10 Minute School
Log in

কার্বনের বহুরূপতা

প্রকৃতিতে কিছু মৌলের দুই বা তোধিক রূপে অবস্থান করার বৈশিষ্ট্যকে বহুরূপতা (Allotropy) বলে। মৌলের রূপগুলো (Allotropes) পরস্পর হতে কাঠামো, কেলাস, বর্ণ, ঘনত্ব ইত্যাদি ভৌত ধর্মে এবং রাসায়নিক সক্রিয়তার মাত্রায় ভিন্ন ভিন্ন হয়। 

  • কার্বন, অক্সিজেন, সালফার, ফসফরাস ইত্যাদি মৌল বহুরূপতা প্রদর্শন করে।
  • বহুরূপতার কারণ: .সমান সংখ্যক পরমাণু দ্বারা গঠিত একই মৌলের অণুসমূহে পরমাণুর বিন্যাসগত পার্থক্যের কারণে বহুরূপতার সৃষ্টি হয়। ২. একই মৌলের অণুর মধ্যে পরমাণুর সংখ্যাভিন্নতা বা অভ্যন্তরীণ শক্তির ভিন্নতার কারণে বহুরূপতা পরিলক্ষিত হয়।
  • কার্বনের বিভিন্ন রূপভেদগুলোকে প্রধানত দুশ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা

. দানাদার কার্বন : প্রধানত দুপ্রকার। যথা: . হীরক, . গ্রাফাইট।

. অদানাদার কার্বন : প্রধানত তিন প্রকার। যথা:. চারকোল বা অঙ্গার, . ভূসা কয়লা এবং . কোল।

হীরক

বর্ণহীন, স্বচ্ছ, স্ফটিকাকার কঠিন পদার্থ। প্রাকৃতিক জগতের সর্বাপেক্ষা কঠিন পদার্থ হলো হীরক

  • হীরকের আপেক্ষিক গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। হীরককে হীরক ব্যতিত অন্য কোন পদার্থ দ্বারা কাটা যায় না। এতে কার্বনের পরিমাণ শতকরা ১০০%। আসল হীরা চেনার উপায় হল এর ভেতর দিয়ে রঞ্জন রশ্মি যেতে পারে না। কাঁচ কাটার জন্য হীরক ব্যবহৃত হয়।
  • হীরকের বৈশিষ্ট্য: আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ঘটে। সংকট কোণ ২৪ ডিগ্রী। এরা সবচেয়ে কঠিন পদার্থ এবং বিদ্যুৎ অপরিবাহী। চূর্ণরং তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ও কাঁচ কাটতে ব্যবহার করা হয়।
  • হীরকের আলোর প্রতিসরণ ক্ষমতা বেশি, উজ্জ্বল ও চকচকে বলে হীরক অত্যন্ত মূল্যবান । 
  • বর্তমানে হীরক অপেক্ষা কঠিন একটি যৌগ আবিষ্কৃত হয়েছে, এর নাম বোরোজেন ।
  • হীরকের কাঠামো: হীরকের কাঠামোতে sp³ সংকরিত কার্বন পরমাণুসমূহ পরস্পর দৃঢ় সমযোজী বন্ধন দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি বৃহদাকার ত্রিমাত্রিক স্ফটিক কাঠামো গঠন করে । এ কাঠামোতে এক একটি চতুস্তলকের চার শীর্ষে অবস্থিত চারটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে কেন্দ্রীয় কার্বন পরমাণু চারটি সুষম সমযোজী বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে । এসব C—C বন্ধনের দৈর্ঘ্য 0.15 nm, বন্ধনগুলো লোকালাইজড ইলেকট্রন দ্বারা এমন দৃঢ়ভাবে যুক্ত হয় যে, এ কাঠামো ভাগ করা অত্যন্ত দুরুহ । আর তাই হীরকের গলনাঙ্ক  অত্যন্ত উচ্চ (প্রায় 3600°C), মূলত মুক্ত ইলেক্ট্রন না থাকার কারণে হীরক বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে না । তবে লোকালাইজড ইলেকট্রন স্তরে কম্পনের সাহায্যে এর তাপ পরিবহন ঘটে তাই হীরক তাপ পরিবাহী, প্রকৃতপক্ষে এক একটি হীরক খণ্ড একটি বৃহৎ অণু ।

গ্রাফাইট:

গ্রাফাইট অর্থ ‘আমি লিখি। এটি কার্বনের একটি রূপভেদ।

  • বৈশিষ্ট্য: গ্রাফাইট ধূসর অস্বচ্ছ, স্ফটিকাকার কঠিন পদার্থ একে নরম ও পিচ্ছিল বলে মনে হয়। এটি তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী। এতে কার্বনের পরিমাণ ৯৫% – ৯৬%। কাগজে ঘষলে এর কালো দাগ পড়ে বলে পেন্সিলের শীষরূপে ব্যবহার করা হয়। পারমাণবিক চুল্লীতে বিক্রিয়ার গতি মন্থর করার জন্য গ্রাফাইট ব্যবহার করা হয়। 
  • গ্রাফাইটের কাঠামো: গ্রাফাইটে কার্বন পরমাণুসমূহ সমতলীয় স্তরাকারে অবস্থিত। প্রতিটি কার্বন পরমাণু অপর তিনটি কার্বন পরমাণুর সাথে বন্ধন সৃষ্টি করে। এভাবে ছয়টি পরমাণু একটি সুষম ষড়ভুজের সৃষ্টি করে, প্রতি স্তরে ষড়ভুজ জালের সৃষ্টি হয়, কার্বন পরমাণুসমূহ এ জালের প্রতিটি কোণে অবস্থিত। পরস্পরের সমান্তরালে অবস্থিত এ ধরনের অসংখ্য শিট বা স্তরের মধ্যে কোনাে রাসায়নিক বন্ধন না থাকায় এরা একে অন্যের উপর দিয়ে চলাচল করতে পারে, এ কারণে গ্রাফাইট নরম ও পিচ্ছিল। বিদ্যুৎ পরিবহনের সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য কারণ হচ্ছে, কার্বন পরমাণুর চারটি যােজ্যতা ইলেক্ট্রনের মধ্যে তিনটি ইলেক্ট্রন তিনটি কার্বন পরমাণুর সাথে বন্ধন সৃষ্টিতে ব্যবহৃত হয়, অপর ইলেক্ট্রনটি মুক্ত থাকে, এ মুক্ত ইলেক্ট্রনগুলাে গ্রাফাইটের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহন করে।
  • কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কঠিন রূপকেই ড্রাই আইস বলে। অনেক কম তাপমাত্রায় এবং কম চাপে (-56.4°C তাপমাত্রা এবং 5.13 atm চাপে) গ্যাসীয় কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে রেখে দিলে সেটি তরলে রূপান্তরিত না হয়ে সরাসরি কঠিন পদার্থের আকার ধারণ করে। এই কঠিন পদার্থটিই আসলে ড্রাই আইস বলে।

ফুলারিনস:

কার্বনের একটি বিশেষ রূপভেদ ফুলারিনস (Fullerenes) । ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানীরা কার্বনের এ বিশেষ শ্রেণির রূপভেদ আবিষ্কার করেন । এ রূপভেদসমূহের অণুতে 30-70টি কার্বন পরমাণু সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে ।

  • C60-কে বলা হয় “বাকিমিনিস্টার ফুলারিন” বা “বাকি বল” ।
  • সোডা ওয়াটার: উচ্চ চাপে পানিতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মিশ্রণকে সোডা ওয়াটার বলে । বিভিন্ন ড্রিংকস প্রস্তুতিতে সোডা ওয়াটার ব্যবহৃত হয় । 
  • খাবার সোডা: রাসায়নিক নাম সোডিয়াম-বাই-কার্বনেট (NaHCO_3) যা খাবার সোডা নামে পরিচিত। অ্যামোনিয়া গ্যাস, খাবার লবণ, পানি এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে এটি প্রস্তুত করা হয় । 
  • খাবার সোডা কেক, বিস্কুট, পাউরুটি ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় । কার্বন ব্যতীত Si মৌলে ক্যাটেনেশন ধর্ম দেখা যায় ।
  • কাচ সিলিকা (SiO_2) দিয়ে তৈরি । 
  • ইটের প্রধান দুটি উপাদান হচ্ছে সিলিকা ও অ্যালুমিনা ।
  • সিমেন্টে জিপসাম যোগ করা হয় দ্রুত জমাট বাঁধার জন্য ।
  • গ্যাস মাস্কের প্রধান উপাদান হলো ফসফরাস পেন্টাঅক্সাইড ।
  • কোয়ার্টজ ঘড়িতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় সিলিকা ।
  • সিমেন্টের মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে চুন বেশি থাকে ।