10 Minute School
Log in

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, সৃষ্ট কতিপয় রোগ, কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

(Advantages and Disadvantages of Bacteria)

অপকারিতা (Disadvantages)

রোগসৃষ্টি (Infectious disease) :

  • মানুষঃ যেমন- কলেরা (Vibrio cholerae)
  • অন্যান্য প্রাণিতেঃ যেমন- গরু-মহিষের যক্ষ্মা (Mycobacterium bovis)
  • উদ্ভিদেঃ যেমন- ধানের পাতা ধ্বসা  রোগ (Xanthomonas oryzae)

খাদ্যদ্রব্যের পচন ও বিষাক্তকরণ (Digestion and poisoning of food) : ব্যাকটেরিয়া নানা রকম টাটকা ও সংরক্ষিত খাদ্যদ্রব্যে পচন ঘটিয়ে আমাদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি সাধন করে। Clostridium botulinum-নামক ব্যাকটেরিয়া খাদ্যে botulin নামক বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করে থাকে। এতে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে যাকে বটুলিজম (botulism) বলে। 

পানি দূষণ (Water pollution) : কলিফরম ব্যাকটেরিয়া (সাধারণত মল দিয়ে দূষিত) পানিকে পানের অযোগ্য করে। 

মাটির উর্বরতা শক্তি বিনষ্টকরণ (Loss of soil fertility energy) : নাইট্রেট জাতীয় উপাদান মাটিকে উর্বর করে থাকে। কিন্তু কতিপয় ব্যাকটেরিয়া (যেমন-Bacillus denitrificans) নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ায় মাটিস্থ নাইট্রেটকে ভেঙে মুক্ত নাইট্রোজেনে পরিণত করে এবং মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে, ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যায়।

নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের ক্ষতি সাধন (Damage to daily necessities) : ব্যাকটেরিয়া কাপড়-চোপড়, লোহা, কাঠের আসবাবপত্রসহ অনেক দ্রব্যের ক্ষতি সাধন করে থাকে। যেমন- Desulfovibrio sp. লোহার পাইপে ক্ষতের সৃষ্টি করে পানি সরবরাহে বিঘ্ন। 

বায়োটেরোরিজম বা জৈব সন্ত্রাস (Biological Terrorism) : ক্ষতিকারক জীবাণুকে যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়ে থাকে যাকে বায়োটেরোরিজম বলে।  

যানবাহনের দুর্ঘটনা : Clostridium sp. বিমানের জ্বালানিতে জন্মালে বিমান দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

 

উপকারিতা (Benefits)

ক) চিকিৎসা ক্ষেত্রে (In medical field) : 

১। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ তৈরিতে (In making antibiotics) : ব্যাকটেরিয়া হতে সাবটিলিন (Bacillus subtilis হতে), পলিমিক্সিন (Bacillus polymyxa হতে) প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রস্তুত করা হয়। 

২। প্রতিষেধক টিকা তৈরিতে (In making immunizations) : ব্যাকটেরিয়া হতে কলেরা, টাইফয়েড, যক্ষ্মা প্রভৃতি রোগের প্রতিষেধক প্রস্তুত করা হয়। ডি.পি.টি. (ডিফথেরিয়া, হুপিংকাশি ও ধনুস্টংকার) রোগের টিকা বা প্রতিষেধকও ব্যাকটেরিয়া হতে প্রস্তুত করা হয়। Corynebacterium diphtheriae (D), Bordetella pertussis (P) এবং Clostridium tetani (T) হতে DPT (D = Diphtheria, P= Pertussis, T= Tetanus) নামকরণ করা হয়েছে। 

খ) কৃষি ক্ষেত্রে (In the field of agriculture) : 

৩। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে (In increasing soil fertility) : মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে ব্যাকটেরিয়ার অবদান অনেক। মাটির জৈব পর্দাথ সঞ্চয়ে ব্যাকটেরিয়ার প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে। ব্যাকটেরিয়া মাটির উপাদান হিসেবেও কাজ করে। নানবিধ আবর্জনা হতে পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া জৈব সার ও জৈব গ্যাস প্রস্তুত করে। 

৪। নাইট্রোজেন সংবন্ধনে (In nitrogen binding) : Azotobacter, Pseudomonas, Clostridium  প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া সরাসরি বায়ু হতে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে নাইট্রোজেন যৌগ পদার্থ হিসেবে মাটিতে স্থাপন করে, ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। Rhizobium ব্যাকটেরিয়া সিম জাতীয় উদ্ভিদের মূলের নডিউলে নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে থাকে। বাংলাদেশে মসুর ডালের মূলে নডিউল তৈরি করে Rhizobium গণের তিনটি প্রজাতি। এগুলো হলো R. bangladeshense, R. bine এবং R. lentis বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) – এর তরুণ বিজ্ঞানী ড. মোঃ হারুন- অর রশিদ এই নতুন ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কারক। 

৫। নাইট্রিফিকেশন (Nitrification) : অ্যামোনিয়াকে ( \mathrm{NH}_{3} ) নাইট্রেট-এ  (\mathrm{NO}_{3}^{-} ) পরিণত করাকে বলা হয় নাইট্রিফিকেশন। সাধারণত দুটি উপধাপে এটি সম্পন্ন হয়। প্রথম উপধাপে Nitrosomonas, Nitrococcus ইত্যাদি স্থলজ ব্যাকটেরিয়া অ্যামোনিয়াকে নাইট্রাইড-এ (\mathrm{NO}_{2}^{-} ) পরিণত করে এবং দ্বিতীয় উপধাপে Nitrobacter নাইট্রাইটকে নাইট্রেটে (\mathrm{NO}_{3}^{-} ) পরিণত করে। এদেরকে নাইট্রিফাইং (nitrifying) ব্যাকটেরিয়া বলা হয়। 

\mathrm{NH}_{3} \mathrm{NO}_{2}^{-} \mathrm{NO}_{3}^{-}

৬। পতঙ্গনাশক হিসেবে (As an insecticide) : কতিপয় ব্যাকটেরিয়া (যেমন-Bacillus thuringiensis) বিভিন্ন প্রকার পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।   

৭। পশু খাদ্য বা সিলেজ তৈরি (Making animal feed or silage) : কৃষিক্ষেত্রে এবং দুগ্ধ শিল্পে পশুর অবদান উল্লেখযোগ্য। পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খড় জাতীয় পদার্থকে খণ্ড খণ্ড করে কেটে পানি মিশ্রিত করে Lactobacillus sp. এর কার্যকারিতায় পশুখাদ্য বা সিলেজ তৈরি হয়। Yest মিশ্রিত খাদ্য খাওয়ালে গাভীর দুধের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। 

৮। ফলন বৃদ্ধিতে (In yield increase) : কিছু বিশেষ ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে ধানের উৎপাদন শতকরা ৩১.৮ ভাগ এবং গমের উৎপাদন শতকরা ২০৮ ভাগ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। 

(গ) শিল্প ক্ষেত্রে (In the field of industry) :  

৯। চা, কফি, তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে (In tea, coffee, tobacco processing) : চা, কফি, তামাক প্রভৃতি প্রক্রিয়াজাতকরণে Bacillus megaterium নামক ব্যাকটেরিয়া এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

১০। দুগ্ধজাত শিল্পে (In dairy industry) : Streptococcus lactis, Lactobacillus জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার সহায়তায় দুগ্ধ হতে মাখন, দই, পনির, ঘোল, ছানা প্রভৃতি তৈরি করা হয়। 

১১। পাট শিল্পে (In  jute industry) : ব্যাকটেরিয়ার পচনক্রিয়ার ফলেই পাটের আঁশগুলো পৃথক হয়ে যায় এবং আমরা সহজেই পাটের কান্ড থেকে আঁশ ছাড়াতে পারি। কাজেই আমাদের অর্থনীতিতে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা তুলনাহীন। এ ব্যাপারে Clostridium জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা যথেষ্ট। 

১২। চামড়া শিল্পে (In leather industry) : চামড়া হতে লোম ছাড়ানোর ব্যাপারে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা অপরিসীম। এক্ষেত্রে Bacillus এর বিভিন্ন প্রজাতি চামড়ার লোম ছাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। ১৩। বায়োগ্যাস বা জৈব গ্যাস তৈরিতে (In making biogas) : জৈব গ্যাস তৈরিতে এবং হেভী মেটাল (ভারী ধাতু) পৃথকীকরণেও ব্যকটেরিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

১৪। টেস্টিংসল্ট প্রস্তুতিতে (In preparation of testing salt) : টেস্টিংসল্ট প্রস্তুতে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। খাদ্যদ্রব্যকে সুস্বাদু ও মুখরোচক করতে এ সল্ট ব্যবহৃত হয়। 

১৫। রাসায়নিক পদার্থ প্রস্তুতকরণে (In preparation of chemicals) : ভিনেগার (Acetobacter xylinum দিয়ে), ল্যাকটিক অ্যাসিড (Bacillus lacticacidi দিয়ে), অ্যাসিটোন (Clostridium acetobutylicum দিয়ে) প্রভৃতি রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতকরণের জন্য শিল্পক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। 

(ঘ) মানব জীবনে (In human life) : 

১৬। সেলুলোজ হজমে (Cellulose digestion) : গবাদি পশু ঘাস, খড় প্রভৃতি খেয়ে থাকে। এদের প্রধান উপাদান সেলুলোজ। গবাদি পশুর অন্ত্রে অবস্থিত এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া সেলুলোজ হজম করতে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে থাকে। তাই পশুপালন সহজ হয়। 

১৭। ভিটামিন তৈরিতে (In making vitamins) : মানুষের অন্ত্রের Escherichia coli (E. coli) ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া ভিটামিন-বি, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি, ফোলিক অ্যাসিড, বায়োটিন প্রভৃতি পদার্থ প্রস্তুত ও সরবরাহ করে থাকে। 

১৮। জিন প্রকৌশলে (In gene engineering) : জিন প্রকৌশলে অনেক ব্যাকটেরিয়াকে (E.coli, Agrobacterium প্রভৃতি) বাহক হিসেবে সার্থকভাবে ব্যবহার করা হয়।  

(ঙ) পরিবেশ উন্নয়নে (In environmental development) :  

১৯। আবর্জনা পচনে (Garbage decomposes) : উদ্ভিদ ও প্রাণীর যাবতীয় মৃতদেহ, বর্জ্য পদার্থ ও অন্যান্য জঞ্জাল পচন প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিবেশের সুরক্ষায় গুরুত্বের জন্য ব্যাকটেরিয়াকে ‘প্রকৃতির ঝাড়ুদার’ বলে। 

২০। পয়ঃনিষ্কাশনে (In sewerage) : জৈব বর্জ্য পদার্থকে দ্রুত রূপান্তরিত করে ব্যাকটেরিয়া পয়ঃপ্রণালিকে সুষ্ঠু ও চালু রাখে; যেমন-Zooglea ramigera  

২১। তেল অপসারণে (Oil removal) : সমুদ্রের পানিতে ভাসমান তেল অপসারণে তেল-খাদক ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়; যেমন- Pseudomonas aeruginosa |  

২২। বায়োগ্যাস উৎপাদন (Biogas production) : Bacillus, E. coli, Clostridium, Methanococcus। 

 

ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট কতিপয় রোগ, কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার (Certain diseases caused by bacteria and their causes, symptoms and remedies)

ব্যাকটেরিয়া দিয়ে মানুষ, পশু এবং গাছপালার অসংখ্য রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এর মধ্যে কতিপয় রোগ ফসল ও মানুষের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে, দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে উদ্ভিদে সাধারণত ব্লাইট, উইল্ট, গল ও রট (blight, wilt, gall, rot) রোগ হয়ে থাকে। এখানে ব্যাকটেরিয়াজনিত ধানের ব্লাইট রোগ এবং মানুষের কলেরা রোগ সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।  

 

(ক) ধান গাছের ব্লাইট রোগ (Blight disease of rice)

ধানের মারাত্মক রোগগুলোর মধ্যে ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট অন্যতম। প্রায় পৃথিবীব্যাপীই এর বিস্তৃতি। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের প্রকরণটি (strain) শীতপ্রধান অঞ্চলের প্রকরণ অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকারক। জাপানের কৃষকেরা সর্বপ্রথম এ রোগের সন্ধান পান বলে ধারণা করা হয়। Takaeshi ১৯০৮ সালে সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন যে, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগটি হয়। 

রোগজীবাণু (Pathogen/Causal organism) : 

ধান গাছের ব্যাকটেরিয়্যাল ব্লাইট নামক রোগ সৃষ্টিকারী ব্যকটেরিয়ার নাম Xanthomonas oryzae pv. oryzae (Ishsyama) Swings et al. এটি দণ্ডাকৃতির, ১.২ x ০.৩ – ০.৫ μm , অপেক্ষাকৃত মোটা ও খাটো। এরা সাধারণত এককভাবে থাকে, কখনো দুটি এক সাথে থাকতে পারে, তবে চেইন সৃষ্টি করে না। 

এরা গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া এবং স্পোর তৈরি করে না। এদের কোনো ক্যাপসিউল নেই, তবে একটি ফ্ল্যাজেলাম থাকে। অ্যাাগার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া গোলাকার, মসৃণ, মোমের ন্যায় হলুদাভ ও  চকচকে কলোনি উৎপন্ন করে। এরা বিভিন্ন ঘাস (Leersia oryzoides., Leptochloa dubia. Cyperus rotundus, C. difformis) ও বন্য ধানে (Oryza rufipogon, O. australiensis) বিকল্প পোষক হিসেবে গ্রহণ করে বেঁচে থাকে।  

রোগাক্রমণ (Infection) : 

একাধিক উৎস থেকে রোগাক্রমণ ঘটতে পারে, যেমন- রোগাক্রান্ত বীজ, রোগাক্রান্ত খড়, জমিতে পড়ে থাকা রোগাক্রান্ত শস্যের অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি। পাতার ক্ষত স্থান, কাটা স্থান (লাগানোর আগে অনেক সময় চারার লম্বা পাতার আগা কেটে দেয়া হয়), হাইডাথোড বা পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে জীবাণু গাছের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং সেখানে সংখ্যাবৃদ্ধি করে। পরে জীবাণু শিরার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। মূলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং গাছ নেতিয়ে পড়ে। অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রা ( ২৫ \mathrm{৩০}^{0} সে.), উচ্চ জলীয় বাষ্প, বৃষ্টি, জমিতে অধিক পানি রোগাক্রমণে সহায়তা করে। অধিক পরিমাণ সার প্রয়োগও রোগ বিস্তারের অনুকূল হয়। ঝড়ো বাতাস পাতায় ক্ষত সৃষ্টি করে থাকে, আর ঐ ক্ষত স্থান দিয়ে রোগজীবাণু ভেতরে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করে। 

রোগ লক্ষণ (Sign and Symptoms) :  

১। সাধারণত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের দিকে এ রোগের সূচনা হয়। 

২। পাতায় ভেজা (Water-soaked), অর্ধস্বচ্ছ ও লম্বা লম্বা দাগের সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দাগ পাতার শীর্ষে শুরু হয়। 

৩। দাগ ক্রমশ দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে বড় হতে থাকে এবং ঢেউ খেলানো প্রান্ত বিশিষ্ট হয়।  

৪। দাগগুলো ক্রমশ হলুদ বা হলদে সাদা ধূসর বর্ণের হয়। 

৫। সকালে দুধের মতো সাদা বা অর্ধস্বচ্ছ রস আক্রান্ত স্থান থেকে ধীরে প্রবাহিত হয়।  

৬। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন স্যাপ্রোফাইটিক ছত্রাকের আক্রমণে ক্ষত স্থান ধূসর বর্ণের হয়।  

৭। আক্রমণ বেশি হলে পাতা দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং গাছটি মরে যায়।  

৮। লাগানোর ১-৩ সপ্তাহের মধ্যে চারাও প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রমণ বেশি হলে চারা ঢলে পড়ে। 

৯। ধানের ছড়া বন্ধ্যা হয়, তাই ফলন ৬০% পর্যন্ত কম হতে পারে।  

১০। ধানের শীষে কোনো ফলন হয় না।  

১১। আক্রান্ত গাছের অধিকাংশ ধান চিটায় পরিণত হয়। 

রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ (Remedy and prevention of the disease)

১। সবচেয়ে কার্যকরী হলো রোগ প্রতিরোধক্ষম প্রকরণ চাষ করা । 

২। বীজই রোগ জীবাণুর প্রধান বাহন। ব্লিচিং পাউডার (১০০ mg/ml) এবং জিঙ্ক সালফেট (২%) দিয়ে বীজ শোধন করলে রোগাক্রমণ বহুলাংশে কমে যায়।  

৩। কপার যৌগ, অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার ভালো সুফল আনে না, কিছুটা উপকার হয়।  

৪। জমিকে অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে। এছাড়া ধানের খড়, নিজ থেকে গজানো চারা সরাতে হবে।  

৫। বীজতলায় পানি কম রাখতে হবে, অতিবৃষ্টির সময় পানি সরানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। চারা থেকে চারার দূরত্ব, লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব, সার প্রয়োগ (বিশেষ করে ইউরিয়া) বিজ্ঞানসম্মত হতে হবে।  

৬। বীজ বুনা বা চারা লাগানোর আগে জমিকে ভালোভাবে শুকাতে হবে, পরিত্যক্ত খড় ও আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।  

৭। রোপণের সময় চারাগাছের পাতা ছাঁটাই করা যাবে না।  

৮। নাইট্রোজেন সার বেশি ব্যবহার করা যাবে না।  

৯। গাছ আক্রান্ত হলে ক্ষেতে হেক্টর প্রতি ২ কেজি ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করতে হবে।  

১০। ফিনাইল সারফিউরিক অ্যাসিটেড এম. ক্লোরামফেনিকল ১০-২০ লিটার পরিমাণে মিশিয়ে আক্রান্ত ক্ষেতে ছিটালে রোগ নিয়ন্ত্রণ হয়।  

১১। বীজ বপনের আগে ০.১% সিরিসান দ্রবণে ৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে বীজবাহিত সংক্রমণ রোধ হয়।   

 

খ) কলেরা (Cholera

রোগজীবাণু (Pathogen/Causal organism) : 

Vibrio cholerae নামক ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়ার আকৃতি একটু বাঁকা, কমার মতো। এর দৈর্ঘ্য ১-৫ মাইক্রন এবং প্রস্থ ০.৪-০.৬ মাইক্রন। এর একপ্রান্তে একটি ফ্ল্যাজেলাম থাকে। কলেরা একটি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া। রবার্ট কচ সর্বপ্রথম কলেরা রোগের জীবাণু আবিষ্কার করেন। কলেরা রোগের জীবাণু দেহে ক্ষুদ্রান্ত্রের মিউকাসের সাথে লেগে যায় এবং কলেরাজেন (Choleragen) নামক টক্সিন মিশ্রিত করে। কলেরাজেন একটি এন্টারোটক্সিন। বিভিন্ন কলেরার মধ্যে এশিয়াটিক কলেরা সবচেয়ে মারাত্মক।

রোগ লক্ষণ (Causes of disease) : 

কলেরা রোগের প্রধান লক্ষণ হলো প্রবল উদরাময় (ডায়রিয়া)। পায়খানার প্রথম দিকে মল থাকে, পরে চালধােয়া পানির মতো নির্গত হয়। রোগীর দেহে জ্বর থাকে এবং বমি হতে পারে। নাড়ীর গতি খুব ক্ষীণ হয়। শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। রক্ত প্রবাহ কমে মস্তিষ্কে O_2 এর ঘাটতি দেখা দেয় ও রোগী অচেতন হয়ে পড়ে। দেহে মাংসপেশীর সংকোচন (cramp) এ রোগের একটি প্রধান লক্ষণ। বমি এবং ঘন ঘন পানির ন্যায় পায়খানার ফলে রোগীর দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে, একই কারণে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রোগীর প্রচণ্ড পিপাসা, খিঁচুনি দেখা দেয়, রক্তচাপ কমে যায়, দেহ ঠাণ্ডা হয়ে আসে। রোগের প্রচণ্ডতায় রোগীর চোখ বসে যায় এবং দেহ বিবর্ণ হয়ে যায়। চামড়া কুঁচকে যায়। ব্যাপক পরিমাণে শরীর থেকে পানি ও ইলেকট্রোলাইট হারানোর ফলে রক্তে প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে রোগী মারা যেতে পারে। এছাড়া রক্ত সংবহনতন্ত্র অচল হয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

প্রতিকার (Remedy) : 

কলেরা রোগীর দেহ থেকে অতিমাত্রায় পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, তাই পানি ও লবণ সমন্বয়ের জন্য শিরায় সেলাইন দেয়া হলো উত্তম চিকিৎসা। সাথে ডাবের পানি ও খাবার সেলাইন-ORS (Oral Rehydration Saline) দেয়া যেতে পারে। রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে। মোট কথা রোগীর দেহে যেন পানিশূন্যতা দেখা না দিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। 

প্রতিরোধ (Resistance) : 

কলেরা একটি পানিবাহিত রোগ, তাই বিশুদ্ধ পানি পানের ব্যবস্থা করতে হবে। দূষিত পানি, বাসি খাবার, রাস্তার উন্মুক্ত খাবার ও পানীয় বর্জন করতে হবে। রোগীর ভেদ-বমি থেকে মাছির সাহায্যে গৌণ সংক্রমণ ঘটে, তাই খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে। রোগীর পরিধেয় কাপড়, বিছানা-পত্র পুকুর বা নদী নালায় না ধুয়ে সিদ্ধ করে রোদে শুকাতে হবে। সম্ভব হলে রোগীকে পৃথক ঘরে রাখতে হবে। কোনো এলাকায় কলেরা দেখা দিলে সবার কলেরা ভেকসিন (টিকা) নিতে হবে। কলেরা রোগীকে প্রচুর পরিমাণে ডাবের পানি ও কলেরা সেলাইন খাওয়াতে হবে যাতে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি দ্রুত পূরণ হয়।