10 Minute School
Log in

উদ্ভিদ শারীরতত্ব(plant physiology) Part-1 : খণিজ লবণ পরিশোষণ (Absorption of mineral salts)

খনিজ লবণ প্রাপ্যতা মতবাদ (Mineral salt availability theory)

(i) কার্বন ডাই-অক্সাইড একচেঞ্জ মতবাদ (Carbon dioxide exchange theory):

এ মতবাদ অনুযায়ী উদ্ভিদমূল শ্বসন প্রক্রিয়ায় যে \mathrm{CO}_{2} সৃষ্টি করে তা মাটিছ পানির সাথে বিক্রিয়া করে কার্বনিক অ্যাসিড তৈরি করে। কার্বনিক অ্যাসিড পরে ভেঙে হাইড্রোজেন আয়ন \left(\mathrm{H}^{+}\right) এবং বাইকার্বনেট আয়ন \left(\mathrm{HCO}_{3}{ }^{-}\right)-এ পরিণত হয়। কলয়ডাল দানার গায়ে লাগানো ক্যাটায়ন \left(\mathrm{K}^{+}\right)-এর সাথে \mathbf{H}^{+} এর স্থান পরিবর্তন হয়। অন্য দিকে \mathrm{HCO}_{3}{ }^{-} আয়নের জন্যও অ্যানায়নের সাথে বিনিময় ঘটে। এর ফলে মূলের শোষণ অঙ্গের কাছে উভয় প্রকার আয়নই সহজলভ্য হয়।

Mineral-salt-availability-theory

চিত্র:কার্বন ডাই-অক্সাইড একচেঞ্জ মতবাদের চিত্ররূপ

Mineral-salt-availability-theory

চিত্র: কনট্যাক্ট একচেঞ্জ মতবাদের চিত্ররূপ

(ii) কনট্যাক্ট একচেঞ্জ মতবাদ (Contact exchange theory):

এ মতবাদ অনুযায়ী কলয়ডাল দানার গায়ে লাগানো আয়ন স্থির অবস্থায় থাকে না এবং আয়নসমূহ কলয়ডাল দানার গায়ে স্বল্প জায়গায় কম্পিত হতে থাকে। মূলের গায়ের আয়নসমূহও একইভাবে কম্পিত হতে থাকে। এভাবে দুই অবস্থানের আয়নসমূহের কম্পনের স্থান যদি সাধারণ অবস্থায় চলে আসে অর্থাৎ যুগপৎ ঘটে (overlap) তবেই ক্যাটায়ন একচেঞ্জ তথা এক ক্যাটায়নের সঙ্গে অন্য ক্যাটায়নের বিনিময় সংঘটিত হয়। (চিত্রে K+ এর সাথে H+) এভাবে মূলের জন্য আয়ন সহজলভ্য হয়।

খণিজ লবণ পরিশোষণ (Absorption of mineral salts)

উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পরিপূর্ণ শারীরিক বিকাশের জন্য মাটি থেকে আয়ন হিসেবে খনিজ লবণ শোষণ প্রক্রিয়াই হলো লবণ পরিশোষণ (Absorption of mineral salts)।

নিচে বর্ণিত ছকের মাধ্যমে উদ্ভিদ যেসব পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে থাকে তা দেখানো হলো :

মৌলের নাম (ম্যাক্রোমৌল) ধাতু/অধাতু রাসায়নিক সংকেত গ্রহণীয় রূপ শুষ্ক ওজনের ঘনত্ব (m mol/kg)
১. হাইড্রোজেন অধাতু H \mathrm{H}_{2} \mathrm{O} \\ 60,000
২. কার্বন অধাতু C \mathrm{CO}_{2} \\ 40,000
৩. অক্সিজেন অধাতু O \mathrm{O}_{2}, \mathrm{CO}_{2}, \mathrm{H}_{2} 30,000
৪. নাইট্রোজেন অধাতু N \mathrm{NO}_{3}^{-}, \mathrm{NH}_{4}^{+} \\ 1000
৫. পটাসিয়াম ধাতু K \mathrm{K}^{+} \\ 250
৬. ক্যালসিয়াম ধাতু Ca \mathrm{Ca}^{++} \\ 125
৭. ম্যাগনেসিয়াম ধাতু Mg \mathrm{Mg}^{++} \\ 80
৮. ফসফরাস অধাতু P \mathrm{PO}_{4}{ }^{3-} \\ 60
৯. সালফার (গদ্ধক) অধাতু S \mathrm{SO}_{4}{ }^{2-} \\ 30
১০. ক্লোরিন অধাতু Cl \mathrm{Cl}^{-} \\ 3.0
১১. বোরন অধাতু B \mathrm{BO}_{3}{ }^{-} \\ 2.0
১২. আয়রন (লৌহ) ধাতু Fe \mathrm{Fe}^{2+}, \mathrm{Fe}^{3+} \\ 2.0
১৩. ম্যাঙ্গানিজ অধাতু Mn \mathrm{Mn}^{2+} \\ 1.0
১৪. জিংক (দস্তা) অধাতু Zn \mathrm{Zn}^{2+} \\ 0.3
১৫. কপার (তামা) অধাতু Cu \mathrm{Cu}^{2+} 0.1
১৬. নিকেল অধাতু Ni \mathrm{Ni}^{2+} \\ 0.5
১৭. মলিবডেনাম অধাতু Mo \mathrm{MO}_{4}^{2-} 0.001

খনিজ লবণ পরিশোষণের প্রক্রিয়াকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়; যথা (১) সক্রিয় পরিশোষণ এবং (২) নিষ্ক্রিয় পরিশোষণ।

(১) সক্রিয় লবণ পরিশোষণ (Active Salt absorption):

মাটিস্থ দ্রবণে কোনো আয়নের ঘনত্ব মূলের শোষণ অঞ্চলের কোষরসে সেই আয়নের ঘনত্ব অপেক্ষা কম হলেও দেখা যায় মাটির দ্রবণ হতে ঐ আয়ন কোষের অভ্যস্তরে প্রবেশ করছে। ঘনত্ব আনতির (concentration gradient) বিপরীতে এই শোষণ ঘটে বলে এতে বিপাকীয় শক্তির প্রয়োজন পড়ে। বিপাকীয় কার্যাবলির কারণে শ্বসন হার বৃদ্ধি পায়। এ কারণেই এ জাতীয় পরিশোষণকে সক্রিয় পরিশোষণ ( Active salt absorption) বলে। অধিকাংশ খনিজ লবণ সক্রিয় পরিশোষণ পদ্ধতিতেই মূল কর্তৃক পরিশোষিত হয়ে থাকে। সক্রিয় শোষণেরও বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে; যেমন- সাইটোক্রোম পাম্প মতবাদ, প্রোটন-অ্যানায়ন কোট্রান্সপোর্ট মতবাদ, লেসিথিন মতবাদ ইত্যাদি। তবে প্রত্যেক মতবাদই আয়ন বাহক ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত। সক্রিয় শোষণে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন একই সাথে পরিশোষিত হতে পারে।

Absorption-of-mineral-salts

আয়ন বাহক ধারণা (The carrier concept of ion) :

আয়ন বাহক ধারণার উপর নির্ভরশীল তিনটি মতবাদ নিচে বর্ণনা করা হলো :

(i) লুনডেগড় মতবাদ (Lundegardth theory 1955) : এ মতবাদকে Cytochrome pump মতবাদও বলা হয়। এ মতবাদ অনুযায়ী বাহক হচ্ছে cytochrome (Cyt.)। লুনডেগরের, মতানুযায়ী অ্যানায়ন পরিশোষণ প্রকৃতপক্ষে cytochrome system এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। লুনডেগড় এর মতে কোষঝিল্লির ভেতরের তল-এ ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইমের বিক্রিয়ার ফলে প্রোটন \left(\mathrm{H}^{+}\right) এবং ইলেকট্রন \left(\mathrm{e}^{-}\right) সৃষ্টি হয়। ইলেকট্রনটি সাইটোক্রোম চেইন এর মাধ্যমে কোষঝিল্লির বাইরের দিকে চলে আসে এবং \mathbf{0}_{2} এর সাথে মিলে প্রোটন চিত্র  সহযোগে পানি তৈরি করে। এর ফলে কোষঝিল্লির বাইরের তলে সাইটোক্রোমের বিজারিত লৈৗহ (reduced iron) ইলেকট্রন হারিয়ে জারিত (oxidised) হয় এবং একটি অ্যানায়ন গ্রহণ করে।

প্রক্রিয়াটি এরূপ: \mathrm{Fe}^{++}\left(2 \mathrm{~A}^{-1}\right)-\mathrm{e}^{-}+\mathrm{A}^{-} \rightarrow \mathrm{Fe}^{+++}\left(3 \mathrm{~A}^{-1}\right)

কোষঝিল্লির ভেতরের তলে (inner space) সাইটোক্রোমের জারিত লৌহ ডিহাইড্রোজিনেজ বিক্রিয়া হতে প্রাপ্ত ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয় এবং কোষঝিল্লির বাইরের তলে (outer space) সাইটোক্রোমের জারিত লৌহ যে অ্যানায়ন \left(A^{-1}\right)গ্রহণ করে তা বিক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে ভেতরের দিকে মুক্ত করে দেয়। এভাবে ভেতরের দিকে অ্যানায়ন \left(A^{-1}\right) জমা হতে থাকে। কিন্তু ক্যাটায়ন (চিত্রে \mathbf{M}^{+}) শোষণ নিষ্ক্রিয়ভাবে বহিঃস্থ দ্রবণ থেকে কোষাভ্যন্তরে প্রবেশ করে।

(ii) প্রোটন-অ্যানায়ন কো-ট্রান্সপোর্ট মতবাদ (Proton-Anion co-transport theory): আধুনিক ধারণায় কোষঝিল্লির উভয় দিকে একটি তড়িৎ রাসায়নিক নতিমাত্রা (electrochemical gradient) সৃষ্টির মাধ্যমে আয়নগুলো কোষের ভেতরে স্থানান্তরিত হয়।

এ আধুনিক মতবাদ অনুসারে, আয়ন নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক প্রোটিন বাহক দ্বারা বাহিত হয়ে বাইরের দ্রবণ থেকে কোষের ভেতরের দ্রবণে প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রোটিন নির্দিষ্ট আয়নের বাহক হিসেবে কাজ করে।
ধারণা করা হয় কোষঝিল্লির ভেতরের তলের দিকে ATP-ase এনজাইমের ক্রিয়ায় ATP ভেঙ্গে শক্তি নির্গত হয়। যার প্রভাবে প্রোটন কোষের বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়। একে প্রোটন পাম্প বলে।

প্রোটন পাম্পের কারণে কোষের বাইরের সাথে ভেতরের দিকে pH gradient (বাইরে pH কম) এবং potential gradient (কোষের বাইরের +ve চার্জ বেশি, কোষের ভেতরে +ve চার্জ কম) তৈরি হয় যাকে একত্রে Electrochemical potential gradient বা Proton motive force বলে।

Absorption-of-mineral-salts

চিত্র : প্রোটন-অ্যানায়ন কো-ট্রান্সপোর্ট অনুযায়ী আয়ন শোষণ

কোষ পর্দার অভ্যন্তরে Proton motive force তৈরি হলেই বাহক প্রোটিনগুলো সক্রিয় হয় এবং ক্যাটায়নগুলোকে বহন করে বাইরের দ্রবণ থেকে কোষের ভেতরে নিয়ে আসে। প্রোটনও বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকতে চায়, আর সে সময় অ্যানায়নগুলো প্রোটনের সাথে (প্রোটন ও অ্যানায়ন একসঙ্গে প্রোটিন বাহকের মাধ্যমে কোষাভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এজন্য একে প্রোটন-অ্যানায়ন কো-ট্রান্সপোর্ট বলা হয়। এ ধারণাটি Peter Mitchel (1968) এর কেমি-অসমোটিক মডেলের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।

(iii) লেসিথিন বাহক ধারণা (Lacithin carrier concept) : Bennet Clark (1956) নামক বিজ্ঞানী মনে করেন, লেসিথিন নামক ফসফোলিপিড আয়ন বাহক হিসেবে কাজ করে। লেসিথিন কোষঝিল্লির বাইরের তলে অ্যানায়ন ও ক্যাটায়ন গ্রহণ করে একটি যৌগ তৈরি করে ভেতরের তলে নিয়ে যায়। যৌগটি ভেতরের তলে কোলিন ফসফেটাইডিক অ্যাসিড এ ভেঙ্গে গিয়ে আয়ন দুটিকে মুক্ত করে ATP প্রয়োজনীয় শক্তি যোগান দেয়।

(২) নিষ্ক্রিয় লবণ পরিশোষণ (Passive Salt absorption):

যে পরিশোষণ প্রক্রিয়ায় আয়ন শোষণের জন্য কোনো বিপাকীয় শক্তির প্রত্যক্ষ প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না সেই পরিশোষণই হলো নিষ্ক্রিয় পরিশোষণ (Passive Salt absorption) । এতে শ্বসন হার স্বাভাবিক থাকে। নিষ্ক্রিয় পরিশোষণ প্রক্রিয়া নিম্নলিখিত উপায়ে ঘটে থাকে :

(i) ব্যাপন মতবাদ (Diffusion Theory): মাটিতে অবস্থিত দ্রবণ হতে কোষের অভ্যন্তরে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কিছু আয়ন প্রবেশ করে। উদ্ভিদের লবণ শোষণ অঞ্চলের কোষরসে কোনো আয়নের ঘনত্ব মাটির দ্রবণে অবস্থিত ঐ আয়নের ঘনত্ব হতে কম হলে আয়নটি মাটির দ্রবণ হতে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোষরসে প্রবেশ করে। এভাবে ক্রমান্বয়ে আয়ন পরিশোষিত হতে থাকে। (Hope & Stevens, 1952)

Absorption-of-mineral-salts

চিত্র : ব্যাপন মতবাদ অনুযায়ী নিষ্ক্রিয় পদ্ধতিতে আয়ন শোষণ।

Absorption-of-mineral-salts

চিত্র : আয়ন বিনিময় মতবাদ অনুযায়ী নিষ্ক্রিয় পদ্ধতিতে আয়ন শোষণ

(ii) আয়ন বিনিময় মতবাদ (lon exchange theory) : উদ্ভিদমূলের কোষরস হতে হাইড্রোজেন \left(\mathrm{H}^{+}\right) আয়ন বাইরের দ্রবণে নির্গত হয়। তখন কোষের বৈদ্যুতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য বাইরের ভরণ হতে ক্যাটায়ন \left(\mathrm{K}^{+}\right) কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। একইভাবে হাইড্রোক্সিল \left(\mathrm{OH}^{-}\right) আয়নের বিনিময়ে অ্যানায়ন (\mathrm{Cl}^{-} আয়ন) কোষরসে প্রবেশ করে। আয়ন এক্সচেঞ্জ বলতে আয়নের এরূপ বিনিময়কে বোঝানো হয়। ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন একসাথে পরিশোষিত হয় না। ডেভলিন (১৯৬৯), পান্ডে ও সিনহা (১৯৭২) এই মতবাদের প্রবক্তা।

(iii) ডোন্যান সাম্যাবস্থা মতবাদ (Donan equilibriam theory) : কোষঝিল্লির অভ্যন্তরে অব্যাপনযোগ্য কিছু স্থির ঋণাত্মক চার্জ থাকলে, একে নিরপেক্ষ করার জন্য বাহির হতে কিছু ধনাত্মক চার্জাবিশিষ্ট ক্যাটায়ন ঝিল্লির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। প্লাজমাঝিল্লির ভেতর এরূপ স্থির আয়নের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে বাইরে থেকে ভেতরে একটি সাম্যাবস্থায় না পৌঁছানো পর্যন্ত ক্যাটায়নের ব্যাপন চলতে থাকে একে ডোন্যান সাম্যাবস্থা বলে। বিজ্ঞানী F. G. Donnan (1911-1914) এই মতবাদের প্রবক্তা।

(iv) ব্যাপক প্রবাহ মতবাদ (Mass flow theory): অনেক বিজ্ঞানী (Hylmo (1955) ও Kramen (1956) মনে করেন যে, প্রস্বেদন টানে যখন ব্যাপক হারে পানি পরিশোষিত হয় তখন পানির সাথে সাথে খনিজ লবণের আয়নও পরিশোষিত হয়।

Absorption-of-mineral-salts

চিত্র : পত্ররন্ধ খোলা ও বন্ধ হওয়ার কৌশল

পত্ররন্ধ খোলা ও বন্ধ হওয়া  সম্বন্ধে বিভিন্ন মতবাদ প্রস্তাবিত হয়েছে।

(i) বিজ্ঞানী H. Von Mohl ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে মত প্রকাশ করেন যে রক্ষীকোষের স্ফীতির পরিবর্তনই পত্রবন্ধ খোলা ও বন্ধ হওয়ার প্রধান কারণ।

(ii) বিজ্ঞানী F. E. Loyd ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে প্রস্তাব করেন যে রক্ষীকোষের স্ফীতির পরিবর্তন স্টার্ট-শ্যুগার পারস্পরিক পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল। এই ধারণা পরবর্তীতে স্টর্চ-শ্যুগার মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্টর্চ (শ্বেতসার) অদ্রবণীয় হওয়ায় এর উপস্থিতিতে রক্ষীকোষদ্বয়ের অভিস্রবণিক চাপ কমে যায়, ফলে কোষস্থ পানির বহিঃঅভিস্রবণ ঘটে এবং কোষ শিথিল হয়ে পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে যখন অদ্রবণীয় স্টর্চ (শ্বেতসার) হতে হাইড্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় দ্রবণীয় চিনি তৈরি হয় তখন অভিস্রবণিক চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী কোষ হতে অন্তঃঅভিস্রবণ ঘটে এবং রক্ষীকোষ দুটি স্ফীত হয়, ফলে পত্ররন্ধ্র খুলে যায়।

কোনো কোনো প্রজাতির উদ্ভিদের রক্ষীকোষে কোনো ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে না, অথচ পত্ররন্ধ্র পূর্ণমাত্রায় কর্মক্ষম থাকে। কাজেই পত্ররন্ধ্র খোলাতে স্টার্চ-এর কোনো ভূমিকা থাকার কথা নয়।

(iii) বিজ্ঞানী স্যায়েরি (Sayre, 1926) এর মতে, শ্বেতসার ও চিনির আন্তঃপরিবর্তন কোষ রসের pH এর জন্য ঘটে থাকে। রাত্রিতে সূর্যালোক না থাকায় সালোকসংশ্লেষণ বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু শ্বসন চলতে থাকে। শ্বসনের ফলে সৃষ্ট \mathrm{CO}_{2} \\ রক্ষীকোষের কোষরসে দ্রবীভূত হয়ে কার্বনিক অ্যাসিড সৃষ্টি করে, তাই pH কমে যায় (pH5)। কোষরসের pH কম হলে কোষস্থ দ্রবণীয় চিনি অদ্রবণীয় শ্বেতসারে পরিণত হয়। রক্ষীকোষে অদ্রবণীয় শ্বেতসার জমা হলে পানির বহিঃঅভিস্রবণ ঘটে, তাই রক্ষীকোষদ্বয় স্ফীতি হারিয়ে শিথিল হয়; ফলে পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়।

দিনের বেলায় সূর্যালোকের কারণে আবার সালোকসংশ্লেষণ শুরু হয়, ফলে কোষরসে দ্রবীভূত  \mathrm{CO}_{2} \\ ব্যবহৃত হয়ে যায় এবং pH বেড়ে যায় (pH7)। কোষরসস্থ pH বেড়ে গেলে অদ্রবণীয় শ্বেতসারকে পুনরায় দ্রবণীয় চিনিতে পরিণত করে। ফলে অন্তঃঅভিস্রবণ প্রক্রিয়ার পার্শ্ববর্তী কোষ হতে পানি রক্ষীকোষে প্রবেশ করে। তাই রক্ষীকোষ স্ফীত হয় এবং পত্ররন্ধ্র খুলে যায়।

অদ্রবণীয় শ্বেতসার + অজৈব ফসফেট ফসফোরাইলেজ আলো, pH7 দ্রবণীয় চিনি (গুকোজ ১ ফসফেট)

প্রোটন প্রবাহ মতবাদ প্রবর্তনের পূর্ব পর্যন্ত স্টার্চ-শ্যুগার মতবাদ প্রতিষ্ঠিত ছিল।

(iv) আধুনিক মতবাদ বা প্রোটন প্রবাহ মতবাদ (Proton transport theory): S. Imamura ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে রক্ষীকোষে পটাসিয়াম আয়ন প্রবেশ প্রমাণ করেন। পরবর্তী বহু গবেষণায় রক্ষীকোষে পটাসিয়াম আয়নের প্রবেশকে রক্ষীকোষের স্ফীতির মূল কারণ হিসেবে প্রমাণিত হয়। প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপে ব্যাখ্যা করা যায়।

মনে রাখার কৌশল (Strategies to remember)

দিনের বেলা সূর্যালোক থাকে

বেশি সালোকসংশ্লেষণ হয়
বেশি \mathrm{CO}_{2} ব্যাবহার হয়
কম \mathrm{H}_{2} \mathrm{CO}_{3} তৈরি হয় \left(\mathrm{H}_{2} \mathrm{O}+\mathrm{CO}_{2} \rightarrow \mathrm{H}_{2} \mathrm{CO}_{3}\right)
(কম \mathrm{CO}_{2}, কম \mathrm{H}_{2} \mathrm{CO}_{3})
pH বেড়ে যায় (pH 5 নেমে আসে)
কম pH এ দ্রবণীয় চিনি অদ্রবণীয় শ্বেতসার এ পরিণত হয়
দ্রবণ লঘু হয় (বেশি \mathrm{H}_{2} \mathrm{O})
বহিঃঅভিস্রবন হয় (পানি বের হয়ে যায়)
পত্ররন্ধ্র শিথিল হয়
বন্ধ হয়