10 Minute School
Log in

পরিপাক গ্রন্থির ভূমিকা (Role of Digestive Glands)

মানবদেহে পাঁচ ধরণের পৌষ্টিকগ্রন্থি রয়েছে, যথা – লালাগ্রন্থি, যকৃত, অগ্ন্যাশয়, গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি ও আন্ত্রিক গ্রন্থি

১. লালাগ্রন্থি (Salivary glands)

মানুষের মুখগহ্বরের দুপাশে নিচে বর্ণিত তিন জোড়া লালাগ্রন্থি অবস্থিত।

ক. প্যারোটিড গ্রন্থি : এগুলো সবচেয়ে বড় লালাগ্রন্থি। প্রতি কানের নিচে রয়েছে একটি করে মোট দুটি প্যারোটিড গ্রন্থি।

Digestive Glands | Salivary glands
চিত্র: মানুষের লালাগ্রন্থিসমূহ

খ. সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি : প্রতিমা নিম্নস্তরের কৌণিক অঞ্চলের নিচে একটি করে মোট একজোড়া সাব ম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি অবস্থিত।

গ. সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি : জিহ্বার নিচে অবস্থান করে একজোড়া সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি।

লালা (Saliva)

লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসকে লালা বা লালারস বলে। একজন সুস্থ মানুষ দৈনিক ১২০০-১৫০০ মিলিলিটার লালা ক্ষরণ করে। লালা সামান্য অম্লীয়, ফলে মুখ গহ্বরে সব সময় pH 6.2-7.4 মাত্রায় আম্লিক অবস্থা বিরাজ করে।

লালার উপাদান (Composition of saliva)

  • পানি : ৯৫.৫% – ৯৯.৫%
  • কোষীয় উপাদান :  ইস্ট, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, লিউকোসাইট, এপিথেলিয়াল কোষ ইত্যাদি।
  • গ্যাস : প্রতি 100 মিলি লালায় 1 মিলি অক্সিজেন 25 মিনিট নাইট্রোজেন এবং 50 মিলি কার্বন-ডাইঅক্সাইড দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।
  • অজৈব পদার্থ : প্রায় ০.২%; সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম ফসফেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, পটাশিয়াম ইত্যাদি।
  • জৈব পদার্থ : প্রায় ০.৩%; এনজাইম (টায়ালিন, লাইপেজ, কার্বনিক এনহাইড্রেজ, ফসফেটে, ব্যাকটেরিও লাইটিক এনজাইম ইত্যাদি), মিউসিন, ইউরিয়া, অ্যামিনো এসিড, কোলেস্টেরল, ভিটামিন, অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিবডি ইত্যাদি।

লালার কাজ (Functions of saliva)

লালার অধিকাংশ প্রাণী। খাদ্যের স্বাদ অনুভব এবং পরিপাকের সময় বিক্রিয়া ঘটানোর জন্য পানি খাদ্যের দ্রাবক হিসাবে খাদ্যকে ভিজিয়ে নরম করে।

১. মুখ, জিহ্ববা ও ঠোট লাগায় সিক্ত থাকায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয়।

২. মিউসিন নামক গ্লাইকোপ্রোটিন খাদ্যের সঙ্গে পিচ্ছিল খাদ্যকে দলায় পরিণত করে। লালা খাদ্য চর্বণ ও গলাধঃকরণ সহায়ক। এসিড ও বেসকে প্রশমন (বাফার) করতেও এটি সাহায্য করে।

৩. ক্লোরাইড (Chloride) : সালিভারি অ্যামাইলেজকে সক্রিয় করে।

৪. সালিভারি অ্যামাইলেজ বা টায়ালিন এনজাইম (Salivary amylase or Ptyaline) :  রান্না করা স্টার্চের পলিস্যাকারাইড-কে ভেঙে মলটোজ এবং ডেক্সট্রিন নামক ডাইস্যাকারাইড-এ পরিণত করে।

৫. বাইকার্বনেট (Bicarbonate) : লালার অম্লতা PH 6.2 -7.4 এর মধ্যে বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি বাফার হিসাবে কাজ করে। ফলে মুখে সৃষ্ট এসিডের শক্তি কমিয়ে রাখার মাধ্যমে দাঁতের এনামেল ক্ষয় রোধ করে।

৬. লাইসোজাইম এনজাইম (Lysozyme enzyme) : গৃহিত খাদ্যের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের মাধ্যমে দাঁতকে রক্ষা করে।

৭. ইম্যুনোগ্লোব্যুলিন (Immuniglobulin) : লালা হচ্ছে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল সিস্টেমের অংশ।

২. যকৃত (liver)

অবস্থান : যকৃত উদর-গহ্বরের উপরভাগে ডানদিকে বেশিরভাগ অংশ জুড়ে ডায়াফ্রামের ঠিক নিচে ডিউওডেনাম ও ডান বৃক্কের উপর দিকে পাকস্থলীর ডান পাশে অবস্থিত। এটি একটি বহিক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি এবং দেখতে লালচে বাদামী রঙের।

গঠন :

  • মানব দেহের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি।
  • প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মানুষের ওজন প্রায় ১.৪ – ১.৮ কেজি নারীদেহে ১.২ – ১.৪ কেজি; সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর দেহে 150 গ্রাম।
  • ডান-বাম কোয়াড্রেট ও কডেট নামে চারটি অসম্পূর্ণ খন্ড নিয়ে যকৃত গঠিত। খণ্ডঘোষ স্থিতিস্থাপক তথ্যসমৃদ্ধ ক্যাপসুলে আবৃত। ডান খণ্ডটি সবচেয়ে বড়।
  • যকৃতের নিচের পিঠে পিত্তথলি (gall bladder) সংলগ্ন থাকে।
  • যকৃত কোষগুলো চাকার স্পিকারের মত বিন্যস্ত।

কোষগুলোর গা বেয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাইনুসয়েড (sinusoid) ও পিত্তনালীকা প্রসারিত হয়। পিত্তনালীকাগুলো পিত্তনালীতে গিয়ে শেষ হয়। যকৃত থেকে আসা ডান ও বাম যকৃতনালী মিলে একটি অভিন্ন যকৃতনালী গঠন করে।এটি পিত্তনালী সাথে মিলিত হয়ে অভিন্ন পিত্তনালী গঠন করে যার নামে নালির মাধ্যমে ডিওডেনামে উন্মুক্ত হয়।

যকৃতের সঞ্চয়ী ও বিপাকীয় ভূমিকা (Storage & Metabolic of Liver)

মানবদেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি হচ্ছে যকৃত যা দেহের ওজনের প্রায় ৩-৫%। একে মানবদেহের জৈব রসায়নাগার বলা হয়। এখানে প্রায় পাঁচ শতাধিক জৈবনিক কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।

যকৃতের সঞ্চয়ী ভূমিকা (Storage functions of Liver)

১. গ্লাইকোজেন সঞ্চয় (Storage of glycogen) : রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ গ্লাইকোজেনেসিন (glycogenesis) প্রক্রিয়ায় গ্লাইকোজ়েন-এ রূপান্তরিত হয়ে যকৃতের সঞ্চয়ী কোষে জমা থাকে। ইনসুলিন (insulin) নামক হরমোন এ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।

২. রক্ত সঞ্চয় (Blood reservoir) : যকৃত প্রায় ১৫০০ ঘন সেন্টিমিটার পর্যন্ত রক্ত সঞ্চয় করে রাখতে পারে। 

৩. ভিটামিন সঞ্চয় (Storage of vitamin) : যকৃত স্নেহে (fat) দ্রবণীয় ভিটামিন (A,D,E,k) পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন সায়ানোকোবালামিন (B12) এবং ফলিক এসিড সঞ্চয় করে। B12 এবং ফলিক এসিড অস্থিমজ্জায় লোহিত কণিকা তৈরিতে প্রয়োজন হয়।

৪. পিত্তরস (Production of Bile) : যকৃত থেকে উৎপন্ন পিত্তরস (bile) যকৃতের ডান খন্ডাংশের নিচে অবস্থিত পিত্তথলিতে (gall bladder) জমা থাকে।

৫. চর্বি ও অ্যামিনো এসিড সঞ্চয় (Storage of Fat & Amino acid) : যকৃত অতিরিক্ত গ্লুকোজকে চর্বিতে পরিণত করে জমা রাখে। যকৃত অ্যামিনো এসিডও জমা রাখে।

৬. মিনারেল সঞ্চয় (Storage of Mineral) : যকৃত লৌহ ও পটাশিয়াম সঞ্চয় করে। হিমের লৌহ অংশ ফেরিটিন (feritin) হিসেবে যকৃতে জমা থাকে।