ঘূর্ণন গতি (Rotational motion)
ঘূর্ণন অক্ষ (Axis of rotation)
কোনো বস্তু যখন ঘুরে তখন তার প্রত্যেকটি কণা কোনো না কোনো বিন্দুকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার পথে ঘুরে। ঘূর্ণনশীল কোনো বস্তুর প্রত্যেকটি কণার বৃত্তাকার গতির কেন্দ্রগুলো যে সরলরেখায় অবস্থিত তাকে ঘূর্ণন অক্ষ বলে। একটি ঘূর্ণায়মান দৃঢ় বস্তুর ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি কণা থেকে ঘূর্ণন অক্ষের উপর অঙ্কিত প্রতিটি লম্ব একই সময় সমান কোণ অতিক্রম করে।
জড়তার ভ্রামক (Moment of Inertia) :
যখন কোনো দৃঢ় বস্তু একটি নির্দিষ্ট অক্ষে আবদ্ধ থাকে, তখন ঐ বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে, আবদ্ধ থাকার কারণে বস্তুটি সরলরেখায় চলতে পারে না। বস্তুটি অক্ষের চারদিকে ঘোরে এবং বস্তুর প্রতিটি কণার কৌণিক সরণ হয়। অক্ষের সাপেক্ষে বস্তুর এ ধরনের গতিকে ঘূর্ণন বা আবর্ত গতি (Rotational motion) বলে। অক্ষ বস্তুর ভেতরে বা বাইরে থাকতে পারে।
জড়তার ভ্রামক ও কৌণিক ভরবেগ (Moment of inertia & angular momentum)
একটি দৃঢ় বস্তু কোনো একটি স্থির অক্ষের চারদিকে আবর্তিত হতে থাকলে ঐ অক্ষের সাপেক্ষে বস্তুটির জড়তার ভ্রামক বলতে অক্ষ হতে প্রতিটি কণার দূরত্বের বর্গ ও কণাটির ভরের গুণফলের সমষ্টিকে বুঝায়।
ব্যাখ্যা : মনে করি 𝐵 একটি দৃঢ় বস্তু [চিত্র]। এটি একটি নির্দিষ্ট অক্ষ 𝑋𝑌 -এর চারদিকে 𝜔 সমকৌণিক বেগে ঘুরছে। যদি বস্তুটি m_1 , 𝑚_2, 𝑚_3 ………….. 𝑚_𝑛 ভরের অসংখ্য বস্তুকণার সমষ্টি হয় এবং ভরগুলো ঘূর্ণন অক্ষ হতে যথাক্রমে 𝑟_1, 𝑟_2, 𝑟_3…………. 𝑟_𝑛 দূরে অবস্থিত হয় তাহলে সংজ্ঞানুসারে ঐ অক্ষ সাপেক্ষে,
প্রথম কণার জড়তার ভ্রামক = 𝑚_1 𝑟_1^2
দ্বিতীয় কণার জড়তার ভ্রামক = 𝑚_2 𝑟_2^2
তৃতীয় কণার জড়তার ভ্রামক = 𝑚_3 𝑟_3^2
ও 𝑛-তম কণার জড়তার ভ্রামক = 𝑚_n 𝑟_n^2
অতএব, সংজ্ঞানুসারে সমগ্র বস্তুটির ঐ অক্ষ সাপেক্ষে জড়তার ভ্রামক,
I =m_1 r_1^2 + m_2 r_2^2 + m_3 r_3^2 + ……… + m_n r_n^2= \sum_{i=1}^n m_i r_i^2 …………………………….(4.16)
[ \sum_{i=1}^n চিহ্ন দ্বারা রাশিগুলোর সমষ্টি বুঝানো হয়েছে। ]
সমাকলনের সাহায্যে জড়তার ভ্রামক নিম্নোক্ত ভাবে প্রকাশ করা যায়,
I = \int r^2 dm …………………………….(4.17)
এখানে 𝑑𝑚 হচ্ছে বস্তুটির অতি ক্ষুদ্র অংশের ভর এবং 𝑟 হচ্ছে ঘূর্ণন অক্ষ হতে ঐ ক্ষুদ্র অংশটির দূরত্ব।
জড়তার ভ্রামকের একক ও মাত্রা সমীকরণ (Unit and dimension of moment of inertia) :
এম. কে. এস. ও এস. আই. এককে জড়তার ভ্রামকের একক কিলোগ্রাম-মিটার^2 (kg-m^2) । এর মাত্রা সমীকরণ 𝐼 = [ ভর× দূরত্ব^2 ] =[ 𝑀𝐿^2 ]
চক্রগতির ব্যাসার্ধ (Radius of gyration)
কোনো দৃঢ় বস্তুর মোট ভরকে যদি একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে কেন্দ্রূভূত ধরা হয় যাতে একটি নির্দিষ্ট অক্ষের সাপেক্ষে ঐ কেন্দ্রীভূত বস্তুকণার জড়তার ভ্রামক অক্ষ সাপেক্ষে সমগ্র দৃঢ় বস্তুর জড়তার ভ্রামকের সমান হয় তাহলে লেখা যায়,
I = \sum m r^2 = MK^2এখানে, M = \sum m = সমগ্র বস্তুর ভর
এবং K= ঘূর্ণন অক্ষ হতে যে বিন্দুতে সমগ্র ভর কেন্দ্রীভূত আছে, ঐ বিন্দুর দূরত্ব।
K-কে চক্রগতির ব্যাসার্ধ বলা হয়।
অতএব, চক্রগতির ব্যাসার্ধের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা দেয়া যায় :
সংজ্ঞা : যদি কোনো দৃঢ় বস্তুর একটি নির্দিষ্ট বিন্দু যেখানে বস্তুটির সমস্ত ভর কেন্দ্রীভূত আছে ধরা হয় এবং ঘূর্ণন অক্ষ সাপেক্ষে ঐ বিন্দুতে জড়তার ভ্রামক সমগ্র বস্তুটির জড়তার ভ্রামকের সমান হয়, তবে অক্ষ হতে ঐ বিন্দুর দূরত্বকে চক্রগতির ব্যাসার্ধ বলা হয়।
সমীকরণ (4.18) হতে পাই, K = \sqrt{\frac{1}{M}} ……………………………(4.19)
নির্দিষ্ট অক্ষের সাপেক্ষে কোনো বস্তুর চক্রগতির ব্যাসার্ধ 0.2m বলতে বুঝায় যে ঐ অক্ষ হতে 0.2m দূরে বস্তুটির সমগ্র ভর কেন্দ্রীভূত আছে বিবেচনা করে জড়তার ভ্রামক নির্ণয় করলে বস্তুটির মোট জড়তার ভ্রামক পাওয়া যাবে।