10 Minute School
Log in

পদার্থের গঠন (Structure of Matter)

মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ (Elements and Components) :

  • যে পদার্থকে রাসায়নিক উপায়ে বিশ্লেষণ করলে সেই পদার্থ ব্যতিত অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না তাকে মৌলিক পদার্থ বলে।
  • যে সকল পদার্থকে ভাঙলে দুই বা ততোধিক মৌল পাওয়া যায়, তাকে যৌগিক পদার্থ বলা হয়।

পদার্থের গঠন অনুযায়ী, মৌল অর্থাৎ মৌলিক পদার্থকে ভাঙা হলে শুধু মৌলিক পদার্থটাই পাওয়া যায়। যেমন: স্বর্ণ ভাঙলে স্বর্ণ ব্যতিত আর কিছুই পাওয়া যায় না। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত মৌলের সংখ্যা 118টি , তন্মধ্যে 98টি মৌল প্রকৃতিতেই বিদ্যমান। অবশিষ্ট মৌলগুলি গবেষণাগারে উৎপন্ন করা হয় বলে তাদের কৃত্রিম মৌল বলা হয়। মানবদেহে 26টি ভিন্ন ভিন্ন মৌল বিদ্যমান।

অপরদিকে যৌগিক পদার্থগুলো ভাঙলে ভিন্ন ভিন্ন মৌল পাওয়া যায়। যেমন- CO_2 কে ভাঙা হলে  C ও O এ দু’টি মৌল পাওয়া যায়। যৌগের ধর্ম মৌলের চেয়ে আলাদা হয়।

মৌলের প্রতীক (Symbol of Elements) :

প্রতিটি মৌলকে প্রকাশ করতে আলাদা আলাদা প্রতীক ব্যবহার করা হয়। কোনো মৌলের ইংরেজি বা ল্যাটিন নামের সংক্ষিপ্ত রূপকে প্রতীক বলে।

মৌলের প্রতীক লেখার নিয়ম:

১. মৌলের ইংরেজি নামের ১ম অক্ষর দিয়ে প্রতীক লিখতে হয় এবং ইংরেজি বর্ণমালার বড় হাতের অক্ষর দ্বারা প্রকাশ করতে হয়।

২. দুই বা ততোধিক মৌলের ইংরেজি নামের প্রথম অক্ষর একই হলে ১ম মৌলের নাম ইংরেজি ১ম অক্ষর এবং অন্যগুলোর ক্ষেত্রে প্রতীকটি দুই অক্ষরে লেখা হয়।

৩. কিছু মৌলের প্রতীক ল্যাটিন নাম থেকে নেওয়া হয়।

মৌল প্রতীক নাম (বৈদেশিক)
কার্বন C (Carbon)
কোবাল্ট Co (Cobalt)
সোডিয়াম Na (Natrium)
কপার Cu (Cuprium)

অণু-পরমাণু  (Molecules – Atoms)

  • পরমাণু হলো মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা। এতে মৌলের গুণাগুণ বিদ্যমান থাকে। নাইট্রোজেনের পরমাণুতে নাইট্রোজেনের ধর্ম বিদ্যমান থাকে, এভাবে প্রতিটি মৌলের পরমাণুতে তার ধর্ম, গুণাগুণ বিদ্যমান থাকে।
  • দুই বা ততোধিক সংখ্যক পরমাণু পরস্পরের সাথে রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত থাকলে তাকে অণু বলে। পরমাণুগুলো এককভাবে পরিবেশে বিরাজ করতে পারে না। এজন্য এরা অণু গঠন করে।
  • একই মৌলের একাধিক পরমাণুর পরস্পরের সাথে যুক্ত হলে তাকে মৌলের অণু বলে। যেমন – O_2
  • ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণু পরস্পর যুক্ত হলে তাকে যৌগের অণু বলে। যেমন – H_2O

সংকেত (Formula) :

  • কোনো মৌলের বা যৌগের অণুর সংক্ষিপ্তরূপকেই সংকেত বলে।

একটি অণুকে সংক্ষিপ্ত রূপে প্রকাশ করতেই মুলত সংকেত ব্যবহার করা হয়। যেমন: হাইড্রোজেনের একটি অণুকে প্রকাশ করতে  ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ হাইড্রোজেনের অণুতে ২টি হাইড্রোজেন পরমাণু  রয়েছে।

পরমাণুর কণিকা (The Particles of Atom)

পরমাণু ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন এই ৩টি কণিকা নিয়ে গঠিত।

পরমাণুর যে মূল কণিকা ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট হয়, তাকে ইলেক্ট্রন বলে।

  • এটি ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট, এ আধানের পরিমাণ -1.6 \times 10^{-19} কুলম্ব। একে e^{-} প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
  • এর আপেক্ষিক আধান -1 ও আপেক্ষিক ভর 0।
  • ইলেক্ট্রনের ভর প্রোটন ও নিউট্রনের তুলনায় 1840 গুণ কম। এর প্রকৃত ভর 9.11 \times 10^{28}g।

পরমাণুর যে মূল কণিকা ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট হয়, তাকে প্রোটন বলে।

  • এটি ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট। এ আধানের পরিমাণ +1.67 \times 10^{-19} কুলম্ব। একে P প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
  • এর আপেক্ষিক আধান +1 ও আপেক্ষিক ভর 1।
  • প্রোটনের প্রকৃত ভর 1.673 \times 10^{-24}g।

পরমাণুর যে মূল কণিকায় কোনো আধান থাকে না তাকেই নিউট্রন বলে।

  • এতে আধান 0, n প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
  • এর আপেক্ষিক আধান 0, আপেক্ষিক ভর 1।
  • প্রকৃত ভর 1.675 \times 10^{-24}g।

Note:  H ছাড়া সকল মৌলের পরমাণুতেই নিউট্রন থাকে।

পারমাণবিক সংখ্যা ও ভরসংখ্যা (Atomic Number and Mass Number)

  • কোনো মৌলের একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটনের সংখ্যাকে ঐ মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা বলা হয়।
  • পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা দ্বারা ঐ পরমাণুকে চেনা যায়। পারমাণবিক সংখ্যাই হলো পরমাণুর আসল পরিচয়। পারমাণবিক সংখ্যা বা প্রোটন সংখ্যাকে Z দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
  • কোনো পরমাণুতে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার যোগফলকে ঐ পরমাণুর ভরসংখ্যা বলে। একে নিউক্লিয়াস সংখ্যাও বলা হয়। ভরসংখ্যাকে A দিয়ে প্রকাশ করা হয়। ভরসংখ্যা থেকে প্রোটন সংখ্যা বিয়োগ করলে নিউট্রন সংখ্যা পাওয়া যায়। এদেরকে এভাবে প্রকাশ করা হয়।

_{6}^{12}\textrm{C}

এখানে,

পারমাণবিক সংখা/প্রোটন সংখ্যা (Z) = 6

ভরসংখ্যা (A) = 12

ইলেক্ট্রন সংখ্যা = 6

নিউট্রন সংখ্যা = (12-6) = 6

পারমাণবিক ভর, আণবিক ভর (Atomic Mass, Molecular Mass)

পারমাণবিক ভর বা আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর (Atomic Mass or Relative Atomic Mass)

আমরা জানি, প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার যোগফলই হলো ভরসংখ্যা। এক্ষেত্রে ভরসংখ্যাকে অবশ্যই পূর্ণসংখ্যা হবে। কিন্তু Cu, Cl ইত্যাদি বিভিন্ন মৌলের পারমাণবিক ভর দশমিকে হয়। এটি হলো আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর।

আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর একটি মাত্রাবিহীন ভৌত রাশি।

কোনো মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর = \frac{\text{মৌলের একটি পরমাণুর ভর}}{\text{একটি C-12 পরমাণুর ভরের}\frac{1}{12}\text{অংশ}}

C-12 আইসোটোপের পারমাণবিক ভরের \frac{1}{12} অংশ হচ্ছে 1.66 \times 10^{-24}g

যেমন: \text{Al} এর একটি পরমাণুর ভর 4.482 \times 10^{-23} g

Al এর আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর কত ?

Al এর ১টি পরমাণুর ভর 4.482 \times 10^{-23} g

\therefore \text{Al} এর আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর \frac{4.482 \times 10^{-23} g}{1.66 \times 10^{-24}g}

আপেক্ষিক আণবিক ভর (Relative Molecular Mass)

কোনো মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের অণুতে যে পরমাণুগুলো থাকে তাদের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর নিজ নিজ পরমাণু সংখ্যা দ্বারা গুণ করে যোগ করে যে যোগফল পাওয়া যায়, তাকেই আপেক্ষিক আণবিক ভর বলে।

যেমন: H_2SO_4 এর আপেক্ষিক আণবিক ভর =(1\times 2)+32+(16\times 4)\\</span> <span style="color: #000000;">=98

গড় আপেক্ষিক ভর (Average relative mass)

যে মৌলের একাধিক আইসোটোপ আছে সেই মৌলের সকল আইসোটোপের প্রকৃতিতে প্রাপ্ত শতকরা হার থেকে মৌলের গড় আপেক্ষিক ভর নির্ণয় করা হয়। এক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়।

  • মৌলের প্রত্যেকটি আইসোটোপের ভর সংখ্যা এবং প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ঐ আইসোটোপের শতকরা পরিমাণ গুণ দিতে হবে।
  • প্রাপ্ত গুণফলকে যোগ করে দ্বারা 100 ভাগ করতে হবে।

\therefore মৌলের গড় আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর =\frac{P\times m+q\times n}{100}

এখানে,

p  = আইসোটোপের ভর সংখ্যা

m = আইসোটোপের শতকরা পরিমাণ

q =  অপর আইসোটোপের ভর সংখ্যা

n = অপর আইসোটোপের শতকরা পরিমাণ

উদাহরণ : ক্লোরিনের গড় আপেক্ষিক ভর কত ?

আমরা জানি,

প্রকৃতিতে প্রাপ্ত _{35}^{}\textrm{Cl} এর শতকরা পরিমাণ 75%

এবং প্রকৃতিতে প্রাপ্ত _{37}^{}\textrm{Cl} এর শতকরা পরিমাণ 25%

\therefore এর গড় আপেক্ষিক ভর \frac{35\times 75+37\times 25}{100}=35.5(Ans.)

পরমাণু মডেল (Atomic Model)

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল:

1911 সালে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড পরমাণুর গঠন সম্পর্কে একটি মডেল প্রদান করেন। আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষার উপর নির্ভর করে তিনি এ মডেল প্রদান করেন। মডেলটি নিম্নে বর্ণনা করা হলো :

  • পরমাণুর কেন্দ্রের নাম নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসের ভেতর প্রোটন ও নিউট্রন থাকে এবং নিউক্লিয়াস বাইরে ইলেকট্রন অবস্থান করে। আপেক্ষিকভাবে ইলেকট্রনের ভর শূন্য ধরায় নিউক্লিয়াসের ভেতরে অবস্থিত প্রোটন এবং নিউট্রনের ভরই পরমাণুর ভর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
  • নিউক্লিয়াস অতিক্ষুদ্র এবং পরমাণুর অধিকাংশই ফাঁকা।
  • সৌরজগতের মতো ইলেকট্রনগুলোও পরমাণুর চারপাশে ঘুরতে থাকে। পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটনসংখ্যা এবং ইলেকট্রনসংখ্যা সমান হওয়ায় পরমাণুর সামগ্রিক চার্জ শূন্য হয়।
  • ধনাত্মক চার্জযুক্ত নিউক্লিয়াসের প্রতি ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট ইলেকট্রন এক ধরনের আকর্ষণ অনুভব করে। এই আকর্ষণ বল কেন্দ্রমুখী এবং এ কেন্দ্রমুখী বলের কারণে সৌরজগতের মতো নিউক্লিয়াসের চারদিকে ইলেকট্রন ঘুরতে থাকে।

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা :

রাদারফোর্ড সর্বপ্রথম গ্রহণযোগ্য মডেল প্রদান করলেও তার মডেলে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল:

  • এ মডেলে ইলেকট্রনের আকার বা আকৃতি সম্বন্ধে কোনো ধারণা নেই।
  • একের অধিক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণু কীভাবে নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘুরবে তার কোনো ধারণা এ মডেলে নেই।
  • এখানে সৌরজগতের গ্রহ ও সূর্যের সাথে ইলেকট্রন ও নিউক্লিয়াসের তুলনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সৌরজগতের গ্রহসমূহ চার্জবিহীন, অপরদিকে ইলেকট্রন চার্জযুক্ত।
  • ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বমতে ইলেকট্রন ঘূর্ণনের সময় শক্তি বিকিরণ করবে এবং এক সময় নিউক্লিয়াসে পতিত হবে। এতে পরমাণু একটি অস্থায়ী অবস্থা প্রাপ্ত হয়। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটে না।

Note:  রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলকে সৌরমডেল বলা হয়।

বোর পরমাণু মডেল:

১৯১৩ সালে বিজ্ঞানী নীলস বোর একটি পরমাণু মডেল প্রদান করেন। এ মডেলে তিনি রাদারফোর্ডের ত্রুটিগুলো সংশোধন করেন। এ মডেলে ছিল –

  • পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা নিউক্লিয়াস একটি বা নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধের কতগুলো বৃত্তাকার কক্ষপথে অবস্থান করে। এ কক্ষপথগুলোকে শেল/অরবিট বা স্থির কক্ষপথ বলে। এগুলো n দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এখানে,

n = 1 হলে K শক্তিস্তর

n = 2 হলে L শক্তিস্তর

n = 3 হলে M শক্তিস্তর

n = 4 হলে N শক্তিস্তর ইত্যাদি।

  • এ মডেলে কোনো শক্তিস্তরে ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ mvr=\frac{nh}{2\pi}

এখানে,

m =  ইলেকট্রনের ভর

r = কক্ষপথের ব্যাসার্ধ

v = কক্ষপথে ইলেকট্রনের বেগ

h = প্লাঙ্ক ধ্রুবক

n = প্রধান শক্তিস্তর।

  • ইলেকট্রন প্রদক্ষিণের সময় নিম্ন শক্তিস্তর থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে যেতে শক্তি শোষণ করে।

বোর পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা :

বোর মডেল সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্যতা পেলেও এতেও কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়।

  • এ মডেলের সাহায্যে একাধিক ইলেকট্রনবিশিষ্ট পরমাণুর পারমাণবিক বর্ণালি ব্যাখ্যা করা যায় না।
  • বোর মডেল অনুসারে এক শক্তিস্তর থেকে অন্য শক্তিস্তরে গমন করলে ১টি মাত্র রেখা পাবার কথা। কিন্তু শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করলে অসংখ্য ক্ষুদ্র রেখার সমষ্টি দেখা যায়, যার ব্যাখ্যা বোর মডেলে নেই।
  • বোর পরমাণু মডেলে শুধুমাত্র বৃত্তাকার কক্ষপথের উল্লেখ আছে। কিন্তু পরবর্তীতে আবিষ্কৃত হয়েছে পরমাণুতে উপবৃত্তাকার কক্ষপথও রয়েছে।

শক্তিস্তরে ইলেকট্রন বিন্যাস (Orbital Electron configuration)

বোর মডেলে যে কক্ষপথের কথা বলা হয়, তাকে প্রধান শক্তিস্তর বলা হয়। প্রতিটি প্রধান শক্তিস্তরের ইলেকট্রন ধারণক্ষমতা 2n^2 সূত্র মেনে চলে।

K = শক্তিস্তরে n=1,2n^2=(2\times 1) টি =2 টি ইলেকট্রন

L = শক্তিস্তরে n=2,2n^2=(2\times 2^2)= টি =8 টি ইলেকট্রন

M = শক্তিস্তরে n=3,2n^2=(2\times 3^2) টি =18 টি ইলেকট্রন

N = শক্তিস্তরে n=4,2n^2=(2\times 4^2) টি =32 টি ইলেকট্রন

উপশক্তিস্তর (Orbitals) :

প্রধান শক্তিস্তর n দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এই শক্তিস্তরগুলো আবার উপশক্তিস্তরে বিভিন্ন থাকে। এদের l দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।  এর মান 0 থেকে n-1 পর্যন্ত। এদেরকে অরবিটাল বলা হয়। এদের s, p, d, f ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করা হয়।

n=1 \text{হলে}, l=0 \text{অরবিটাল একটি:} 1s\\</span> <span style="color: #000000;">n=2 \text{হলে}, l=0,1 \text{অরবিটাল একটি:} 2s, 2p\\</span> <span style="color: #000000;">n=3 \text{হলে}, l=0,1,2 \text{অরবিটাল একটি:} 3s, 3p, 3d\\</span> <span style="color: #000000;">n=4 \text{হলে}, l=0,1,2,3 \text{অরবিটাল একটি:} 4s, 4p, 4d, 4f\\ইত্যাদি

প্রতিটি অরবিটালে ইলেকট্রন সংখ্যা হচ্ছে : 2(2l+1)

প্রতিটি পূর্ণ শক্তিস্তরে ইলেকট্রন সংখ্যা 2n^2

ইলেকট্রন বিন্যাসের নীতিমালা :

পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসে বেশ কিছু নীতি মেনে চলে। এগুলো হলো

  • ইলেকট্রন প্রথমে সর্বনিম্ন শক্তির অরবিটালে প্রবেশ করে ক্রমান্বয়ে উচ্চশক্তির অরবিটালে প্রবেশ করে।
  • যে অরবিটালে (n+l) এর মান কম এবং সেই অরবিটালে ইলেকট্রন আগে প্রবেশ করে। অপরদিকে (n+l) এর মান বেশি হলে অরবিটালের শক্তি বেশি হয় এবং ইলেকট্রন পরে প্রবেশ করে।
  • নিয়ম অনুযায়ী অরবিটালের ক্রমবর্ধমান শক্তি :

1s<2s<2p<3s<3p<4s<3d<4p<5s<4d<5p<6s<4f<5d<6p<7s<5f<6d<7p<8s

  • উপশক্তিস্তরে সর্বোচ্চ 2 টি ইলেকট্রন,  উপশক্তিস্তরে 6 টি,  উপশক্তিস্তরে সর্বোচ্চ 14 টি ইলেকট্রন থাকতে পারে। এই নীতিতে কয়েকটি ইলেকট্রন বিন্যাস :

K(19)\rightarrow 1s^22s^22p^63s^23p^64s^1\\</span> <span style="color: #000000;">Fe(26)\rightarrow 1s^22s^22p^63s623p^63d^64s^2

ব্যাতিক্রম নিয়ম :

পদার্থের গঠন অনুযায়ী, একই উপশক্তিস্তর p ও d এর অরবিটালগুলো অর্ধপূর্ণ (p^3,d^5) বা সম্পূর্ণ (p^6,d^{10}) হলে ইলেকট্রন বিন্যাস অধিক সুস্থিত হয়। তাই Cr, Cu ইত্যাদি কয়েকটি ব্যাতিক্রমী মৌলের 3d অরবিটাল সুস্থিত অর্ধপুর্ণ হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় 4s অরবিটাল থেকে ইলেকট্রন 3d অরবিটালে যেতে দেখা যায়।

আইসোটোপ, আইসোটোন ও আইসোবার (Isotopes, Isotones, Isobars)

  • যে সকল পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু ভরসংখ্যা ও নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে একে অপরের আইসোটোপ বলে। উদাহরণ: _{6}^{12}\textrm{C}, _{6}^{14}\textrm{C}
  • যে সকল পরমাণুর নিউট্রন সংখ্যা সমান কিন্তু ভরসংখ্যা ও প্রোটন সংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে একে অপরের আইসোটোন বলে। উদাহরণ: _{18}^{38}\textrm{Ar}, _{19}^{39}\textrm{Ar}
  • যে সকল পরমাণুর ভরসংখ্যা সমান কিন্তু অন্যান্য সংখ্যা ভিন্ন থাকে তাদেরকে আইসোবার বলে। উদাহরণ: _{18}^{40}\textrm{Ar}, _{19}^{40}\textrm{K}

তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার (Uses of Radioactive Isotopes)

  • যেসব আইসোটোপের নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেঙ্গে আলফা, বিটা, গামা রশ্মি ইত্যাদি নির্গত করে তাদের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলে।
  • এখন পর্যন্ত 3000 এর বেশি আইসোটোপ সম্বন্ধে জানা আছে। বিভিন্নক্ষেত্রে এখন এই তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করা হচ্ছে –

_{}^{99}\textrm{Tc}\rightarrow _{}^{99}\textrm{Tc}+\gamma \Rightarrow রোগাক্রান্ত স্থান নির্ণয়ে

_{}^{153}\textrm{Sr} / _{}^{89}\textrm{Sr} \Rightarrow হাড়ের ব্যাথায়

_{}^{60}\textrm{Co} \Rightarrow ক্যান্সার কোষকলা ধ্বংসে এবং টিউমার নির্ণয় ও নিরাময়ে

_{}^{32}\textrm{P} \Rightarrow রক্তের লিউকোমিয়া রোগের চিকিৎসায়।

_{}^{238}\textrm{Pu} \Rightarrow হার্টে পেইসমেকার বসাতে।

এছাড়াও থাইরয়েড ক্যান্সার নিরাময়ে _{}^{131}\textrm{I} , ফসলের পুষ্টিতে তেজস্ক্রিয় নাইট্রোজেন ও ফসফরাস প্রদান করা হয়।

  • তবে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ আমাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আলফা, বিটা, গামা রশ্মি নির্গত হয়ে কোষের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।

Other Topics