10 Minute School
Log in

স্ত্রী প্রজননতন্ত্র (Female Reproductive System) 

স্ত্রী প্রজননতন্ত্র (Female Reporoductive System) 

১. ডিম্বাশয় (Ovary): শ্রোণির পিছনে ফাঁপা গহ্বরে জরায়ুর দুপাশে ইউরেটারের নিচে বাদাম আকৃতির একজোড়া ডিম্বাশয় অবস্থিত। জরায়ু ও ফেলোপিয়ান নালিসহ উদরে একটি পেরিটোনিয়াম পর্দার ভাঁজ করা টিস্যুর সাহায্যে আটকে থাকে। 

কাজ: ডিম্বাণু উৎপন্ন করা ডিম্বাশয়ের প্রধান কাজ। তাছাড়া স্ত্রী যৌন হরমোন-ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন সংশেষ ও ক্ষরণ করে থাকে। 

২. ডিম্বনালি বা ফেলোপিয়ান নালি (Fallopian tube): জরায়ুর দুপাশে দুটি পেশল ও ১২ সেন্টিমিটার লম্বা ডিম্বনালি অবস্থিত। ডিম্বাশয় সংলগ্ন প্রান্তটি অসংখ্য আঙ্গুলের মতো প্রবর্ধনযুক্ত হয়ে ঝালর বা ফিমব্রি (fimbriae)-তে পরিণত হয়। পরের ফানেলাকার অংশটি ইনফান্ডিবুলাম (infundibulum)। এর স্ফীত অংশ অ্যাম্পুলা (ampulla) এবং যে মধ্য অংশটি জরায়ু-প্রাচীরের কাছে থাকে তা ইসথমাস (isthmus)

কাজ: ডিম্বনালি ডিম্বাশয় থেকে মুক্ত পরিণত ডিম্বাণু গ্রহণ করে জরায়ুতে পৌছে দেয় এবং রস ক্ষরণ করে শুক্রাণুকে। উর্ধ্বপ্রান্তে উঠে ডিম্বাণুকে নিষিক্তকরণে সাহায্য করে।

৩. জরায়ু (Uterus): এটি দেখতে উল্টানো নাশপাতির মতো, ফাঁপা, মাংসল অঙ্গ এবং মূত্রাশয়ের পিছনে ও মলাশয়ের সামনে শ্রোণিগহ্বরে অবস্থিত। জরায়ু-প্রাচীর বহিঃস্থ পেরিমেট্রিয়াম (perimetrium), মধ্যস্থ মায়োমেট্রিয়াম (myometrium) এবং অন্তঃস্থ এন্ডোমেট্রিয়াম (endometrium)-এ গঠিত। জরায়ুর উপর দিকে গম্বুজ আকৃতির অংশকে ফান্ডাস (fundus), মাঝের অংশকে জরায়ুদেহ (body of uterus) এবং নিচের অংশকে সারভিক্স (cervix) বা জরায়ুকণ্ঠ বলে। বয়ঃসন্ধিক্ষণে জরায়ু পূর্ণতা লাভ করে, কিন্তু গর্ভাবস্থায় এটি প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পায়।

কাজ: জরায়ু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ভ্রুণকে আগলে রক্ষা করে এবং পরিস্ফুটন সম্ভবপর করে তোলে। এখান থেকে অমরা সৃষ্টি হয়ে ভ্রুণের পুষ্টি, রেচন ও শ্বসন সম্পন্ন করে।

৪. যোনি (Vagina): এটি শুক্রাণু গ্রহণের সাথে সম্পর্কযুক্ত স্ত্রীদেহের একটি মাংসল, ৮-১০ সেন্টিমিটার লম্বা নলাকার খাদ যা মূত্রাশয়ের নিচ দিয়ে দেহের অভ্যন্তরে অবস্থিত জরায়ু থেকে বাইরে উন্মুক্ত।

কাজ: যোনি মাংসল প্রাচীরের সাহায্যে যে কোনো আকারের শিশ্নকে গ্রহণ করে।

Female Reporoductive System

Female Reporoductive System-Frontal Part

৫. বহিঃযৌনাঙ্গ (External genitalia): যোনির মুখে স্নায়ুসমৃদ্ধ কতকগুলো অঙ্গ দেখা যায়, এগুলোকে একত্রে ভালভা (vulva) বলে। দুজোড়া মাংসল ভাজ উভয় পার্শ্ব থেকে যোনিপথকে কপাটের মতো ঢেকে রাখে। এদের মধ্যে বাইরের অধিকতর মোটা এবং বৃহদাকার ভাঁজকে লেবিয়া মেজোরা (labia majora) এবং ভিতরের দিকে তুলনামূলকভাবে পাতলা এবং ক্ষুদ্র ভাজকে লেবিয়া মাইনোরা (labi minora) বলে।

লেবিয়া মেজোরার একেবারে উপরে জোড়ের কাছে একটি উচু ছোট মাংসপিন্ড দেখা যায়, একে ক্লাইটোরিস (clitoris) বলে। বার্থোলিন গ্রন্থি (Bartholin’s gland) বা ভগাংকুর নামে দুটি বড় গ্রন্থিও লেবিয়া মাইনোরায় উনাক্ত হয়েছে।

কাজ: লেবিয়া মেজোরা ও লেবিয়া মাইনোরা যোনিপথকে ঢেকে রাখে। বার্থোলিন গ্রন্থিক্ষরণ যৌনমিলনের সময় যোনিপথকে পিচ্ছিল করে তোলে। ক্লাইটোরিস সঙ্গমের সময় উত্তেজনা প্রদান করে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

 

স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের হরমোনাল ক্রিয়া (Hormonal Action of Female Reproductive System)

১. ডিম্বাশয়ের কর্পাস লুটিয়ার কোষগুলো ইস্ট্রোজেন (estrogen) প্রোজেস্টেরন (progesterone) নামে দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্ত্রী যৌন হরমোন ক্ষরণ করে। ইস্ট্রোজেন হরমোন স্ত্রী জননাঙ্গের, যেমন-স্তনের এবং এন্ডোমেট্রিয়ামের বৃদ্ধি ঘটায়। এটি স্ত্রী চরিত্রের পরিস্ফুটন ঘটায় এবং পরিণত বয়সে মাসিক বা রজঃচক্র নিয়ন্ত্রণ করে।

২. প্রোজেস্টেরন জ্বণের পরিস্ফুটনের জন্য জরায়ুর ভিতর উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। 

৩. পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH) ওভারিয়ান ফলিকলের বৃদ্ধি, ডিম্বপাত (ওভিউলেশন) ও ইস্ট্রোজেন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।

৪. পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত লুটিনাইজিং হরমোন (LH) এর প্রভাবে গ্রাফিয়ান ফলিকল করপাস লুটিয়ামে পরিণত হয়। 

৫. অমরা থেকে ক্ষরিত hCG (Human Chorionic Gonadotropin) হরমোনগুলো স্ত্রীজননাঙ্গের বৃদ্ধি, দুগ্ধ ক্ষরণ ও ফিটাসের বর্ধনের জন্য গুকোজ সরবরাহ নিশ্চিত করে।

৬. hCG কর্পাস লুটিয়ামকে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরণ সংশ্লেষ ও বিতরণে উদ্দীপ্ত করে।

৭. ডিম্বাশয় ও অমরা থেকে ক্ষরিত রিলাক্সিন (relaxin) হরমোন মহিলাদের প্রসবের সময় শ্রোণিদেশীয় লিগামেন্ট ও পেশির প্রসারণ ঘটিয়ে প্রশ্রব সহজতর করে।

 

প্রজননের বিভিন্ন পর্যায় ও দশা (Different Stages and Phases of Reproduction)                    

মানুষ একলিঙ্গ প্রাণি। যৌন জনন প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ ভিন্নধর্মী গ্যামেট সৃষ্টি ও নিষেকের মাধ্যমে গ্যামেটের  নিউক্লিয়াসের একীভবনের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট জাইগোট (zygote) দ্রুত বিভাজিত হয়ে ব্লাস্টোসিস্ট (blastocyst) নামক কোষগুচ্ছে পরিণত হয়। এটি ফেলোপিয়ান নালির ভিতর দিয়ে ইমপ্ল্যান্টেশন (implantation) প্রক্রিয়ায় জরায়ুগাত্রে স্থাপিত হলে গর্ভধারণ সম্পন্ন হয়। এরপর শুরু হয় ভ্রূণ গঠন প্রক্রিয়া। ভ্রূণ গঠনের প্রাথমিক ধাপেই  তিনটি ভ্রূণীয় স্তর সৃষ্টি হয়। এ তিনটি স্তর থেকেই পরবর্তীতে দেহের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উৎপত্তি হয়। এ কারণে ভ্রূণের পরিস্ফুটনকালীন মানবজননের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। প্রজননের বিভিন্ন পর্যায় ও দশা সাতটি শিরোনাম এর মাধ্যমে বর্ণনা করা যায়। যেমন- ১. বয়ঃসন্ধিকাল ২. রজঃচক্র ৩. গ্যামেট সৃষ্টি ৪. নিষেক ৫. ইমপ্ল্যান্টেশন ৬. ভ্রূণের পরিস্ফুটন ৭. ভ্রূণের বিকাশ।