10 Minute School
Log in

যৌনবাহিত রোগ (Sexually Transmitted Diseases)

যৌনবাহিত রোগ (Sexually Transmitted Diseases)

যে সব রোগ যৌন মিলনের সময় সংক্রমণের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে সে সব বোগকে যৌনবাহিত রোগ (sexually transmitted diseases, STDs) বলে। চিকিৎসাবিদ্যার সংজ্ঞা অনুযায়ী, সংক্রমণের ফলে লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাকে রোগ (disease) বলে । যেহেতু অনেক সময় যৌনবাহিত রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না তাই এ অবস্থাকে যৌনবাহিত রোগ না বলে যৌনবাহিত সংক্রমণ (sexually transmitted infections) বলে । রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাক না পাক সাধারণ মানুষের কাছে এগুলো যৌনবাহিত রোগ নামেই বহুল পরিচিত। অনেক ধরনের যৌনবাহিত। রোগ ও সংক্রমণ রয়েছে । কেবল নিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমেই এসব রোগ ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এ বইয়ে সিলেবাসভুক্ত ৩টি যৌনবাহিত রোগ (সিফিলিস, গনোরিয়া ও এইডস) এর লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা হবে।

 

ক. সিফিলিস (Syphilis) 

Treponema pallidum নামক ব্যাকটেরিয়ামের সংক্রমণে সৃষ্ট যৌনবাহিত রোগকে সিফিলিস বলে । এ রোগে দেহে দীর্ঘকালীন জটিলতা দেখা দেয় এবং সঠিক চিকিৎসা না করালে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।

সংক্রমণ প্রক্রিয়া (Mode of Transmission)

সিফিলিস আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সৃষ্ট সিফিলিটিক ক্ষত (syphilitic sore)-এর সরাসরি সংস্পর্শে এলে জনান্তরে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। সিফিলিটিক ক্ষত প্রধানত বহির্যৌনাঙ্গ, যোনি, পায়ু বা মলাশয়ে অবস্থান করে, কিছু দেখা যায় ঠোট ও মুখে। যৌনমিলনের ধরনের উপর (যোনি, পায়ু, মুখ) সংক্রমণের উৎস নির্ভর করে। সিফিলিসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারী সন্তান ভূমিষ্ঠের আগেই তার শরীরে সিফিলিস রোগের বিস্তার ঘটিয়ে দেয়। সিফিলিসের জীবাণুতে সংক্রমিত হলে সাধারণত ২১ দিনের মাথায় রোগের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে, তবে ব্যক্তি বিশেষে সময়কাল ১০-৯০ দিন হতে পারে। 

লক্ষণ (Symptoms)

সিফিলিসের প্রথম লক্ষণ যেমন বেশ দেরিতে (অর্থাৎ ২১ দিন পর) প্রকাশ পায় তেমনি শেষ পর্যায়ে যেতেও অনেক সপ্তাহ, মাস বা বছর পেরিয়ে যায় । লক্ষণ প্রকাশের সময়কালকে ৪টি পর্যায়ে ভাগ করা হয় ।

১. প্রাথমিক পর্যায় (Primary stage) : ২১ দিন পর ১টি মাত্র সিফিলিটিক ক্ষত প্রকাশিত হয়। এটি দৃঢ়, গোল ও ব্যথাহীন ক্ষত। এটি দেখে বোঝা যায় জীবাণু কোন পথে সংক্রমিত হয়েছে। তিন থেকে ছয় সপ্তাহ পর ক্ষতপূরণ হয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে ধাবিত হয়।

২. মাধ্যমিক পর্যায় (Secondary stage) : গায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুসকুড়ি (rash) দেখা দেয়া এবং সিফিলিটিক ক্ষত অমসৃণ, লাল বা লালচে বাদামী দাগ হিসেবে হাত-পায়ের তালুতে আবির্ভূত হওয়া এ পর্যায়ের লক্ষণ। ক্ষত ছাড়াও জুর, স্ফীত লসিকা গ্রন্থি, গলাভাঙ্গা, বিভিন্ন জায়গায় চুল উঠে যাওয়া, মাথাব্যথা, ওজন কমে যাওয়া, পেশিব্যথা, ক্লান্তি প্রভৃতিও এ পর্যায়ে দেখা দেয় ।

 

Sexually Transmitted Diseases

 

৩. সুপ্ত পর্যায় (Latent stage) : প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের লক্ষণগুলো অদৃশ্য হলে শুরু হয় সুপ্ত পর্যায়। এ সময় আক্রান্তের দেহে কোনো ক্ষত, ফুসকুড়ি বা অন্যান্য লক্ষণ দেখা যায় না। বছরের পর বছর এ পর্যায় অব্যাহত থাকতে পারে।

৪. বিলম্বিত পর্যায় (Late stage) : জীবাণুতে প্রথম সংক্রমিত হওয়ার প্রায় ১০-২০ বছর পর সিফিলিস পূর্ণাঙ্গরূপে। আবির্ভূত হয়। রোগের বিলম্বিত দশায় রোগীর মস্তিষ্ক, স্নায়ু, চোখ, হৃৎপিন্ড, রক্তকণিকা, যকৃত, গ্রন্থি ও সন্ধির ক্ষতি সাধন। করে। ফলে পেশি সঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটে, দেখা দেয় পঙ্গুত্ব, অন্ধত্ব, হতবুদ্ধি ও অস্থিরচিত্ত। এ অবস্থায় মানুষের মৃত্যু ঘটে।

প্রতিকার (Remedy)

প্রতিরোধ : সিফিলিসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে স্থায়ী সঙ্গীর সঙ্গে জীবনযাপন করা, ভিন্ন সঙ্গীর কথা চিন্তাই করা উচিত নয়। কিংবা কোথাও সিফিলিস রোগী আছে এমন ঘরে যাওয়া-আসা করাও নিরাপদ নয়। তা ছাড়া, অ্যালকোহল ও মাদক জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকা একান্ত বাঞ্ছনীয়, কারণ এসব পান বা সেবন যৌন আচরণকে উসকে দেয়, তখন সঙ্গী নির্বাচন সঠিক নাও হতে পারে।

চিকিৎসা : সিফিলিসের লক্ষণ জানা থাকলে প্রাথমিক পর্যায়ে সহজেই চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়। কারও দেহে প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায় বা প্রাক-সুপ্ত পর্যায়ের সিফিলিস জীবাণু থাকলে তাকে একটি মাত্র Benzathine Penicillin-G। ইনজেকশন দিলেই রোগ দূর হতে পারে। সুপ্ত পর্যায়ের শেষ অবস্থায় থাকলে তাকে প্রতি সপ্তাহে একটি করে ইনজেকশন দিতে হয়। চিকিৎসার ফলে সিফিলিস সারবে কিন্তু দেহের ক্ষতিগ্রস্থ টিস্যুর ক্ষত পূরণ হবে না। সম্পূর্ণ না সারা পর্যন্ত যৌন মিলন থেকে নিজেকে বা অন্যকে বিরত রাখতে হবে।

 

খ. গনোরিয়া (Gonorrhea)

Neisseria gonorrhoeae প্রজাতিভুক্ত ব্যাকটেরিয়ামের সংক্রমণে সৃষ্ট যৌনবাহিত রোগকে গনোরিয়া বলে। N. gonorrhoeae  নারীর জনন নালি (সারভিক্স, জরায়ু, ফেলোপিয়ান নালিসহ) এবং নারী ও পুরুষের ইউরেথার মিউকাস ঝিল্লিতে সংক্রমণ ঘটায়। মুখ, গলা, চোখ ও পায়ুর মিউকাস ঝিল্লিও এ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে আক্রান্ত হয়। গর্ভকালীন জটিলতা ছাড়াও নারী-পুরুষ উভয়ে বন্ধ্যা-বন্ধ্য হয়ে যেতে পারে।

সংক্রমণ প্রক্রিয়া (Mode of Transmission)

যৌন মিলনের সময় আক্রান্ত দেহের বহির্যৌনাঙ্গ, মুখ ও পায়ু থেকে সংক্রমণ ঘটে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়ও আক্রান্ত মাতৃদেহ থেকে এ রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। যে ব্যক্তি এক সময় গনোরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসায় সেরে উঠেছে এমন ব্যক্তি গনোরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে পুনর্মিলন ঘটালে সেও পুনঃসংক্রমিত হতে পারে। গনোরিয়ায় আক্রান্ত অনেক ব্যক্তির দেহে তেমন স্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায় না বলে এটি ব্যাপক বিস্তৃত যৌনবাহিত অসুখ। হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

লক্ষণ (Symptoms)

পুরুষে গনোরিয়ার লক্ষণ : আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনের ২-১৩ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়।  

  1. পেনিসের মাথা প্রথমে লাল হয়ে ওঠে ও চুলকায়। পরবর্তীতে সেখান থেকে পুঁজ নির্গত হয় । 

  2. জালাত প্রস্রাবের তীব্রতা, ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। 

  3. কুচকির লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় ও ব্যথা হয়। 

  4. সেমিনাল ভেসিকত হলে রক্তপূর্ণ বীর্যপাত হয় এবং ব্যথা হয় । 

  5. প্রস্টেট আক্রান্ত হলে পায়ুর সম্মুখে ব্যথা হয় এবং মলত্যাগের স বেড়ে যায় । 

  6. সাধারণত জ্বর জ্বর ভাব থাকে। 

  7. দীর্ঘদিন সংক্রমণের কারণে অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ ত্বকে ক্ষত, মস্তিষ্কে প্রদাহ, হৃৎপিণ্ডের ক্ষত হতে পারে।

নারীতে গনোরিয়ার লক্ষণ : পুরুষের চেয়ে মহিলা এ রোগে কম আক্রান্ত হয়। 

  1. সংক্রমণের কারণে যোনির ওষ্ঠে লাল ও দগদগে ঘা হয়। 

  2. যোনি পথে অস্বাভাবিক সাদা ও হলুদ বর্ণের স্রাব নিঃসৃত হয় । 

  3. প্রস্রাবের যন্ত্রনা, প্রস্রাবের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। 

  4. ডিম্বনালি আক্রান্ত হলে এটি পুঁজ দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে যায়, ফলে সন্তান ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। 

  5. তলপেটে ব্যথা হয়। 

  6. মাসিক অনিয়মিত হয় ও তীব্র ব্যথা হয়। 

  7. দীর্ঘদিন সংক্রমণের কারণে অস্থিসিন্ধতে প্রদাহ, ত্বকে ক্ষত, মস্তিষ্কে প্রদাহ, হৃৎপিণ্ডে ক্ষত হতে পারে। 

  8. পায়ুপথে হলে পায়ুপথে তীব্র প্রদাহ ও রক্ত ক্ষরণ হতে পারে। মায়ের এ রোগ থাকলে শিশু অপথালমিয়া নিওন্যাটারাম নামক চোখের প্রদাহ নিয়ে জন্ম নিতে পারে।

 

Sexually Transmitted Diseases

 

প্রতিকার (Remedy)

সামান্য সতর্কতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্বন্ধে জ্ঞান রাখলে গনোরিয়ার মতো মারাত্মক যৌনবাহিত থেকে নিজেকে ও ভবিষ্যৎ বংশধরকে নিরাপত্তা দেয়া খুব সহজ। এ জন্যে যা করা দরকার তা হচ্ছে : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিয়ে কম বয়সী ও গর্ভবতী নারীদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে হবে; যৌনসঙ্গী নির্বাচনে অবশ্যই সর্তক ও নিশ্চিত থাকতে হবে। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপসন অনুযায়ী ওষুধ খেতে বা লাগাতে হবে; নিরোগ না হওয়া পর্যন্ত মিলনে প্রবৃত্তি হওয়া; প্রতিবার মিলনকালে কনডম ব্যবহার করা ইত্যাদি।

 

গ. এইডস (AIDS : Acquired Immune Deficiency Syndrome)

AIDS হলো Acquired (অর্জিত) Immune (ইমিউন বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) Deficiency (ডিফেসিয়েন্সি বা হাস) Syndrome (সিনড্রোম বা অবস্থা) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। অর্থাৎ, বিশেষ কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াকে এইডস (AIDS) বলে। Human Immunodeficiency Virus, সংক্ষেপে HIV নামক ভাইরাস দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। HIV ভাইরাসের আক্রমণে মানুষের শ্বেত রক্তকণিকার ম্যাক্রোফেজ ও T4 লিম্ফোসাইট ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যায়। বর্তমান বিশ্বে AIDS একটি মারাত্মক রোগ। ২০০০ সালে বিশ্বে HIV আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ কোটি ৬০ লক্ষ। এদের মধ্যে মারা যায় প্রায় ৩০ লক্ষ । আফ্রিকান দেশসমূহে HIV-র। আক্রমণ বেশি লক্ষ করা যায়।

ধারণা করা হয় বানরের দেহে এই ভাইরাসটি ছিল যা সর্বপ্রথম আফ্রিকায় বানর থেকে মানুষে স্থানান্তরিত হয় এবং পরে তা আমেরিকা, ইউরোপ তথা বিশ্বময় ছড়িয়ে পডে। ১৯৮৩ সালে ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী Dr. Lue Montagnier এবং আমেরিকার ন্যাশনাল কেমিক্যাল ইনস্টিটিউট এর Dr. Robert Gallo 1984 সালে পৃথকভাবে AIDS এর জীবাণু আবিষ্কার করেন। 

Sexually Transmitted Diseases-AIDS

AIDS-এর বিস্তার (Spread of AIDS)

বিভিন্ন উপায়ে এইডসের ভাইরাস একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যেমন- নারী-পুরুষের অস্বাভাবিক ও অসামাজিক যৌন আচরণ, সংক্রমিত সিরিঞ্জ ব্যবহার, সংক্রমিত রক্ত গ্রহণ, সংক্রমিত মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণকারী শিশু, সেলুনে একই ব্লেড বা ক্ষুর বিভিন্ন জনে ব্যবহার করা, দন্ত চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা গ্রহণকারী ইত্যাদি।

লক্ষণ (Symptoms)

এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শ্বেতরক্তকণিকা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ফলে রোগীর দেহ ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাতে থাকে এবং নিচে বর্ণিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। 

  1. প্রাথমিক অবস্থায় দেহে জ্বর আসে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে জ্বর দীর্ঘায়িত হয়; 

  2. দেহের বিভিন্ন গ্রন্থি ফুলে যায় এবং শরীর শুকিয়ে যায় ও ওজন কমতে থাকে; 

  3. পেটে ব্যথা হয় এবং খাবারে অনীহা সৃষ্টি হয়; 

  4. ফুসফুসে জীবাণুর আক্রমণ ঘটে এবং বুকে ব্যথাসহ শুষ্ক কফ জমে; 

  5. অস্থিসন্ধিসমূহে প্রচন্ড ব্যথা সৃষ্টি হয় এবং দেহে জ্বালাপোড়া হয়; 

  6. শ্বাসকষ্ট, জিহ্বায় সাদা স্তর জমা, ত্বকের মিউকাস ঝিল্লি বা যে কোনো ছিদ্র থেকে রক্তপাত, ঘন ঘন ফুসকুড়ি, সার্বক্ষণিক মাথা ব্যাথা এবং ক্রমশঃ স্মৃতিশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়; 

  7. সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রোগী যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, অন্ধত্ব প্রভৃতি একাধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে পরিশেষে মৃত্যুবরণ করে।

 

Sexually Transmitted Diseases-HIV

এইডস-এর লক্ষণ নারী-পুরুষে প্রায় এক রকম হলেও নারীদেহে কতকগুলো বিশেষ লক্ষণ দেখা যায়, যেমন-যোনিতে দীর্ঘস্থায়ী বা অনিরাময়যোগ্য ঈস্টের সংক্রমণ। এ সংক্রমণ সুস্থ নারীদেহে দ্রুত সেরে যায়। জননতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণজনিত প্রচন্ড জ্বালাপোড়া ও ব্যথা সৃষ্টি হয়। জরায়ু-গাত্রে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV)-এর আক্রমণে টিউমার হওয়া এবং পরবর্তীতে সার্ভিক্স ক্যান্সারে রূপ নেয়া আরেকটি লক্ষণ।

রোগ শনাক্তকরণ (Diagnosis)

বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোটি শনাক্ত করা যায়। রক্ত পরীক্ষার মধ্যে বর্তমানে (TPHA test (Treponemal pallidum particle agglutination test), FTA-Abs test (Fluorescent treponemal antibody absorption test), VDRL test (Veneral disease research laboratory test) প্রচলিত।

 

প্রতিকার (Remedy)

প্রতিরোধ : এইডস প্রতিরোধে নিচে বর্ণিত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

  1. নিরাপদ যৌন সঙ্গম করা এবং ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি মেনে চলা। 

  2. অনিরাপদ যৌন মিলন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা; 

  3. যৌন মিলনে কনডমের ব্যবহার এবং এইডস থেকে রক্ষায় এর ভূমিকা সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা; 

  4. এইডস-এর ভয়াবহতা সম্পর্কে রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা, বিলবোর্ড, পোস্টার ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা; 

  5. ইনজেকশন গ্রহণের সময় ব্যবহৃত সিরিঞ্জ পুনরায় ব্যবহার না করা এবং শিরার মাধ্যমে কোন ড্রাগ গ্রহণ না করা; 

  6. সেলুনে একটি ব্লেড একবারই ব্যবহার করা; 

  7. সংক্রমিত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে সম্পূর্ণভাবে আলাদা রেখে চিকিৎসা প্রদান করা; 

  8. পতিতাদের নিরাপদ যৌনতা সম্পর্কে সচেতন করা, 

  9. প্রতিবার মিলনকালে কনডম ব্যবহার করা প্রভৃতি।

চিকিৎসা (Treatment)

AIDS রোগের চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। গবেষকগণ এ সংক্রান্ত অনেক ঔষধ আবিষ্কার করেছেন। তবে দুটি গ্রুপের ওষুধের ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। প্রথম গ্রুপের ওষুধের নাম নিউকিওসাক রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ ইনহিবিটরস (Nucleoside reverse transcriptase inhibitors)। এটি HIV সংক্রমণকে বিলমিত করে। দ্বিতীয় গ্রুপের ওষুধের নাম প্রোটিয়েজ ইনহিবিটরস (Protease inhibitors)। এটি HIV-এর প্রতিলিপনে বাধা সৃষ্টি করে। এই দুটি গ্রুপের ওষুধ একত্রে সেবন করতে হয় । AIDS-এর এ চিকিৎসা পদ্ধতিকে HAART (Highly Active Antiretroviral Therapy) বলা হয় । HAART যদিও এইডস রোগকে উপশম করে না তবে রোগীর মৃত্যু সংখ্যা কমাতে সাহায্য করে।