S ব্লক মৌল (S Block Elements)
প্রশ্ন: s ব্লক মৌলগুলোর বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর (Discuss the characteristics of S-Block Elements)
ধর্ম-1
যে সমস্ত মৌলের সর্বশেষ ইলেকট্রন অরবিটালে প্রবেশ করে তাদেরকে s ব্লক মৌল বলে। s ব্লক মৌলগুলোর মধ্যে গ্রুপ 1 বা বিন্যাসে এর মৌলগুলোকে ক্ষারধাতু এবং গ্রুপ 2 বা বিন্যাসের মৌলগুলোকে মৃৎক্ষার ধাতু বলা হয়। s-ব্লক মৌলের সংখ্যা ১৪টি। এদের মধ্যে H এবং হিলিয়াম ছাড়া বাকিগুলো ধাতু-
যেমন:
গ্রুপ-1 → Li, Na, K, Rb, Cs, Fr, H
গ্রুপ-2 → Be, Mg, Ca, Sr, Ba, Ra
গ্রুপ-18 → He
ধর্ম-2
এদের যোজনী ও জারণ সংখ্যা স্থির।
এদের সর্ববহিস্থ ও বিন্যাস থাকায় এদের যোজনী এবং চার্জ বা জারণ সংখ্যা স্থির।
যেমন: গ্রুপ 1 এর ক্ষেত্রে যথাক্রমে 1, 1+ ও গ্রুপ 2 এর ক্ষেত্রে যথাক্রমে 2, 2+
ধর্ম-3
এরা আয়নিক যৌগ গঠন করে। তবে Li ও Be এর যৌগ সমযোজী প্রকৃতির। অর্থাৎ ও সমযোজী যৌগ গঠন করে। এর কারণ হলো এদের আকার ছোট এর ফলে এদের পক্ষে ইলেকট্রন দান করা সহজে সম্ভব নয় বিধায় এরা আয়নিক যৌগ গঠন করে না।
ধর্ম-4
এদের সুস্থিত আয়নগুলোতে () কোনো অযুগ্ম ইলেকট্রন না থাকায় এরা ডায়াম্যাগনেটিক হবে।
ধর্ম-5
এদের যৌগগুলোর গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক এর মান বেশি, পানিতে দ্রবণীয় এবং গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করে।
ধর্ম-6
এরা বর্ণহীন (সাদা) যৌগ গঠন করে কিন্তু কোনো কোনো সময় অ্যানায়ন এর কারণে রঙিন যৌগ গঠন করতে পারে। যেমন: (বেগুনী), (সবুজ)।
ধর্ম-7
এ সমস্ত মৌলগুলোর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক কম। কারণ এদের ধাতব বন্ধন দুর্বল প্রকৃতির। ক্ষার ধাতুসমূহ নরম প্রকৃতির ধাতু বলে এদেরকে ছুরি দিয়ে কাটা যায়।
ধর্ম-8
এরা সহজেই ইলেকট্রন দান করে ধনাত্মক আয়নে আয়নিত হয়। তাই এদের আয়নীকরণ বিভবের মান কম।
ধর্ম-9
এরা শিখা পরীক্ষায় নির্দিষ্ট বর্ণযুক্ত শিখা বা বর্ণালী সৃষ্টি করে। তবে Be ও Mg শিখা পরীক্ষায় কোনো বর্ণ দেখায় না কারণ এদের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট হওয়ায় নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রন এর মধ্যে আকর্ষণ বেশি হয় এতে ইলেকট্রন ধাপান্তর করতে প্রয়োজনীয় শক্তি বুনসেন বার্নারের শিখা হতে পাওয়া যায় না।
ধর্ম-10. শিখা পরীক্ষার বর্ণ:
উল্লেখ্য যে, S ব্লক মৌলগুলোর মধ্যে ক্ষার ধাতু শিখা পরীক্ষায় নিম্নরুপ বর্ণ দেখায় –
Li → উজ্জ্বল লাল/ক্রিমসন বর্ণ
Na → সোনালতী হলুদ
K → বেগুনী
Rb → লালচে বেগুনী
Cs → নীল বর্ণ
মৃৎক্ষার ধাতুসমূহ শিখা পরীক্ষায় নিম্নরুপ বর্ণ দেখায় –
Ca → ইটের মতো লাল
Sr → উজ্জ্বল লাল/ক্রিমসন বর্ণ
Ba → হলুদাভ সবুজ
প্রশ্ন: ক্ষার ও মৃৎক্ষার ধাতুসমূহের যোজনী ও জারণ সংখ্যা স্থির কেন? (Valancy and oxidation Number of alkaline and alkaline earth metals)
উত্তর: এরা বহিঃস্থ থেকে 1, 2 টি ইলেকট্রন দান করার পর নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করে। এর ফলে এরা আর স্বাভাবিক অবস্থায় ইলেকট্রন দান করতে চায় না তাই এদের যোজনী ও জারণ সংখ্যা স্থির।
প্রশ্ন: কঠিন অবস্থায় NaCI বিদ্যুৎ অপরিবাহী হলেও গলিত অবস্থায় সুপরিবাহী কেন? (Conductance of Sodium Chloride)
উত্তর: কঠিন অবস্থায় আয়নগুলো মুক্ত অবস্থায় থাকে না কিন্তু গলিত অবস্থায় আয়নগুলো মুক্ত অবস্থায় থাকে। তাই গলিত অবস্থায় বিদ্যুৎ সুপরিবাহী।
ক্ষার ধাতুগুলো রাসায়নিক ধর্ম (Chemical Properties of Basic Metals)
(১) অক্সাইড গঠন:
এই মৌল , এর সাথে বিভিন্ন ধরনের Oxide গঠন করে । গঠন করে ; কিন্তু এর পরবর্তী মৌলসমূহ সুপার Oxide গঠনের প্রবণতা দেখায় যেমন ।
এর আকার ছোট হওয়ায় এর চার্জ ঘনত্বের পরিমাণ বেশি ফলে এটি অধিক চার্জ যুক্ত অ্যানায়ন এর সাথে যুক্ত হয়ে গঠন করে কিন্তু এই গ্রুপের নিচের দিকে গেলে ক্যাটায়ন এর আকার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চার্জ ঘনত্বের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে এরা কম চার্জ যুক্ত অ্যানায়ন এর সাথে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখায় তাই এরা Per Oxide ও Super Oxide গঠন করে যে আয়নের চার্জ ঘনত্ব যত বেশি হবে সেটি তত বেশি চার্জ যুক্ত আয়নের সাথে যুক্ত হবে।
ধর্ম-১. এরা শক্তিশালী বিজারক পদার্থ
Oxide ion →
Per Oxide ion →
Super Oxide ion →
ধর্ম-২: এরা পানির সাথে বিক্রিয়া করে শক্তিশালী ক্ষার ও H2 গ্যাস উৎপন্ন করে-
Na; এর সাথে বিক্রিয়া করে আগুন ধরে যায়।
K; এর সাথে বিক্রিয়া করে প্রচুর তাপ ও গ্যাস উৎপন্ন করে যা বায়ুর সাথে বেগুনি বর্ণের শিখাসহ জ্বলে।
ধর্ম – ৩ : হ্যালোজেন এর সাথে বিক্রিয়া
এরা এর সাথে বিক্রিয়া করে ধাতব হ্যালাইড গঠন করে যারা আয়নিক প্রকৃতির। তবে LiCI সমযোজী প্রকৃতির। তবে গ্রুপের উপর থেকে নীচে গেলে পোলারায়ন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় আয়নিক ধর্ম বৃদ্ধি পায়।
ধর্ম – ৪
এদের কার্বনেট সমূহ তে দ্রবণীয় এবং তাপে সহজে বিযোজিত হয় না। তবে এই গ্রুপের , তাপে বিয়োজিত হতে পারে। উল্লেখ্য যে, ক্যাটায়ন এর চার্জ ঘনত্বের উপর নির্ভর করে কার্বনেট যৌগ সমূহের তাপসহতা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। আয়নের চার্জ ঐ গ্রুপ ভুক্ত অন্য ক্যাটায়ন এর মতো এক একক হলেও এর চার্জ ঘনত্ব অন্যান্যদের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণে এটি কার্বনেট আয়নকে এতটাই বিকৃত বা পোলারায়িত করে যে তা উত্তাপে বিয়োজিত হয়। কিন্তু গ্রুপের পরবর্তী মৌলসমূহের মধ্যে আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় পোলারায়ন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় আয়নিক ধর্ম বাড়ে তাই পরবর্তী কার্বনেটগুলো সহজে তাপে বিযোজিত হয় না।
ধর্ম – ৫ : ক্ষার ধাতু সমূহের নাইট্রেট লবণসমূহ পানিতে দ্রবণীয় ও তাপে বিযোজিত হতে পারে।
সাধারণত ধাতব নাইট্রেট () সমূহ তাপে বিযোজিত হয়ে প্রথমে নাইট্রাইট () যৌগে পরিণত হয় এই নাইট্রাইট যৌগের স্থিতিশীল কম হলে সেটি পুনরায় বিযোজিত হয়ে ধাতব Oxide ও তে পরিণত হয়। এর স্থিতিশীলতা বেশি কিন্তু Li আয়নের চার্জ ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণে এটি আয়নকে এত বেশি পোলারায়িত করে যে যৌগটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে যার কারণে এটি পুনরায় বিযোজিত হয়ে ও এ পরিণত হয়।
ধর্ম – ৬ : এদের কার্বনেট ও বাই কার্বনেট লণ এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী হয়।
প্রশ্ন: Na₂CO₃ এর জলীয় দ্রবণ ক্ষার ধর্মী কেন?
এর জলীয় দ্রবণে সবল ক্ষার উৎপন্ন হওয়ার কারণে জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী হয়।
প্রশ্ন: এর জলীয় দ্রবণ অম্লধর্মী কেন?
সবল এসিড উৎপন্ন হওয়ার কারণে জলীয় দ্রবণ অম্লধর্মী হবে।
প্রশ্ন: NaCl এর জলীয় দ্রবণ নিরপেক্ষ কেন?
যেহেতু এটি সবল এসিড ও সবল ক্ষার এর লবণ, তাই এর জলীয় দ্রবণ নিরপেক্ষ হবে।
ধর্ম – ৭ :
কার্বন ও N এর সাথে যৌগ গঠন ও এদের মধ্যে শুধু Li, C ও N এর সাথে বিক্রিয়া করে কার্বাইড ও নাইট্রাইড গঠন করে।
ধর্ম – ৮ :
তরল এর সাথে বিক্রিয়া ও এসব ধাতু তরল অ্যামোনিয়ার সাথে বিক্রিয়া করে নীল বর্ণের দ্রবণ তৈরি করে যা বিদ্যুৎ সুপরিবাহী।
সালফেট যৌগসমুহের দ্রাব্যতা: এদের মধ্যে ছাড়া বাকি সালফেট লবণগুলো পানিতে দ্রবণীয়।
ধর্ম – ৯ :
এরা H এর সাথে বিক্রিয়া করে ধাতব হাইড্রাইড গঠন করে।
এ বিক্রিয়া প্রমাণ করে যে, Na; H অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী বিজারক।
মৃৎক্ষার ধাতু সমূহের রাসায়নিক ধর্ম (Properties of Basic Earth Metals)
ক্যাটায়ন কর্তৃক অ্যানায়ন এর ইলেকট্রন মেঘকে নিজের দিকে আকর্ষণ এর ক্ষমতাকে পোলারায়ন বলে। এটি বাড়লে আয়নিক যৌগে সমযোজী বৈশিষ্ট্যর প্রকাশ পায়। ক্যাটায়নের চার্জ বাড়লে এবং আকার ছোট হলে পোলারায়ন ক্ষমতা বাড়ে। অ্যানায়নের চার্জ ও আকার বাড়লে এর পোলারায়িত হওয়ার ক্ষমতা বাড়ে।
(১) এরা এর সাথে বিক্রিয়া করে ধাতব অক্সাইড গঠন করে তবে Be সাধারণত বাতাসে অপরিবর্তিত থাকে।
(২) Ca, Sr, Ba ঠান্ডা পানির সাথে বিক্রিয়া করে ধাতব হাইড্রক্সাইড উৎপন্ন করে।
কিন্তু Mg উত্তপ্ত জলীয় বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে অপরদিকে Be 100°C তাপমাত্রায়ও এর সাথে বিক্রিয়া করে না।
(৩) এরা C ও N এর সাথে কার্বাইড ও নাইট্রাইড গঠন করে যারা আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়ে বিভিন্ন উৎপাদে পরিণত হয়।
(৪) এরা Halozen এর সাথে বিক্রিয়া করে ধাতব হ্যালাইড উৎপন্ন করে যারা আয়নিক প্রকৃতির। তবে এদের গ্রুপের উপর থেকে নিচে গেলে বা ক্যাটায়ন এর আকার বৃদ্ধি পেয়ে পোলারায়ন ক্ষমতা হ্রাসের কারণে আয়নিক বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি পায়। যেমন অপেক্ষা এর আয়নিক বৈশিষ্ট্য বেশি। অর্থাৎ, অপেক্ষা এর গলনাংক বেশি হবে।
(৫) এদের নাইট্রেট () লবণগুলো তাপে বিয়োজিত হতে পারে।
(৬) এদের কার্বনেট সমূহের তাপ সহতা: মৃৎক্ষার ধাতু সমূহের ক্যাটায়ন দুই একক ধনাত্মক চার্জ যুক্ত হওয়ায় এরা কার্বনেট আয়নকে যথেষ্ট পোলারায়িত বা বিকৃত করে ফলে এদের কার্বনেট সমূহ উত্তাপে বিয়োজিত হয়।
তবে ক্যাটায়ন এর আকার যত বাড়ে এদের চার্জ ঘনত্ব তত হ্রাস পায় ফলে পোলারায়ন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কারণে এদের কার্বনেটসমূহের আয়নিক ধর্ম বাড়ে এবং বিয়োজনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে নিম্নোক্ত যৌগের আয়নিক বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ পোলারায়ন ক্ষমতা হ্রাস পায়-