10 Minute School
Log in

আদর্শ খাদ্য পিরামিড বলতে কী বোঝায়? (What Is Ideal Food Pyramid)

আদর্শ খাদ্য পিরামিড (Ideal Food pyramid)

যেকোনো একটি সুষম খাদ্যতালিকায় শর্করা, ভিটামিন, খনিজ, আমিষ ও স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাদ্য এবং ফাইবার অন্তর্ভুক্ত থাকে। একজন কিশোর বা কিশোরী, প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষ বা মহিলার সুষম খাদ্যতালিকা লক্ষ করলে দেখা যায়, তালিকায় শর্করার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, শর্করাকে নিচে রেখে পরিমাণগত দিক বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমে শাকসবজি, ফলমূল, আমিষ এবং স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাদ্য সাজালে যে কাল্পনিক পিরামিড তৈরি হয়, তাকে আদর্শ খাদ্য পিরামিড (The ideal food pyramid) বলে।

সবচেয়ে চওড়া অংশে ভাত, আলু, রুটি এসব। এগুলো বেশি করে খেতে হবে। তার পরের অংশে আছে শাকসবজি এবং ফলমূল। এসব ভাত, রুটির চেয়ে কম খেতে হবে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, পনির, ছানা, দই আরও কম পরিমাণে খেতে হবে। তেল, চর্বি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার সবচেয়ে কম খাওয়া উচিত। আমাদের প্রতিদিনের খাবার এই খাদ্য পিরামিড অনুযায়ী বেছে নিতে হবে, তবেই আমরা সহজে সুষম খাদ্য নির্বাচন করতে পারব।

আদর্শ খাদ্য পিরামিড (The ideal food pyramid)

চিত্র : আদর্শ খাদ্য পিরামিড (The ideal food pyramid)

 

সুষম খাদ্যের বৈশিষ্ট্য (Features of a balanced diet)

 

(a) একজন মানুষের বিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনের সামর্থ্য থাকতে হবে। 

(b) শর্করা, আমিষ এবং চর্বি নির্দিষ্ট অনুপাতে পরিমাণ মতো গ্রহণ করতে হবে।

(c) খাদ্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও রাফেজ বা সেলুলোজ (ফাইবার) সরবরাহের জন্য সুষম খাদ্য তালিকায় ফল ও টাটকা শাকসবজি থাকতে হবে।

(d) খাদ্যে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি ও খনিজ লবণ থাকতে হবে। 

(e) সুষম খাদ্য অবশ্যই সহজপাচ্য হতে হবে।

 

সুষম খাদ্যের তালিকা তৈরি (List of balanced foods)

 

সুষম খাদ্যের তালিকা তৈরির জন্য কতগুলো বিষয়ের দিকে বিশেষ লক্ষ রাখা প্রয়োজন। যেমন:

  • ব্যক্তিবিশেষের লিঙ্গ, বয়স, পেশা ও শারীরিক অবস্থা
  • খাদ্যের মূল্যমান সম্পর্কে জ্ঞান
  • দেহের ক্ষয়পূরণ ও গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আমিষ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ
  • খাদ্যে পরিমাণমতো ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানির উপস্থিতি
  • ঋতু, আবহাওয়া ও খাদ্যাভাস সম্বন্ধে জ্ঞান
  • পরিবারের আর্থিক সংগতি ও সদস্য সংখ্যা

 

পুষ্টির অভাবজনিত রোগ (Diseases of malnutrition)

 

গয়টার (Goitre)

গয়টার (Goitre)

চিত্র : গলগণ্ড রোগী

 

প্রচলিত অর্থে গলগণ্ড বলতে থাইরয়েড গ্রন্থির যেকোনো ফোলাকে বোঝায়। খাবারে আয়োডিনের অভাব গয়টার তথা গলগণ্ডের অন্যতম কারণ। সমুদ্র থেকে দূরে উত্তর বঙ্গ এবং পার্বত্য এলাকার মাটিতে আয়োডিন কম থাকায় ওই সব অঞ্চলের মানুষের এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

 

রাতকানা (Night Blindness)

 

ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জেরোফথ্যালমিয়া (Xerophthalmia) নামক রোগ হয়। ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব পূরণ না হলে রোগটির মাত্রা ও তীব্রতা বাড়তে থাকে। জেরোফথ্যালমিয়ার সাত থেকে আটটি মাত্রা রয়েছে, যার সর্বনিম্ন মাত্রা হচ্ছে রাতকানা। সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা দেয়। এতে চোখের সংবেদী ‘রড’ কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, স্বল্প আলোতে ভালো দেখতে পায় না। চোখে সবকিছু ঝাপসা দেখা যায়। রোগটা বেড়ে গেলে কর্নিয়া ঘোলাটে হয়ে যায়। রাতকানা দশা থেকে শুরু করে চতুর্থ বা পঞ্চম মাত্রার জেরোফথ্যালমিয়া ভিটামিন ‘এ’ সহ কিছু ওষুধ প্রয়োগে ভালো হয় কিন্তু রোগ চূড়ান্ত মাত্রায় বা তার কাছাকাছি পৌঁছে গেলে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার ছাড়া আর তেমন কিছু করার থাকে না।

এই রোগ প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন: মাছের যকৃতের তেল, কলিজা, সবুজ-শাকসবজি, রঙিন ফল (পাকা আম, কলা ইত্যাদি) ও সবজি (মিষ্টি কুমড়া, গাজর ইত্যাদি) এবং মলা-ঢেলা মাছ খাওয়া উচিত।

 

রিকেটস (Rickets)

 

ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে এ রোগ হয়। অন্ত্রে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ, দাঁত ও হাড় গঠন প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় কাজে এই ভিটামিন প্রয়োজন। দুধ, মাখন, ডিম, কডলিভার তেল ও হাঙ্গরের তেলে প্রচুর ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের ত্বকে জমা থাকা কোলেস্টেরল থেকেও এটি তৈরি হয়, তবে সেক্ষেত্রে ভিটামিন ডি তৈরির শেষ ধাপটি সংঘটিত হয় কিডনিতে।

দেহের হাড়গুলো দুর্বল হওয়া, গিঁট ফুলে যাওয়া, হাড়গুলো বিশেষ করে পায়ের হাড় বেঁকে যাওয়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। এছাড়া এই রোগে অনেক সময় দেহের কাঠামো ঠিক থাকে না, হাড়গুলো ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং বক্ষদেশ সরু হয়ে যায়।

শিশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। চোখ এবং জননাঙ্গ ঢেকে রেখে নবজাতককে কিছুক্ষণ রোদে রাখা ভালো। এতে সূর্যালোকের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে শরীরে কোলেস্টেরল থেকে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি হয়।

 

রক্তশূন্যতা (Anemia)

 

রক্তশূন্যতা হচ্ছে দেহের এমন একটি অবস্থা, যখন বয়স এবং লিঙ্গভেদে রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘনত্ব স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়। খাদ্যের মুখ্য উপাদান লৌহ, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি-12 ইত্যাদির অভাব ঘটলে এ রোগ দেখা যায়। শিশুদের, প্রজননের উপযুক্ত বয়সী নারীদের (15-45 বছর) এবং গর্ভবতীদের এই রোগ বেশি হয়। লৌহের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন, অত্যধিক রক্তপাত ঘটলে, কৃমির আক্রমণে, লৌহ গঠিত খাদ্য উপাদান শরীরে যথাযথভাবে শোষিত না হলে, বাড়ন্ত শিশু বা গর্ভবতী নারীদের খাদ্যে লৌহের পরিমাণ কম থাকলে, অন্ত্রে সংক্রমণ ঘটলে, কম বয়সী শিশুদের খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ লৌহের অভাব হলে। রক্তশূন্যতা হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দেয়: দুর্বলতা অনুভব করা, মাথাব্যথা, মনমরা ভাব, অনিদ্রা, চোখে অন্ধকার দেখা, খাওয়ার অরুচি, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি।