10 Minute School
Log in

ভিনেগার (Vinegar)

  ভিনেগার কী? এর প্রস্তুতি বর্ণনা কর।                      

ইথানয়িক এসিডের ৬-১০% জলীয় দ্রবণকে ভিনেগার বলে।  

প্রস্তুতি (Preparation) : 

১। ইথাইন হতে প্রস্তুতকৃত ভিনেগার। এক্ষেত্রে প্রথমে ইথাইন হতে ইথান্যাল প্রস্তুত করা হয় যা জারণের মাধ্যমে \mathrm{CH}_{3} \mathrm{COOH}এ পরিণত হয়। 

\mathrm{HC} \equiv \mathrm{CH}+\mathrm{H}_{2} \mathrm{O} \frac{1-2 \% \mathrm{HgSO}_{4}}{20 \% \mathrm{HgSO}_{4}} \mathrm{CH}_{3} \mathrm{CHO} \frac{\mathrm{O}_{2}}{\mathrm{Mn}^{2+}} \rightarrow \mathrm{CH}_{3} \mathrm{COOH}

২। মল্ট ভিনেগার (Malt vinegar): অঙ্কুরিত বার্লি বা অন্য কোন শস্য দানা (মল্ট) ও ইস্ট থেকে নিঃসৃত এনজাইমের সাহায্যে স্টার্চ থেকে যে ভিনেগার প্রস্তুত করা হয় তাকে মল্ট ভিনেগার বলে। অর্থাৎ শ্বেতসার বা স্টার্চ থেকে এ ধরনের ভিনেগার প্রস্তুত করা হয়। 

মূলনীতি (Principles): স্টার্চ এর আঠালো দ্রবণে মল্ট মিশ্রিত করে 45^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় রেখে দিলে মল্ট থেকে নিঃসৃত ডায়াস্টেজ এনজাইম স্টার্চকে আর্দ্র বিশ্লেষিত করে মল্টোজ নামক সুগারে পরিণত করে। উৎপন্ন মল্টোজ দ্রবণকে ওয়ার্ট (Wort) বলে। এ ওয়ার্ট দ্রবণে ইস্ট যোগ করে 20^{\circ} \mathrm{C}-25^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় রেখে দিলে জাইমেস ও ম্যান্টেজ এনজাইম উৎপন্ন হয়। 

ম্যান্টেজ এনজাইম মল্টোজ সুগারকে গ্লুকোজ এবং জাইমেস গ্লুকোজকে ফারমেন্টেশন করে ইথানলে পরিণত করে। এসিটোব্যাকটর বায়ুর অক্সিজেনের উপস্থিতিতে ইথানলকে জারিত করে ইথানয়িক এসিডে পরিণত করে। ইথানলের 10% দ্রবণ নেয়া হলে ভিনেগার পাওয়া যায়।

রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহ (Chemical reactions): 

ভিনেগার রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহ

৩। কুইক ভিনেগার (Quick vinegar) : এই পদ্ধতিতে ইথানলের 10-15% জলীয় দ্রবণকে নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে বায়ুর O_{2} দ্বারা জারিত করে ভিনেগার প্রস্তুত করা হয়। এই পদ্ধতিতে কাঠের তৈরি চৌবাচ্চার মধ্যে উপর ও নিচের দিকে ছিদ্রযুক্ত দুটি তাক থাকে। ঐ তাক দুটির মাঝখানে কাঠের গুড়া ভর্তি করে লঘু ইথানয়িক এসিড দ্বারা ঐ কাঠের গুড়াকে ভিজিয়ে রাখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এর সাথে মাইকোডার্মা এসটি নামক ব্যাকটেরিয়া মিশ্রিত করা হয়। অতঃপর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি সহায়ক হিসেবে NH_{4}সালফেট ও ফসফেট লবণ মিশ্রিত করা হয়। ইথানলের জলীয় দ্রবণ চৌবাচ্চার উপর থেকে কাঠের গুড়ার মধ্যে সূক্ষ্ম ধারার স্প্রে করা হয় এবং 35^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রার উত্তপ্ত বায়ুকে নিচের দিক থেকে কাঠের গুড়ার মধ্যে চালনা করা হয়। তখন ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে C_{2}H_{5}OH বায়ুর O_{2}দ্বারা জারিত হয়ে 6-10% \mathrm{CH}_{3} \mathrm{COOH} এর জলীয় দ্রবণে তথা ভিনেগারে পরিণত হয়। উৎপন্ন ভিনেগারকে 75^{\circ} \mathrm{C}-80^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় 25 মিনিট উত্তপ্ত করে পাস্তুরাইজ করা হয়। এর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া থাকে না এবং ব্যবহার করা যায়।

2 \mathrm{C}_{2} \mathrm{H}_{3} \mathrm{OH}+\mathrm{O}_{2} \stackrel{\text { এসিটোব্যাকটর }}{\longrightarrow} 2 \mathrm{CH}_{3} \mathrm{COOH}

  প্রশ্ন : খেজুরের রস হতে ভিনেগার প্রস্তুতি বর্ণনা কর। (Describe the preparation of vinegar from date juice)

উত্তরঃ প্রদত্ত খেজুরের রস থেকে সহজেই ভিনেগার তৈরি করা যায়। কারণ খেজুরের রসে প্রায় (01 – 17%) চিনি (ডাইস্যাকারাইড \mathrm{C}_{12} \mathrm{H}_{22} \mathrm{O}_{11}) থাকে। ডাইস্যাকারাইড জলীয় দ্রবণকে মল্টোজ বলে। মল্টোজ থেকে দুটি ধাপে ভিনেগার তৈরি করা হয়। 

প্রথম ধাপে ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় ইথানল তৈরি করা হয়। আবার দ্বিতীয় ধাপে গাঁজন প্রক্রিয়ায় অ্যালকোহলকে অ্যাসিটিক এসিডের রূপে রাখতে গাঁজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ফলে CO_{2}উৎপন্ন হয় এবং ঈষ্ট থেকে ইনভারটেজ ও জাইমেজ নামক দুটি এনজাইম নিঃসৃত হয়। নিঃসৃত ইনভারটেজ এনজাইম আখের রসের চিনিকে আর্দ্রবিশ্লেষিত করে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজে পরিণত করে। ঈষ্ট থেকে নিঃসৃত জাইমেজ এনজাইম উৎপন্ন গ্লুকোজ ও ফুক্টোজকে বিয়োজিত করে ইথানল ও CO_{2}এ পরিণত করে। সংশ্লিষ্ট বিক্রিয়াসমূহ হলো

\begin{array}{l} C_{12} H_{22} O_{11}+H_{2} O \stackrel{\text { ইনভার্টেজ }}{\underset{30^{\circ} \mathrm{C}}{\longrightarrow}} \underset{\text { গ্লুকোজ }}{\mathrm{C}_{6} H_{12} O_{6}}+\underset{\text { ফ্রুক্টোজ }}{\mathrm{C}_{6} H_{6} O_{6}}\\ 2 \mathrm{C}_{6} \mathrm{H}_{12} \mathrm{O}_{6} \underset{30^{\circ} \mathrm{C}}{\stackrel{\text { জাইমেজ }}{\longrightarrow}} 4 \mathrm{CH}_{3} \mathrm{CH}_{2} \mathrm{OH}+4 \mathrm{CO}_{2} \end{array}

আবার উৎপন্ন ইথানলকে 30-350^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় বায়ুর O_{2} এর সাথে বিক্রিয়া করালে জৈব এসিড CH_{3}COOH উৎপন্ন হয়। 

\mathrm{CH}_{3} \mathrm{CH}_{2}+\mathrm{O}_{2} \underset{\text { এসিটো–ব্যাকটর }}{\stackrel{\text { মাইকোডার্মা }}{\longrightarrow}} \mathrm{CH}_{3} \mathrm{COOH}+\mathrm{H}_{2} \mathrm{O}

  ভিনেগার কীরূপে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করে তার কৌশল আলোচনা কর। 

যে সব অণুজীব খাদ্যদ্রব্য নষ্ট করে তাদেরকে প্রোটিওলাইটিক, লিপোলাইটিক, ফার্মেন্টেটিক এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। 

প্রোটিওলাইটিক অণুজীব খাদ্যের প্রোটিন ও অন্যান্য N_{2}বহনকারী খাদ্য ডেঙ্গে দুর্গন্ধময় যৌগে পরিণত করে। লিপোলাইটির অণুজীব তেল ও চর্বি জাতীয় খাদ্যকে জারিত করে পচা গন্ধের সৃষ্টি করে। অপরদিকে ফার্মেন্টেটিক অণুজীবগুলো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যকে ফার্মেন্টেশন এর মাধ্যমে ডেঙ্গে অ্যালৃকোহল ও কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিণত করে। এ ধরনের অণুজীবগুলো উচ্চ এসিড যুক্ত খাদ্যে জন্মাতে পারে না। ভিনেগার দ্রবণের P^{H}মান 2.35। এটি যোগ করার ফলে খাদ্যদ্রব্যের P^{H} মান হ্রাস পায়। ফলে বিভিন্ন অণুজীবগুলো জন্মাতে পারে না ও বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। তাছাড়া P^{H}মান হ্রাস পাওয়ার কারণে এনজাইমের গঠন আকৃতির বিচ্যুতি ঘটে। ফলে নির্দিষ্ট গঠন আকৃতি না থাকায় ঐ এনজাইম সুনির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে পারে বলে এনজাইমের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। 

উল্লেখ্য যে, অণুজীবের খাদ্যে বংশবিস্তারের জন্য P^{H}পরিসর হচ্ছে 6.6 থেকে 7.5 যেসব খাদ্যের P^{H}মান 4.5 অপেক্ষা কম সেগুলো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা নষ্ট হয় না। তবে এদের মধ্যে ঈষ্ট ও মন্ড বংশবিস্তার করতে পারে। এদের ক্ষেত্রে তাই P^{H}মান আরও হ্রাস করার প্রয়োজন হয়। পরীক্ষা দ্বারা দেখা গেছে যে, ভিনেগার 99%, ব্যাকটেরিয়া 82% মন্ড ও 80% অন্যান্য জীবাণু ধ্বংস করতে পারে। বৈজ্ঞানিক ভাবে স্বীকৃত যে খাদ্যে ভিনেগার যোগ করলে শুধুমাত্র খাদ্য সংরক্ষিত হয় না বরং এর ফলে খাদ্যে যোগ হয় ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, প্রোটিন ও শর্করা। যেমন হাড়সহ মুরগীর সুপ বা ঝোল রান্না করার সময় ভিনেগার যোগ করা হলে হাড় থেকে Ca দ্রবীভূত হয়ে সুপে চলে আসে। এতে এটি Caসমৃদ্ধ খাবারে পরিণত হয়। অনেক সময় মটরশুটি, শিমের বিচি রান্নার সময় বিরক্তিকর গন্ধের সৃষ্টি হয় কিন্তু ভিনেগার যোগ করা হলে ঐ গন্ধ দূর হয়। অনেক সময় খাদ্যের লবণাক্ততা দূর করার জন্য সামান্য পরিমাণ ভিনেগার যোগ করা হয়। দুইভাবে ভিনেগার খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করে। 

ভিনেগার কীরূপে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করে তার কৌশল আলোচনা কর। 

  সাদা ভিনেগার ও মল্ট ভিনেগারের মধ্যে পার্থক্য লিখ। 

উৎসভেদে ভিনেগার বিভিন্ন ধরনের হয়। নিচে সাদা ভিনেগার ও মল্ট ভিনেগারের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করা হলো :

সাদা ভিনেগার (White Vinegar) মল্ট ভিনেগার (Malt Vinegar)
১। পানিতে ইথানয়িক এসিড দ্রবীভূত করে সাদা ভিনেগার তৈরি করা হয়। ১। মল্ট ও ঈস্ট থেকে নির্গত এনজাইম ও এসিটোব্যাকটর এর সাহায্যে তৈরি করা হয়।
২। সাদা ভিনেগার ব্যবহারের জন্য পাস্তুরাইজেশনের প্রয়োজন হয় না। ২। মল্ট ভিনেগার ব্যবহার উপযোগী করার জন্য পাস্তুরাইজেশন করতে হয়।
৩। এটি তুলনামূলকভাবে কম সুস্বাদু। ৩। মল্ট ভিনেগার বেশি সুস্বাদু।
৪। এ ধরনের ভিনেগার বর্ণহীন। । মল্ড ভিনেগার হালকা বাদামী বর্ণের।
৫। এটি সাধারণত খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। ৫। এটি খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধিতে ও খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয়।