্ণ ডিমটি ক্লিভেজ প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হতে পারেনা তখন নিষিক নিউক্লিয়াসটি কুসুমের পৃষ্ঠতলে একটি ক্ষুদ্র অংশে আশ্রয় নিয়ে ক্লিভেজের প্রস্তুতি নেয়। অংশটি ক্রমশ একটি ছোট ঢিবির মতো দেখায়। এ অংশের ভিতর ক্লিভেজ ঘটে। এ ধরনের ক্লিভেজকে মেরোব্লাস্টিক ক্লিভেজ (meroblastit cleavage) বলে।

ক্লিভেজ শুরু হওয়ার পর নিউক্লিয়াসটি ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২ এমন সংখ্যক কোষে বিভক্ত হতে থাকে। ক্লিভেজের ফলে সৃষ্ট প্রতিটি কোষকে ব্লাস্টোমিয়ার (blastomere) বলে। ভ্রূণটি এসময় এক থোকা আঙ্গুরের মতো দেখায়। এর নাম মরুলা (morula)। ভ্রূণের পরিস্ফুটনের ক্ষেত্রে মরুলা ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বেশি ঝাঁকুনিতে ভ্রূণ কুসুম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে। ব্র্যাস্ট্রোমিয়ারগুলো আরও বিভক্ত ও সুশৃঙ্খল হয়ে ব্লাস্টোডার্ম (blastoderm) নামক এককোষীয় স্তরে বিন্যস্ত হয়। ক্লিভেজ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাস্টোমিয়ারগুলোর মাঝে একটি ফাঁপা জায়গা সৃষ্টি হয়ে বৃদ্ধি পায়। এ ফাঁপা স্থানটি হচ্ছে ব্লাস্টোসিল (blastocoel)। অগটিকে তখন ব্লাস্টুলা (blastula) বলে।

রাস্টোডার্মের কোষগুলো প্রথম দিকে কুসুমের উপর টুপির মতো বিন্যস্ত থাকে। কোষ বিভাজন অব্যাহত থাকায় কোষগুলো কুসুমকে ঘিরে প্রসারিত হয় এবং এক পর্যায়ে ব্লাস্টোপোর (blastopore) নামক একটি ছিদ্রপথ ছাড়া সমগ্র আবৃত হয়ে পড়ে। পরে অবশ্য ব্লাস্টোপোরও বন্ধ হয়ে যায়। ব্লাস্টুলা ধীরে ধীরে দ্বিস্তরী গ্যাস্ট্রুলা (gastrula)য় পরিবর্তিত হয়।

গ্যাস্ট্রুলার পিছন দিক থেকে লেজ ও সামনের দিক থেকে বিভিন্ন অঙ্গের সূচনা হয়। যে প্রক্রিয়ায় গ্যাস্ট্রুলা থেকে বিভিন্ন অঙ্গ তৈরি হয় তার নাম অর্গানোজেনেসিস (organogenesis)ভূণের মধ্যে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয় এবং ১৫-১৮ ঘন্টার মধ্যে ডিমের ভিতর থেকে লার্ভা (larva) বেরিয়ে আসে। এ লার্ভাকে ডিমপোনা বা রেণুপোনা বলে । এমন অবস্থায় পোনা কোন খাদ্য গ্রহণ করে না এবং কুসুম থেকে পুষ্টি নেই। লার্ভা দশার পরিবর্তনগুলো নিম্নরূপ

  • ৬ ঘন্টা পর লার্ভা মাঝে মধ্যে উপরে-নিচে নড়া-চড়া করে। কুসুমের দুই প্রাস্ত তখন সরু হয় এবং লার্ভার হৃৎপিন্ডের কুসুম থলির সামনে অবস্থান নেয়। তখন কুসুম থলি বেশ বড় থাকে। এ অবস্থায় লার্ভা পানির তলদেশে বেশ সময় কাটায় এবং কুসুম থলি থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে।
  • ১২ ঘন্টা পর লার্ভার চোখের রঙ কালো হতে থাকে। ক্রোমাটোফোর উৎপন্ন হওয়ায় এমন হয়। এসময় কুসুম থলি সরু লম্বা হয়।
  • ২৪ ঘন্টা পর কুসুম থলির পিঠে কালো দাগ দেখা দিতে শুরু করে। লাভায় ফুলকা আর্চ দৃশ্যমান হয়। চোখ মাথার উপরে অবস্থান নেয় এবং নটোকর্ড পিছন দিকে (লেজের দিকে) ঊর্ধ্বমুখী হয়। তখন লেজ ও পায়ু-পাখনা স্পষ্ট দেখা যায়। এ সময় লার্ভা স্বচ্ছ থাকে, তবে ফ্যাকাশে হলদে রঙেরও হতে পারে।
  • ৩৬ ঘন্টা পর লার্ভায় বক্ষ-পাখনা ও নিচের ঠোঁট স্পষ্ট দেখা যায়। পৃষ্ঠ-পাখনায় কিছু কালো দাগ এবং পুচ্ছ-পাখনায় পুচ্ছ দণ্ড দেখা দেয়।
  • ৪৮ ঘণ্টা পর লার্তা কিছুটা লম্বা হয়ে ৬.০-৬.৪ মি.মি. হয়। এ সময় কুসুম থলি সামনের দিকে সামান্য উত্তল হয় এবং বায়ু থলি দেখা দেয়। লার্ভার মাথায় ক্রোমাটোফোর উৎপন্ন হতে থাকে, তাই মাথা কালো রঙ ধারণ করে। তখন ফুলকা আর্চ স্পষ্ট এবং দেহ ফ্যাকাশে হলদে রঙে পরিবর্তিত হয়।
  • ৭২ ঘন্টা পর লার্ভার বায়ু থলি ডিম্বাকার ধারণ করে এবং বক্ষীয় পাখনা স্পষ্ট হতে শুরু করে। পিঠের দু’পাশ উজ্জ্বল হলুদ রঙ ধারণ করে, কুসুম থলি বিলীন হয়ে যায় এবং লার্ভা দশার সমাপ্তি ঘটে। তাপমাত্রার কারণে এ সময়ের কম-বেশি হতে পারে।
  • ৯৬ ঘন্টা পর লার্ভার মুখ স্পষ্ট হয়ে খাদ্য গ্রহণ শুরু করে। কুসুম থলি প্রায় মিলিয়ে যায় এবং এটি ধানীপোনা বা আঙ্গুলিপোনা হিসেবে পরিচিত হয়।

 

  

 

                                   চিত্র : জীবনচক্রের রেখাচিত্র

  • ৫ দিন বয়সের পোনা ৮.০-৮.৫ মি.মি. লম্বা হয়। এ সময় লেজের কাছে লাল দাগ দেখা যায়, যা দেখে একে রুই মাছের পোনা বলে শনাক্ত করা যায়। কানকোর রেখা সুস্পষ্ট গঠিত হয়। নটোকর্ডের শেষ প্রান্ত কিছুটা বেঁকে যায় এবং পাখনাগুলোতে রশ্মি আরও স্পষ্ট হয়। 
  • ১০ দিন বয়সে পোনার দৈর্ঘ্য হয় ১৫-১৮ মি.মি.। সবগুলো পাখনায় পূর্ণাঙ্গ সংখ্যক পাখনা-রশ্মি বিকশি হয়। নাসারন্ধ্র দেখা যায় এবং অন্তঃস্থ বিভাজন স্পষ্ট হয়।
  • ১৫ দিন বয়সের পোনার দৈর্ঘ্য হয় ২৩ মি.মি.। তখন মুখের দুপাশে একটি করে বার্বেল (barbel) দেখা দেয়, পায়ুর অবস্থান ও খাদ্যনালি স্পষ্ট হয়। এ অবস্থায় আঁইশ দৃশ্যমান না হলেও পোনার দৈহিক গড়ন মোটামুটি সম্পূর্ণ হয়। 
  • এর পর মাছটির কেবল আঙ্গিক পরিবর্তন ও আকারের পরিবর্ধন ঘটে। স্ত্রীমাছ আকারে পুরুষ অপেক্ষা বড় হয়। পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী ও পুরুষ মাছ যৌন পরিপক্কতা লাভ করে ও প্রজননে সক্ষম হয়।

চিত্র : রুই মাছের জীবন চক্রের ধাপসমূহ