10 Minute School
Log in

একটি আদর্শ ফুলের বিভিন্ন অংশ, প্রজনন এবং পরাগায়ন (Different Parts, Reproduction & Pollination of Flower)

প্রজনন (Reproduction)

প্রজনন হচ্ছে এমন একটি শরীর তত্ত্বীয় কার্যক্রম যার মাধ্যমে জীব তার প্রতিরোধ সৃষ্টি করে ভবিষ্যৎ রেখে যায়। অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় কোনো জীব তার বংশধর সৃষ্টি করে তাকে প্রজনন বলে।

প্রজনন দুই প্রকার। যথা :-

(i) যৌন প্রজনন 

(ii) অযৌন প্রজনন

যৌন প্রজনন (Sexual reproduction)

উচ্চ শ্রেণীর অধিকাংশ উদ্ভিদ ও উচ্চ শ্রেণীর সকল প্রাণী যৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশধর সৃষ্টি করে। নিম্নশ্রেণির জীব এ সাধারণত যৌন প্রজনন হয়না।  যৌন জননের দুটি বিপরীত ধর্মী জনন কোষ পরষ্পরের সাথে মিলিত হয়। এক্ষেত্রে এটিকে পুং জনন কোষ বা শুক্রাণু এবং অন্যটিকে স্ত্রী জনন কোষ বা ডিম্বাণু বলে।

অযৌন প্রজনন (Asexual reproduction)

অযৌন প্রজননে অপত্য জীব গুলো মাতৃজীবের হুবহু অনুরূপ হয়। সেকারণে বৈচিত্র খুব কম থাকে। সরলতর জীবগুলো যেমন: ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি অযৌন জননের মাধ্যমে খুব কম সময়ে, কম শক্তি ব্যয়ে অধিকসংখ্যক জীব জন্ম নিতে পারে।

ফুল (Flower)

প্রজননের জন্য রূপান্তরিত বিশেষ বিটপকে ফুল(Flower) বলে।

  • একটি আদর্শ ফুলের পাঁচটি স্তবকের মধ্যে দুটি স্তবক- পুং স্তাবক ও স্ত্রী স্তবক সরাসরি প্রজননে অংশ নেয়। অন্য স্তবক গুলো সরাসরি অংশ নেয় না। কিন্তু প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • যে ফুলে পাঁচটি স্তবকই উপস্থিত থাকে তাকে সম্পূর্ণ ফুল বলে। যেমন: ধুতুরা, জবা।
  • পাঁচটি স্তবকের যেকোন একটি না থাকলে তাকে অসম্পূর্ণ ফুল বলে। যেমন: লাউ, কুমড়া।
  • বৃন্তযুক্ত ফুলকে সবৃন্তক ফুল বলে। যেমন: জবা, কুমড়া।
  • বৃন্তহীন ফুলকে অবৃন্তক ফুল বলে। যেমন: হাতিশূঁড়।

ফুলের বিভিন্ন অংশ (Different parts of the flower):

a) পুষ্পাক্ষ (Thalmus):

  • পুষ্পাক্ষ সাধারণত গোলাকার এবং ফুলের বৃন্ত শীর্ষে অবস্থান করে। পুষ্পাক্ষের উপর বাকি চারটি স্তবক পরপর সাজানো থাকে।
  • পুষ্পাক্ষের উপর বাকী চারটি স্তবক পরপর সাজানো থাকে।

b) বৃতি (calyx):

  • ফুলের বাইরের স্তবককে বৃতি বলে।
  • সবুজ বৃতি খাদ্য প্রস্তুত কাজে অংশ নেয়।
  • বৃতির প্রধান কাজ ফুল এর ভেতরের অংশগুলোকে রোদ-বৃষ্টি ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা।
  • রঙ বেরঙের বৃতি পরাগায়নে সাহায্য করে।

c) দলমণ্ডল (Corolla):

  • এটি বাইরের দিক থেকে দ্বিতীয় স্তবক।
  • প্রতিটি খণ্ডকে দল বা পাপড়ি বলে।
  • দলমণ্ডল ফুলের অত্যাবশ্যকীয় অংশগুলোকে রোদ বৃষ্টি থেকে রক্ষা করে।
  • উজ্জ্বল, ঝলমলে রঙ্গিন দলমন্ডল পোকামাকড় এবং পশুপাখিকে আকর্ষণ করে এবং পরাগায়নে সহায়তা করে।

d) পুংস্তবক (Androecium):

  • ফুলের তৃতীয় স্তবক।
  • স্তবকের প্রতিটি অংশকে পুংকেশর বলে।
  • পরাগধানী ও পুংদণ্ড সংযোগকারী অংশকে যোজনী বলে।
  • পুং জননকোষ সরাসরি জনন কাজে অংশগ্রহণ করে।
  • যখন পরাগধানী একগুচ্ছ থাকে তখন তাকে যুক্তধানী বা সিনজেনিয়াস বলে।
  • মুক্ত অবস্থায় এবং পূর্ণ কেশর দলমন্ডলের সাথে যুক্ত থাকলে তাকে দললগ্ন পুং পুস্তক বলে। যেমন: ধুতুরা।

পুংকেশরের বিভিন্ন প্রকার সজ্জা

 

পুংকেশরের বিভিন্ন প্রকার সজ্জা (ক) একগুচ্ছ, (খ) দ্বিগুচ্ছ, (গ) বহুগুচ্ছ, (ঘ) যুক্তধানী এবং (ঙ) দললগ্ন

e) স্ত্রীস্তবক (Gynoecium):

  • স্ত্রী স্তবক বা গর্ভকেশর এর অবস্থান ফুলটির কেন্দ্রে থাকে।
  • স্ত্রী স্তবক এক বা একাধিক গর্ভপত্র নিয়ে গঠিত।
  • একটি গর্ভপত্রের তিনটি অংশ। যথা:-
  1. গর্ভাশয়
  2. গর্ভদণ্ড
  3. গর্ভমুণ্ড 

গর্ভাশয় এর ভিতরে এক বা একাধিক ডিম্বক বিশেষ নিয়মের সজ্জিত থাকে। এসব ডিম্বকের মধ্যে স্ত্রী প্রজনন কোষ বা ডিম্বাণু সৃষ্টি হয়।

পুষ্পমঞ্জরি (inflorescence)

অনেক গাছের ছোট একটি শাখায় ফুলগুলো বিশেষ একটি নিয়মে সাজানো থাকে। ফুলসহ এই শাখাকে পুষ্পমঞ্জরি বলে।

প্রজনন এর প্রধান দুটি ধাপ হচ্ছে পরাগায়ন ও নিষেক।

পরাগায়ন (Pollination)

ফুলের পরাগ সংযোগকে পরাগায়ন(Pollination) বলে। 

  • পরাগায়ন(Pollination) দুই প্রকার :

i)স্ব-পরাগায়ন

ii)পর পরাগায়ন

i) স্ব-পরাগায়ন (Self-pollination):

একই ফুলে বা একই গাছের ভিন্ন দুটি ফুলের মধ্যে যখন পরাগায়ন ঘটে তখন তাকে স্বপরাগায়ন (Self-pollination) বলে। যেমন: ধুতরা, সরিষা।

  • স্বপরাগায়ন এর ফলে পরাগরেণুর অপচয় কম হয়।
  • গড় আয়ু ও অভিযোজন ক্ষমতা কম।

ii) পর পরাগায়ন (cross-pollination): একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন উদ্ভিদের ফুলের মধ্যে যখন পরাগ সংযোগ ঘটে তখন তাকে পর পরাগায়ন (cross-pollination) বলে। যেমন: শিমুল, পেঁপে।

  • এদের পরাগরেণুর অপচয় বেশি হয়। 
  • গড় আয়ু ও অভিযোজন ক্ষমতা বেশি।

পুং গ্যামেটোফাইটের উৎপত্তি (Microsporogenesis)

উৎপত্তি :

i) উৎপত্তির প্রাথমিক অবস্থা

ii) উৎপত্তির পরবর্তী অবস্থা 

i) উৎপত্তির প্রাথমিক অবস্থা :

  • প্রথমে মিয়োসিস বিভাজন ঘটে চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয়।  চারটি কোষের মধ্যে তিনটি কোষ নষ্ট হয়ে যায়। একটি কার্যকারী হয়।
  • পরবর্তীতে মাইটোসিস বিভাজন ঘটে। এখানে দুটি কোষের একটিকে জনন কোষ অপরটিকে নালিকা কোষ বলে।

ii) উৎপত্তির পরবর্তী অবস্থা :

  • নালিকা কোষটি মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে পরাগনালি গঠন করে।
  • জনন কোষটি পুনরায় মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে দুটি পুংগ্যামেট উৎপন্ন করে।

স্ত্রী গ্যামেটোফাইটের উৎপত্তি (Magasporogenegis)

  • ভ্রূণ পোষক কলায় ডিম্বক রন্ধ্রের কাছাকাছি ঘন প্রোটোপ্লাজমযুক্ত ও বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত একটি কোষ আকারে সামান্য বড় হয়। 
  • এ কোষটি মিয়োসিস বিভাজন এর মাধ্যমে চারটি হ্যাপ্লয়েড কোষ সৃষ্টি করে।
  • চারটি কোষের মধ্যে তিনটি নষ্ট হয়ে যায় এবং একটি কোষ বৃদ্ধি পেয়ে ভ্রুণথলিতে পরিণত হয়।
  • এ কোষের নিউক্লিয়াস মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে দুইটি নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। 
  • এ দুটি নিউক্লিয়াস পরপর দুবার বিভক্ত হয়ে চারটি করে নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে।
  • দুই মেরু থেকে একটি করে নিউক্লিয়াস ভ্রূণথলির কেন্দ্রস্থলে এসে পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে ডিপ্লয়েড (2n) নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে।
  • ডিম্বকরন্ধ্রের দিকের তিনটি কোষের মধ্যে মাঝের বড় কোষ থেকে ডিম্বাণু বলে এবং অন্য কোষকে সহকারী কোষ বলে।

নতুন স্পোরোফাইট গঠন (Development of new sporophyte)

  • জাইগোট কোষটি স্পোরোফাইটের প্রথম কোষ।
  • এদের প্রথম বিভাজন এ দুইটি কোষ উৎপন্ন হয়। 
  • একটিকে এপিক্যাল কোষ এবং অন্যটিকে Basal Cell বা ভিত্তি কোষ বলে।
  • এপিক্যাল কোষ নিজেই ভ্রূণে পরিণত হয় এবং ভিত্তিকোষ ভ্রূণধারক গঠন করে।
  • এই সস্যটিস্যু গুলো ট্রিপ্লয়েড অর্থাৎ নিউক্লিয়াসে 3n সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে। 
  • পরিণত অবস্থায় একটি শস্য ও ভ্রূণশস্য বীজে পরিণত হয়।
  • এ বীজ অঙ্কুরিত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ স্পোরোফাইটের সৃষ্টি করে।