10 Minute School
Log in

পুষ্টি উপাদানে শক্তি ও বিএমআর এবং বিএমআই নির্ণয় (Energy In Nutrients And Calculating BMI & BMR)

খাদ্যের শক্তি ও বিএমআর এবং বিএমআই (Energy in nutrients And BMI & BMR)

পুষ্টি উপাদানে শক্তি (Energy in nutrients)

খাদ্যের শক্তিমূল্য প্রকাশের ক্ষেত্রে খাদ্য ক্যালরি কিংবা কিলোক্যালরির পরিবর্তে কিলোজুল একক ব্যবহার করা উচিত।

এক্ষেত্রে 1 খাদ্য ক্যালরি (calorie)= 1 কিলোক্যালরি (Kilo Calorie)= 4.2 কিলোজুল (Kilo Joule)(প্রায়)।

পুষ্টি উপাদানের তাপশক্তি নির্ণয় (Determining the thermal energy of nutrients)

ক্যালরি নির্ণয়: খাদ্যের পুষ্টি উপাদান ও তার পরিমাণ জানার পর শর্করা, প্রোটিন ও চর্বির ক্যালরি বের করতে হয়। এক্ষেত্রে ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানির ক্যালরি মান শূন্য ধরে হিসাব করতে হবে।

খাদ্য উপাদানে খাদ্য ক্যালরির পরিমাণ

উপাদান (1 গ্রাম)

খাদ্য ক্যালরি (Calorie)

শর্করা4
আমিষ4
চর্বি9

20 গ্রাম চিড়ায় 15.4 গ্রাম শর্করা (77%), 1.32 গ্রাম প্রোটিন (6.6%) এবং 0.24 গ্রাম স্নেহ (1.2%) আছে, 1 কেজি চিড়াতে খাদ্যশক্তির পরিমাণ কত?

উত্তর: খাদ্য উপাদানে খাদ্য ক্যালরির ছক ব্যবহার করে:

15.4 গ্রাম শর্করা থেকে 15.4 × 4 = 61.60 খাদ্য ক্যালরি (Calorie)

1.32 গ্রাম প্রোটিন থেকে 1.32 × 4= 5.28 খাদ্য ক্যালরি (Calorie)

0.24 গ্রাম স্নেহ থেকে 0.24 × 9 = 2.16 খাদ্য ক্যালরি (Calorie)

অতএব, 20 গ্রাম চিড়ায় মোট = 69.04 খাদ্য ক্যালরি (Calorie) কিংবা 69.04 কিলোক্যালরি (Kilo Calorie)

এ হিসাবে, 1 কেজি চিড়ার খাদ্য ক্যালরি  (Calorie)= 1000 × (69.04/20) = 3452 কিলোক্যালরি (Kilo Calorie)

যেহেতু 1 কিলোক্যালরি = 4.2 কিলোজুল (Kilo Joule)

অতএব, 3452 কিলোক্যালরি = 14,490 কিলোজুল (Kilo Joule) (প্রায়)

বিএমআর (BMR) এবং বিএমআই (BMI) (BMR and BMI)

বিএমআর (Basal Metabolic Rate) পূর্ণ বিশ্রামরত অবস্থায় মানবশরীরে ব্যবহৃত শক্তির পরিমাণ নির্দেশ করে।

বিএমআই (Body Mass Index) মানবদেহের গড়ন ও চর্বির একটি সূচক নির্দেশ করে।

বিএমআর মান নির্ণয় (Calculating BMR)

মেয়েদের বিএমআর = 655 + (9.6× ওজন কেজি) + (1.8 × উচ্চতা সে.মি.) – (4.7 × বয়স বছর)

ছেলেদের বিএমআর =( 66 + (13.7 ওজন কেজি) +(5× উচ্চতা সে.মি.) – (6.8 × বয়স বছর))

ধরা যাক একজন নারীর বয়স 33 বছর, উচ্চতা 165 সে.মি. এবং ওজন 94 কেজি।

সুতরাং তার বিএমআর = 655+ (9.6 × 94)+ (1.8 x 165) (4.7 × 33)

= 655+ 902.4 +297 – 155.1

= 1699.3 ক্যালরি

নিচের ছকটি ব্যবহার করে বিএমআর এর মান থেকে আমাদের দৈনিক ক্যালরির চাহিদা বের করা যায়।

শারীরিক অবস্থা

ক্যালরি মান

পরিশ্রমী না হলেবিএমআর মান ×1.2
হালকা পরিশ্রমী, সপ্তাহে 2-3 দিন খেলাধুলা করলেবিএমআর মান ×1.375
পরিশ্রমী, সপ্তাহে 2-3 দিন প্রচুর খেলাধুলা করলেবিএমআর মান ×1.55
পরিশ্রমী, সপ্তাহে প্রতিদিন প্রচুর খেলাধুলা করলেবিএমআর মান ×1.725
অত্যন্ত পরিশ্রমী, প্রচুর দৌড়ঝাঁপ, খেলাধুলা করলেবিএমআর মান ×1.9

উদাহরণ হিসেবে উপরের নারীটি পরিশ্রমী হয়ে থাকলে, প্রতিদিন প্রচুর খেলাধুলা করলে এবং তার বিএমআর মান 1699.3 হলে তার ক্যালরি চাহিদার মান 1699.3×1.725= 2,931.29। অর্থাৎ প্রতিদিন 3,000 কিলোক্যালরির কাছাকাছি খাদ্য গ্রহণ করলে সেই নারীটি তার ওজন একই রাখতে পারবে।

বিএমআর ও ব্যয়িত শক্তির সম্পর্ক (The Relationship between BMR and Daily Energy Expenditure)

বিএমআরের মান বয়স, লিঙ্গ, খাদ্যাভ্যাস ও শরীরের গঠনের উপর নির্ভর করে। বিএমআর আমাদের শরীরের 60 থেকে 75 ভাগ শক্তির উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের শরীর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে মাত্র 10-20 শতাংশ এবং শারীরিক শ্রমের মাধ্যমে 20 থেকে 30 শতাংশ শক্তি পেয়ে থাকে।

বিএমআই মান নির্ণয় (Calculating BMI)

বিএমআই (BMI) = দেহের ওজন (কেজি)/ দেহের উচ্চতা (মিটার)2

উদাহরণ হিসেবে 125 সেমি (1.25 মিটার) উচ্চতা এবং 50 কেজি ওজনের একজন ব্যক্তির বিএমআই হচ্ছে 32।

বিএমআই মান

করণীয়

18.5-এর নিচেশরীরের ওজন কম। পরিমিত খাদ্যগ্রহণ করে ওজন বাড়াতে হবে।
18.5-24.9সুস্বাস্থ্যের আদর্শ মান।
25-29.9শরীরের ওজন অতিরিক্ত। ব্যায়াম করে অতিরিক্ত ওজন কমানো প্রয়োজন। 
30-34.9মোটা হওয়ার প্রথম স্তর। বেছে খাদ্যগ্রহণ ও ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
35-39.9মোটা হওয়ার দ্বিতীয় স্তর। পরিমিত খাদ্যগ্রহণ ও ব্যায়াম করা প্রয়োজন। 
40 এর উপরেঅতিরিক্ত মোটাত্ব। মৃত্যুঝুঁকির আশঙ্কা। ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজন।

বিএমআই মানদণ্ডে ব্যক্তিটির সুস্বাস্থ্যের জন্য 38 কেজি ওজন হওয়া প্রয়োজন। অতএব সঠিক পুষ্টি গ্রহণ এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন স্বাস্থ্যসম্মত মানে নিয়ে যেতে হবে।

Calculating BMIচিত্র 5.06: বি এম আই

খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার (Use of chemicals in food preservation)

খাদ্য সংরক্ষণ এমন একটি প্রক্রিয়া, যেটি খাদ্যের পচন রোধ করে, যার ফলে খাদ্যের গুণাগুণ, গ্রহণযোগ্যতা এবং খাদ্যমান অটুট থাকে।

মাছের শুঁটকিকরণ, লোনা ইলিশ, আচার, বরফ দিয়ে শীতলীকরণ, চিংড়ির নাপতে, মাছের শীদল এগুলো সবই খাদ্য সংরক্ষণের বিভিন্ন প্রচলিত উপায়। আজকাল খাদ্যদ্রব্যের ক্যানিং বা কৌটাজাত করে, ধোঁয়ার মাধ্যমে স্মোকিং প্রভৃতি প্রক্রিয়া খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয়। খাদ্য সংরক্ষণে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসম্মত অনুমোদিত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যাতে খাদ্যদ্রব্যে পচন সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণ করতে না পারে। সাধারণত সোডিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাবার লবণ, ক্যালসিয়াম এপারনেট, সালফার ডাই-অক্সাইড, সোডিয়াম বাইসালফেট, সোডিয়াম বেনজয়েট, সরবেট (পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম) খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে অনুমোদিতভাবে ব্যবহার করা হয়। 

খাদ্যে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য ও ভেজাল থাকে, তার একটি তালিকা দেওয়া হলো।

উপাদান (1 গ্রাম)

খাদ্য ক্যালরি

খাদ্য ক্যালরি

এন্টিবায়োটিকমাছ ও পশুখাদ্যে ব্যবহারের ফলে প্রাণীর শরীরে জমা হয়।শুধু অনুমোদিত ঔষধ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ব্যবহার করতে হবে।
হেভি মেটালমাছ ও পশুখাদ্যে ব্যবহৃত অখাদ্য উপাদান (যেমন ট্যানারির বর্জ্য) প্রাণীর শরীরে জমা হয়।খাদ্য উপাদান যেমন ট্যানারির বর্জ্য, কয়লা, মাটি, প্রাণীর বিষ্ঠা ইত্যাদি ব্যবহার পরিহার করা। 
বাণিজ্যিক রংআইসক্রিম, গোলা আইসক্রিম, শরবত, রঙিন পানীয়, ভাজা বড়া ও বিভিন্ন মিষ্টি তৈরিতে কারখানায় ব্যবহৃত রংয়ের অননুমোদিত ব্যবহার।শুধু অনুমোদিত খাদ্যরং ব্যবহার করা।
ফরমালিনমর্গে লাশ সংরক্ষণের প্রধান উপাদান। মাছ, দুধ, ফল ইত্যাদি সংরক্ষণে অননুমোদিত ব্যবহার।ফরমালিন ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা।
কীটনাশকশাক-সবজি উৎপাদনে বালাইনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে বিষাক্ততা অনেক ক্ষেত্রে রয়ে যায়। শুঁটকিতে ডিডিটির অননুমোদিত ব্যবহার।কীটনাশকের বিষাক্ততা নষ্ট হবার পর শাক-সবজি বাজারজাত করা। শুঁটকিতে ডিডিটি ব্যবহার না করা।
রাসায়নিক পদার্থকাঁচা ফল ও টমেটো পাকাতে মাত্রাতিরিক্ত কার্বাইড ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের অননুমোদিত ব্যবহার। কোমল পানীয় জলে মাত্রাতিরিক্ত সরবেটের অননুমোদিত ব্যবহার।ফলকে পাকতে সময় দেওয়া যেন প্রকৃতিগতভাবে ফল পাকে। কার্বাইড ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা। পরিমিত মাত্রায় সরবেট ব্যবহার করা।
জীবাণুখাদ্য উৎপাদন কিংবা প্রস্তুতিকালে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু খাদ্যে মিশে যেতে পারে।বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ।