10 Minute School
Log in

কঙ্কালের কার্যক্রম, হাঁটু সঞ্চালনে অস্থি ও পেশির সমন্বয়

কঙ্কালের কার্যক্রম এবং ‘রডস ও লিভার’ তন্ত্র

(The action of Skeleton and “Rods & Lever” System)

  • কঙ্কালিক পেশি আলাদাভাবে কাজ করতে পারে না। একটি পেশি যখন কঙ্কালের সঙ্গে যুক্ত থাকে তখন সংযোগের স্থান ও প্রকৃতি নির্ধারণ করে দেয় এর বল, গতি ও সঞ্চালনের মাত্রা কেমন হবে। এসব বৈশিষ্ট্য স্বাধীন এবং এদের সম্পর্ক নির্ভর করে পেশি ও কঙ্কালতন্ত্রের সাধারণ গঠনের উপর। নির্দিষ্ট একটি পেশির সংকোচনে যে বল, গতি ও সঞ্চালনের দিক প্রকাশ পায় তা বদলে দেয়া যাবে যদি ঐ পেশিকে একটি লিভারের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া যায়। লিভার (lever) এমন একটি অনমনীয় রড (rod) যা সন্ধির মাধ্যমে সৃষ্ট একটি স্থায়ী পয়েন্ট বরাবর ঘুরতে সক্ষম। শিশুদের দোলায়মান বা  টলায়মান  দাঁড়ান বা হাঁটা  লিভার ক্রিয়ার পরিচিত উদাহরণ। লিভারের মাধ্যমে (১) আরোপিত (applied) দিক, (২) আরোপিত বলের ফলে সৃষ্ট চলনের দূরত্ব ও গতি এবং (৩) আরোপিত বলের কার্যকর শক্তি (effective strength) পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ পেশিটানের ক্রিয়া কঙ্কালতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে যেভাবে প্রকাশিত হয় তাতে কঙ্কালতন্ত্রে রড ও লিভার তন্ত্রের প্রভাব এবং আমাদের হাত-পাগুলোকে মেশিন ছাড়া আর কিছু ভাবার উপায় নেই। লিভারের প্রতি যে কোন বলপ্রয়োগকে বলে প্রচেষ্টা (effort)। যে বলপ্রয়োগে লিভারের চলন বাধাগ্রস্থ হয় (যেমন- দন্ডের উপর ওজনের কারণে নিম্নমূখি বল প্রয়োগ) তাকে বলে ভার (load) বা প্রতিবন্ধক (resistance)। পেশির সংকোচন হচ্ছে প্রচেষ্টা, আর এতে সংশ্লিষ্ট দেহের অংশটি হচ্ছে ভার বা বাধা। শরীরের হাড়গুলো লিভার (যান্ত্রিক কৌশল) হিসেবে কাজ করে, ফলে গতি বা শক্তির এক যান্ত্রিক সুবিধার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ লিভারের ব্যবহারে একটি ক্ষুদ্র বল (force) বিরাট বল-এ পরিবর্তিত হতে পারে। পায়ের পেশির সামান্য সংকোচনের ফলে পায়ের শীর্ষে বৃহত্তর সঞ্চালন একটি ফুটবলকে সজোরে দূরে পাঠাতে সাহায্য করে। এটাই হচ্ছে যান্ত্রিক সুবিধা (mechanical advantage)।
  • লিভারের গঠন (Structure of Lover) : একটি লিভার ৪টি অংশ দিয়ে গঠিত। যথা-
  • লিভার-বাহু (Lever arms)- হাড়গুলো লিভার-বাহু হিসেবে কাজ করে।
  • পিভট (Pivot)- যে অস্থিসন্ধিকে কেন্দ্র করে লিভারের কাজ কর্ম পরিচালিত হয়।
  • ভার (Load)- দেহের কোনো অংশের ওজন যা সরাতে হবে বা উঠাতে হবে কিংবা দেহের ভিতরে বা বাইরে নিতে হবে।
  • প্রচেষ্টা (Effort)- ভার সরানো বা নড়ানোর জন্য পেশি যে বল (force) সরবরাহ করে।

লিভারের প্রকারভেদ (Types of Lever) : পিভট, প্রচেষ্টা ও ভার-এর অবস্থানের ভিত্তিতে লিভার নিচে বর্ণিত ৩ রকম।

  1. প্রথম শ্রেণির লিভার (First-class lever) : এ ধরনের লিভারে পিভটটি ভার ও প্রচেষ্টার মাঝখানে অবস্থান করে। কাঁচি এ ধরনের লিভার, কিন্তু মানবদেহে প্রথম-শ্রেণি লিভার দুর্লভ। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, মাথা ও প্রথম কশেরুকার মধ্যবর্তী সন্ধিটি। এক্ষেত্রে মাথার খুলি হচ্ছে লিভার-বাহু; খুলি ও প্রথম  কশেরুকা  (অ্যাটলাস)-র মধ্যকার  সন্ধিটি পিভট; মাথার পিছনে অবস্থিত  পেশি  থেকে আসা পেশল ক্রিয়া হচ্ছে প্রচেষ্টা এবং ভার হচ্ছে মাথার ওজন যা প্রচেষ্টার কর্মকান্ডে উঁচু হয়ে থাকে (ওজনের বিরুদ্ধে)। পেশি (প্রচেষ্টা) শিথিল হলে মাথা ঝুঁকে পড়ে। লিভারের মাধ্যমে অল্প বল প্রয়োগে বেশি ফল পাওয়া যায়।

 

চিত্র-১৭ : পেশির কর্মকান্ড

 

    1. দ্বিতীয় শ্রেণির লিভার (Second-class  lever) : এ ধরনের লিভারে ভারের অবস্থান থাকে পিভট ও প্রচেষ্টার মাঝখানেঠেলাগাড়ি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ঠেলাগাড়ির মেঝেয় যে মাল রাখা হয় সেটি ভার। এ অংশটি থাকে পিভটরূপী হুইল আর প্রচেষ্টারূপী ঠেলাচালকের হাতের মধ্যবর্তী স্থানে। পায়ের আঙ্গুলের ডগায় দাঁড়ালে দ্বিতীয় শ্রেণির লিভার সৃষ্টি হয়। তখন আঙ্গুলের প্রচেষ্টা সন্ধিগুলো হয় পিভট, দুপা লিভার-বাহু, কাফ-পেশি ও গোড়ালির টেন্ডন প্রচেষ্টা (যখন কাফ পেশি সংকুচিত হয়) এবং দেহের ওজন হচ্ছে ভার (যা পেশি সংকোচনের ফলে উপরে উত্থিত হয়)। এ ধরনের লিভারের সাহায্যে সামান্য প্রচেষ্টায় বেশি ওজনকে উপরে তুলে ধরা সহজ হয়
  • তৃতীয় শ্রেণির লিভার (Third-class lever) : এ ধরনের লিভারের প্রচেষ্টা থাকে পিভট ও ভার-এর মাঝখানে। উদাহরণ হিসেবে নখ কাটার যন্ত্রের (nail flipper) কথা উল্লেখ করা যায়। মানবদেহে তৃতীয় শ্রেণির লিভারের সংখ্যা অনেক । একটি ভাঁজ করা বাহুকে তৃতীয় শ্রেণির লিভার বলা যায়। এ ক্ষেত্রে কনুইয়ে রয়েছে পিভট (কনুই-সন্ধি), সম্মুখ বাহু হচ্ছে লিভার-বাহু, বাইসেপস পেশি প্রচেষ্টার যোগান দেয়, আর সম্মুখ বাহু কিংবা কোনো ওজনদার বস্তুসহ সম্মুখ বাহু হচ্ছে ভার তৃতীয় শ্রেণির লিভারে প্রচেষ্টার অবস্থান ভার ও পিভটের মাঝে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে প্রচেষ্টা আর পিভট খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। প্রচেষ্টার চেয়ে ভার বেশি হওয়ায় এ ক্ষেত্রে কোনো যান্ত্রিক সুবিধা পাওয়া যায় না। তবে বাইসেপস পেশির সামান্য সংকোচনে সম্মুখ বাহুতে বৃহত্তর সঞ্চালনের সৃষ্টি হয় বলে যান্ত্রিক অসুবিধাটুকু পূরণ হয়ে যায়। দ্রুতগতির সঞ্চালন (movement) সুবিধা পাওয়া যায় এ ধরনের লিভার থেকে। 

হাঁটু সঞ্চালনে অস্থি ও পেশির সমন্বয়

(Coordination of Bones and Muscles in the Knee Movement)

মানুষের চলনে শুধু পেশি নয়, পেশির সঙ্গে যুক্ত অস্থির ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অস্থি দেহের কঙ্কালতন্ত্র গঠন করে। কঙ্কালতন্ত্র দেহের অবয়বের কাঠামো। কাঠামোর উপরে  আচ্ছাদন  হিসেবে থাকে পেশিতন্ত্র (muscular system)। এ পেশি ঐচ্ছিক (voluntary) প্রকৃতির হওয়ায় মানুষ দেহকে বা দেহের কোনো উপাঙ্গকে যথেচ্ছ আন্দোলিত গঠন করতে পারে। কন্ডরা বা টেন্ডন (tendon) দিয়ে পেশি অস্থির সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাই কোনো অঙ্গকে যথেচ্ছ পরিচালনা করা বা স্থানাস্তরে নেয়া পেশি-কঙ্কালতন্ত্রের (musculoskeletal system) পারস্পরিক ছন্দোবদ্ধ ক্রিয়াকলাপের উপর নির্ভরশীল। হাঁটু সঞ্চালনে অস্থি ও পেশি যেভাবে সমন্বয় সাধন করে তা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।

  •  বক্রীকরণ পেশি (Elexor) : জানুসন্ধি  (knee joint) পিছন দিকে বাঁকাতে দুটি পেশিগুচ্ছের প্রয়োজন হয়, এদের হ্যামস্ট্রিং পেশি (Hamstring muscle) এবং গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস পেশি (pastmicnemins muscle) বলে। হ্যামস্ট্রিং পেশি তিনটি পেশি নিয়ে গঠিত। এগুলো যথাক্রমে বাইসেপস ফিমোরিস (biceps femoris), সেমিমব্রেনোসাস (seumembronours) এবং সেমিটেউিনোসাস (semitendinosus)। পেশিগুলো উরুর পিছনে থাকে। এগুলো শ্রেণিচক্রের ইশ্চিয়াম (ischium) অংশে উৎপন্ন হয়ে ফিমারের পিছন দিয়ে টিবিয়া (tibia)-র উপরে যুক্ত হয়েছে। এদের সঙ্কোচনে ফিমার ও টিবিয়া কাছাকাছি আসে এবং হাটুঁসন্ধিতে ভাঁজ সৃষ্টি হয়।

                                                            চিত্র-১৮ : হাঁটু সঞ্চালনে অস্থি ও পেশির সমন্বয়

 

গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস পেশি টিবিয়ার পেছনে অবস্থিত পায়ের ডিম বা গুলির প্রধান পেশি। এটি ফিমারের কনডাইল (condyle) থেকে সৃষ্টি হয়ে টিবিয়ার পেছন দিয়ে গোড়ালিঅস্থি বা ক্যালকেনিয়াস (calcaneus) -এর সঙ্গে অ্যাকিলিস কন্ডরা (achilles tendon or calcanean tendon) দিয়ে যুক্ত হয়। এর সঙ্কোচনে ফিমার ও টিবিয়া নিকটবর্তী হয়, হাটুসন্ধি পেছন দিকে ভাঁজ হয়।

  •  প্রসারণ পেশি (Extensor) : উরুর সামনে অবস্থিত চারটি পেশি নিয়ে গঠিত কোয়াড্রিসেপস্র ফ্রিমোরি (quadriceps fermoris) হাটুসন্ধির প্রসারণ ঘটায়। এটি শ্রোণি থেকে উৎপন্ন রেকটাস ফিমোরিস (rectus femoris) এবং ফিমারের সামনে থেকে উৎপন্ন তিনটি ভ্যাসটি পেশি ভ্যাসটাস মিডিয়ালিস (vastas medialis), ভ্যাসটাস ল্যাটারালিস (vastas lateralis) এবং ভ্যাসটাস ইন্টারমিডিয়াস (vastas intermedius) নিয়ে গঠিত। এ তিনটি পেশি একসঙ্গে প্যাটেলা (putella)-র টেন্ডনের মাধ্যমে টিবিয়ার সামনে যুক্ত হয়। এসব পেশির সঙ্কোচনে হাটুসন্ধির প্রসারণ ঘটে।