10 Minute School
Log in

Agaricus ছত্রাকঘটিত রোগ

Agaricus-এর শ্রেণিবিন্যাস (Classification)

Kingdom: Fungi

Division: Basidiomycota

Class: Basidiomycetes

Order: Agaricales

Family: Agaricaceae

Genus: Agaricus

বাংলাদেশ থেকে নথিভুক্ত প্রজাতি হলো A. bisporus (Leg.) Sing. এটি হোয়াইট বাটন মাশরুম নামে পরিচিত।

আবাসস্থল (Habitat):

Agaricus ভেজা মাটিতে, মাঠে-ময়দানে বা গোবর, খড় ইত্যাদি পচনশীল জৈব পদার্থের উপর জন্মায়। এরা মৃতজীবী (saprophytic)। সাধারণত এদের বায়বীয় অংশ খাড়া হয়ে উপরে বৃদ্ধি পায় এবং পরিণত অবস্থায় অনেকটা ছাতার মতো দেখায়। তাই এদেরকে ব্যাঙের ছাতা বলা হয়।

Agaricus

মাইসেলিয়াম থেকে ছাতার ন্যায় বায়বীয় অংশ সৃষ্টিকে ফ্রুকটিফিকেশন (fructification) বলা হয় এবং ঐ বায়বীয় অংশকে Agaricus উদ্ভিদের ফ্রুট বডি (fruit body বা fruiting body) বলা হয়। এরা মাশরুম (mushroom) নামেও পরিচিত। অনেক সময় লনে (Lawn-খালি জায়গা) অনেকগুলো মাশরুম বৃত্তাকারে বা চক্রাকারে অবস্থান করতে দেখা যায়। এরূপ অবস্থাকে পরীচক্র (fairy ring) বলা হয়। 

গোজনন অংশ  তথা ফ্রুট বডি (fruiting body) মাটি বা আবাদ মাধ্যম থেকে উপরে বাড়তে থাকে। পরিণত অবস্থায় এর দুটি অংশ থাকে। কাণ্ডের ন্যায় অংশকে স্টাইপ (stipe) বলা হয় এবং উপরের দিকে ছাতার ন্যায় অংশকে পাইলিয়াস (pileus) বলা হয়। তরুণ অবস্থায় পাইলিয়াসটি ভেলাম (Vellum) নামক একটি পাতলা ঝিল্লিময় আবরণে আবৃত থাকে। পাইলিয়াসের নিচের দিকে ঝুলন্ত অবস্থায় পর্দায় ন্যায় অংশকে গিল (gills) বা ল্যামিলী (lamellae) বলে। স্টাইপের মাথায় একটি চক্রাকার অংশ থাকে যাকে অ্যানুলাস (annulus) বলে। ল্যামিলীতে অসংখ্য ব্যাসিডিয়া (basidia) সৃষ্টি হয়। প্রতিটি ব্যাসিডিয়াম উর্বর এবং ব্যাসিডিয়ামের শীর্ষে আঙুলের ন্যায় চারটি অংশের মাথায় একটি করে ব্যাসিডিয়োষ্পোর (basidiospore) উৎপন্ন হয়। স্পোরগুলো অনুকূল পরিবেশে অঙ্কুরিত হয়ে নতুন মাইসেলিয়াম তৈরি করে।

গিলের অন্তর্গঠন (Gill’s infrastructure)

গিল পাতলা পাতের মতো। গিলের অন্তর্গঠন বেশ জটিল প্রকৃতির। প্রস্থচ্ছেদ করলে একে তিনস্তরে বিভক্ত দেখা যায়, যথা-ট্রমা, সাবহাইমেনিয়াম ও হাইমেনিয়াম।

  1. ট্রমা (Trama) : গিলের কেন্দ্রীয় বন্ধ্যা অংশকে ট্রমা বলে। ঢিলাভাবে স্টেরিগমা , জড়াজড়ি করে সজ্জিত গৌণ মাইসেলিয়াম দিয়ে ট্রমা অংশ গঠিত। এর হাইমেনিয়াম কোষগুলো ডাইক্যারিওটিক।
  2. সাবহাইমেনিয়াম (Subhymenium) : ট্রমার উভয় দিকের অংশকে সাব-হাইমেনিয়াম সর্বহাইমেনিয়াম বলে। কোষগুলো আকারে ছোট, গোলাকার এবং ২-৩ নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট। এরূপ কোষবিন্যাসকে প্রোজেনকাইমা বলে। এ অঞ্চল থেকে  ব্যাসিডিয়াম উৎপন্ন হয়ে থাকে।
  3. হাইমেনিয়াম (Hymenium) : গিলের উভয় পাশের বহিস্থ স্তরকে হাইমেনিয়াম বলে। উর্বর এ স্তরের কোষগুলো সাবহাইমেনিয়াম হতে উথিত  তলের সাথে লম্বভাবে সাজানো থাকে। এ স্তরেই গদাকার ব্যাসিডিয়াম উৎপন্ন হয়।

ব্যাসিডিওকার্প (Basidiocarp) : ব্যাসিডিওমাইসিটিস শ্রেণির ছত্রাকের ফুট বডিকে ব্যাসিডিওকার্প বলে। কাজেই Agaricus-এর ফুট বডিকেও ব্যাসিডিওকার্প বলা হয়। Agaricus-এর ব্যাসিডিওকার্প গোড়ায় দণ্ডের ন্যায় স্টাইপ, স্টাইপের মাথার দিকে অ্যানুলাস এবং মাথায় ছাতার ন্যায় পাইলিয়াস নিয়ে গঠিত।

এছাড়াও এতে আছে গিল বা ল্যামিলী, গিলে অসংখ্য ব্যাসিডিয়া এবং প্রতিটি ব্যাসিডিয়ামের মাথায় ৪টি করে ব্যাসিডিওস্পোর। ভূ-নিম্নস্থ মাইসেলিয়াম অংশ বাদে উপরে ব্যাঙের ছাতার ন্যায় অংশটুকুই Agaricus-এর ব্যাসিডিওকার্প। 

অঙ্কুরোদগম (Germination): অনুকূল পরিবেশে ব্যাসিডিওস্পোর অঙ্কুরিত হয়ে মনোক্যারিওটিক প্রাথমিক মাইসেলিয়াম গঠন শুরু করে। সোমাটোগ্যামির মাধ্যমে প্রাথমিক মাইসেলিয়াম হতে গৌণ মাইসেলিয়াম উৎপন্ন হয়। পরে গৌণ মাইসেলিয়ামের সহায়তায় সৃষ্ট রাইজোমর্ফ দিয়ে প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে। 

পুষ্টি (Nutrition): জৈব পদার্থ শোষণ করে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।

জনন (Reproduction): Agaricus প্রধানত যৌন জনন প্রক্রিয়ায় জননকার্য সম্পন্ন করে। যৌন স্পোর উৎপাদনকারী অঙ্গের নাম ব্যাসিডিয়াম (basidium) এবং স্পোর এর নাম ব্যাসিডিওস্পোর।

ছত্রাকঘটিত রোগ (Fungal diseases)

গোল আলুর বিলম্বিত ধ্বসা রোগে (Late blight disease of potato): 

গাছের পাতা, কাণ্ড, ফুল ইত্যাদি অঙ্গ ক্ষত হয়ে শুকিয়ে যাওয়াকে বলা হয় ধ্বসা বা ব্লাইট (blight)। আলু গাছে দুই ধরনের ব্লাইট রোগে হয়ে থাকে; একটি হলো লেট ব্লাইট, অপরটি হলো আর্লি ব্লাইট। আর্লি ব্লাইট Alternaria solani দিয়ে হয়ে থাকে। আলু গাছের সবচেয়ে ক্ষতিকারক রোগে হলো লেট ব্লাইট, যা বাংলায় বিলম্বিত ধ্বসা রোগে হিসেবে পরিচিত। মড়ক আকারে দেখা দিলে লেট ব্লাইটের কারণে আলুর ফলন সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এ রোগটি সম্ভবত প্রথমে দক্ষিণ আমেরিকাতে শুরু হয়েছিল। পরে উত্তর আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ হয়ে বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়ে। শীতপ্রধান অঞ্চলেই রোগটির প্রকোপ বেশি। আলুর লেট ব্লাইট রোগের কারণে ১৮৪০ দশকের মাঝের দিকে (১৮৪৩-১৮৪৭) আয়ারল্যান্ডে ভয়াবহ আইরিশ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, যার ফলে প্রায় দশ লক্ষ লোক না খেয়ে মারা যায় এবং অভাবে পড়ে আরও ২০ লক্ষ লোক দেশ ত্যাগ করে। ঐ সময় ইউরোপের প্রায় সব দেশেই আলুর মড়ক দেখা দিয়েছিল কিন্তু অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আয়ারল্যান্ড, কারণ ‘Irish Lumper’ নামক একটি মাত্র। প্রকরণই তারা অধিক চাষ করতো। লেট ব্লাইট রোগে আলুর ফসলহানির কারণে জার্মানিতেও ৭ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল।

রোগজীবাণু (Pathogen) : 

আলুর বিলম্বিত ধ্বসা রোগের কারণ হলো আলু গাছে Phytophthora infestans নাম ছত্রাকের আক্রমণ। Phytophthora, Phycomycetes শ্রেণির ছত্রাক। ছত্রাক দেহ মাইসেলিয়াম এবং সিনোসাইটিক। এরা পোষক দেহের আন্তকোষীয় ফাকে অবস্থান করে এবং হস্টোরিয়া (haustoria) নামক বিশেষ হাইফার মাধ্যমে পোষক কোষ থেকে খাদ্যরস শোষণ করে বেঁচে থাকে। পরবর্তীতে আন্তকোষীয় হাইফা থেকে বায়বীয় শাখা পাতার নিমত্বকের স্টোম্যাটা দিয়ে গুচ্ছাকারে বের হয়ে আসে। বায়বীয় এ শাখাগুলোকে কনিডিয়াফোর বলে। কনিডিয়াফোর শাখান্বিত এবং প্রতি শাখার মাথায় একটি কনিডিয়াম (বহুবচনে কনিডিয়া) উৎপন্ন হয়। 

কনিডিয়াম হলো অযৌন স্পোর। কনিডিয়া দেখতে কতকটা উপবৃত্তাকার বা ডিম্বাকার, পুরুপ্রাচীর বিশিষ্ট কিন্তু মাথাটা পাতলা ও অর্ধস্বচ্ছ। প্রতিটি কনিডিয়ামে একাধিক নিউক্লিয়াস, প্রচুর দানাদার প্রোটোপ্লাজম এবং সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে তৈলবিন্দু থাকে।

P. infestans ডিপ্লয়েড, ক্রোমোসোমে ১২ (১১ – ১৩), এর জিনোম সিকুয়েন্সিং সম্পন্ন হয়েছে ২০০৯ সালে। এতে বেসপেয়ার আছে ২৪০ মিলিয়ন, জিন শনাক্ত করা হয়েছে ১৮,০০০।

তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি এবং বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকলে কনিডিয়া সরাসরি অঙ্কুরিত হয়ে নতুন টিস্যু বা নতুন গাছকে আক্রমণ করে। তবে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম এবং বাতাসে জলীয় বাষ্প অধিক থাকলে (মেঘলা আবহাওয়া, ঘন-কুয়াশা, বৃষ্টি ইত্যাদি সময়ে) প্রতিটি কনিডিয়াম থেকে অনেকগুলো দ্বি-ফ্ল্যাজেলাযুক্ত জুস্পোর উৎপন্ন হয় এবং পানির সাহায্যে বা বাতাসের সাহায্যে আশপাশের জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে রোগটি আশেপাশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ফসলে মড়ক আকারে দেখা দেয়।

বাংলাদেশে কখনো কখনো এ রোগটি হতে দেখা যায়। শীতকালে তাপমাত্রা অধিক নিচে নেমে এলে এবং বাতাসে জলীয় বাষ্প অধিক থাকলে (সাধারণত কিছুদিন ধরে ঘন কুয়াশা বা মৃদু বৃষ্টিপাত, হালকা বাতাস থাকলে) এ রোগটি ফসলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রোগের লক্ষণ (Symptoms of the disease):

  • প্রথম পাতায় সবুজ-ধূসর বর্ণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ দেখা যায়। দাগগুলো পরে অপেক্ষাকৃত বড় হয়ে হালকা বাদামি বর্ণের হয় এবং শেষ পর্যন্ত লালচে কালো বা কালো-বাদামি বর্ণের হয়। গাছের বয়স্ক পাতার কিনারায় বা অগ্রভাগে পানি ভেজা দাগ প্রথম প্রকাশ পায়। পরে কালচে ভেজা দাগসহ পচন সৃষ্টি হয়।
  • পরে আক্রান্ত স্থানে সূক্ষ্ম মখমলের  মতো আস্তরণ সৃষ্টি হয়। এ সময় আক্রান্ত পাতার নিম্ন ত্বকের পত্ররন্ধ্র দিয়ে কনিডিয়োফোর বের হয়। অনুবীক্ষণ যন্ত্রে কনিডিয়োফোর দেখে ছত্রাক আক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়।
  • আবহাওয়া মেঘলা ও আর্দ্র থাকলে ছত্রাকটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং পুরো পাতা, এমনকি কান্ডও আক্রান্ত হয়। এ সময় গাছটি ঢলে পড়তে দেখা যায় এবং দেখতে অনেকটা সিদ্ধি গাছের মতো মনে হয়।
  • আক্রমণের প্রকটতায় মাটির নিচে আলুও আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত আলুর ত্বকের নিচে লালচে-বাদামি কালো ছোপ দেখা যায়। এটি পরে সেকেন্ডারি ইনফেকশনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াল রট (পচন)-এ পরিণত হয় এবং আলু পচে যায়। কোনো কোনো রোগাক্রান্ত আলু দৃশ্যত ভালো দেখা গেলেও কোল্ডস্টোরেজ-এ পচে যায়।
  • ছত্রাক আক্রমণ তীব্র হলে আক্রান্ত আলু গাছ থেকে পচা ডিমের ন্যায় দুর্গন্ধ বের হয়। রোগাক্রান্ত আলুবীজ থেকে রোগের প্রাথমিক সংক্রমণ ঘটে। কনিডিয়া ও জুস্পোর দিয়ে রোগের সেকেন্ডারি সংক্রমণ ঘটে। 
  • গাছের পাতা পরীক্ষা করলে রোগাক্রান্ত পাতার নিমতলে সাদা সুতার মতো (সূত্রাকার) মাইসেলিয়াম দেখা যায়।

প্রতিকার (Remedy):

  • রোগ লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। প্রথমেই ১% বোঁর্দোমিশ্রণ (Bordeux mixture : কপার সালফেট, লাইম ও পানি ছিটিয়ে বা কপার-লাইম ডাস্ট প্রয়োগ করে রোগের বিস্তার রোধ করা যায়। 
  • পানি ও পানি প্রবাহ রোগের সেকেন্ডারি বিস্তার ঘটায়। তাই পানি সেচ সীমিত রাখতে হবে। নাইট্রোজেন সারও সীমিত ব্যবহার করা দরকার। 
  • আলু চাষের জন্য সুস্থ ও জীবাণু মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। অবশ্যই রোগমুক্ত এলাকা থেকে আলু বীজ সংগ্রহ করতে হবে। কোল্ডস্টোরেজ-এ রাখা বীজ ব্যবহার অপেক্ষাকৃত উত্তম। মনে রাখতে হবে রোগাক্রান্ত বীজ থেকেই রোগের প্রাথমিক আক্রমণ ঘটে। 
  • জমি থেকে আলু ফসল উঠানোর পর সব পরিত্যক্ত আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। 
  • একই জমিতে প্রতি বছর আলু চাষ না করে ১/২ বছর পর পর চাষ করলে রোগের বিস্তার কম হতে পারে। 

  • ছত্রাক  প্রতিরোধক্ষম জাত লাগাতে হবে। 
  • আগাম জাত চাষ করলে রোগ আক্রমণের আগেই ফসল তুলে নেয়া যায়। 
  • এলাকা ও জমির ধরন অনুযায়ী জাত নির্বাচন করতে হবে। স্থানীয় জাত ফলন কম হলেও সাধারণত রোগপ্রবণ নয়। 
  • পাতা থেকে আলুতে যাতে রোগ সংক্রমণ না হয়, সেজন্য আলু সংগ্রহের পূর্বে সাইনক্স বা অ্যামোনিয়াম থায়োসায়ানেট ওষুধ ছিটিয়ে গাছের পাতা ঝড়িয়ে ফেলতে হয়।
  • যে সব স্থানে এ রোগ হয় সেখানে গাছ ১৪-১৬ cm বড় হলেই ডায়থেন এম-৪৫ বা বোর্দো মিক্সচার (Bordaux mixture- কপার সালফেট, লাইম ও পানি) নামক ছত্রাকনাশক ১৫ দিন পরপর ছিটাতে হবে। 
  • খোলামেলা জমিতে আলু চাষ করা এবং আলু গাছের সারির মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁক রাখা।

দাদরোগ বা ডার্মাটোফাইটোসিস (Ringworm or Dermatophytosis)

দাদরোগ একটি ছোঁয়াচে চর্ম রোগ। উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে এ রোগটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে। বাংলাদেশে এ রোগটি দেশের সব অঞ্চলেই বিস্তৃত। একে সংস্কৃত ভাষায় দদ্রু রোগ, আর ইংরেজি ভাষায় ringworm বলা হয়। যদিও এটি কোনো worm দ্বারা ঘটিত রোগ নয়। দাদরোগ সব বয়সের লোকেরই হতে পারে, তবে ছোট ছেলে মেয়েরাই অধিক সংখ্যায় আক্রান্ত হয়। হাসপাতাল, এতিমখানা বা হেফজখানা, যেখানে ছোট ছেলেমেয়েরা অল্প জায়গায় অধিক সংখ্যায় বাস করে সেখানে দাদরোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। 

কারণ (Causes):

দাদ ছত্রাকঘটিত রোগ। উদ্ভিদ পরজীবী দ্বারা হয় বলে চিকিৎসা শাস্ত্রে একে tinea বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই Trichophyton (T. rubrum, T. verrucosum) নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগ হয়ে থাকে। তাই রোগটি tinea richophytina বা trichophytosis নামেও পরিচিত। এছাড়া Microsporum (M. canis), Epidermophyton (E. floccosum) গণের ছত্রাক দিয়েও দাদরোগ হতে পারে।

সংক্রমণ (Infection): 

সাধারণত ঘামেভেজা শরীর, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন শরীর, দীর্ঘ সময় ভেজা থাকে এমন শরীর, ত্বকে ক্ষত স্থান আছে এমন শরীর সহজে এই ছত্রাকের স্পোর (বা হাইফা) দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই রোগ জীবাণুর সুপ্তিকাল ৩-৫ দিন। সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ৩-৫ দিন পর রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়। দেহের যে কোনো অংশেই দাদরোগ হতে পারে, তবে মুখমণ্ডল এবং হাতে অধিক দেখা যায়। উরু, মাথার খুলি, নখ ইত্যাদিও আক্রান্ত হয়। মাথার খুলির দাদরোগ অপেক্ষাকৃত মারাত্মক। আক্রান্ত স্থানের নামানুসারে ডাক্তারি পরিভাষায় দাদরোগটি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত হয়।

লক্ষণ (Symptoms):

  • প্রথমে আক্রান্ত স্থানে ছোট ছোট লাল গোটা হয় এবং সামান্য চুলকায়।
  • পরে আক্রান্ত স্থানে বাদামি বর্ণের আঁইশ হয় এবং স্থানটি বৃত্তাকারে বড় হতে থাকে।
  • ক্রমে সুনির্দিষ্ট কিনারসহ বৃত্তের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং মাঝখানের ত্বক স্বাভাবিক হয়ে আসে। চুলকানি বৃদ্ধি পায়।
  • চুলকানোর পর আক্রান্ত স্থান জ্বালা হয় এবং আঁঠালো রস বের হয়।
  • আক্রান্ত স্থানে এটি প্রায়শই রিং-এর মতো গঠন সৃষ্টি হয়।
  • মাথায় হলে স্থানে স্থানে চুল উঠে যায়, নখে হলে দ্রুত নখের রং বদলায় এবং শুকিয়ে খণ্ড খণ্ড হয়ে ভেঙ্গে যেতে পারে।

বিস্তার (Spread): 

এটি ছোঁয়াচে রোগ। অতিসহজেই রোগী থেকে সুস্থ দেহে বিস্তার লাভ করতে পারে। রোগীর চিরুনী, তোয়ালে, বিছানা ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে রোগটি দ্রুত সুস্থদেহে ছড়িয়ে পড়ে। রোগাক্রান্ত পোষা বিড়ালের মাধ্যমে অধিক ছড়ায়। উষ্ণ ও ভেজা স্থানে জীবাণুর সংক্রমণ বেশি হয়। 

প্রতিকার/রোগ নিয়ন্ত্রণ (Remedy / Disease control):

  • আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে। 
  • প্রতিদিন রোগীর বিছানাপত্র ও জামাকাপড় সোডা পানি দিয়ে সিদ্ধ করে ধুতে হবে।
  • এমন কাপড় পরা যাবে না যা আক্রান্ত স্থানে ঘর্ষণ করে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিফাংগাল ক্রিম বা ডাইপাওডার ব্যবহার করতে হবে।
  • মাথায় দাদ হলে মাথা ন্যাড়া করে সেলিসাইলিক অ্যাসিড ঘটিত মলম কিছুদিন ব্যবহার করতে হবে।
  • রোগাক্রান্ত পোষা প্রাণী থেকে সাবধান থাকতে হবে।
  • শরীরের অন্যান্য স্থানে দাদ হলে আয়োডিন, বেনজোয়িক অ্যাসিড ব্যবহার করা ভালো।

চিকিৎসা (Treatment):

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই দাদরোগ আরোগ্য হয় এবং এ রোগে সাধারণত এন্টিফাংগাল ক্রিমই (Terbinafine/Miconazole ক্রিম) ব্যবহার করা হয়। মাথার দাদ চিকিৎসা অপেক্ষাকৃত সময় সাপেক্ষ। মলমজাতীয় ওষুধে রোগ না সারলে খাবার ওষুধ (Griseofulvin/Itraconazole ট্যাবলেট) ব্যবহার করতে হতে পারে। আক্রান্ত স্থান ভালো করে চুলকিয়ে দাদ মর্দন (Cassia alata) গাছের পাতার রস বা মণ্ড লাগালে ২/৩ দিনেই দাদ ভালো হয়। এটি পরীক্ষিত।

প্রতিরোধ (Resistance)

  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। 
  • ত্বক যেন ভেজা না থাকে তার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • চুল কাটার পর নিয়মিত মাথা পরিষ্কার রাখতে হবে ও শুকনো রাখতে হবে। 
  • রোগীর ব্যবহৃত চিরুনী, তোয়ালে, বিছানা, জামা-কাপড় ব্যবহার করা যাবে না। 

জটিলতা (Complications): 

চুলকানো স্থানে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়ে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হলে আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়, পুঁজ সৃষ্টি হয়, জ্বর হতে পারে, পুঁজ বা রস গড়িয়ে পড়তে পারে। এমন অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।