টয়লেট ক্লিনার (Toilet cleaner)
❒ টয়লেট ক্লিনার (Toilet cleaner) প্রস্তুতি বর্ণনা কর।
টয়লেট ক্লিনার প্রস্তুতি (Preparation of Toilet cleaner):
টয়লেট ক্লিনার (Toilet cleaner) প্রস্তুতির বেলায় তিনটি বিষয় চিন্তা করে উপাদান নির্দিষ্ট করা। এ তিনটি বিষয় হলো Toilet bowl এর দাগ (stains), দুর্গন্ধ (bad odor) দূরীকরণ ও জীবাণু (germs) ধ্বংস করা। কস্টিক ব্যবহার করে টয়লেট ক্লিনার প্রস্তুতির একটি সাধারণ ফর্মুলা তৈরি করা হলো। যেমন-
১। কস্টিক সোডা (\mathrm{NaOH}): | (চর্বি বা গ্রিজের দ্রাবক) | 1.0kg |
২। সোডিয়াম লরাইল সালফেট (\left(\mathrm{C}_{2} \mathrm{H}_{25} \mathrm{SO}_{4} \mathrm{Na}\right)) | (Surfectant) | 1.0kg |
৩। ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট \left[\mathrm{Ca}(\mathrm{OCl})_{2}\right]: | (ব্লিচিং এজেন্ট জীবাণুনাশক) | 1.5kg |
৪। পানি | (মূল দ্রাবক) | 5.0 Litre |
৫। রং (এসিড ব্লু-9 ডাই) : | (রঞ্জক) | 200g |
৬। ফেনল : | (দুর্গন্ধনাশক, জীবাণুনাশক) | 100g |
প্রস্তুতি : দুটি পাত্রের একটিতে ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট যথাসম্ভব কম পানিতে দ্রবীভূত করা হয়। দ্বিতীয় পত্রের পানিতে কস্টিক সোডা ও অন্যান্য বস্তু যোগ করে মিশ্রিত করা হয়। এরপর দুটি মিশ্রণকে একত্রে মিশ্রিত করা হয়। মিশ্রণটি প্লাস্টিকের বোতলে ভর্তি করে মুখ বন্ধ করা হয়।
সতর্কতা : কস্টিক সোডা তীব্র ক্ষয়ক্ষারক; এটি চামড়ার ক্ষতি করে। কস্টিক সোডা ব্যবহারে হাতে গ্লাভস ও চোখে গগলস পরে নিতে হবে।
❒ টয়লেট ক্লিনারের পরিস্কারকরণ কৌশল লিখ।
টয়লেট ক্লিনারের ময়লা পরিষ্কার করার কৌশল (Toilet cleaner cleaning techniques):
(১) টয়লেট ক্লিনারের কস্টিক সোডা ও ডিটারজেন্ট সোডিয়াম লরাইল সালফেট তেল চর্বি ও ময়লা পরিষ্কারকরূপে কাজ করে। সবল ক্ষার কষ্টিক সোডা (\mathrm{NaOH}) টয়লেটের ময়লার তেল ও চর্বির সাথে বিক্রিয়া করে গ্লিসারিন ও দ্রবণীয় সোডিয়াম সাবান উৎপন্ন করে। এর ফলে টয়লেটটি চর্বি ও তেল জাতীয় পদার্থ মুক্ত হয়।
ব্যবহৃত ডিটারজেন্ট সোডিয়াম লরাইল সালফেট এবং চর্বি থেকে উৎপন্ন সাবান উভয়ের অণুতে পোলার অংশ ও নন-পোলার এ দুটি অংশ থাকে। ডিটারজেন্ট ও সাবানের পোলার অংশটি পানিতে দ্রবণীয়; এটিকে ডিটাজেন্ট ও সাবানের মাথা বলে। অপরর নন-পোলার অংশটি হাইড্রোকার্বনের লম্বা শিকল। এটি পানিতে অদ্রবণীয়, কিন্তু তেল ও চর্বিতে দ্রবণীয়। এটিকে ডিটারজেন্ট ও সাবানের লেজ বলে। যেমন-
ডিটারজেন্ট ও সাবানের ননপোলার লেজ অংশ তৈল ও চর্বিতে দ্রবণীয় হওয়ায় এটি তৈলাক্ত ময়লার সাথে আবদ্ধ হয়ে টয়লেটের তলদেশ থেকে ময়লাকে সহজেই তুলে ফেলে এবং পানিতে ধুয়ে ফেলে।
(২) টয়লেটের দুর্গন্ধ ও দাগ দূর করতে ব্লিচিং এজেন্টরূপে ভূমিকা রাখে ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট।
(৩) জীবাণুনাশকরূপে কাজ করে ফেনল, এটি জীবাণুকে মেরে ফেলে ও দুর্গন্ধ দূর করে।
❒ NaOH টয়লেট সামগ্রীর ক্ষতি করে না কেন?
টয়লেট হলো পোর্সেলিন সামগ্রী। পোর্সেলিন তৈরি হয় চায়না ক্লে (\left(\mathrm{Al}_{2} \mathrm{O}_{3} \cdot 2 \mathrm{SiO}_{2} \cdot 2 \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}\right) ), সিলিকা বালি (\mathrm{SiO}_{2}) ও পটাশ ফেল্ডম্পার (\left(\mathrm{K}_{2} \mathrm{O}, \mathrm{Al}_{2} \mathrm{O}_{3} \cdot 6 \mathrm{SiO}_{2}\right)) মিশ্রণকে 1400^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে। এরূপে উৎপন্ন সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত পোর্সেলিনকে 1600^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রার উর্ধ্বে NaClও স্টিমসহ উত্তপ্ত করলে স্টিমের উপস্থিতিতে \mathrm{NaCl} বিয়োজিত হয়ে \mathrm{NaCl} ও HClগ্যাস উৎপন্ন করে। উৎপন্ন \mathrm{Na}_{2} \mathrm{O}ঐ পোর্সেলিনের অতিরিক্ত সিলিকাসহ বিক্রিয়া করে সোডিয়াম সিলিকেট তৈরি করে এবং উৎপন্ন এ সিলিকেট বিগলিত হয়ে পোর্সেলিনের গায়ের সূক্ষ্ম ছিদ্রগুলোকে বন্ধ করে মসৃণ গ্লেজ (glaze) সৃষ্টি করে। এর ফলে উৎপন্ন পোর্সেলিন সিরামিক পানিরোধী হয়। সুতরাং পেপার্সেলিনের ওপর \mathrm{NaOH} ক্ষার দ্রবণের কোনো ক্রিয়া চলে না।
\begin{array}{c} 2 \mathrm{NaCl}(s)+\mathrm{H}_{2} \mathrm{O}(g) \stackrel{1600^{\circ} \mathrm{C}}{\longrightarrow} \mathrm{Na}_{2} \mathrm{O}(s)+2 \mathrm{HCl}(g) \\ \quad \mathrm{Na}_{2} \mathrm{O}(s)+\mathrm{SiO}_{2}(s) \stackrel{1600^{\circ} \mathrm{C}}{\longrightarrow} \mathrm{Na}_{2} \mathrm{SiO}_{3}(l) \end{array}❒ টয়লেট ক্লিনারের পরিস্কার কৌশল লিখ।
টয়লেট ক্লিনারের পরিষ্কারকরণ কৌশল (Cleaning Process of Toilet Cleaner) :
টয়লেট ক্লিনার একটি উত্তম পরিষ্কারক। টয়লেটের গন্ধ দূর করা, উৎপন্ন ব্যাকটেরিয়াকে নির্মূল করা, ফাঙ্গাস দূর করে টয়লেটের টাইলস বা মজোইককে উজ্জ্বল, চকচকে ও সতেজ রাখে। টয়লেট ক্লিনারের মূল উপকরণ কস্টিক সোডা (\mathrm{NaOH}) অথবা এর পরিবর্তে বেকিং সোডা (\left(\mathrm{NaHCO}_{3}\right)), খাদ্য লবণ (NaCl), বোরাক্স (\left(\mathrm{Na}_{2} \mathrm{~B}_{4} \mathrm{O}_{7}\right)), তরল সাবান, ব্লিচিং। এজেন্ট, ফেনল, ভিনেগার প্রভৃতি। টয়লেটের ময়লার তেল ও চর্বির সাথে কস্টিক সোডা বা বেকিং সোডা বিক্রিয়া করে সাবান ও গ্লিসারিন উৎপন্ন করে।
উপস্থিত লবণ এ প্রক্রিয়াকে আরও সহায়তা করে। উৎপন্ন সাবান ও টয়লেট ক্লিনার প্রস্তুতির সময় সংযুক্ত সাবান পরিষ্কারক হিসেবে মুখ্য ভূমিকা রাখে। সাবানের অণুতে পোলার ও অপপালার এ দুটি অংশ থাকে। সাবানের এক প্রান্তের পোলার কার্বক্সিলেট আয়ন।
চিত্রঃ সাবানের হাইড্রোফোবিক ও হাইড্রোফিলিক অংশ
হাইডোফিলিক (Hydrophilic) ও অপর প্রান্তের অপোলার (Lipophilic) অংশ থাকে। হাইড্রোফিলিক পানিতে দ্রবণীয় ও পোলার লিপোফিলিক তেল, চর্বিতে দ্রবণীয় এবং অপোলার। সংক্ষেপে সাবানের লেজ ও মাথাকে নিম্নরূপে দেখানো হয়-
টয়লেট ক্লিনার যখন পানির সংস্পর্শে এসে গলে যায় তখন এর সাবানের হাইড্রোফিলিক কার্বক্সিলেট আয়ন পানিতে দ্রবীভূত হয়। কিন্তু হাইড্রোফোবিক দীর্ঘ হাইড্রোকার্বন শিকল যা পানিতে দ্রবীভূত থাকে।
ফলে টাইলস্ এর পানির উপরিতলে সাবানের একটি অতি সূক্ষ্ম স্তর সৃষ্টি হয়। টাইলস বা ফ্লোরের ময়লাযুক্ত তৈলাক্ত স্তরে সাবানের দীর্ঘ হাইড্রোকার্বন শিকলটি দ্রবীভূত হয় এবং সাবানের পোলার কার্বক্সিলেট আয়ন পানিতে দ্রবীভূত হয়ে যায়। সাবানের আয়নসমূহ তেলের সূক্ষ্ম কণাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং তেলের ফোঁটার মধ্যে সাবানের লেজ ঢুকে পড়ে। যখন টাইলস বা ফ্লোরের উপর টয়লেট ক্লিনার ছিটিয়ে ব্রাশ দ্বারা আলোড়িত করা হয় তখন তেল ও ময়লার সূক্ষ্ম কণাগুলো টাইলস হতে আলাদা হয়ে পানিতে ভেসে উঠে । তেল ও ময়লার প্রতিটি সূক্ষ্ম কণা ঋণাত্মক চার্জযুক্ত হয়ে পড়ে ফলে এরা পরস্পরকে বিকর্ষণ করে কিন্তু জমাট বাঁধে না। এরা ইমালশনে পরিণত হয়। যখন পানি দ্বারা টাইলস বা ফ্লোর। ধুয়ে ফেলা হয় তখন অতি সহজে অপসারিত হয় ফলে টাইলস উজ্জ্বল, মসৃণ, ঝকঝকে ও সতেজ দেখায়।
টয়লেট ক্লিনারে ব্যবহৃত ব্লিচিং এজেন্ট হলো ব্লিচিং পাউডার বা ক্যালসিয়াম ক্লোরোহাইপোক্লোরাইট \mathrm{Ca}(\mathrm{OCl}) \mathrm{Cl}l। এটি পানির সংস্পর্শে এসে জীবাণু ও দাগ দূর করে।
\begin{array}{c} \mathrm{Ca}(\mathrm{OCl}) \mathrm{Cl}(s)+\mathrm{H}_{2} \mathrm{O}(l) \rightarrow \mathrm{Ca}(\mathrm{OH})_{2}(a q)+\mathrm{Cl}_{2}(g) \\ \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}(l)+\mathrm{Cl}_{2}(g) \rightarrow \mathrm{HCl}(a q)+\mathrm{HOCl}(a q) \\ \mathrm{HOCl}(a q) \rightarrow \mathrm{HCl}(a q)+[\mathrm{O}] \end{array}জীবাণু + [O] → মৃত জীবাণু, রঙিন দাগ + [O] → বর্ণহীন ঝকঝকে। ফলে টয়লেটের কমোডটি উজ্জ্বল, মসৃণ, ঝকঝকে ও জীবাণুমুক্ত হয়। টয়লেট ক্লিনারে উপস্থিত ভিনেগার টয়লেটের উৎপন্ন ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ও উৎপন্ন কটু গন্ধকে দূর করে। ভিনেগার ও বোরাক্স উৎপন্ন ফাঙ্গাসকে দূর করে এবং ফাঙ্গাস উৎপাদনে প্রতিরোধ করে। ফেনল তীব্র জীবাণুনাশক। এটি জীবাণুকে ধ্বংস করার পাশাপাশি দুর্গন্ধ দূর করে। এছাড়া বোরাক্স ব্যাকটেরিয়াকে নির্মূল করে ও গন্ধ দূর করে। ক্লিনারে যুক্ত সাবান পানিতে দ্রবীভূত হয়ে সাবানের দ্রবণ ও ফেনা তৈরি করে। উৎপন্ন ফেনার মধ্যেই ময়লা, তেল, চর্বি প্রভৃতি অদ্রবণীয় উপাদান ইমালশন সৃষ্টি করে। পানি দ্বারা ধুয়ে ফেললেই এরা টাইলস, টয়লেটের কমোড, বেসিন প্রভৃতি স্থান হতে অপসারিত হয়।
চিত্রঃ সাবানের হাইড্রোফোবিক ও হাইড্রোফিলিক অংশ
❒ প্রশ্ন : টয়লেট ক্লিনারে কস্টিক সোডা ব্যবহার করা হলেও গ্লাস ক্লিনারে অ্যামোনিয়া ব্যবহারের কারণ বর্ণনা কর।
উত্তরঃ তেল গ্রীজ প্রভৃতি ময়লা অপসারণের জন্য ক্ষার খুবই কার্যকর। এজন্য কাঁচ এবং টয়লেট ক্লিনিংয়ে ক্ষার জাতীয় ক্লিনার ব্যবহার করা হয়।
পৃষ্ঠতল সংবেদনশীল হলে পরিস্কারক রাসায়নিকের অপেক্ষাকৃত মৃদুও পরিমাণগতভাবে কম ব্যবহৃত হয়। পক্ষান্তরে শক্ত ও ক্ষয়রোধী পৃষ্ঠতলের জন্য পরিস্কারক রাসায়নিক ধর্ম অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ও বেশী ব্যবহৃত হয়। তবে গ্লাসের এসব ময়লা দূর করার জন্য সব ক্ষার – জাতীয় পদার্থ যেমন- NaOH, KOH, \mathrm{NH}_{4} \mathrm{OH}প্রভৃতি কার্যকর হলেও তীব্র ক্ষার NaOHবা KOHব্যবহার করা যায় না। কারণ কাচ হলো একটি দ্বিসিলিকেট (Double Silicate), \mathrm{Na}_{2} \mathrm{O}, \mathrm{CaO}, \mathrm{xSiO}_{2} তাই তীব্র ক্ষার NaOHবা KOHকাচের উপাদান সিলিকার সঙ্গে বিক্রিয়া করে দ্রবণীয় সিলিকেট উৎপন্ন করে।
তাই কাচ পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহৃত গ্লাস ক্লিনারে তীব্র ক্ষার NaOHবা KOH ব্যবহার করা যায় না। তবে অ্যামোনিয়াকে গ্লাস ক্লিনারের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কারণ এটি কাঁচের ময়লা পরিষ্কার করলেও কাঁচের উপাদানের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না। ফলে কাঁচ ক্ষয় হয় না।