10 Minute School
Log in

পরিবাহী, অপরিবাহী ও অর্ধপরিবাহীর ধারণা | Concepts of Conductor, Non-Conductor and semiconductors

পরিবাহী, অপরিবাহী ও অর্ধপরিবাহীর ধারণা (Concepts of Conductor, Non-Conductor, and semiconductors)

 

তড়িৎ পরিবাহীতার প্রকৃতি অনুসারে কঠিন পদার্থকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যে সমস্ত পদার্থের ভেতর দিয়ে তড়িত সহজে চলাচল করতে পারে সেগুলোকে বলা হয় পরিবাহী (Conductor)। যেমন:- সোনা, তামা, রুপা, এলুমিনিয়াম ইত্যাদি।

এক ধরণের পদার্থ আছে যার ভিতর দিয়ে তড়িৎ চলাচল করতে পারেনা। এদেরকে বলা হয় অপরিবাহী। যেমন-রাবার, সিরামিক, কাঁচ, কাঠ ইত্যাদি।আমরা জানি, পরিবাহী ও অন্তরকের মাঝামাঝি এক ধরণের পদার্থ আছে যার তড়িত পরিবাহীতা পরিবাহী পদার্থের চেয়ে অনেক কম; কিন্তু অন্তরকের চেয়ে অনেক বেশি। এগুলোকে বলা হয় অর্ধপরিবাহী। যেমন-জার্মেনিয়াম, সিলিকন, কার্বন, ক্যাডিয়াম সালফাইড, গ্যালিয়াম আর্সেনাইড ইত্যাদি।

তামার আপেক্ষিক রোধ সাধারণ তাপমাত্রায় 10^{-8} \Omega m; পক্ষান্তরে কাচের আপেক্ষিক রোধ 10^{-16} \Omega m। অর্ধপরিবাহীর আপেক্ষিক রোধ থাকে 10^{-5} \Omega m থেকে  10^{-8} \Omega m। সাধারণ তাপমাত্রায় অর্ধপরিবাহী পদার্থ অন্তরক বা অপরিবাহী হিসেবে কাজ করে; কিন্তু অর্ধপরিবাহী কেলাসকে যদি উত্তপ্ত করা হয় তাহলে সে দ্রুত তাঁর রোধ হারায়, অর্থাৎ পরিবাহীতা বৃদ্ধি পায়। আবার তাপমাত্রা হ্রাস করলে অর্ধপরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পায়। পরম শূন্য তাপমাত্রায় পুরাপুরি কুপরিবাহীর মত কাজ করে, সুপরিবাহী পদার্থের বেলায় এর উলটা ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ, উত্তপ্ত হলে সুপরিবাহী পদার্থের রোধ বৃদ্ধি পায়।

অর্ধপরিবাহী পদার্থের আর একটা বিশেষ ধর্ম হচ্ছে যে, যদি কোনো বিশুদ্ধ (pure) অর্ধপরিবাহীর সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট অপদ্রব্যের খুব সামান্য অংশমাত্র (দশলক্ষ ভাগের এক ভাগমাত্র) মেশানো হয় তাহলে এর রোধ অনেক গুণ কমে যায়। এ ধরণের মিশ্রণ পদ্ধতিকে বলা হয় ডোপিং (doping)। বিভিন্ন ডিভাইস বা যন্ত্রাংশ তৈরিতে অপদ্রব্য মিশ্রিত অর্ধপরিবাহী পদার্থই ব্যাবহার করা হয়।

অর্ধপরিবাহী পদার্থের আরেকটা বিশেষ ধর্ম হচ্ছে যে যদি কোনো বিশুদ্ধ অর্ধপরিবাহীর সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট অপদ্রব্যের খুব সামান্য অংশ্মাত্র (দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ মাত্র) মেশানো হয়, তাহলে এর রোধ অনেক গুণ কমে যায়। এ ধরণের মিশ্রণ পদ্ধতিকে বলা হয় ডোপিং। বিভিন্ন ডিভাইস বা যন্ত্রাংশ তৈরিতে অপদ্রব্য মিশ্রিত অর্ধপরিবাহী পদার্থই ব্যবহার করা হয়। 

crystallization of Germanium atom (semiconductor)

 

জার্মেনিয়াম বা সিলিকন সমযোজী গ্রন্থির সাহায্যে বিশুদ্ধ কেলাস গঠন করে। বিশুদ্ধ জার্মেনিয়াম বা সিলিকন কেলাসে কোনো স্বাধীন বা মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না। ফলে পরম তাপমাত্রায় এদের তড়িত পরিবহন ক্ষমতা থাকেনা। এই ধরণের বিশুদ্ধ কেলাসের তাপমাত্রা বাড়ালে তাপীয় উত্তেজনায় কেলাসের পরমাণুর কিছু গ্রন্থি ভেঙ্গে যায়; ফলে কিছু ইলেকট্রন মুক্ত হয় এবং তড়িত পরিবহন করে। এভাবে বিশুদ্ধ অর্ধপরিবাহী পদার্থ স্বল্প তড়িৎ পরিবাহকত্ব লাভ করে।

কঠিন পদার্থের শক্তি ব্যান্ড

 

শক্তি ব্যান্ডঃ

কোনো পদার্থে বিভিন্ন পরমাণুতে কিন্তু একই কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রন গুলোর শক্তির সামান্য তারতম্য হয়। একই কক্ষপথে অবস্থিত এই সকল ইলেক্ট্রনের শক্তির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মানের মর্ধ্যবর্তী পাল্লাকে শক্তি ব্যান্ড বলে। 

যোজন ব্যান্ডঃ

যে ইলেকট্রনগুলো পরমাণূর সবচেয়ে বাইরের কক্ষপথে অবস্থান করে, তাদেরকে যোজন ইলেকট্রন বলে। কেলাসিত পদার্থের ক্ষেত্রে যোজন ইলেকট্রনগুলির শক্তি যে বিস্তৃত পাল্লার মধ্যে থাকে তাঁকে যোজন পাল্লা বা যোজন ব্যান্ড বলে। সাধারণত পরমাণুতে দূরতম কক্ষপথে অবস্থিত ইলেক্ট্রনের শক্তি সর্বোচ্চ। এই ব্যান্ড পূর্ণ বা আংশিক পূর্ণ থাকতে পারে। কেবলমাত্র নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ক্ষেত্রে যোজন ব্যান্ড পূর্ণ থাকে।

যদিও যোজ্যতা প্রতিটি নিজ পরমাণুর প্রভাব থেকে বাইরে চলে আসে, কিন্তু এগুলো সম্পুর্ণ মুক্ত নয়। অন্যান্য পরমাণুসমষ্টির প্রভাবের মধ্যে থেকে যায়। ফলে তড়িৎ পরিবহনে অংশগ্রহণ করেনা।

পরিবহন ব্যান্ডঃ

পরমাণুতে অবস্থিতমুক্ত যোজন ইলেকট্রন বিদ্যুৎ পরিবহনে অংশগ্রহণ করে। ফলে এদের পরিবহন ইলেকট্রন বলে। এই ইলেকট্রনগুলোর শক্তি পাল্লা বা ব্যান্ডকে পরিবহন ব্যান্ড বলে।

নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ডঃ

যোজন ব্যান্ড এবং পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যবর্তী শক্তির পাল্লাই হলো নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ড। এই নিষিদ্ধ অঞ্চলে কোনো অনুমোদিত শক্তিস্তর না থাকায় এই অঞ্চলে কোনো ইলেকট্রন থাকতে পারেনা। কেলাসের মধ্যে কোনো ইলেকট্রনকে যোজন ব্যান্ড থেকে পরিবহন ব্যান্ডে তুলতে হলে ইলেকট্রনকে সর্বনিম্ন যে শক্তি সরবরাহ করতো তা নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ডের শক্তির সমান।