এন-টাইপ ও পি-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী (n-type and p-type semiconductors )
সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী এবং ইলেকট্রন ও হোলের ধারণা(n-type and p-type semiconductors and Concept about electron and hole )
ইলেকট্রন ও হোলের ধারণা (Concept about electron and hole)
কক্ষ তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ অর্ধপরিবাহীতে হোল ইলেকট্রন জোড় সৃষ্টি হয়। যখন অর্ধপরিবাহীতে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র প্রয়াগ করা হয় তখন এর মধ্যে দুভাবে কারেন্ট প্রবাহ সম্পন্ন হয়। যেমন মুক্ত ইলেকট্রনের মাধ্যমে ও হোলের মাধ্যমে। যখন তাপমাত্রা বৃদ্ধি করা হয়। তখন তাপশক্তির কারণে কিছু সংখ্যক সমযোজী বন্ধন ভেঙে যায় এবং কিছু ইলেকট্রন মুক্ত হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে কিছু সংখ্যক যোজন ইলেকট্রন পরিবহন ব্যান্ডে প্রবেশ করে এবং মুক্ত ইলেকট্রনে পরিণত হয়। যখনই একটি যোজন ইলেকট্রন পরিবহন ব্যান্ডে প্রবেশ করে তখনই যোজন ব্যান্ডে একটি শূন্যস্থান বা হোলের সৃষ্টি হয়। বিভব পার্থক্য বা বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের প্রভাবে অর্ধপরিবাহীতে ইলেকট্রন ও হোল উভয়ের প্রবাহ উৎপন্ন হয়
আমাদের সবচেয়ে পরিচিত বিশুদ্ধ অর্ধপরিবাহী হল জার্মেনিয়াম (Ge) ও সিলিকন (Si)। এদের যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যবর্তী শক্তি ব্যবধান 0.72 eV এবং শক্তি ব্যবধান 1.1 eV। কক্ষ তাপমাত্রায় কিছু সংখ্যক ইলেকট্রন এই ক্ষুদ্র শক্তি ব্যবধান অতিক্রম করে যোজন ব্যান্ড থেকে পরিবহন ব্যান্ডে গমন করে। ফলে যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডে সমসংখ্যক হোল ও ইলেকট্রনের উদ্ভব ঘটে। এই ঘটনাকে হোল-ইলেকট্রন জোড় সৃষ্টি বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, পরিবহন ব্যান্ডে ইলেকট্রনের গমনের কারণে যোজন ব্যান্ডে সৃষ্টি হয় পজেটিভ চার্জযুক্ত হোল। পরম শূন্য তাপমাত্রার উপরে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র প্রয়োগ করা হলে পরিবহন ইলেকট্রন অ্যানোডের দিকে এবং হোলগুলো ক্যাথোডের দিকে ধাবিত হয়। তাই বলা যায় অর্ধপরিবাহী প্রবাহ হলো পরিবহন ও যোজন ব্যান্ডের মধ্যে যথাক্রম ইলেকট্রন ও হোলের পরস্পরের বিপরীত দিকে চালিত হওয়া।
এন-টাইপ ও পি-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী (n-type and p-type semiconductors )
অবিশুদ্ধ কেলাস বা অর্ধপরিবাহী পদার্থ আবার দুই রকমের, যথা- n-টাইপ ও p-টাইপ। Negative শব্দের আদ্যক্ষর’ n থেকে n-type এবং Positive এর p থেকে p-type অর্ধপরিবাহীর নামকরণ করা হয়েছে।
(i) এন-টাইপ অর্ধপরিবাহী : জার্মেনিয়াম বা সিলিকন অর্ধপরিবাহীর সঙ্গে পঞ্চযোজী মৌল মিশিয়ে n-টাইপ অর্ধপরিবাহী তৈরি করা হয়। পঞ্চযোজী এন্টিমনি বা আর্সেনিক বিশেষ প্রক্রিয়ায় উচ্চতাপে মেশানো হয়।
এভাবে গঠিত কেলাসে প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে প্রায় 10^{17} সংখ্যক স্বাধীন ইলেকট্রন থাকে। তড়িৎ পরিবহনে ঋণাত্মক ইলেকট্রনই মুখ্য ভূমিকা পালন করে বলে এগুলোকে সংখ্যাগুরু বা গরিষ্ঠ বাহক’ (majority carrier) বলে। ধনাত্মক হোল তড়িৎ পরিবহনে গৌণ ভূমিকা পালন করে এবং এগুলাকে সংখ্যালঘু বা লঘিষ্ঠ বাহক’ (minority carrier) বলা হয়।
(ii) পি-টাইপ অর্ধপরিবাহী : বিশুদ্ধ জার্মেনিয়াম বা সিলিকনের সঙ্গে 3-যোজী মৌল যেমন গ্যালিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি অপদ্রব্য সামান্য পরিমাণে নিয়ন্ত্রিতভাবে মেশানো হলে p-টাইপ কেলাস তৈরি করা যায়। অ্যালুমিনিয়ামের যেহেতু তিনটি যোজনী ইলেকট্রন রয়েছে, এই পরমাণু তার চারপাশের জার্মেনিয়াম বা সিলিকন পরমাণুর তিনটি যোজন (valence) ইলেকট্রনের সঙ্গে সমযোজী বন্ধন তৈরি করে।
অর্থাৎ, হোলই এক্ষেত্রে ‘সংখ্যাগুরু বাহক‘ (majority carrier) এবং ইলেকট্রন ‘সংখ্যালঘু বাহক‘ (minority carrier)।
অর্ধপরিবাহীর যোজন ইলেকট্রনের চেয়ে অপদ্রব্যের যোজন ইলেকট্রন সংখ্যা বেশি হলে এবং n-টাইপ কেলাস কম হলে p-টাইপ কেলাস তৈরি হবে। তবে n-টাইপ বা p-টাইপ কেলাসের কোনটাই কিন্তু তড়িতাহিত হয় না। কারণ n-টাইপ কেলাসের অতিরিক্ত ইলেকট্রনের ঋণাত্মক আধান আর্সেনিক পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক আধান দ্বারা প্রশমিত হয়। আবার p-টাইপের সৃষ্ট হোলের ধনাত্মক আধান জার্মেনিয়াম, সিলিকন পরমাণুর ঋণাত্মক আধানের দ্বারা নিষ্ক্রিয় হয়। অর্থাৎ, n-এবং p-টাইপ পদার্থ বস্তুতপক্ষে তড়িৎ নিরপেক্ষ।
সমান রোধের দুটি দণ্ড তোমাকে দেওয়া হলো। এর একটি অর্ধপরিবাহী এবং অপরটি পরিবাহী। পরীক্ষা দ্বারা কীভাবে তুমি চিহ্নিত করতে পারবে ?
আমরা জানি, তাপমাত্রা বাড়ালে পরিবাহীর রোধ বাড়ে এবং অর্ধপরিবাহীর রোধ কমে। সুতরাং, তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে দণ্ড দুটিকে পরপর একই তড়িৎ উৎসের সঙ্গে যুক্ত করলে যেটির মধ্য দিয়ে প্রবাহমাত্রা বৃদ্ধি হবে সেটি অর্ধপরিবাহী দণ্ড এবং অন্যটি পরিবাহী দণ্ড হিসেবে চিহ্নিত হবে।