গ্লাস ক্লিনার (Glass cleaner)
❒ গ্লাস ক্লিনার প্রস্তুতির উপকরণ লিখ?
উপকরণ : প্রতি 100 ml আয়তনের গ্লাস ক্লিনার প্রস্তুত করতে নিচের আনুপাতিক হারকে ব্যবহার করা হয়।
উপাদানের নাম | উপাদানের কার্যকারিতা | পরিমাণ |
১. লিকার অ্যামোনিয়া 25% NH_{4}OH দ্রবণ ঘনত্ব 0.91 gm L-1 | 2.0 mL | এটি পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। এটি গ্রিজ, তেল ও চর্বি জাতীয় স্তরকে দ্রুত দ্রবীভূত করে। অ্যামোনিয়া দ্রুত বাস্পীভূত হয়ে যায়। এটি জীবানুনাশক ও গন্ধনাশক। |
২. রাবিং অ্যালকোহল \begin{matrix} \ \ \mathrm{CH}{3}- \end{matrix}\begin{matrix} \mathrm{CH}{3}\ |\ \mathrm{CH} \end{matrix}\begin{matrix} \ \ -\mathrm{OH} \end{matrix} [প্রোপানল(II)] |
18 mL | কাচের গায়ে লেগে থাকা ময়লা ও পানিকে টেনে আলাদা করে দেয়। এটি দ্রাবক হিসেবেও কাজ করে। |
৩. সারফেকট্যান্ট বা সোডিয়াম লরাইল সালফেট 2 \mathrm{CH}_{3}-\left(-\mathrm{CH}_{2}-\right)_{10} \mathrm{CH}_{2}-\mathrm{O}-\mathrm{SO}_{3}^{-} \mathrm{Na}^{+}
বা, C_{12}H_{35}OSO_{3}Na |
2 mL | এটি হল অ্যানায়নিক ডিটারজেন্ট। এটি wetting agent হিসেবে পানির surface tension কে হ্রাস করে। ফলে মূল পরিষ্কারক উপাদান NH_{4}OHময়লাকে অতি সহজে দূর করতে পারে। |
৪. ইথিলিন গ্লাইকল \begin{matrix} \mathrm{CH}_2 &\mathrm{OH} \ | & \ \mathrm{CH}_2 &\mathrm{OH} \end{matrix} |
2 mL | অ্যালকোহলের উদ্বায়িতাকে হ্রাস করে ও জীবানুনাশক হিসেবে কাজ করে। |
৫. পানি | 76 mL | গ্লাসের উপরিতলের সমস্ত ময়লা ও ধুলাবালিকে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়। |
৬. সুগন্ধি ও রং | পরিমাণমতো | সুগন্ধ সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হয়। |
পদ্ধতি : (i) 200 mL থেকে 250 mL আয়তনের একটি ভালো মানের প্লাস্টিকের পরিষ্কার বোতল নাও।
(ii) মেজারিং সিলিন্ডারের সাহায্যে 2.0 mL লিকার অ্যামোনিয়া নিয়ে খুব সাবধানে ধীরে ধীরে এর মধ্যে আরও 18 ml রাবিং অ্যালকোহল বা আইসো প্রোপাইল অ্যালকোহলকে মিশ্রিত কর।
(iii) সারফেকট্যান্ট হিসেবে 2 mL সোডিয়াম লরাইল সালফেট, \mathrm{C}_{12} \mathrm{H}_{35} \mathrm{OSO}_{3} \mathrm{Na}যোগ কর ।
(iv) অ্যালকোহলের উদ্বায়িতা হ্রাস করার জন্য 2 mL ইথিলিন গ্লাইকল যোগ করে মিশ্রণকে একটু ঝাঁকিয়ে নাও।
(v) মেজারিং সিলিন্ডারের সাহায্যে 76 mL পাতিত পানি পরিমাপ করে বোতলের মিশ্রণের মধ্যে যোগ কর। এবার ভালোমতো ঝাঁকাও ও প্রয়োজনমতো সুগন্ধি ও বর্ণকারক যোগ করে নাও। বোতলের মুখে বায়ু পাম্প স্প্রে লাগিয়ে দাও। তোমার প্রস্তুত করা গ্লাস ক্লিনার দিয়ে ল্যাবরেটরির ময়লাযুক্ত গ্লাস পরিষ্কার করে নাও।
❒ গ্লাস ক্লিনার প্রস্তুতির উপাদানগুলো উল্লেখ কর। গ্লাস ক্লিনারের পরিষ্কার করার কৌশল বর্ণনা কর।
গ্লাস ক্লিনার প্রস্তুতির প্রধান উপাদান হলো অ্যামোনিয়া বা অ্যামোনিয়ার দ্রবণ বা অ্যামোনিয়ার বিভিন্ন জাতক। সাধারণত গ্লাসে ময়লা হিসেবে ধুলাবালির কণা পৃষ্ঠতলের উপর জমা হয়। অ্যামোনিয়া এসব ধুলাবালি-কণাকে সহজে দ্ররীভূত করতে পারে। কারণ ধূলাবালির কণাসমূহে বিভিন্ন ধাতু এবং অধাতুর অক্সাইড থাকে। এরা সহজে NH_{3} এর সাথে বিক্রিয়া করে গ্লাসের পৃষ্ঠতল থেকে অপসারিত হয়। তাছাড়া বিভিন্ন তেল বা চর্বি সাবানায়ন বিক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রবীভূত হয়।
❒ গ্লাস ক্লিনারের পরিস্কারকরণ কৌশল লিখ।
গ্লাস ক্লিনারের ময়লা পরিষ্কার করার কৌশল :
(১) গ্লাসে লেগে থাকা ময়লার মধ্যে থাকে গ্রিজ বা চর্বি ও ধুলাবালি। গ্রিজ বা তৈলাক্ত পদার্থকে দবীভূত করার জন্য গ্লাস ক্লিনারে থাকে অ্যামোনিয়া।
(২) এছাড়া দ্বিতীয় উপাদান সোডিয়াম লরাইল সালফেট হলো অ্যানায়নিক ডিটারজেন্ট । এটি Wettin agent রুপে পানির Surface Tension-কে হাস করে। এর ফলে মূল পরিষ্কারক পদার্থ NH_{4}OHময়লাকে দূর করতে পারে। ডিটারজেন্টের অ্যানায়নিক প্রান্ত(মাথা) হাইড্রোফিলিক হওয়ায় কাচের তলকে সিক্ত করতে সাহায্য করে। আবার ডিটারজেন্টের অপর প্রান্তে (লেজ) হাইড্রোফোবিক (পানিতে অদ্রবণীয়); কিন্তু লিপোফিলিক (তৈল চর্বিতে দ্রবণীয়) হওয়ায় এটি তৈলাক্ত ময়লার সাথে আবদ্ধ হয়ে কাচতল থেকে ময়লাকে তুলে ফেলে।
(৩) পানি হলো তৃতীয় উপাদান যা গ্লাস বা কাচের গায়ের এ সব ময়লা ও ধুলাবালিকে ধুয়ে ফেলে।
(৪) চতুর্থ উপাদান iso-প্রোপাইল অ্যালকোহল কাচের গায়ে লেগে থাকা পানিকে টেনে নেয়।
(৫) আবার অ্যালকোহলটির উদ্বায়িতা হ্রাসে সহায়ক ও জীবাণুনাশকরূপে ইথিলিন গ্লাইকল ব্যবহার করা হয়।
❒ ক্লিনার হিসেবে গ্লাস ক্লিনার ও টয়লেট ক্লিনার এর মধ্যে তুলনা করো।
১। NH_{3} ও NaOH উভয়ই ক্ষার। তাই উভয়ই সাবানায়ন বিক্রিয়ার মাধ্যমে তেল ও চর্বিকে দূরীভূত করতে পারে। তবে NH_{3}অপেক্ষা NaOHতীব্র ক্ষার হওয়ায় এর পরিষ্কারক ক্ষমতা বেশি।
২। NH_{3}ও NaOHউভয় জীবাণুনাশক তবে NaOHএর জীবাণুনাশক ক্ষমতা বেশি।
৩। NH_{3}উদ্বায়ী হওয়ায় গ্লাস ক্লিনার পরিষ্কার করার পর কোনো অবশেষ গ্লাসে লেগে থাকলে সাধারণ তাপমাত্রায় তা উড়ে গিয়ে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু NaOHএর উদ্বায়ী ধর্ম নেই। তাই NaOHব্যবহার করলে অবশেষকে দূর করতে হলে বিভিন্ন প্রকার পলিমার পদার্থ দিয়ে তৈরি ব্রাশ ব্যবহার করা হয়। কারণ সাধারণ কাপড় বা তোয়ালে ব্যবহার করলে কস্টিক সোডার সংস্পর্শে তা নষ্ট হয়ে যায়।
৪। NH_{3}অপেক্ষা NaOHএর কাঁচ ক্ষয়কারক ধর্ম বেশি। তাই গ্লাস ক্লিনারে NH_{3}দ্রবণ ও টয়লেট ক্লিনারে NaOHব্যবহার করা হয়।
৫। NH_{3}তীব্র গন্ধ এর কারণে এটি ব্যবহার করলে বিভিন্ন ধরনের রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অপরদিকে NaOHঅত্যন্ত ক্ষয়কারী ত্বকের সংস্পর্শে এলে তা ক্ষতি করতে পারে। তাই এক্ষেত্রেও ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।