10 Minute School
Log in

টিস্যুতন্ত্র (Tissue system)

টিস্যুতন্ত্র (Tissue system)

টিস্যুতন্ত্র :

একই ধরনের শারীরবৃত্তীয় বা যান্ত্রিক কাজে নিয়োজিত এক বা টিস্যু। বিজ্ঞানী স্যাকস এর মতে, অবস্থান ও কার্যের উপর ভিত্তি করে সব টিস্যুকে ৩টি টিস্যুতন্ত্রে ভাগ করা যায়।  

 

টিস্যুতন্ত্র

এপিডার্মাল বা ত্বকীয় টিস্যুতন্ত্র (Epidermal tissue system) : যে টিস্যুতন্ত্র উদ্ভিদ অঙ্গের বহিরাবরণ (ত্বক) তৈরি করে তাকে এপিডার্মাল বা ত্বকীয় টিস্যুতন্ত্র বলে। 

অংশ বর্ণনা/বিভিন্ন অংশ কাজ
১। এপিডার্মিস বা 

ত্বক

উদ্ভিদের বাইরের স্তরকে এপিডার্মিস বা ত্বক বলে। এটি সাধারনত একসারি প্যারেনকাইমা কোষ দ্বারা গঠিত। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে একাধিক সারি কোষে গঠিত হতে পারে, যেমন :- বট, অশত্থ, পাকুর ইত্যাদি গাছের পাতায়। করবী গাছের পাতায় তিনসারি কোষের ত্বক দেখা যায়। এপিডার্মিসের কোষগুলো আয়তাকার ও অতি ঘনভাবে সন্নিবেশিত। তাই, এদের মাঝে আন্তঃকোষ মানে আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকে না, তবে স্টোম্যাটা বা লেন্টিসেল থাকতে পারে। প্রতিটি কোষে অল্প পরিমাণ সাইটোপ্লাজম, একটি নিউক্লিয়াস, একটি কোষগহ্বর বিদ্যমান থাকে। সাধারণত রক্ষী কোষ (guard cell) ব্যতীত অন্য কোনো কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে না। কোনো কোনো জলজ উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যেতে পারে। এপিডার্মাল কোষে পাশের ও ভেতরের দিকের প্রাচীর পাতলা, কিন্তু বাইরের দিকের প্রাচীরে সুবেরিন ও কিউটিন জমা হওয়ায় পুরু হয়। কিউটিন বা সুবেরিনের (মোমের আস্তরণ) পুরু স্তরকে কিউটিকল বলে। কিউটিকল মূলের ত্বকে অনুপস্থিত কিন্তু কাণ্ড ও পাতায় বিদ্যমান থাকে। Cycas, Pinus ও ঘাস জাতীয় কিছু উদ্ভিদের পাতায় লিগনিন জমা হতে দেখা যায়। ফুলের পাপড়ি ও ফলত্বকে অ্যান্থোসায়ানিন নামক রঞ্জক থাকে। কোনো কোনো গাছের পত্ৰতুকে মিউসিলেজ জমা হয়। সরিষা গোত্রীয় উদ্ভিদের পত্রত্বকে মাইরোসিন এনজাইম নিঃসরণকারী মাইরোসিন কোষ থাকে। কিছু ঘাস ও নলখাগড়া কাণ্ডের ত্বকীয় কোষে কর্ক ও সিলিকা কোষ থাকতে পারে। গম, ভুট্টা, আখ ইত্যাদি গাছের পাতার ত্বকে বুলিফর্ম (bulliform) কোষ থাকে। বুলিফর্ম কোষ হলো বৃহদাকৃতির কিছু ত্বকীয় কোষ। এপিডার্মিসের কোষ হতে রোম বা ট্রাইকোম নামক বিভিন্ন প্রকার উপাঙ্গ উদ্গত হয়। মূলের বাইরের ত্বককে এপিব্লেমা বলে। এপিব্লেমার কোনো কোনো কোষ হতে এককোষী রোম উৎপন্ন হয়। এদেরকে মূলরোম বলে।
  1. এপিডার্মিস বা ত্বক উদ্ভিদকে, বিশেষ করে উদ্ভিদের অভ্যন্তরীণ টিস্যুকে বাইরের আঘাত থেকে ও অন্যান্য প্রতিকূল অবস্থা হতে রক্ষা করে। 
  2. রোমযুক্ত ত্বক, বিশেষ করে বিষাক্ত গ্রন্থিওয়ালা রোমযুক্ত ত্বক বিভিন্ন প্রাণীর আক্রমণ হতে উদ্ভিদকে রক্ষা করে থাকে। 
  3. অনেক সময় ত্বক উদ্ভিদ কর্তৃক পানির অপচয়ও বন্ধ করে থাকে। 
  4. মোমের আস্তরণ পড়া ত্বক ছত্রাকের আক্রমণ হতে অভ্যন্তরীণ টিস্যুকে রক্ষা করতে পারে। 
  5. ত্বক-এর ছিদ্র (স্টোম্যাটা = পত্ররন্ধ্র) দিয়ে উদ্ভিদ অভ্যন্তর ও বাইরের পরিবেশের মধ্যে বিভিন্ন গ্যাসের আদান-প্রদান করে থাকে। 

(vi) ক্লোরোপ্লাস্ট যুক্ত ত্বক  খাদ্য তৈরি করে। 

(vii) মূলরোম পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করে। 

(viii) বুলিফর্ম কোষ পানি সঞ্চয় করে এবং পাতায় প্রসারণ ও বিকাশে সহায়তা করে। 

(ix) ত্বককোষ প্রয়োজনে বিভাজিত হতে পারে এবং ক্ষত সারিয়ে তোলে।

২। এপিডার্মিসের উপাঙ্গসমূহ এপিডার্মিস বা ত্বক হতে উদগত উপাঙ্গকে এপিডার্মাল উপাঙ্গ বলে। এগুলো উদ্ভিদকে তৃণভোজী প্রাণীর কবল হতে রক্ষা করে। নিম্নে কয়েকটি উপাঙ্গের বর্ণনা দেয়া হলো :-

(i) রোম বা ট্রাইকোম (Hair or trichome) :  এরা এককোষী বা বহুকোষী এবং সরল বা গুচ্ছাকার হতে পারে। মূলরোম ত্বকের এককোষী উপাঙ্গ এবং সবক্ষেত্রে কিউটিকল বিবর্জিত। কাণ্ডরোম সাধারণত বহুকোষী এবং সর্বদা কিউটিকলযুক্ত হয়ে থাকে। যেসব উদ্ভিদে বা অঙ্গে সেকেন্ডারি বৃদ্ধি ঘটে সে সব উদ্ভিদে বা অঙ্গে পেরিডার্মও ত্বকীয় টিস্যুর অন্তর্ভুক্ত ধরা হয়।

(ii) শল্ক (Scales) : পাতলা ঝিল্লি সদৃশ বিশেষ ধরনের রোমকে শল্ক বলে। এরা প্রস্বেদনের হার কমায়।

(iii) গ্রন্থিরোম বা কোলেটার্স (Grandular hairs or Colleters) : বিশেষ ধরনের বহুকোষী ট্রাইকোমকে কোলেটার্স বলে। কোলেটার্স এক ধরনের চকচকে আঁঠালো পদার্থে পূর্ণ থাকে।

(iv) থলি (Bladder) : বিশেষ ধরনের এক প্রকার পানি ধারক এবং প্রশস্ত ট্রাইকোমকে থলি বলে বরফ উদ্ভিদ নামে পরিচিত Mesembrayanthemum crystallinum-এর ত্বককোষ স্ফীত থলির আকার ধারণ করে। শীতকালে এ পানি বরফে পরিণত হয়। 

(i) রোম পানি শোষন করে

কান্ডরোম আঠা, গদ ও বিষাক্ত পদার্থ নিঃস্ত করে।

বাহিরের আঘাত থেকে রক্ষা করে

পানি সঞ্চয় করে।

(ii) প্রস্বেদন হার কমায়।

(iii) গ্রন্থিরোম আঠালো পদার্থ পূর্ণ

(iv) থলিপানি ধারক

৩। স্টোমাটা বা 

পত্ররন্ধ্র

পাতা ও কচি কাণ্ডের ত্বক ছিদ্রযুক্ত থাকে। ছিদ্রগুলো আণুবীক্ষণিক বলে খালি চোখে ধরা পড়ে না। এ সব ছিদ্র দুটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির রক্ষীকোষ দিয়ে বেষ্টিত থাকে। রক্ষীকোষে একটি বড় নিউক্লিয়াস, বহু ক্লোরোপ্লাস্ট এবং ঘন সাইটোপ্লাজম থাকে। উদ্ভিদের বায়বীয় অংশের ত্বকে অবস্থিত দুটি রক্ষীকোষ দিয়ে বেষ্টিত ও নিয়ন্ত্রিত বিশেষ ছিদ্রকে স্টোম্যাটা (এক বচনে স্টোমা) বা পত্ররন্ধ্র বলে। রক্ষীকোষের চারদিকে অবস্থিত সাধারণ ত্বকীয় কোষ হতে একটু ভিন্ন আকার-আকৃতির ত্বকীয় কোষকে সহকারি কোষ বলে। স্টোম্যাটার নিচে একটি বড় বায়ুকুঠুরী থাকে। এ বায়ুকুঠুরীকে সাব-স্টোম্যাটাল বায়ুকুঠুরী বা শ্বাসকুঠুরী (substormatal air chamber or respiratory cavity) বলা হয় । পত্ররন্ধ্র খোলা ও বন্ধকরণ রক্ষীকোষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। সাধারণত দিনের বেলায় পত্ররন্ধ্র খোলা থাকে এবং রাত্রে বন্ধ থাকে, তবে পাথরকুচি গোত্রের উদ্ভিদে রাত্রে পত্ররন্ধ্র খোলা থাকে এবং দিনে বন্ধ থাকে।
  1. উদ্ভিদের ভেতর ও বাইরের পরিবেশের মধ্যে গ্যাসের আদান-প্রদান করাই এর কাজ। 
  2. সালোকসংশ্লেষণের সময় রন্ধ্রপথে বায়ু হতে CO2গ্যাস গ্রহণ ও O2 গ্যাস ত্যাগ করে। 
  3. শ্বসনের সময় রন্ধ্রপথে বায়ু হতে O2 গ্যাস গ্রহণ ও CO2 গ্যাস ত্যাগ করে।
  4. মূল কর্তৃক সংগৃহীত পানি প্রস্বেদনের সাহায্যে বাম্পাকারে বের করে দেয়াই এ রন্ধ্রের প্রধান কাজ। 
  5. রক্ষীকোষ পত্ররন্ধ্রের খোলা ও বন্ধ হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। (vi) রক্ষীকোষের ক্লোরোপ্লাস্ট খাদ্য তৈরি করে।
৪। পানি-পত্ররন্ধ্র 

বা হাইডাথোড

পানি-পত্ররন্ধ এক বিশেষ ধরনের পানি নির্মোচন অঙ্গ। ঘাস, কচু, টমেটো ইত্যাদি গাছের পাতার কিনারায় প্রচণ্ড গরমের দিনে পানির ফোটার সারি দেখে এ অঙ্গের অবস্থান জানা যায়। মাটিতে প্রচুর পানি থাকলে এবং আবহাওয়া অতিরিক্ত আর্দ্র থাকলে সাধারণত এমনটি ঘটে। বিশেষ পরিস্থিতিতে উদ্ভিদ দেহ থেকে পানি এই রন্ধ্রের মাধ্যমে পরিত্যক্ত হয় বলে এই রন্ধ্রপথকে পানি-পত্ররন্ধ বলে। অন্যভাবে, পানির বহিঃক্ষরণকারী ছিদ্রপথই হলো হাইডাথোড বা পানি-পত্ররন্ধ্র। এর শীর্ষে রক্ষীকোষে আবদ্ধ একটি রন্ধ্র থাকে। রন্ধ্রের নিচে একটি গহ্বর থাকে। গহ্বরের নিচে অনেকগুলো অসংলগ্ন কোষ থাকে, এগুলোকে বলা হয় এপিথেম বা এপিথেলিয়াম (epithelium)। এপিথেলিয়ামের ঠিক নিচে ট্রাকিডের শেষপ্রান্ত অবস্থিত। মূলজ চাপে পানি ট্রাকিডের শেষপ্রান্ত দিয়ে এপিথেলিয়ামের মাধ্যমে। বিন্দু আকারে রন্ধ্রপথে জমা হয়। ভোরে এসব জল বিন্দু দেখা যায়। অন্য সময় পানি দ্রুত বাম্পায়িত হয় এবং সালোকসংশ্লেষণে ব্যবহৃত হয় বলে তা দেখা যায় না। হাইডাথোড দিয়ে তরল পানি বের হয়ে যাওয়াকে গাটেশন বলে। বিশেষ পরিস্থিতিতে উদ্ভিদ দেহ থেকে পানি নির্মোচন করে।