10 Minute School
Log in

বিবর্তন বা অভিব্যক্তি (Evolution)

কোনো জীবের জনগোষ্ঠীর উত্তরাধিকারযোগ্য বৈশিষ্ট্যে (জিনগত বৈশিষ্ট্য) বংশপরম্পরায় পরিবর্তন, সঞ্চারণ ও অভিযোজনের প্রক্রিয়াকে বিবর্তন বলে।

বিবর্তনের মতবাদসমূহ (Theories of Evolution) 

বিবর্তনের বাস্তবতা প্রমাণিত হওয়ার পর দ্বিতীয় যে প্রাসঙ্গিক বিষয় এসে পড়ে তা হচেছ বিবর্তনের পদ্ধতি অর্থাৎ কীভাবে বিবর্তন ঘটে। এ পদ্ধতি ব্যাখ্যা করার জন্য বিজ্ঞানের অগ্রগতির উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে একাধিক মতবাদ প্রচলিত হয়েছে। নিচে জৈব বিবর্তনের প্রধান দুটি মতবাদ, শ্যামাকবাদ ও ডারউইনবাদ এবং নব্য-ডারউইনবাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

ল্যামাকিজম বা ল্যামাকবাদ বা অজিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার মতবাদ (Lamarckism or Theory of Inheritance of Acquired Characters)

ল্যামার্ক একজন ফরাসী দার্শনিক ও প্রকৃতিবিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম জা বাপ্টিস্ট পিয়েরে এন্টোইনে দ্য মনেট শেফালিয়ের দ্য ল্যামার্ক (Jean Baptiste Pierre Antoine de Monet Chevalier de Lamarck. 1744-1829)। প্রথমে তিনি ফরাসী সেনাবাহিনীতে যোগ দেন, তারপর উদ্ভিদবিজ্ঞানী হিসেবে জীবন শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তী জীবনে প্রাণীর উপর গবেষণা করেই বেশি সময় ব্যয় করেছেন। তিনি বায়োলজি (Biology) শব্দের প্রবর্তক এবং প্রাণিজগতকে মেরুদন্ডী ও অমেরুদভী এ দুভাগে বিভক্ত করেন। একটি সুসংগঠিত জৈব বিবর্তনবাদের প্রথম প্রবক্তা হিসেবে ল্যামাক সুপরিচিত। তাঁর মতবাদটি, অর্জিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার মতবাদ নামে অভিহিত।

ল্যামার্ক-এর সূত্রসমূহ (Lamarck’s formulas)

ক. প্রথম সূত্র – বৃদ্ধি (The first formula – growth): প্রত্যেক জীব তার জীবনকালে অন্তঃজীবনী শক্তির প্রভাবে দেহের আকার এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বৃদ্ধি ঘটাতে চায়।

খ. দ্বিতীয় সূত্র – পরিবেশের প্রভাব এবং জীবের সক্রিয় প্রচেষ্টা ও আঙ্গিক পরিবর্তন (The second formula – The influence of the environment and the active efforts and morphological changes of the organism): সদা পরিবর্তনশীল পরিবেশে অভিযোজনের জন্য সৃষ্ট অভাববোধের উদ্দীপনা এবং নিরন্তন প্রচেষ্টার ফলে দেহের আঙ্গিক পরিবর্তন ঘটে।

গ. তৃতীয় সূত্র – ব্যবহার ও অব্যবহার (The third formula – use and non-use): ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে দেহের একটি বিশেষ অঙ্গ সুগঠিত, কার্যক্ষম ও বড় হতে পারে, আবার অব্যবহারের অঙ্গটি ক্রমশ ক্ষুদ্র হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

ঘ. চতুর্থ সূত্র – অর্জিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার (Fourth formula – inheritance of acquired properties): প্রতিটি জীবের জীবদ্দশায় অর্জিত সকল বৈশিষ্ট্য ভবিষ্যৎ বংশধরে সঞ্চালিত হয়।

ডারউইনিজম বা প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ (Darwinism or Theory of Natural Selection)

চার্লস রবার্ট ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) একজন ব্রিটিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী (naralist) ছিলেন। ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত “Origin of Species By Means of Natural Selection” নামক গ্রন্থে তিনি অভিব্যক্তি সম্পর্কে তাঁর সুচিন্তিত ও জোরালো মতবাদ প্রকাশ করেন। এ মতবাদ প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ বা ডারউইনিজম নামে পরিচিত।

ডারউইনবাদ বা ডারউইনিজম (Darwinism)

এ মতবাদের ভিত্তি দুটি; যথা- (১) জীবজগতের কতগুলো বাস্তব ঘটনা পর্যবেক্ষণ এবং (২) এ বাস্তব ঘটনাবলীর ফলাফল প্রকাশ। ভিত্তিমূলদুটির উপর প্রতিষ্ঠিত ডারউইনবাদ বিবর্তন প্রক্রিয়াকে ৬টি ধাপে ভাগ করেছে।

 

ঘটনা প্রবাহ সিদ্ধান্ত 
১. বংশবৃদ্ধির উচ্চহার (Prodigality of production)

২. খাদ্য ও বাসস্থানের সীমাবদ্ধতা (Limitation of food and space) 

জীবন সংগ্রাম 
৩. জীবন সংগ্রাম (Struggle for existence

৪. পরিবৃত্তির অসীম ক্ষমতা (Omnipotence of variation annongst the individual)

যোগ্যতমের জয় 
৫. যোগ্যতমের উদ্বর্তন (Survival of the fittest) 

৬. প্রাকৃতিক নির্বাচন (Natural selection)

নতুন প্রজাতির উৎপত্তি

নব্য-ডারউইনবাদ (Neo-Darwinism) 

ভাইজম্যান (August Weismann) ও তাঁর অনুগামীরা ডারউইনের মতবাদের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে নতুন জ্ঞানের আলোকে সবল করে তোলেন। ভাইজম্যান ও তাঁর অনুগামীদের মাধ্যমে ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদের এ নবমূল্যায়নকে নব্য-ডারউইনবাদ বলা হয়।

তিনি তাঁর জার্মপ্লাজম-সোমাটোপ্লাজম (Germplasm-Somatoplasm) তত্ত্বে উল্লেখ করেন যে জীবের জননাঙ্গে অবস্থিত জননকোষে থাকে জার্মপ্লাজম, আর দেহের অবশিষ্ট কোষে (somatic cell) থাকে সোমাটোপ্লাজম। পরিবেশের প্রভাবে সোমাটোপ্লাজমে পরিবর্তন ঘটলেও জার্মপ্লাজমে কোন পরিবর্তন নাও ঘটতে পারে। তাই কেবল সোমাটোপ্লাজমে সংঘটিত পরিবর্তন বংশগতি লাভে সমর্থ হয় না। সুতরাং পরিবেশের সব প্রত্যক্ষ প্রভাবই বিবর্তনের শর্ত হতে পারে না।

বিবর্তনের স্বপক্ষে প্রমাণসমূহ (Evidence for evolution)

বিবর্তনের প্রমাণগুলো হচ্ছে−

১. অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণ (Morphological evidence)

২. ভ্রূণতত্ত্বীয় প্রমাণ (Embryological evidence)

৩. জীবাশ্মগত প্রমাণ (Fossil past evidence)

৪. শ্রেণিবিন্যাসগত প্রমাণ (Hierarchical evidence)

৫. শারীরবৃত্তীয় প্রমাণ (Physiological evidence)

৬. কোষতাত্ত্বীক প্রমাণ (Cell theoretical evidence)

৭. জিনতত্ত্বীয় প্রমাণ (Evidence of gene theory)

৮. ভৌগোলিক প্রমাণ (Geographical evidence)