10 Minute School
Log in

পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস, কসমিক রে, ব্ল্যাক হােল, হিগের কণা

পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস

১৯২৯ সালে হাবল তাঁর দীর্ঘ নয় বছরের পর্যবেক্ষণের ফলাফল পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মহাবিশ্ব অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে তিনি একটি সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেন যা হাবলের সূত্র নামে পরিচিত। হাবলের সূত্রানুসারে-

গ্যালাক্সিসমূহ নিজেরা এবং পৃথিবী হতে দ্রুতগতিতে দূরে সরে যাচ্ছে এবং গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে দূরত্ব যত বেশি পরষ্পর হতে দূরে সরে যাওয়ার বেগ ও তত বেশি”।

বিগ ব্যাং থিওরি

ষাটের দশকের মাঝামাঝি ১৯৬৫ সালে মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ পশ্চাৎপট বিকিরণের সন্ধান পান আর্নো অ্যালান পেনজিয়াস (Arno Allan Penzias) এবং রবার্ট উইলসন (Robert Wilson) নামের দুই জন মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী।

১৯২৭ সালে বেলজিয়ামের জ্যোতির্বিদ জর্জ লেমাইটার (George Lemaitre) প্রসারণশীল বিশ্ব সংক্রান্ত তত্ত্ব প্রদান করেন যা হাবলের সূত্রের সাথে মিলে যায়। জর্জ লেমাইটারকে বিগ ব্যাং মডেলের জনক বলা হয়ে থাকে।

বিগ ব্যাং-এর পর 10^{-43}s পর্যন্ত কী ঘটেছিল তা আমরা জানতে পারিনি। মহাবিশ্ব সৃষ্টির 10^{-43} পরে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো কার্যকারিতা লাভ করে। এ সময়কে প্লাংকের সময় বলা হয়। এ সময় মহাবিশ্ব উচ্চ শক্তির ফোটনে পরিপূর্ণ ছিল। ফোটনগুলো খুব ঘন সন্নিবিষ্ট অবস্থায় ছিল এবং এদের তাপমাত্রা ছিল 1033 K ।

মহাবিশ্ব শুরু হয়েছিল একটি অপরিমেয় ক্ষুদ্র, অসীম তাপ ও অসীম ঘনত্ববিশিষ্ট শক্তির উৎস থেকে। একে বলা হয় অনন্যতা বা অদ্বৈত বিন্দু (Singularity)। এতে সব মৌলিক বলগুলো একত্রে একীভূত বল হিসেবে ছিল।  

  • 0 সেকেন্ড থেকে 10^{-43} সেকেন্ড= প্লাঙ্কের সময়
  • 10^{-43} সেকেন্ড থেকে 10^{-38} সেকেন্ড= মহাএকীভবন কাল
  • 10^{-36} সেকেন্ড থেকে 10^{-32} সেকেন্ড= স্ফীতিকাল
  • 10^{-36} সেকেন্ড থেকে 10^{-12} সেকেন্ড = তড়িৎ দুর্বল বলের কাল
  • 10^{-12} সেকেন্ড থেকে 10^{-6} সেকেন্ড = কোয়ার্ক কাল
  • 10^{-6} সেকেন্ড থেকে 1 সেকেন্ড = হ্যাডরনের কাল
  • 1 সেকেন্ড থেকে 3 মিনিট = লেপটনের কাল

ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি

মহাবিশ্বের মোট ভরের ৫% হচ্ছে দৃশ্যমান বস্তুর ভর, ২৫% হচ্ছে ডার্ক ম্যাটার বা অদৃশ্য বস্তু এবং ৭০% হচ্ছে ডার্ক এনার্জি বা অদৃশ্য শক্তি ।

ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের সবখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যা তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ বা আলো বিকিরণ করে না

ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের সংকোচনে ভূমিকা রাখে এবং ডার্ক এনার্জি সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখে। কিন্তু ডার্ক এনার্জির পরিমাণ বেশি হওয়ায় মহাবিশ্বের ওপর এর প্রভাব বেশি । তাই মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ঘটছে মূলত ডার্ক এনার্জির জন্য।

মহাবিশ্ব

মহাকর্ষ শক্তি দ্বারা একত্রে গঠিত এক বিরাট নক্ষত্রমণ্ডলীকে গ্যালাক্সি বলে। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের ছায়াপথ হলো “ম্যাজিলানিক ক্লাউডস”। এটি আমাদের পৃথিবী থেকে ২ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। 

অ্যান্ড্রোমিডা এর ছায়াপথ ২০ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে এবং সপ্তর্ষিমণ্ডলের ছায়াপথ ৮০ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। 

অসীম মহাকাশের সকল বস্তুকে বলা হয় জ্যোতিষ্ক। এরা সাত ভাগে বিভক্ত। যথা- 

  • নক্ষত্র, 
  • গ্রহ-উপগ্রহ, 
  • ধুমকেতু, 
  • ছায়াপথ, 
  • উল্কা, 
  • কোয়াসার, 
  • সুপারনোভা 

যেসকল বৃহদাকার জ্যোতিষ্কের নিজস্ব আলো রয়েছে সাধারণভাবে তাদের নক্ষত্র বলা হয়। এ পর্যন্ত নক্ষত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে ১০০ কোটিরও বেশি। আকাশে খালি চোখে ছয় হাজারের অধিক নক্ষত্র দেখা যায়। 

আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হলো লুব্ধক আর সৌরজগতের নিকটতম নক্ষত্রপুঞ্জ আলফা সেন্টরাই (Alpha Centauri)। এর সন্নিকটে দুটি তারকা রয়েছে, এরা হলো প্রক্সিমা সেন্টরাই (Proxima Centauri) এবং বিটা সেন্টরাই (Beta Centauri)। আলফা সেন্টরাই এর দূরত্ব সূর্য থেকে ৪.২ আলোকবর্ষ। পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র সূর্যের দূরত্ব পৃথিবী হতে ১৫কোটি কিলোমিটার।

মহাবিশ্বে এ পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়েছে ৮৮টি নক্ষত্রমণ্ডল। 

সিরিয়াস বা লুব্ধক – আকাশের উজ্জ্বলতম তারা ।

সপ্তর্ষিমন্ডল – উত্তর আকাশে একত্রে প্রশ্নবোধক চিহ্নের মত দেখতে সাতটি উজ্জ্বল নক্ষত্র।

নীহারিকা – তারকারাজির মধ্যে স্বল্প আলোকিত এক ধরনের দীপ্যমান তারকা যেগুলোতে বায়বীয় পদার্থ ও গ্যাসপূর্ণ আস্তরণ থাকে তাদের নীহারিকা বলে। একেকটি নীহারিকার মাঝে কোটি কোটি নক্ষত্র থাকতে পারে।

ধ্রুবতারা – উত্তর গোলার্ধের উজ্জ্বল তারকা। 

লঘু সপ্তর্ষি – ধ্রুবতারার সন্নিকটে ধ্রুবতারাসহ যে সাতটি নক্ষত্র দেখা যায়।

কালপুরুষ বা আদমসুরত – শীতের সন্ধ্যা আকাশে পূর্ব দিকে মনুষ্য আকৃতির তীর ধনুক হাতে শিকারীর মত নক্ষত্রমন্ডল। এর সবচেয়ে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হলো “বানরাজ” যা সূর্য অপেক্ষা ৫০ হাজার গুণ উজ্জ্বলতর।  

আমাদের ছায়াপথের কসমিক ইয়ার হল ২২৫-২৫০ মিলিয়ন বছর। 

সৌরজগত

  • সর্বজনস্বীকৃত গ্রহ ৮টি। উপগ্রহ ১৭৩টি। পৃথিবীর ১টি, মঙ্গলের ২টি, বৃহস্পতির ৬৭টি, শনির ৬২টি, ইউরেনাসের ২৭টি, নেপচুনের ১৪টি।
  • সবচেয়ে বড় উপগ্রহ বৃহস্পতি এর গ্যানিমেড, দ্বিতীয় বৃহত্তম শনির টাইটান, সবচেয়ে ছোট বৃহস্পতি এর লেডা।
  • সূর্যের ব্যাস পৃথিবীর প্রায় ১০৯ গুণ, এর গতিবেগ ২২০ কিমি/সেকেন্ড, নিজ অক্ষের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ২৫ দিন।
  • সূর্যের কেন্দ্রভাগের উত্তাপ ১৫ কোটি ডিগ্রী সেলসিয়াস ও পৃষ্ঠভাগের উত্তাপ ৬০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যার ২০০ কোটি ভাগের এক ভাগ পৃথিবীতে পৌঁছায়।
  • সূর্যের ভর 2\times 10^{30} কিলোগ্রাম (সৌরজগতের মোট ভরের ৯৯.৮৬%)
  • সূর্য আয়তনে পৃথিবী থেকে ১০,০০,০০০ গুণ বড়। চন্দ্র থেকে ২ কোটি ৩০ লক্ষ গুণ বড়।
  • সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড (৫০০ সেকেন্ড/ ৮.৩২ মিনিট)

বুধ

  • সৌরজগতের প্রথম এবং ক্ষুদ্রতম গ্রহ। 
  • এটি সূর্যের সর্বাপেক্ষা নিকটতম গ্রহ। এর কোনো উপগ্রহ নেই। 
  • এটি সূর্যকে প্রতি ৮৮ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে। 
  • একে পৃথিবী থেকে সহজে দেখা যায় না, কারণ সূর্যের সাথে এর বৃহত্তম কৌণিক পার্থক্য হচ্ছে মাত্র ২৮.৩ ডিগ্রী। 
  • বুধ অভিমুখী নভোযান মেরিনার-১০ ১৯৭৪-১৯৭৫ সালে অনুসন্ধানী অভিযান চালিয়েছিল এবং মেসেঞ্জার ২০০৪ – ২০১৫ সালে ৪০০০ বার অনুসন্ধানী অভিযান চালিয়েছিল।

শুক্র (Venus) 

  • দূরত্বের দিক দিয়ে সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ। 
  • এই পার্থিব গ্রহটিকে অনেক সময় পৃথিবীর “বোন গ্রহ” বলে আখ্যায়িত করা হয়, কারণ পৃথিবী এবং শুক্রের মধ্যে গাঠনিক উপাদান এবং আচার-আচরণে বড় রকমের মিল রয়েছে। 
  • সকালের আকাশে একে শুকতারা এবং সন্ধ্যার আকাশে একে সন্ধ্যাতারা বলে ডাকা হয়ে থাকে। এর কোনো উপগ্রহ নেই।

পৃথিবী

  • ৪৫৪ কোটি বছর আগে সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী তৃতীয়, সর্বাপেক্ষা অধিক ঘনত্বযুক্ত এবং সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। 
  • উপরিভাগের প্রায় ৭১% লবণাক্ত জলের মহাসাগর দ্বারা আবৃত। অবশিষ্টাংশ গঠিত হয়েছে মহাদেশ ও অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে।
  • পৃথিবীর মেরুদ্বয় সর্বদা কঠিন বরফ (অ্যান্টার্কটিক বরফের চাদর) বা সামুদ্রিক বরফে (আর্কটিক বরফের টুপি) আবৃত থাকে। পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ সর্বদা ক্রিয়াশীল।
  • পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ হল চন্দ্র। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব হলো ১৫ কোটি কিলোমিটার এবং চন্দ্র থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব ৩,৮১,৫০০ কিলোমিটার। 
  • চন্দ্রের সবচেয়ে বড় গর্তের নাম ক্লেভিয়াস। এরকম আরো কয়েকটি খাদের নাম – মেঘসমুদ্র, শান্ত সমুদ্র, শান্ত সাগর ইত্যাদি।

মঙ্গল (Mars)

  • দূরত্বের হিসাবে চতুর্থ এবং বুধের পরেই সৌরজগতের দ্বিতীয়-ক্ষুদ্রতম গ্রহ। 
  • এই গ্রহের পৃষ্ঠতলে আয়রন অক্সাইডের আধিক্যের জন্য গ্রহটিকে লালচে রঙের দেখায়। 
  • মঙ্গল একটি শিলাময় গ্রহ। এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল ঘনত্বহীন এবং পৃষ্ঠভাগের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে চাঁদের মতো অভিঘাত খাদ যেমন দেখা যায়, তেমনই পৃথিবীর মতো উপত্যকা, মরুভূমি ও মেরুস্থ হিমছত্রও চোখে পড়ে।
  • মঙ্গল গ্রহের প্রাকৃতিক উপগ্রহের সংখ্যা দুই। এগুলির নাম হলো-
    • ফোবোস ও 
    • ডিমোস। 

এই উপগ্রহ দু-টি আকারে খুবই ছোটো।

  • পৃথিবী থেকে খালি চোখেই মঙ্গল গ্রহকে দেখা যায়। এই গ্রহের লালচে রঙের জন্য এটিকে সহজেই শনাক্ত করা যায়।

বৃহস্পতি (Jupiter)

  • সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে পঞ্চম এবং আকার আয়তনের দিক দিয়ে সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ। 
  • বৃহস্পতি ব্যতীত সৌরজগতের বাকি সবগুলো গ্রহের ভরকে একত্র করলে বৃহস্পতির ভর তা থেকে আড়াই গুণ বেশি হবে। 
  • বৃহস্পতিসহ আরও তিনটি গ্রহ অর্থাৎ শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুনকে একসাথে গ্যাস দানব বলা হয়। এই চারটির অপর জনপ্রিয় নাম হচ্ছে জোভিয়ান গ্রহ। 
  • বৃহস্পতি গ্রহ পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান তৃতীয় উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। কেবল চাঁদ এবং শুক্র গ্রহের উজ্জ্বলতা এর থেকে বেশি। অবশ্য কক্ষপথের কিছু বিন্দুতে মঙ্গল গ্রহের উজ্জ্বলতা বৃহস্পতির চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
  • বৃহস্পতি গ্রহের প্রাথমিক উপাদান হচ্ছে হাইড্রোজেন এবং সামান্য পরিমাণ হিলিয়াম। 
  • বৃহস্পতির রয়েছে ৬৭টি (মতান্তরে ৭৯টি) উপগ্রহ, যাদের মধ্যে ৪টি উপগ্রহ বৃহৎ আকৃতির। এই চারটিকে গ্যালিলিও উপগ্রহ বলা হয়। কারণ ১৬১০ সালে গ্যালিলিও প্রথম এই চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেছিলেন। সর্ববৃহৎ উপগ্রহ গ্যানিমেডের আকৃতি বুধ গ্রহের চেয়েও বেশি।

শনি (Saturn)

  • সূর্য থেকে দূরত্বের নিরিখে ষষ্ঠ গ্রহ এবং বৃহস্পতির পরে সৌরজগতের দ্বিতীয়-বৃহত্তম গ্রহ। 
  • এটি একটি গ্যাসীয় দৈত্য, যার ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের প্রায় নয় গুণ। শনি গ্রহের গড় ঘনত্ব অবশ্য পৃথিবীর গড় ঘনত্বের এক-অষ্টমাংশ। 
  • শনির জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চিহ্ন (♄) 
  • শনির অভ্যন্তরীণ অংশটি সম্ভবত লোহা-নিকেলের একটি কেন্দ্রস্থল ও পাথর (সিলিকন ও অক্সিজেন যৌগ) দ্বারা গঠিত।
  • শনির উপগ্রহ সবচেয়ে বেশি। শনির বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ টাইটান হলো সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ। 
  • টাইটানই সৌরজগতের একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ, যেখানে একটি উল্লেখযোগ্য বায়ুমণ্ডল রয়েছে।

ইউরেনাস

  • সূর্যের দিক থেকে এর অবস্থান সপ্তম এবং আকারের বিচারে তৃতীয় বৃহত্তম। 
  • স্যার উইলিয়াম হার্শেল এই গ্রহটিকে প্রথম ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং ঐ বৎসরের ২৬ এপ্রিলে একে একটি ধূমকেতু হিসাবে উল্লেখ করেন ও পরে সৌরজগতের গ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
  • ইউরেনাসের ২৭টি জানা উপগ্রহ রয়েছে। 

নেপচুন

  • সৌরজগতের অষ্টম গ্রহ এবং সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ। 
  • নেপচুন পরিধিতে চতুর্থ এবং ভরে তৃতীয় সর্ববৃহৎ গ্রহ। 
  • নেপচুনের ১৪টি জানা উপগ্রহ রয়েছে। রোমান দেবতার নামানুসারে ১৮৪৬ সালে এর নামকরণ করা হয়। 

নক্ষত্রের জীবনচক্র

  • আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলিকণা ও গ্যাসের এক বিশাল মেঘ 
    • বামন নক্ষত্র (Dwarf star)
      • দানব নক্ষত্র (Giant star) বা অতি দানব নক্ষত্র (Super giant star)
        • নোভা নক্ষত্র (Nova Star) 
          • শ্বেত বামন নক্ষত্র (White Dwarf Star) 
            • নিউট্রন নক্ষত্র (Neutron Star)
              • কৃষ্ণ গহ্বর (Black Hole)

সূর্য বর্তমানে বামন নক্ষত্র ধাপে রয়েছে।

শ্বেত বামন নক্ষত্রের জন্য ভরের সীমা হলো ১.৪ সৌর ভর। 

১৯৩০ সালে ভারতীয় বিজ্ঞানী সুব্রামনিয়াম চন্দ্রশেখর মাত্র ১৯ বছর বয়সে তাত্ত্বিকভাবে দেখান যে, কোনো নক্ষত্রের ভর যদি ১.৪ সৌরভরের চেয়ে বেশি হয়, তখন এটি শ্বেতবামন নক্ষত্র হিসেবে স্থায়ীত্ব লাভ করতে পারবে না। নক্ষত্রের এই ভরকে চন্দ্রশেখর সীমা বলে। 

নক্ষত্রের ভর চন্দ্রশেখর সীমার চেয়ে বেশি হলে, এটি নিউট্রন স্টার বা কৃষ্ণ গহ্বরে (Black Hole) রূপান্তরিত হবে।

একটি নক্ষত্রের ভর যদি চন্দ্রশেখর সীমা অপেক্ষা বেশি হয় অর্থাৎ ১.৪ থেকে তিন সৌর ভরের মধ্যে নক্ষত্রের ভর হলে সংকোচনের সময় এটি এমন একটি ধাপে পৌঁছায় যে, এটি এর বহিঃস্থ আস্তরণ ছুঁড়ে দিয়ে অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে যায়। একে বলা হয় Super Nova। 

নক্ষত্রটি যখন সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হয়, তখন এর মূলবস্তু্র চাপ এত বেশি হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে নিউট্রন গঠন করে। তাই একে বলা হয় নিউট্রন স্টার। 

অতি উচ্চ চৌম্বকক্ষেত্রের কারণে নিউট্রন স্টার নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর বেতার স্পন্দন (Radio Pulse) নির্গমন করে বলে একে পালসার বলে। 

নক্ষত্রের ভর ১.৪ থেকে ৩ সৌরভরের মধ্যে থাকলেই কেবল এটি নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হতে পারে। নক্ষত্রের ভর ৩ সৌরভরের চেয়ে বেশি হলে তখন এটি কৃষ্ণ গহ্বর বা কোয়ার্ক নক্ষত্রে পরিণত হবে।

তিন সৌর ভরের সমান বা বেশি ভরের নক্ষত্রের সুপার নোভা বিস্ফোরণের পর এর অন্তর্বস্তু অনির্দিষ্টভাবে সংকুচিত হতে থাকে। সংকোচনের কারণে আয়তন প্রায় শূন্য এবং অল্প আয়তনে  ভর বেশি থাকায় ঘনত্ব প্রায় অসীম হয়ে যায়। নক্ষত্রের এই অবস্থাকে বলা হয় কৃষ্ণ গহ্বর (Black hole)। বাস্তবে g-এর মান এত বেশি হয় যে, ফোটন কণাও এর পৃষ্ঠ থেকে মুক্ত হতে বা বেরিয়ে আসতে পারে না। 

১৯৬৯ সালে জন হুইলার নামক জনৈক মার্কিন বিজ্ঞানী কৃষ্ণ গহ্বর আবিষ্কার করেন।

সংকট ব্যাসার্ধ বের করার জন্য ১৯২৬ সালে কার্ল সোয়ার্জস্কাইল্ড আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব ব্যবহার করেন। ফলে সমীকরণটি দাঁড়ায়, 

c = √(2GM / Rs) [মুক্তিবেগ, v = √(2GM / R)] 

এখানে c আলোর দ্রুতি, Rs সংকট ব্যাসার্ধ। সংকট ব্যাসার্ধ Rs কে সোয়ার্জস্কাইল্ড ব্যাসার্ধ বলে। M ভরবিশিষ্ট অঘূর্ণনশীল কোন গোলকীয় বস্তুর ব্যাসার্ধ যদি Rs হয় তাহলে কোনো কিছুই (আলোও) এই বস্তুপৃষ্ঠ হতে মুক্ত হতে পারবে না এবং বস্তুটি কৃষ্ণ গহ্বর হিসেবে কাজ করবে।

ঘটনা দিগন্ত- কৃষ্ণ গহ্বর অঞ্চলের সীমাকে ঘটনা দিগন্ত নামে আখ্যায়িত করা  হয়।

কোয়াসার হলো মহাবিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। একটি কোয়াসারের মোট শক্তির পরিমাণ একটি সম্পূর্ণ গ্যালাক্সির শক্তির চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ বেশি। অথচ একটি কোয়াসারের ব্যাপ্তি আমাদের সৌরজগতের প্রায় দ্বিগুণের মতো। 

কোয়াসারের যে বৈশিষ্ট্যগুলো এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: 

  • কোয়াসার দেখতে নক্ষত্রের মতো,
  • তাদের রং নীলাভ,
  • কতকগুলো কোয়াসার তীব্র বেতার বিকিরণের উৎস প্রভৃতি।

হ্যালির ধূমকেতু 

  • আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় ধূমকেতু। 
  • ইংল্যান্ডের জ্যোতির্বিদ এডমন্ড হ্যালি ১৬৮২ সালে এটি আবিষ্কার করেন।  
  • প্রতি ৭৬ বছর পর পর এটি পৃথিবী থেকে দেখা যায়। ১৯১০ সালে একবার দেখা গিয়েছিলো, ১৯৮৬ সালে পুনরায় দেখা যায় এবং ২০৬২ সালে পুনরায় দেখা যেতে পারে। 

হেলবপ – ১৯৯৫ সালে আমেরিকার জ্যোতির্বিদ হেল ও টমাস বপ আবিষ্কার করেন। এটি উজ্জ্বলতম ধূমকেতু

উল্কা আয়নমণ্ডলে দেখা যায় ।

মহাজাগতিক রশ্মি

১৮৯৬ সালে হেনরি বেকেরেলের তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের পর বায়ুমণ্ডলের বিদ্যুৎ প্রবাহকে (বাতাসের আয়নীকরণ) সবাই ভূপৃষ্ঠে তেজস্ক্রিয় মৌলগুলোর তেজস্ক্রিয়তা অথবা তেজস্ক্রিয় গ্যাসের (রেডনের আইসোটোপ) ফলাফল হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। 

১৯১০ সালে থিওডর উলফ ইলেকট্রোমিটার নামের একটি যন্ত্র তৈরি করেন। ইলেকট্রোমিটারের সাহায্যে আয়ন উৎপাদনের হার নির্ণয় করা যায়।

মহাজাগতিক রশ্মি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী ভিকটর হেস। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি ১৯৩৬ সালে অপর বিজ্ঞানী কার্ল ডেভিড অ্যান্ডারসনের সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

মহাজাগতিক রশ্মিতে থাকে শতকরা ৮৯ ভাগ প্রোটন, ৯ ভাগ বিকিরণ এবং ২ ভাগ থাকে কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও লোহার ভারি নিউক্লিয়াস। এগুলোই হলো প্রাইমারি মহাজাগতিক রশ্মি। এসব রশ্মি  প্রায় আলোর বেগে ছুটে চলে।

সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মিতে থাকে প্রধানত পজিট্রন, নিউট্রন, মেসন, নিউট্রিনো প্রভৃতি। এ সব কণাদের বলা হয় প্রাথমিক বা মৌলিক কণা

হিগস বোসন কণা

  • নভেম্বর ২০১০ ইউরোপের ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড সীমান্তে ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বৃত্তাকার লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারে ঘটানো হয়েছে প্রায় আলোর গতিতে ছোট কণাদের মধ্যে সংঘর্ষ। এই বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্টি হয় সূর্যের কেন্দ্রের চেয়ে ১০ লাখ গুণ বেশি উত্তাপ। এই বিগ ব্যাং-এর মূল লক্ষ্য ছিল বিস্ফোরণের মাধ্যমে গড পার্টিকেলসের সন্ধান করা।
  • বোসন হলো গড পার্টিকেলস্। চোখের পলকে এর সৃষ্টি চোখের পলকেই নাশ। ফলে তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষের কোন ধারণা নেই। বিগ ব্যাং এর সময় উৎপাদিত হিগ্স-বোসন কণা মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে বিরাট ভূমিকা রেখেছিল বলেই বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস।
  • সমস্ত বিশ্বে ছড়িয়ে আছে হিগ্স বোসন নামক তাত্ত্বিক বলক্ষেত্র।
  • ভরহীন কোনো কণা হিগ্স বোসন ক্ষেত্রে প্রবেশ করলে হিগ্স বোসনের মাধ্যমে ভর লাভ করে পরিণত হয় কণাতে।

হিগ্সের কণা

  • ব্রিটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী পিটার হিগ্স ১৯৬৪ সালে শক্তি হিসেবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে এবং যার ফলে এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে – এ কণাটিই হল হিগ্সের কণা।
  • হিগ্স বোসন কণার অপর নাম বা গড পার্টিকেল বা ঈশ্বর কণা
  • আবিষ্কৃত হয় ৪ জুলাই, ২০১২ সালে।
  • আবিষ্কারের ঘোষণা দেয় ইউরোপের প্রভাবশালী বিজ্ঞান সংস্থা CERN (The European Organization for Nuclear Research).  
  • বিজ্ঞানী হিগ্সের সাথে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান (‘কণা পরিসংখ্যান তত্ত্ব’) থাকায় হিগ্সের কণার নাম দেওয়া হয় “হিগ্স বোসন কণা”।
  • হিগ্স-বোসন কণার অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য ২০১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান “পিটার ডব্লিউ হিগস” ও “ফ্রাঁসোয়া ইংলার্ট”।
  • হিগ্স ক্ষেত্র একটি তাত্ত্বিক বলক্ষেত্র যা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। এই ক্ষেত্রের কাজ হলো মৌলিক কণাগুলোকে ভর প্রদান করা।