10 Minute School
Log in

ব্রায়োফাইটা ও টেরিডোফাইটা

ব্রায়োফাইটা (Bryophyta)

বৈশিষ্ট্য (Characteristics) :

১. এরা বহুকোষী উদ্ভিদ। এরা অপুষ্পক ও অবীজী অর্থাৎ এদের ফুল, ফল ও বীজ হয় না। 

২. এদের দেহ গ্যামিটোফাইট (gametophyte) তথা হ্যাপ্লয়েড। গ্যামিটোফাইট সর্বদাই স্বতন্ত্র ও স্বভোজী উদ্ভিদ।  

৩. দেহ থ্যালয়েড অর্থাৎ দেহকে সত্যিকার মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত করা যায় না, তবে মস জাতীয় উদ্ভিদকে
  ‘নরম কান্ড ও পাতার’ মতো অংশে চিহ্নিত করা যায়।  

৪. এদের মূল নেই, তবে মূলের পরিবর্তিত এককোষী রাইয়জেড (rhizoid) এবং কোনো কোনো প্রজাতিতে
    বহুকোষী স্কেলে (scale) থাকে।   

৫. এদের দেহে কোনো ভাস্কুলার টিস্যু নেই। দেহ প্যারেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত।

৬. এদের জননাঙ্গ বহুকোষী এবং বন্ধ্যাকোষাবরণ দিয়ে আবৃত।

৭.  স্ত্রীজননাঙ্গকে আর্কিগোনিয়াম এবং পুংজননাঙ্গকে অ্যান্থেরিডিয়াম বলে। আর্কিগোনিয়ামের আকৃতি ফ্লাস্কের মতো
    এবং অ্যান্থেরিডিয়ামের আকৃতি গোলাকার, নাশপাতির মতো, বেলনাকার বা গদাকার হয়ে থাকে। 

৮.  যৌন জনন উগ্যামাস প্রকৃতির অর্থাৎ বড় নিশ্চল স্ত্রী গ্যামিটের (ডিম্বাণু) সাথে ক্ষুদ্র ও সচল পুং গ্যামিটের (শুক্রানু)  
    মিলন ঘটে।    

৯.  শুক্রানু দ্বিফ্ল্যাজেলা বিশিষ্ট।

১০. নিষেকের জন্য জলীয় মাধ্যমের প্রয়োজন। 

১১. এদের ভ্রুণ বহুকোষী, ভ্রূণ স্ত্রী জননাঙ্গের অভ্যন্তরে থাকে। 

১৩. জীবনচক্রে গ্যামিটোফাইট প্রধান এবং স্পোরোফাইট গৌণ।

১৪. স্পোর অঙ্কুরিত হয়ে সরাসরি থ্যালাস গঠন বা প্রোটোনেমা উৎপন্ন করে।

ব্রায়োফাইটা – কে উভচর উদ্ভিদ বলা হয় কেন? 

এদের অনেক সদস্যই আর্দ্র স্থলজ পরিবেশে জন্মায়। কিন্তু পানির সাহায্য ছাড়া জনন, বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে না, তাই এরা উভচর (amphibious) উদ্ভিদ। স্থলজ পরিবেশে জন্মালেও এদের জীবন চক্রের একটি বিশেষ ধাপ পানির উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ এদের যৌন জননের জন্য পানির উপস্থিতি একান্তই প্রয়োজন। জীবন চক্র সম্পন্ন করার সময় এদের শুক্রাণু পানিতে সাঁতার কেটে ডিম্বাণুর নিকট উপস্থিত হয় এবং পানির উপস্থিতিতে নিষেকক্রিয়া সম্পন্ন করে। এরাও জলজ উদ্ভিদের ন্যায় পানি শোষণ করে এবং দেহে জলজ উদ্ভিদের ন্যায় বায়ুরন্ধ্র থাকে। এ কারণে ব্রায়োফাইটাকে উভচর উদ্ভিদ বলা হয়ে থাকে।

Riccia spজন্মে থাকে এবং বর্ষাকালে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় কিন্তু ক্ষুদ্রাকার বলে আমরা এদেরকে সাধারণত লক্ষ্য করি না, চিনিও না। এদের সাথে আমরা তেমন পরিচিত নই।

Riccia একটি বড় গণ। প্রায় ২০০টি প্রজাতি নিয়ে এই গণ গঠিত। এর মধ্যে শুধুমাত্র Riccia fluitans ভাসমান জলজ। Hepaticae শ্রেণির ব্রায়োফাইটস সদস্যদেরকে লিভারওয়ার্ট (Liverwort) বলে।

এদের দেহ অর্থাৎ থ্যালাসের আকৃতি মানুষের লিভার (যকৃত)-এর সাথে কিছুটা মিল সম্পন্ন হওয়াতে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে Riccia গণের ৪৫টি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। নতুন প্রজাতির মধ্যে R. bengalensis, R. dhakensis, R. chittagonensis, R. gangestica, R. personii উল্লেখযোগ্য ।

আবাসস্থল (Habitat) :

Riccia গণের বিভিন্ন প্রজাতি স্যাঁতসেঁতে মাটিতে, আর্দ্র প্রাচীরের গায়ে জন্মে থাকে। নদীতীরে বালিতে Riccia জন্মিতে দেখা যায়। Riccia fluitans ছোট ছোট ডোবা-পুকুরের পানিতে ভাসমান অবস্থায় দেখা যায়। বর্ষাকালেই Riccia অধিক জন্মায়। 

শ্রেণিবিন্যাস (Classification)

Kingdom :  Plantae

Grade:  Bryophyta

Division :  Bryophyta

Class:  Hepaticae

Order :  Marchantiales

Family :  Ricciaceae

Genus :  Riccia

Riccia-র শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য (Identification properties of Riccia) :

১. উদ্ভিদ দেহ গ্যামিটোফাইটিক ও থ্যালয়েড অর্থাৎ মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত নয়।

২. থ্যালাস সবুজ, শায়িত, চ্যাপ্টা এবং বিষমপৃষ্ঠ ।

৩. থ্যালাস দ্ব্যাগ্র শাখাবিশিষ্ট এবং প্রতি শাখার মাথায় খুঁজযুক্ত।

৪. থ্যালাসের নিমপৃষ্ঠে দুই প্রকার এককোষী মসৃণ ও অমসৃণ রাইজয়েড এবং বহুকোষী স্কেল বা শল্ক বিদ্যমান। 

৫. স্পোরোফাইটিক দশা সরল প্রকৃতির এবং গ্যামিটোফাইটের উপর নির্ভরশীল। 

৬. অভ্যন্তরীণ টিস্যু উপরের পৃষ্ঠের দিকে দণ্ডাকার (ফাঁকে ফাঁকে বায়ু প্রকোষ্ঠযুক্ত) ফটোসিন্থেটিক অঞ্চল এবং নিচের 
  পৃষ্ঠের দিকে অবিচ্ছিন্ন কোষের সঞ্চয়ী অঞ্চল-এ বিভক্ত।

৭. স্ত্রী জননাঙ্গ আর্কিগোনিয়াম, পুং জননাঙ্গ অ্যাস্থেরিডিয়াম এবং স্পোরোফাইট হোমোস্পোরাস। 

৮. আর্কিগোনিয়াম দেখতে ফ্লাস্কের মতো এবং অ্যান্থেরিডিয়ামের আকৃতি নাশপাতির মতো; গোলাকার, ডিম্বাকার বা
  বেলনাকার।

বাহ্যিক গঠন বৈশিষ্ট্য (External structure features) :

Riccia গ্যামিটোফাইটিক উদ্ভিদ। এদের দেহ থ্যালয়েড অর্থাৎ দেহকে মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত করা যায় না। থ্যালাসটি সবুজ, শায়িত এবং বিষমপৃষ্ঠ। থ্যালাস দ্ব্যাগ্র শাখাবিশিষ্ট । সাধারণত কতগুলো Riccia থ্যালাস একত্রে গোলাপের পাপড়ির মতো গোলাকার চক্র করে অবস্থান করে। এই অবস্থাকে রোজেট বলে।

Riccia থ্যালাসের বাহ্যিক গঠণ

Riccia, Hepaticae শ্রেণির অন্তর্গত একটি গণ। Riccia উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রজাতি বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই থ্যালাসের উপর পৃষ্ঠে লম্বালম্বিভাবে মধ্যশিরা আছে এবং শিরা বরাবর লম্বা খাঁজ (dorsal furrow) আছে। থ্যালাসের প্রতিটি শাখার শীর্ষে একটি খাঁজ আছে, একে অগ্রন্থ খাঁজ (apical notch) বলে। থ্যালাসের নিচের পৃষ্ঠ থেকে বহুকোষী স্কেল এবং এককোষী রাইজয়েড সৃষ্টি হয়। রাইজয়েড মসৃণ এবং অমসৃণ (smooth & tuberculate)-এ দু’প্রকার হয়। থ্যালাসকে মাটির সাথে আটকিয়ে রাখা এবং মাটি থেকে পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করা স্কেল ও রাইজয়েড এর কাজ। Riccia-এর স্পোরোফাইট সর্বাপেক্ষা সরল এবং সম্পূর্ণরূপে গ্যামিটোফাইটের উপর নির্ভরশীল। স্পোরোফাইট শুধুমাত্র গোলাকার ক্যাপসিউল-এ গঠিত যা থ্যালাসে নিমজ্জিত থাকে।

Riccia-র অভ্যন্তরীণ গঠন (থ্যালাসের প্রস্থচ্ছেদ) 

Internal structure (Cross-section of Thalamus) : 

প্রস্থচ্ছেদে থ্যালাসকে তিনটি পৃথক অঞ্চলে বিভক্ত দেখা যায় :

  1. i) উপরের দিকে ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত ফটোসিনথেটিক বা আত্তীকরণ অঞ্চল।
  2. ii) নিচের দিকে বর্ণহীন সঞ্চয়ী অঞ্চল

iii) এবং নিম্নত্বক।

(i) ফটোসিনথেটিক বা আত্তীকরণ অঞ্চল (Photosynthetic or assimilatory zone) :

থ্যালাসের উপরের দিকে ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত খাড়া কোষের সারি নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। এই অঞ্চলে ফটোসিনথেসিস হয় এবং খাদ্য তৈরি হয়। ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত এ সারিগুলোকে আত্তীকরণ সূত্র (assimilatory filament) বলে। এসব আত্তীকরণ সূত্রের মধ্যবর্তী সরু ও লম্বা নালীর ন্যায় বায়ুপূর্ণ স্থানকে বায়ু প্রকোষ্ঠ (air chamber) বলে। প্রতিটি বায়ু প্রকোষ্ঠ একটি ছিদ্রপথে বাইরের সাথে উন্মুক্ত থাকে। এ ছিদ্রপথকে বায়ুছিদ্র (air pore) বলে। আত্তীকরণ সূত্রের বাইরের কোষগুলো কিছুটা বড় ও ক্লোরোপ্লাস্টবিহীন থাকে। বর্ণহীন এ কোষগুলো থ্যালাসের উপরিভাগে

একটি অসম্পূর্ণ ঊর্ধ্বত্বক (upper epidermis) গঠন করে। বর্ণহীন একসারি কোষ দিয়ে থ্যালাসের ঊর্ধ্বত্বক গঠিত।

Riccia-র অভ্যন্তরীণ গঠন

(ii) সঞ্চয়ী অঞ্চল (storage zone) :

থ্যালাসের ফটোসিনথেটিক অঞ্চলের নিচে এ অঞ্চল অবস্থিত। এ অঞ্চলটি কয়েক সারি বর্ণহীন প্যারেনকাইমা কোষ দ্বারা গঠিত এবং সাধারণত আন্তঃকোষীয় ফাঁক বিবর্জিত। এ সকল কোষে প্রচুর শ্বেতসার কণা সঞ্চিত থাকে।

(iii) নিম্নত্বক (Lower skin) :

একসারি কোষ দিয়ে নিম্নত্বক গঠিত। নিম্নত্বক সুগঠিত। নিম্নত্বক থেকে বহু এককোষী রাইজয়েড ও বহুকোষী শল্ক বা স্কেল নির্গত হয়। রাইজয়েড দুই ধরনে; যথা- মসৃণ ও অমসৃণ। 

অঙ্গজ জনন (Vegetative reproduction) :

থ্যালাসের পেছনের অংশ মরে গেলে অগ্রভাগের প্রতিটি শাখা স্বতন্ত্র Riccia উদ্ভিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রাইজয়েডের  অগ্রভাগে গিমা (gemma) এবং থ্যালাসের উপর টিউবার (tuber) জাতীয় উপবৃদ্ধি সৃষ্টি হতে পারে যা থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়ে থাকে।

যৌন জনন (Sexual reproduction)  :

Riccia-র পুংজননাঙ্গকে অ্যান্থেরিডিয়াম এবং স্ত্রীজননাঙ্গকে আর্কিগোনিয়াম বলে। নাশপাতি আকৃতির অ্যান্থেরিডিয়ামে দ্বিফ্যাজেলাবিশিষ্ট শুক্রাণু এবং ফ্লাস্ক আকৃতির আর্কিগোনিয়ামে নিশ্চল ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়। নিষিক্ত ডিম্বাণু পরিস্ফূটিত হয়ে সরল ও গোলাকার স্পোরোফাইট গঠন করে। স্পোরোফাইট ক্যাপসিউলে সীমাবদ্ধ থাকে। এর মধ্যে স্পোর উৎপন্ন হয়। স্পোরগুলো আকার-আকৃতিতে একইরূপ হয় অর্থাৎ হোমোস্পোরাস। অনুকূল পরিবেশে স্পোর অঙ্কুরিত হয়ে তরুণ Riccia থ্যালস গঠন করে। 

Pteris

Pteris-এর শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য (Identification properties of Pteris)

১. দেহ মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত। 

২. কাণ্ড রাইজোম (rhizome)-এ রূপান্তরিত হয়।

৩. রাইজোম র‍্যামেন্টা (ramenta) দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে। 

৪. পাতা যৌগিক, কচি অবস্থায় পাতাগুলো কুণ্ডলিত থাকে।

৫. সব স্পোর একই রকম (হোমোস্পোরাস

৬. স্পোরোঞ্জিয়া একত্রিত হয়ে পত্রকের কিনারায় সোরাস (sorus) গঠন করে। 

৭. স্পোরোঞ্জিয়া ফলস্ ইন্ডুসিয়াম (false inducium) দিয়ে ঢাকা থাকে। 

৮. প্রোথ্যালাস (গ্যামিটোফাইট) সবুজ, হৃৎপিণ্ডাকার এবং সহবাসী।

৯. রাইজোমের নিচে অস্থানিক মূল বের হয়। 

১০. পাতায় র‍্যাকিস (rachis) থাকে।  

১১. Pteris উদ্ভিদ Pteridophyte, কারণ এটি ফটোসিন্থেটিক (তাই ছত্রাক নয়), ভাস্কুলার (তাই শৈবাল বা
    মসবর্গীয় নয়), অপুষ্পক (তাই নগ্নবীজী বা আবৃতবীজী উদ্ভিদ নয়)।

Pteris-এর দৈহিক গঠন (Vegetative structure of Pteris)

Pteris এর প্রধান উদ্ভিদ রেণুধর বা স্পোরোফাইটিক বা ডিপ্লয়েড। এদের দেহ মূল, কাণ্ড এবং পাতায় বিভক্ত। কাণ্ড রাইজোম (rhizome) (রূপান্তরিত ভূনিম্নস্থ কাণ্ড) জাতীয় এবং আবাসভূমির কয়েক সেন্টিমিটার গভীরে জন্মায়। এটি দেখতে লম্বা এবং এর বৃদ্ধি অনির্দিষ্ট। রাইজোমের নিম্নতল হতে সূক্ষ্ম স্বল্প শাখাযুক্ত অস্থানিক মূল গুচ্ছাকারে বের হয়। পাতা চির সবুজ এবং পক্ষল যৌগিক। ফার্নের পাতাকে ফ্রন্ড (frond) বলে। 

মুকুল অবস্থায় পাতা কীভাবে বিন্যস্ত থাকে তাকে বলা হয় ভার্নেশন বা মুকুলপত্র বিন্যাস। ফার্নের পাতা মুকুল অবস্থায় কুণ্ডলী পাকানো অবস্থায় থাকে যাকে বলা হয় সারসিনেট ভার্নেশন (circinate vernation)। কুণ্ডলিত কচি পাতাকে ক্রোজিয়ার (crozier) বলে। পত্র যৌগপত্র এবং প্রতিটি পত্রকখণ্ডকে পিনা (pina) বলে। 

পিনা প্রায় অবৃন্তক, সাধারণত অপজিট কখনো কখনো কিছুটা একান্তরভাবে অবস্থিত থাকে। প্রতিটি পিনা অবৃন্তক, সরু লম্বাটে (linear shaped) এবং কিনারা মসৃণ। শীর্ষক পিনা সর্বাধিক লম্বা। পত্রের র‍্যাকিস-এর নিম্নপ্রান্ত এবং রাইজোম এক প্রকার অসংখ্য বাদামি রঙের শল্কপত্র দিয়ে আবৃত থাকে। শল্কপত্রকে র‍্যামেন্টাম (ramentum) বলে। পরিণত পত্রকের নিম্নতলের কিনারায় সোরাই (sori) উৎপন্ন হয়। 

Pteris-এর অভ্যন্তরীণ গঠন (Internal structure of Pteris) 

রাইজোমের (কাণ্ড) অন্তর্গঠন (The structure of rhizome) :

রাইজোম কাণ্ডের সর্ববাইরে প্যারেনকাইমা কোষের একস্তর বিশিষ্ট এপিডার্মিস বা বহিঃত্বক অবস্থিত। বহিঃত্বক দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় দুস্তর বিশিষ্ট হাইপোডার্মিস (অধঃত্বক) এবং হাইপোডার্মিস দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় বহুস্তর বিশিষ্ট কর্টেক্স অবস্থিত। কর্টেক্স-এ একাধিক ভাস্কুলার বান্ডল আছে। ভাস্কুলার বান্ডল হ্যাড্রোসেন্ট্রিক (hadrocentric) কারণ এর কেন্দ্রে জাইলেম এবং এর চারদিকে ফ্লোয়েম অবস্থিত।

Pteris-এর রাইজোম কান্ডের প্রস্থচ্ছেদ

র‍্যাকিস-এর অন্তর্গঠন (The structure of rachis) :

র‍্যাকিসের প্রস্থচ্ছেদে বাইরে এপিডার্মিস, এপিডার্মিস দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় স্ক্লেরেনকাইমা কোষের হাইপোডার্মিস (অধঃত্বক) অবস্থিত। হাইপোডার্মিস দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় বহুস্তর বিশিষ্ট কর্টেক্স অবস্থিত এবং কর্টেক্স টিস্যুতে অশ্বক্ষুরাকৃতির স্টিলি (পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ) অবস্থিত। ভাস্কুলার বান্ডল হ্যাড্রোসেন্ট্রিক

পত্রকের অন্তর্গঠন (The structure of leaf) :

দীর্ঘাকার পত্রকের প্রস্থচ্ছেদ করলে দেখা যায়, ঊর্ধ্বত্বক ও নিম্নত্বক উভয়ই একসারি কোষ দিয়ে গঠিত। ঊর্ধ্বত্বকে কিউটিকল এবং নিম্নত্বকে পত্ররন্ধ্র বিদ্যমান। উভয় ত্বকের মাঝখানে মেসোফিল স্তর বিদ্যমান। এখানে স্পঞ্জি ও প্যালিসেড প্যারেনকাইমা বিদ্যমান। মেসোফিল প্যারেনকাইমা কোষগুলো ক্লোরোফিল যুক্ত এবং বায়ুগহ্বর বিশিষ্ট হয়। স্টিলি জাইলেম কেন্দ্রিক। মধ্যশিরা অঞ্চলে সংযুক্ত ভাস্কুলার বান্ডল বিদ্যমান যা পরিচক্র (pericycle) অন্তত্বক (endodermis) যুক্ত হয়ে থাকে।

Pteris-এর জনন (Reproduction of Pteris)

Pteris উদ্ভিদ অঙ্গজ, অযৌন এবং যৌন জননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। এদের মধ্যে। স্পোরোফাইট উদ্ভিদে অঙ্গজ ও অযৌন জনন প্রক্রিয়া ঘটে থাকে এবং গ্যামিটোফাইট উদ্ভিদে যৌন জনন প্রক্রিয়া ঘটে থাকে।

১। অঙ্গজ জনন (Vegetative reproduction) :

অনেক সময় পরিণত রাইজোমের অংশ বিশেষ মরে যায় এবং অপরিণত শাখাগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিচ্ছিন্ন শাখাগুলো নতুন মূল ও পাতা সৃষ্টির মাধ্যমে পৃথক স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদে পরিণত হয়।

২। অযৌন জনন (Asexual reproduction) :

Pteris উদ্ভিদে স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে অযৌন জনন সম্পন্ন হয় । Pteris উদ্ভিদ পরিণত হলে এর পত্ৰক বা পিনার নিম্নতলের দু’কিনারা বরাবর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্পোরাঞ্জিয়া (sporangia , একবচনে sporangium) উৎপন্ন হয়। স্পোরোঞ্জিয়ামে অভ্যন্তরে রেণু বা স্পোর (spore) নামক অযৌন জনন কোষ (asexual reproductive bodies) উৎপন্ন হয়। 

স্পোরোঞ্জিয়াগুলো গুচ্ছাকারে অবস্থান করে এবং স্পোরোঞ্জিয়ামের গুচ্ছকে সোরাস (sorus, বহুবচনে sori) বলা হয়। প্রতিটি সোরাস দেখতে বাদামি বর্ণের ও বৃক্কাকার। যে টিস্যু হতে স্পোরোঞ্জিয়াম উৎপন্ন হয় সে টিস্যুকে প্লাসেন্টা (placenta) বা অমরা বলে।

পত্রক বা পিনার কিনারা ভেতরের দিকে একটু বেঁকে এসে সোরাইকে ঢেকে রাখে। ফলক প্রান্তের এ ঢাকনি অংশকে ফলস্ ইন্ডুসিয়াম (false indusium) বলা হয়। সোরাস উৎপন্নকারী পাতাকে স্পোরোফিল (sporophyll) বলে। পরিণত স্পোরোঞ্জিয়াম একটি বৃন্ত (স্পোরাঞ্জিয়োফোর) এবং একটি উপবৃত্তাকার ক্যাপসিউল অংশ নিয়ে গঠিত। বৃন্তের মাথায় ক্যাপসিউল অবস্থিত। 

ক্যাপসিউল নিম্নলিখিত অংশ নিয়ে গঠিত:

অ্যানুলাস (Annulus) : ক্যাপসিউল প্রাচীরের অধিকাংশ কাইটিনযুক্ত ও পুরু এক কোষস্তর বিশিষ্ট আবরণে আবৃত থাকে। এই পুরু আবরণকে অ্যানুলাস বলে। এটি পানিগ্রাহী। 

স্টোমিয়াম (Stomium) : ক্যাপসিউলের বৃন্ত সংলগ্ন কিছু অংশে পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট বলয়াকার কোষ থাকে, এ অংশকে স্টোমিয়াম বলে। স্পোর নির্গমনের সময় স্টোমিয়াম বরাবর স্পোরাঞ্জিয়াম ফেটে যায় এবং স্পোর নির্গমন হয়।  

বৃন্ত (Stalk) : স্পোরাঞ্জিয়ামের গোড়ায় একটি খাটো বৃন্ত আছে।

সোরাস বরাবর ফার্ন পত্রকের প্রস্থচ্ছেদ

 

স্পোরাঞ্জিয়াম

স্পোর বিদারণ

স্পোর উৎপাদন ও বিস্তার (Spore production and spread) :

ক্যাপসিউলের ভেতরের টিস্যুকে বলা হয় স্পোরোজেনাস টিস্যু (sporogenous tissue)। এ টিস্যু হতে স্পোর মাতৃকোষ উৎপন্ন হয়। স্পোর মাতৃকোষ ডিপ্লয়েড (2n)। প্রতিটি স্পোরাঞ্জিয়ামে ১৬টি মাতৃকোষ থাকে। মায়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে স্পোর মাতৃকোষ হতে হ্যাপ্লয়েড (n) স্পোর উৎপন্ন হয়। একটি স্পোরাঞ্জিয়াম থেকে ৬৪টি স্পোর সৃষ্টি হয়। পরিণত স্পোরগুলো গাঢ় বাদামি বর্ণের এবং একই বৈশিষ্ট্যের। এগুলো দ্বিস্তরী ও জার্মপোর (germpore) যুক্ত। স্পোর সৃষ্টি হওয়ায় স্পোরাঞ্জিয়ামে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায় ফলে স্পোরাঞ্জিয়াম শুষ্ক হয়ে যায় এবং অ্যানুলাসের কোষগুলো কুঞ্চিত হতে থাকে।

স্পোরাঞ্জিয়াম শুষ্ক হয়ে গেলে এর পশ্চাদ্ভাগের অ্যানুলাসে টান পড়ে এবং স্টোমিয়াম আড়াআড়ি ফেটে যায়। আর্দ্র অ্যানুলাস পুনরায় পূর্বস্থানে ফিরে আসে। অ্যানুলাসের এদিক-ওদিক চলাচলের ফলে স্পোরাঞ্জিয়াম হতে স্পোরের বিস্তার ঘটে এবং স্পোরগুলো বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।

গ্যামিটোফাইটিক উদ্ভিদ (Gametophytic plant) :

Pteris এর স্পোরোফাইট থেকে সৃষ্ট স্পোর বা রেণু হলো লিঙ্গধর বা গ্যামিটোফাইটের প্রথম কোষ। হ্যাপ্লয়েড স্পোর অনুকূল পরিবেশে কোনো আর্দ্র বস্তুর সংস্পর্শে আসলে অঙ্কুরিত হয় এবং ক্রমাগত মাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডাকার সবুজ অঙ্গের সৃষ্টি করে। এটি ফার্নের গ্যামিটোফাইটহৃৎপিণ্ডাকার এ গ্যামিটোফাইটকে প্রোথ্যালাস (prothallus) বলা হয়। প্রোথ্যালাসের নিম্নপৃষ্ঠের নিম্নাংশ হতে অনেক এককোষী রাইজয়েড উৎপন্ন হয়। রাইজয়েডগুলো প্রোথ্যালাসকে মাটির সাথে সংযুক্ত করে এবং মাটি হতে প্রোথ্যালাসকে খাদ্যরস সরবরাহ করে।

ফার্ন (গ্যামিটোফাইট) প্রোথ্যালাসের নিন্মতল

প্রোথ্যালাসের উপরের দিকে একটি গভীর খাঁজ আছে। একে অগ্রস্থ খাঁজ (apical notch) বলে। প্রোথ্যালাস সবুজ বর্ণের, বহুকোষী, স্বতন্ত্র ও স্বভোজী উদ্ভিদ। প্রোথ্যালাস উভলিঙ্গ অর্থাৎ একই দেহে পুং ও স্ত্রী জনন অঙ্গ অবস্থান করে। প্রোথ্যালাসের অঙ্কীয়তলে খাঁজের কাছে স্ত্রীজননাঙ্গ (আর্কিগোনিয়াম) এবং রাইজয়েডের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় পুংজননাঙ্গ (অ্যান্থেরিডিয়াম) উৎপন্ন হয়। একই থ্যালাসে পুং ও স্ত্রী জননাঙ্গ থাকে বলে একে সহবাসী উদ্ভিদও বলা হয়।

৩। যৌন জনন (Sexual reproduction) : 

প্রোথ্যালাসে যৌন জনন সম্পন্ন হয়। এর নিম্নতলে খাঁজের কাছাকাছি স্থানে আর্কিগোনিয়াম (স্ত্রীজননাঙ্গ) উৎপন্ন হয়। যে অংশ হতে রাইজয়েড উৎপন্ন হয় সে অংশে অ্যান্থেরিডিয়াম (পুংজননাঙ্গ) উৎপন্ন হয়, কাজেই প্রোথ্যালাস সহবাসী।

আর্কিগোনিয়াম (Archegonium) :

স্ত্রীজননাঙ্গকে আর্কিগোনিয়াম বলে। আর্কিগোনিয়াম ফ্লাস্ক আকৃতির। এটি একটি গ্রীবা (neck) এবং একটি উদর (venter) সহযোগে গঠিত। উদরের নিম্নাংশে একটি ডিম্বাণু (egg or oosphere) আছে এবং ডিম্বাণুর উপর একটি উদরীয় নালিকা কোষ (ventral canal cell) আছে। 

petris আর্কিগোনিয়াম (ক) বিভিন্ন অংশ (খ) নিষেকের জন্য প্রস্তুত

গ্রীবায় একাধিক গ্রীবা নালিকা কোষ (neck canal cell) আছে। আর্কিগোনিয়াম পরিণত হলে গ্রীবা নালিকা কোষ এবং উদরীয় নালিকা কোষ বিগলিত হয়ে একটি নালী পথ গঠন করে এবং উদরে শুধু ডিম্বাণু থাকে। এই নালী পথটি মিউসিলেজ ও ম্যালিক আসিড দিয়ে পূর্ণ থাকে।

অ্যাস্থেরিডিয়াম (Antheridium) :

পুংজননাঙ্গকে অ্যান্থেরিডিয়াম বলে। অ্যান্থেরিডিয়াম গোলাকৃতির। এর ভেতরে ২০-৫০ টি শুক্রাণু মাতৃকোষ বা অ্যান্ড্রোসাইট (androcyte) থাকে। মাতৃকোষগুলো একটি বন্ধ্যা আবরণ দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে। আবরণটি ৩টি কোষ দিয়ে গঠিত। গোড়ায় বলয় কোষ (ring cell) এবং উপরে ১টি ঢাকনা কোষ (cover cell) থাকে। প্রতিটি শুক্রাণু মাতৃকোষ রূপান্তরিত হয়ে প্যাচানো দণ্ডাকার বহু ফ্ল্যাজেলাযুক্ত শুক্রাণুতে (antherozoid) পরিণত হয়। অ্যান্থেরিডিয়ামের শীর্ষের আচ্ছাদনকারী ঢাকনা কোষ বিদীর্ণ হয় এবং শুক্রাণুগুলো বের হয়ে ফ্ল্যাজেলার সাহায্যে শিশির বা বৃষ্টির পানিতে সাঁতার কেটে আর্কিগোনিয়ার সন্নিকটে আসে।

petris অ্যাস্থেরিডিয়াম এবং শুক্রাণু সৃষ্টি

নিষেক (Fertilization)

শিশির বিন্দু বা বৃষ্টির পানির সাহায্যে শুক্রাণুসমূহ আর্কিগোনিয়ামে পরিবাহিত হয়। আর্কিগোনিয়াম কতৃক ম্যালিক অ্যাসিড নিঃসৃত হয়, ফলে শুক্রাণু ডিম্বাণুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। অনেক শুক্রাণু আর্কিগোনিয়ামের গ্রীবা নালী দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেও একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে নিষেকক্রিয়া সম্পন্ন করে। নিষেকক্রিয়ার ফলে ডিপ্লয়েড (2n) উস্পোর (oospore) উৎপন্ন হয়। এভাবে নিষেকের ফলে উস্পোরে পূর্ণ ক্রোমোজোম সংখ্যা ফিরে আসে এবং সাথে সাথে ডিপ্লয়েড বা স্পোরোফাইটিক পর্যায় শুরু হয়।

নতুন স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদ (Regeneration of sporophytic plant) :

জাইগোট বা উস্পোর স্পোরোফাইটের প্রথম কোষ। ঊস্পোর পুনঃ পুনঃ মাইটোটিক কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বহুকোষী ভ্রূণ সৃষ্টি করে। ভ্রূণ ক্রমশ বিকশিত হয়ে মূল, কাণ্ড ও পাতাবিশিষ্ট নতুন স্পোরোফাইট উদ্ভিদের জন্ম দেয়। মূল মাটিতে প্রবেশের পর প্রোথ্যালাস শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায় এবং স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদটি পূর্ণ Pteris উদ্ভিদে পরিণত হয়।

petris এর নতুন স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদ

Pteris উদ্ভিদের জীবন চক্র বা জনুক্রম (Life cucle or alternation of generation of Pteris)

কোনো জীবের জন্মাবস্থা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি, জনন প্রভৃতি পর্যায় অতিক্রম করে পুনরায় ঐ অবস্থার পুনর্জন্ম দেওয়ার চক্ৰীয় ধারাকে ঐ জীবের জীবন চক্র বলে। 

কোনো জীবের জীবন চক্র সম্পন্ন করার জন্য পর্যায়ক্রমে ডিপ্লয়েড (2n) বা স্পোরোফাইট (রেণুধর) এবং হ্যাপ্লয়েড (n) গ্যামিটোফাইট (লিঙ্গধর) জনুর আবির্ভাবকে জনুক্রম বলে। Pteris উদ্ভিদের জীবন চক্রে সুস্পষ্টভাবে দুটি জনুর পর্যায়ক্রমিক আবর্তন ঘটে। একটি হলো স্পোরোফাইটিক জনু এবং অপরটি হলো গ্যামিটোফাইটিক জনু। নিচে Pteris-এর জনুক্রম এর বর্ণনা দেওয়া হলো। 

স্পোরোফাইটিক জনু (Sporophytic generation) :

Pteris-এর উদ্ভিদদেহ স্পোরোফাইটিক অর্থাৎ ডিপ্লয়েড (2n)। স্পোরোফাইট প্রজনন ঋতুতে পত্রক কিনারা বরাবর সোরাস উৎপন্ন করে। সোরাস হলো স্পোরাঞ্জিয়ামের গুচ্ছ। প্রতিটি স্পোরাঞ্জিয়ামের ক্যাপসিউলের ভেতরে ১৬টি ডিপ্লয়েড স্পোর-মাতৃকোষ (2n) থাকে। স্পোর-মাতৃকোষ মায়োসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে ৬৪টি হ্যাপ্লয়েড স্পোর (n) উৎপন্ন করে। স্পোর সৃষ্টির পর ক্যাপসিউলের প্রাচীর বিদীর্ণ করে স্পোরগুলো বেরিয়ে আসে। এভাবে স্পোরোফাইটিক জনুর সমাপ্তি ঘটে। 

গ্যামিটোফাইটিক জনু (Gametophytic generation) :

স্পোর-মাতৃকোষ মায়োসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে হ্যাপ্লয়েড (n) স্পোর উৎপন্ন করে যা গ্যামিটোফাইটের প্রথম ধাপ। এই হ্যাপ্লয়েড স্পোর অঙ্কুরিত হয়ে হ্যাপ্লয়েড প্রোথ্যালাস নামক স্বতন্ত্র গ্যামিটোফাইটিক পর্যায়ের সৃষ্টি করে। প্রোথ্যালাসে সৃষ্ট আর্কিগোনিয়াম ও অ্যান্থেরিডিয়াম এবং এদের ভেতরে সৃষ্ট ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সবই হ্যাপ্লয়েড। এদের মধ্যে নিষেকের ফলে সৃষ্টি হয় ডিপ্লয়েডে ঊস্পোর (2n) যা স্পোরোফাইটিক পর্যায়ের প্রথম ধাপ। ঊস্পোর অঙ্কুরিত হয়ে এবং ক্রমাগত মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে সৃষ্টি করে ভ্রূণ ও পূর্ণাঙ্গ স্পোরোফাইটিক Pteris উদ্ভিদ। এভাবে Pteris এর জীবন চক্রে পর্যায়ক্রমে স্পোরোফাইটিক ও গ্যামিটোফাইটিক জনুর আবির্ভাব ঘটে  

Pteris-এর জীবন চক্রের

Pteris-এর জীবন চক্রের স্পোরোফাইট পর্যায় বেশ দীর্ঘ, গ্যামিটোফাইট পর্যায় বেশ সংক্ষিপ্ত এবং উভয় পর্যায় আকার-আকৃতিতে ভিন্ন প্রকৃতির ও স্বতন্ত্র। তাই এরূপ জনুক্রমকে বিষমাকৃতির বা হিটারোমরফিক জনুক্রম (heteromorphic alternation of generation) বলে

যে জনুক্রমে রেণুধর বা স্পোরোফাইটিক এবং লিঙ্গধর বা গ্যামিটোফাইটিক, দুটি দশাই সমান তাকে ডিপ্লোবায়োন্টিক জনুক্রম বলে। আবার যে ডিপ্লোবায়োন্টিক জনুক্রমে রেণুধর ও লিঙ্গধর দশারূপে আকার-আকৃতিগতভাবে ভিন্ন ধরনের হয় তাকে হিটারোবায়োন্টিক জনুক্রম বলে। 

Pteris– এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব (The economic importance of Pteris)  : 

১। Pteris উদ্ভিদ শাক হিসেবে খাওয়া যায়। 

২। ঘর সাজানোর কাজেও ব্যবহার করা হয়।

৩। সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

৪। প্রকৃতিতে উৎপাদক হিসেবে কাজ করে।

ব্রায়োফাইট ও টেরিডোফাইট এর মধ্যে পার্থক্য (Difference between Bryophyta and Pteridophyta) 

পার্থক্যের বিষয় Riccia (ব্রায়োফাইট) Pteris (টেরিডোফাইট)
১. উদ্ভিদ দেহ মূল উদ্ভিদ গ্যামিটোফাইট তথা হ্যাপ্লয়েড (n) মূল উদ্ভিদ স্পোরোফাইট তথা ডিপ্লয়েড (2n)
২. নির্ভরশীলতা এর স্পোরোফাইট গ্যামিটোফাইটের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। স্পোরোফাইট ও গ্যামিটোফাইট স্বতন্ত্র উদ্ভিদ।
৩. স্পোরের অঙ্কুরোদগম  এর স্পোর অঙ্কুরিত হয়ে প্রোটোনেমা বা থ্যালাস উৎপন্ন করে।  এর স্পোর অঙ্কুরিত হয়ে প্রোথ্যালাস উৎপন্ন করে।
৪. ভাস্কুলার টিস্যু  এদের পরিবহণ টিস্যুগুচ্ছ নেই (অভাস্কুলার)। এদের পরিবহণ টিস্যুগুচ্ছ আছে (ভাস্কুলার)। 
৫. সোরাস মসের পাতা সোরাস বহন করে না ফার্নের পাতা সোরাস বহন করে। 
৬. শুক্রাণু  দ্বিফ্ল্যাজেলাবিশিষ্ট। বহু ফ্ল্যাজেলাবিশিষ্ট।