10 Minute School
Log in

মাইক্রোবায়ােলজি | Microbiology

মাইক্রোবায়োলজি বা অণুজীববিজ্ঞানের উপকারী ও অপকারী দিক

মাইক্রোবায়ােলজি বিজ্ঞান হল বিজ্ঞানের এমনই একটি শাখা, যেখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুজীব (ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল, ছত্রাক ইত্যাদি) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

সারা বিশ্বে অণুজীবদের সংখ্যা হল – 5\times 10^{30}টি  কথায় বললে – ৫ মিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন। 

১৮৭৮ সালে ফরাসি চিকিৎসক Charles Emmanuel Sédillot ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবাণুগুলোকে Microbes নামকরণ করেন। 

অণুজীবগুলো আণুবীক্ষণিক সাইজের (১ মাইক্রোমিটার = ১মিটারের এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ) তাই, ১৬৬৫ সালে বিজ্ঞানী রবার্ট হুক মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কার করার ফলে তাতে কোষ দেখা গেলেও অণুজীব দেখা যেত না। 

ঠিক তিন বছর পর, ১৬৬৮ সালে বিজ্ঞানী এন্টনি ভন লিউয়েনহুক (অনুজীববিজ্ঞানের জনক) মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কার করেন, যা রবার্ট হুকের মাইক্রোস্কোপের চেয়ে ২০০ গুণ বেশি বিবর্ধন দিত। এবং তিনি তা দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুজীবদের দেখতে পান। 

  • রুটি এবং মদ শিল্প সম্পূর্ণরূপে Saccharomyces cerevisiae (ইস্ট) (অণুজীব) এর উপর নির্ভরশীল। এরা শর্করাকে ভেঙে অ্যালকোহল ও CO_2 এ রূপান্তরিত করতে সক্ষম। আবার এরা ভিটামিন ও প্রোটিনের উৎস হিসেবে বিরাজ করে।
  • এন্টিবায়োটিক তৈরি হয় বিভিন্ন ছত্রাক থেকে। যেমন- Penicillium notatum থেকে penicillin, cephalosporium থেকে cephalosporin প্রস্তুত করা হয়। এছাড়াও পলিমিক্সিন, সাবটিলিন প্রভৃতি এন্টিবায়োটিকগুলো বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রস্তুত করা হয়।
  • কলেরা, টাইফয়েড, যক্ষ্মা প্রভৃতি রোগের প্রতিষেধক বা ভ্যাক্সিন প্রস্তুত করা হয় বিভিন্ন Microbes থেকে। যেমন Corynebacterium, Bordetella, Clostridium প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রস্তুত করা হয় DPT এর (ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার) প্রতিষেধক বা ভ্যাক্সিন।
  • বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া থেকে বিভিন্ন এনজাইম প্রস্তুত করা হয়। যেমন- Bacillus sp থেকে protease, lipase প্রভৃতি প্রস্তুত করা হয় যা ডিটারজেন্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। lactobacillus থেকে lactase, যা candy তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • বিভিন্ন জৈব এসিড যেমন সাইট্রিক এসিড, অক্সালিক এসিড, ফিউমারিক এসিড প্রভৃতি তৈরিতে এবং griseofulvin নামক ওষুধ তৈরিতে Penicillium (ছত্রাক) এর ভূমিকাই মুখ্য।
  • Agaricus bisporus (মাশরুম) প্রচুর ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায়, এটা মানুষের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। এটাতে শর্করা কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
  • Anticancer drug “TAXOL” প্রস্তুত করা হয় Taxomyces থেকে।
উপাদান অণুজীবের নাম ব্যবহার
সাইট্রিক এসিড Aspergillus niger খাদ্য হিসেবে, Citrate হিসেবে, রক্ত সঞ্চালনে।
গ্লুকোনিক এসিড A. Niger টেক্সটাইলে, চামড়া শিল্পে ও ফটোগ্রাফিতে।
পেকটিনেজ A. wentii ফলের জুসের কারখানা। 
জিবারেলিক এসিড Fusarium moniliformis ফল ও বীজ উৎপাদনে।
ল্যাকটিক এসিড Lactobacillus delbrueckii খাদ্য এবং ঔষধ দ্রব্য।
বেকারি দ্রব্য (রুটি) Saccharomyces cerevisiae রুটি শিল্পে।
অ্যালকোহল S. cerevisiae দ্রাবক, জ্বালানি
রিবোফ্লাভিন Eremothecium ashbyi ভিটামিন-বি। 
অণুজীব জাত প্রোটিন Saccharomyces sp প্রাণীর খাদ্য।
ভিনেগার Acetobacter খাদ্য হিসেবে
এসিটোন Clostridium রাসায়নিক পদার্থ
  • ইউরিয়াকে হাইড্রোলাইস করার জন্য B. pasteurii এবং Sarcina ureae অণুজীব দায়ী।
  • মুক্তভাবে N2-Fixation করে Azotobacter, Clostridium।
  • বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক
    • Penicillium sp – পেনিসিলিন
    • Streptomyces griseus – স্ট্রেপটোমাইসিন
    • Streptomyces rimosus – টেট্রাসাইক্লিন
    • Bacillus polymyxa – পলিমিক্সন
    • Streptomyces fradiae – নিওমাইসিন
  • উদ্ভিদের রোগ (ভাইরাস সৃষ্ট):
Potato leaf roll Potato Leaf Roll Virus (PLRV)
Tobacco Mosaic Tobacco Mosaic Virus (TMV)
Tulip Breaking Tulip Mosaic Virus
Papaya Papaya Mosaic Virus
Jute Mosaic Jute Mosaic Virus
Paddy Tungro Rice Tungro Virus
  • প্রাণীর রোগ (ভাইরাস সৃষ্ট):
Influenza Influenza Virus
Rabies (জলাতঙ্ক) Rabies Virus
Small Pox Variola Virus
Measles (হাম) Measles Virus
Yellow Fever (পীতজ্বর) Yellow Fever Virus (YFV)
AIDS HIV
পোলিও poliovirus
হার্পিস Herpes simplex

টিকা

টিকা বা প্রতিষেধক (Vaccine) হলো এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ বা মিশ্রণ যা অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে উত্তেজিত করে দেহে কোনো একটি রোগের জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা জন্মাতে সাহায্য করে। 

  • Bacteria থেকে প্রাপ্ত Vaccine
    • কলেরা রোগের জন্য কলেরা Vaccine – Vibrio cholerae থেকে
    • ডিপথেরিয়া রোগের জন্য ডিপথেরিয়া Vaccine – Corynebacterium diphtheria
    • ধনুষ্টংকার রোগের জন্য ধনুষ্টংকার Vaccine – Clostridium tetani থেকে।
    • টিউবারকিউলোসিস রোগের জন্য বি.সি.জি. Vaccine- Mycobacterium tuberculosis থেকে
  • Virus থেকে প্রাপ্ত Vaccine
    • Smallpox – Vaccinia Virus
    • Polio – Polio Virus থেকে
    • জন্ডিস রোগের Vaccine- Hepatitis Virus থেকে

ভাইরাস

কিছু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে বংশবৃদ্ধি করে এদের ব্যাক্টেরিওফাজ (Bacteriophage) বলা হয়। ভাইরাস ল্যাটিন ভাষা হতে গৃহীত একটি শব্দ। এর অর্থ হল বিষ।

মার্কিন জীব-রসায়নবিদ ডব্লু এম স্ট্যানলি (১৯৩৫) তামাকের মোজাইক ভাইরাসকে পৃথক করে কেলাসিত করতে সক্ষম হন। এ অবদানের কারণে তিনি ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। 

ভাইরাসের প্রকারভেদ 

উদ্ভিদ ভাইরাস – টুংরো ভাইরাস, মোজাইক ভাইরাস ইত্যাদি।

প্রাণী ভাইরাস – ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, এইচ আই ভি ভাইরাস ইত্যাদি 

ব্যাকটেরিওফাজ – টি-২ ভাইরাস 

ভাইরাসের বাইরের প্রোটিন আবরণকে ক্যাপসিড বলা হয়। ভাইরাস অতি আণুবীক্ষণিক সত্তা। ভাইরাসের গড় ব্যাস ৮-৩০০ ন্যানোমিটার।

গবাদি পশুর ফুট অ্যান্ড মাউথ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস সবচেয়ে ক্ষুদ্র। এরা সাধারণত দণ্ডাকার, গোলাকার, সূত্রাকার, পাউরুটির আকার ও ডিম্বাকার হয়ে থাকে। 

ব্যাকটেরিয়া

গ্রিক শব্দ Bakterion থেকে ব্যাকটেরিয়া শব্দটি এসেছে। যার অর্থ ক্ষুদ্র দণ্ড। ব্যাকটেরিয়ার বর্ণিত প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ১৫,০০০। 

ব্যাকটেরিয়া চার ধরনের – 

  • কক্কাস (গোলাকার), 
  • ব্যাসিলাস (দণ্ডাকৃতি), 
  • স্পাইরিলিয়াম (স্পাইরাল/কুণ্ডলাকৃতির) ও 
  • ভাইব্রিও (কমা আকৃতির)। 

ব্যাকটেরিয়া জড় কোষ প্রাচীরবিশিষ্ট এককোষী আদিকেন্দ্রিক অণুজীব। এর সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে:

১। ব্যাকটেরিয়ার আকার সাধারণত ০.২-৫ মাইক্রোমিটার।

২। এরা আণুবীক্ষণিক জীব।

৩। এরা এককোষী, তবে একসাথে অনেকগুলো কোষ কলোনি করে বা দলবদ্ধভাবে থাকতে পারে।

৪। এদের কোষ প্রাককেন্দ্রিক। তাই এদের কোষে রাইবোসোম ছাড়া অন্য কোন ঝিল্লীবদ্ধ অঙ্গাণু (যেমন নিউক্লিয়াস, মাইটোকন্ড্রিয়া, ক্লোরোপ্লাস্ট, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, গলগি বডি, লাইসোসোম এবং সাইটোস্কেলেটন ইত্যাদি) থাকে না।

৫। এরা পরজীবী ও রোগ উৎপাদনকারী, অধিকাংশই মৃতজীবী এবং কিছু স্বনির্ভর। এরা সাধারণত দ্বিভাজন বা বাইনারি ফিশন প্রক্রিয়ায় সংখ্যাবৃদ্ধি করে।

৬। এদের কোষ প্রাচীর প্রধানত পেপটিডোগ্লাইকান। এর সাথে মিউরামিক অ্যাসিড এবং টিকোয়িক অ্যাসিড থাকে।  E. coli এর কোষপ্রাচীর কাইটিন জাতীয় শর্করা এবং প্রোটিন দিয়ে গঠিত। 

৭। ফায ভাইরাসের প্রতি এরা সংবেদনশীল।

৮। এরা সাধারণত মৌলিক রং ধারণ করতে পারে। যেমন- গ্রাম পজিটিভ বা গ্রাম নেগেটিভ।

৯। এদের কোষে ক্রোমোসোম হিসেবে একটি দ্বিসূত্রক বৃত্তাকার ডিএনএ অণু থাকে

১০। কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়াতে নিউক্লিয়ার বহির্ভূত ডিএনএ থাকে যা সাধারণত প্লাজমিড নামে পরিচিত।

ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার

  • পতঙ্গনাশক হিসেবে– কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়া লেপিডোপটেরা (Lepidoptera) ও অন্যান্য পতঙ্গের লার্ভা আক্রমণ করে এবং সেগুলোকে সমূলে বিনষ্ট করে। যেমন- Bacillus thuringiensis নামক ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন প্রকার পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।
  • ফলন বৃদ্ধিতে– কিছু বিশেষ ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে ধানের উৎপাদন শতকরা ৩১.৮ ভাগ এবং গমের উৎপাদন শতকরা ২০.৮ ভাগ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
  • পাট শিল্পে– ব্যাকটেরিয়াজনিত পচন ক্রিয়াতে Clostridium ব্যাকটেরিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • ভিনেগার তৈরিতে Acetobacter xylinum কে ব্যবহার করা হয়।
  • ভিটামিন তৈরিতে– মানুষের অন্ত্রে বসবাসকারী Escherichia coli, Enterobacter aerogenes এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াগুলো ভিটামিন ‘বি’, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিকোটিনিক অ্যাসিড, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, বায়োটিন, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন-কে ইত্যাদি প্রস্তুত ও সরবরাহ করে থাকে।
  • মানুষের রোগ সৃষ্টি (ব্যাকটেরিয়া দ্বারা)
রোগের নাম ব্যাকটেরিয়া
যক্ষ্মা Mycobacterium tuberculosis
নিউমোনিয়া Diplococcus pneumoniae
টাইফয়েড Salmonella typhosa
কলেরা Vibrio cholerae
ডিপথেরিয়া Corynebacterium diphtheriae
আমাশয় Bacillus dysenteriae
ধনুষ্টংকার Clostridium tetani
হুপিংকাশি Bordetella pertussis
রক্ত আমাশয় Shigella dysenteriae
গনোরিয়া Neisseria gonorrhoeae
প্যারাটাইফয়েড Salmonella paratyphi
  • গবাদি পশু ও অন্যান্য প্রাণীর রোগ সৃষ্টি
রোগের নাম ব্যাকটেরিয়া
গরু-মহিষের যক্ষ্মা Mycobacterium bovis
হাঁস-মুরগির কলেরা Bacillus avisepticus
ভেড়ার এনথ্রাক্স Bacillus anthracis
গলাফোলা Pasteurella multocida
ইঁদুরের প্লেগ Yersinia pestis
  • উদ্ভিদে রোগ সৃষ্টি
রোগের নাম ব্যাকটেরিয়া রোগের নাম ব্যাকটেরিয়া
ধানের পাতায় ব্যাকটেরিয়াজনিত ধ্বসা Xanthomonas oryzae সয়াবিনের ব্লাইট Pseudomonas glycinae
আখের আঠাঝরা Xanthomonas vasculorum লেবুর ক্যাঙ্কার Xanthomonas citri
সিমের ব্লাইট Xanthomonas phaseoli বিভিন্ন ফল গাছের পাতায় দাগ Xanthomonas pruni
ফলের নরম পচা Erwinia carotovora শসার উইল্ট Erwinia tracheiphila
টমেটোর উইল্ট Corynebacterium michiganense মিষ্টি আলুর বসন্ত (পক্স) Streptomyces ipomoeae
আলুর স্ক্যাব Streptomyces scabies আপেলের চুলের ন্যায় মূল Agrobacterium rhizogenes
বিভিন্ন উদ্ভিদের ক্রাউনগল Agrobacterium tumefaciens গমের টুন্ডু রোগ Agrobacterium tritici
আলুর বাদামী পঁচা Pseudomonas solanacearum
  • Clostridium botulinum নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া খাদ্যে বটুলিনাম নামক বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করে। এতে মানুষের দেহে বটুলিজম রোগ সৃষ্টি হয় যার ফলে মানুষের মৃত্যুও ঘটতে পারে।