10 Minute School
Log in

উদ্ভিদ শারীরতত্ব Part-3 : শ্বসন (Respiration)

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ জটিল জৈবযৌগ (খাদ্যবস্তু) জারিত হয়, ফলে জৈবযৌগে সঞ্চিত স্থিতিশক্তি রূপান্তরিত হয়ে গতিশক্তি বা রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত হয়, তাকে শ্বসন (Respiration)বলে। শ্বসনের ফলে যে শক্তি নির্গত হয় তা জীবের বিভিন্ন শক্তি শোষণকারী কার্যকলাপে ব্যয় হয়। 

গ্লূকোজকে শ্বসনিক বস্তু ধরে গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ছক (The complete table of the process of glycolysis by holding glucose to the respiratory tract)

 

Respiration

Respiration

চিত্র গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ার ছক।

পাইরুভিক এসিডের জারণ (Oxidation of pyruvic acid)

এটি একটি তিন পূর্ব বিক্রিয়া যার মাধ্যমে এক অণু \mathrm{CO}_{2} এক অণু NADH + \mathbf{H}^{+} এবং এক অণু অ্যাসিটাইল Co-A সৃষ্টি হয়। অ্যাসিটাইল Co-A হলো গ্লাইকোলাইসিস ও ক্রেবস্ চক্রের সংযোগকারী রাসায়নিক উপাদান। তাই পাইরুভিক অ্যাসিড থেকে অ্যাসিটাইল Co-A উৎপাদনকারী বিক্রিয়াকে Link Reaction (সংযোগ বিক্রিয়া) বলে।

প্রতি অণু গ্লুকোজের জন্য :

2 \mathrm{C}_{3} \mathrm{H}_{4} \mathrm{O}_{3}+2 \mathrm{NAD}+2 \mathrm{HSCo}-\mathrm{A} \stackrel{\text { "এনজাইম" }}{\longrightarrow} 2 \mathrm{C}_{2}  \mathrm{H}_{3} \mathrm{O}-\mathrm{SCo}-\mathrm{A}+2 \mathrm{NADH}+\mathrm{H}^{+}+2 \mathrm{CO}_{2}

 

Respiration
ক্রেবস্ চক্র (Krebs cycle)

krebs-cycle-respiration

চিত্র ৯.৩২ : ক্রেবস চক্রের সংক্ষিপ্ত ছক আধুনিক ধারণা অনুযায়ী ছকটি উপস্থাপিত, এতে দুটি স্টেপ কম আছে।

ইলেকট্রন ট্রান্সফার ও অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন

30
শক্তি উৎপাদনের পরিসংখ্যান (Energy production statistics)

সবাত শ্বসনে এক অণু গ্লুকোজ সম্পূর্ণ জারিত হয়ে \mathrm{CO}_{2} ও পানি উৎপাদনকালে নিম্নরূপ শক্তি উৎপাদন করে:

গ্লাইকোলাইসিস পাইরুভিক অ্যাসিডের অক্সিডেশন ক্রেবস্ চক্র ETC সর্বমোট ATP
2 ATP

2 NADH + H+

(যা সাইটোপ্লাজম থেকে মাইটোকন্ড্রিয়্যাল ম্যাট্রিক্স-এ প্রবেশ কালে একটি ATP হারিয়ে FADH2-তে পরিণত হয়।)

…………………………………………………………. 2NADH + H+

……………

………………………………………………………

6NADH + H+

2FADH2…..

2ATP……

…………→

4 ATP (Not 6)

6 ATP

18 ATP

4 ATP

…………→

32 ATP

= 2ATP

= 4ATP

= 6ATP

=18ATP

= 4ATP

= 2ATP

=36ATP

অবাত শ্বসন (Anaerobic Respiration)

যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় না বা অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে সম্পন্ন হয় তাকে অবাত শ্বসন (Anaerobic Respiration) বলে।

\mathrm{C}_{6} \mathrm{H}_{12} \mathrm{O}_{6} \stackrel{\text { "এনজাইম" }}{\longrightarrow} \mathrm{C}_{2} \mathrm{H}_{5} \mathrm{OH}+2 \mathrm{CO}_{2}+20

 

অবাত শ্বসন দুটি পর্যায়ে সম্পূর্ণ হয়; যথা: গ্লাইকোলাইসিস ও পাইডিক অ্যাসিডের অসম্পূর্ণ জারণ।

১। গ্লাইকোলাইসিস : এটি সবাত শ্বসনের গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ার অনুরূপ, সাইকোলাইসিস উভয় প্রকার শ্বসনেরই প্রথম পর্যায়। এ ধাপে এক অণু গ্লুকোজ থেকে ২ অণু পাইপ্রুভিক অ্যাসিড, ২ অণু NADH + \mathbf{H}^{+} ও ২ অণু ATP উৎপন্ন হয়।

২। পাইরুভিক অ্যাসিডের অসম্পূর্ণ জারণ : পাইরুডিক অ্যাসিড থেকে ইথানল অথবা ল্যাকটিক অ্যাসিড সৃষ্টি : অবাত শ্বসনের দ্বিতীয় পর্যায়ে পাইরুভিক অ্যাসিড অসম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে ইথানল ও \mathrm{CO}_{2} অথবা শুধু ল্যাকটিক অ্যাসিড সৃষ্টি কোড়ে।

(I) অ্যালকোহলিক ফার্মেন্টেশন তথা ইথানল সৃষ্টি

(II) ল্যাকটিক এসিড সৃষ্টি

ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন (Fermentation)

কোষের বাইরে অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে জাইমেজ এনজাইমের উপস্থিতিতে গ্লুকোজ অণু অসম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে ইথানল (অ্যালকোহল) বা ল্যাকটিক অ্যাসিড সৃষ্টি ও অল্প পরিমাণ শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ফার্মেন্টেশন বা গাজন বলে। কিছু ব্যাক্টেরিয়া ও এককোষী ঈস্টে ফার্মেন্টেশন ঘটে। বিজ্ঞানের যে শাখায় ফার্মেন্টেশন সম্পর্কে অধ্যয়ন করা হয় তাকে জাইমোলোজি (Zymology) বলে। এ প্রক্রিয়ায় অ্যালকোহল, মদ, পাউরুটি ইত্যাদি তৈরি করা হয়। 

প্রকৃতকোষী এবং আদিকোষী জীবে শ্বসনের স্থান (The place of respiration in Cellulite and Stem cell)

প্রকৃতকোষী আদিকোষী
(ক) মাইটোকন্ড্রিয়নের বাইরে (সাইটোপ্লাজমে)

১। গ্লাইডকালাইসিস ২ র্ফার্মেন্টেশন

(ক) সাইটোপ্লাজমে

১। গ্লাইকোলাইসিস ২। ফার্মেন্টেশন ৩। ক্রেবস্ চক্র

(খ) মাইটোকন্ড্রিয়ার্নের ভেতরে ম্যাট্রিক্স-এ

৩। পাইরুর্ভিক অ্যাসিড অক্সিডেশন ৪। ক্রেবস্ চক্র

খ) প্লাজমামেমব্রেনের ভেতরের তল (inner surface)

৪। ইলেক্ট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইন

(গ) মাইটোকন্ড্রিয়নের ইনার মেমব্রেন এ ৫। ইলেক্ট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইন।

 

অবাত শ্বসন ও ফার্মেন্টেশন এর মধ্যে পার্থক্য (The difference between anaerobic respiration and fermentation)

পার্থক্যের বিষয় অবাত শ্বসন ফার্মেন্টেশন (গাজন)
১. ক্রিয়াস্থল এটি জীবিত কোষের মধ্যে ঘটে। এটি জীবিত কোষের বাইরে ঘটে।
২. কোথায় হয় উচ্চ শ্রেণির উদ্ভিদে হয়। শুধুমাত্র ছত্রাক ও ব্যাক্টেরিয়ার মতো নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদে হয়।
৩. মাধ্যম কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। তরল মাধ্যমের প্রয়োজন হয়।
৪. বিক্রিয়ার স্থান এতে কোষের মধ্যে সৃষ্ট বিভিন্ন এনজাইম সরাসরি বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এতে কোষের মধ্যে সৃষ্ট বিভিন্ন এনজাইম কোষের বাইরে নিঃসৃত হয়ে বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে।
৫. গ্লুকোজ-এর উৎস দেহের অভ্যন্তরীণ গ্লুকোজ ব্যবহৃত হয়। বাহ্যিক গ্লুকোজ ব্যবহৃত হয়।
৬. এনজাইম প্রকৃতি কার্বোক্সিলেজ, ডিহাইড্রোজিনেজ প্রভৃতি এনজাইমের কার্যকারিতায় ঘটে। জাইমেজ নামক এনজাইমের কার্যকারিতায় ঘটে।
৭. উৎপন্ন বস্তুর অবস্থান এ প্রক্রিয়ায় কোষের ভেতরে অ্যালকোহল ও \mathrm{CO}_{2}  সঞ্চিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় কোষের বাইরে অ্যালকোহল ও \mathrm{CO}_{2} সঞ্চিত হয়।

শ্বসনিক হার্র/কোশেন্ট (Respiratory quotient/R.Q): 

শ্বসন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ যে পরিমাণ \mathrm{CO}_{2} ত্যাগ করে এবং যে পরিমাণ \mathbf{0}_{2} গ্রহণ করে তার অনুপাতকে শ্বসনিক হার (R.Q) বলে। বিভিন্ন শ্বসনিক বস্তুর জন্য শ্বসনিক হার বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। 

কাজেই সবাত শ্বসনের (গ্লুকোজের) শ্বসনিক হার (R.Q)

=\frac{\text { নির্গত } \mathrm{CO}_{2} \text {. এর অণুর পরিমাণ }}{\text { গৃহীত } \mathrm{O}_{2} \text { এর অণুর পরিমাণ }}