10 Minute School
Log in

ঘাসফড়িং-এর সিলোম ও অন্তর্গঠন, রক্ত সংবহন প্রক্রিয়া

ঘাসফড়িং-এর সিলোম ও অন্তর্গঠন

(Coelom and Internal structures of Grasshopper)

শুধু ভ্রূণেই দেহ গহ্বরটি সিলোম (coelom) আকারে অবস্থান করে। পরিণত প্রাণীতে যে গহ্বর দেখা যায় ভ্রূণের ব্লাস্টোসিল (blastocoel) এবং সিলোম গহ্বরের সংযুক্তির ফলে সৃষ্ট । এর নাম মিক্সোসিল (mixocoel)। ভ্রূণীয় সিলোমপ্রাচীর দেহের বিভিন্ন অঙ্গ গঠনে ব্যবহৃত হয়। মিক্সোসিলের ভিতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয় বলে এটি হিমোসিল (haemocoel) নামে অভিহিত এবং প্রবাহমান তরল পদার্থ হচ্ছে হিমোলিম্ফ (haemolymph)।

চিত্র : স্ত্রী ঘাসফড়িং-এর অন্তর্গঠন

দেহের পৃষ্ঠদেশে রক্ত সংবহনতন্ত্রের অ্যাওর্টা ও হৃদযন্ত্র; অঙ্কীয়দেশে স্নায়ুরজ্জু এবং দেহের মাঝ বরাবর পৌষ্টিকনালির বিভিন্ন অংশ অবস্থান করে। সম্মুখ অংশের তলদেশে লালাগ্রন্থি প্রসারিত থাকে। মধ্য ও পশ্চাৎ-পৌষ্টিকনালির সংযোগস্থলে অসংখ্য সুতার মতো ম্যালপিজিয়ান নালিকা হিমোসিলে বিস্তৃত। হিমোসিলের অভ্যন্তরে অন্যান্য অঙ্গাণু দেখা যায়।

ঘাসফড়িং-এর পৌষ্টিকতন্ত্র (Digestive System of Grasshopper)

ঘাসফড়িং-এর খাদ্যাভ্যাসের সাথে পৌষ্টিকতন্ত্র অভিযোজিত এবং প্রধান দুটি অংশ নিয়ে গঠিত যথা-পৌষ্টিকনালি ও পৌষ্টিকগ্রন্থি। ছকের মাধ্যমে পৌষ্টিকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ দেখানো হলো ।

Image here – Slide 50

পৌষ্টিকনালি (Alimentary Canal) : ঘাসফড়িং-এর পৌষ্টিকনালি সরল প্রকৃতির এবং মুখছিদ্র থেকে পায়ুছিদ্র পর্যন্ত দেহের মধ্যরেখা বরাবর সোজা নালি হিসেবে অবস্থিত। বর্ণনার সুবিধার জন্য পৌষ্টিকনালিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে : স্টোমোডিয়াম, মেসেন্টেরন ও প্রোক্টোডিয়াম।

১. স্টোমোডিয়াম বা অগ্র-পৌষ্টিকনালি (Stomodaeum or Foregut) : এটি মুখছিদ্র থেকে গিজার্ড পর্যন্ত বিস্তৃত পৌষ্টিকনালির প্রথম অংশ। ভূণীয় এক্টোডার্ম থেকে উদ্ভূত এ অংশটির অন্তঃপ্রাচীর কাইটিন (chitin) নির্মিত শক্ত আবরণে আবৃত। এটি প্রধানত নিচে উল্লেখিত অংশগুলো নিয়ে গঠিত।

ক. মুখছিদ্র (Mouth) : এটি প্রাকমৌখিক প্রকোষ্ঠ (preoral cavity) বা সিবেরিয়াম (cibarium) নামক প্রকোষ্ঠের গোড়ায় অবস্থিত ছিদ্রবিশেষ প্রকোষ্ঠটি মুখোপাঙ্গে বেষ্টিত থাকে ৷

কাজ : সিবেরিয়ামে খাদ্যবস্তু গৃহীত হয় এবং মুখছিদ্র পথে খাদ্য দেহে প্রবেশ করে ।

খ. গলবিল (Pharynx) : মুখছিদ্রটি ছোট নলাকার ও পেশিবহুল গলবিলে উন্মুক্ত।

কাজ : এর মাধ্যমে খাদ্যবস্তু গ্রাসনালিতে প্রবেশ করে ।

গ. গ্রাসনালি (Oesophagus) : এটি গলবিলের পিছনে সরু, সোজা, নলাকার পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট নালি।

কাজ : খাদ্যবস্তু মুখ থেকে বহন করে ক্রপে পৌছে দেয়।

ঘ. ক্রপ : গ্রাসনালি স্ফীত হয়ে মোচাকৃতি থলির মতো ও পাতলা প্রাচীরযুক্ত ক্রপ গঠন করে।

কাজ : খাদ্যবস্তু কিছু সময়ের জন্য এখানে জমা থাকে। ক্রপের সংকোচন প্রসারণে খাদ্য কিছুটা চূর্ণ হয় এবং লালার এনজাইম পরিপাকের সূত্রপাত ঘটায়।

চিত্র : ঘাসফড়িং-এর পৌষ্টিকতন্ত্র

ঙ. গিজার্ড বা প্রোভেন্ট্ৰিকুলাস (Gizzard or Proventriculus) : এটি গ্রুপের পরবর্তী ত্রিকোণাকার বেশ শক্ত, পুরু প্রাচীরবিশিষ্ট এবং অন্তঃপ্রাচীরের কাইটিনময় ছয়টি দাঁত ও ছয়টি অনুলম্ব ভাঁজ নিয়ে গঠিত অংশ। দাঁতের পিছনে চুল ও ছয়টি প্যাড থাকে। এর পরের অংশে থাকে পিছনে প্রসারিত কপাটিকা । 

কাজ : গিজার্ডের দৃঢ় সংকোচন-প্রসারণ খাদ্যকে চূর্ণ করে; প্যাডের চুলগুলো খাদ্যকণাকে মেসেন্টেরনে প্রবেশের সময় ছাঁকনির কাজ করে; এবং কপাটিকাগুলো খাদ্যকে বিপরীত দিকে আসতে বাধা দেয়।

চিত্র : গিজার্ডের প্রস্থচ্ছেদ

২. মেসেন্টেরন বা মধ্য-পৌষ্টিকনালি বা পাকস্থলি (Mesenteron on Midgut) : গিজার্ডের পর থেকে শুরু করে উদরের মধ্যাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট অংশটি মেসেন্টেরন । এটি ভ্রূনীয় এন্ডোডার্ম স্তর থেকে সৃষ্টি হয় এবং এর অন্তঃপ্রাচীর কিউটিকলের পরিবর্তে পেরিট্রফিক পর্দা (peritrophic mentirane) নামক বৈষম্যভেদ্য পর্দা দিয়ে আবৃত। মেসেন্টেরনের অগ্র ও পশ্চাৎ প্রান্তে পেশির বলয় বা স্ফিংক্টার (sphincter) থাকে। মেসেন্টেরন এবং স্টোমোডিয়ামের সংযোগস্থলে ৬ জোড়া ফাঁপা, লম্বা মোচাকার থলি থাকে। সেগুলো হচ্ছে গ্যাস্ট্রিক সিকা (gastric caeca) বা হেপাটিক সিকা (hepatic caeca)।

প্রতিজোড়া হেপাটিক সিকার একটি সামনের দিকে অন্যটি পিছন দিকে প্রসারিত। মেসেন্টেরনের অন্তঃপ্রাচীর স্তম্ভাকার অস্তঃত্বকীয়  কোষে (columnar endodermal cells)  গঠিত এবং  এটি ভাজ হয়ে অসংখ্য ভিলাই (villi) গঠন করে। মেসেন্টেরনের শেষ অংশে অসংখ্য সূক্ষ্ম চুলের মতো এবং হলদে বর্ণের অঙ্গাণু থাকে। এগুলো ম্যালপিজিয়ান নালিকা (malpighian tubules) যা মূলত রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।

কাজ : মেসেন্টেরনের গহ্বর (lumen)-এ খাদ্যবস্তুর পরিপাক ঘটে এবং এর প্রাচীরে অবস্থিত ভিলাই খাদ্যরস শোষণ করে।

প্রোক্টোডিয়াম পশ্চাৎ-পৌষ্টিকনালি (Proctodaeum or Hindgut) : 

এটি পৌষ্টিকনালির শেষ অংশ যা ভূণীয় এক্টোডার্ম থেকে উদ্ভূত এবং অন্তঃপ্রাচীর কিউটিকল দিয়ে আবৃত। নিচে বর্ণিত ৪টি অংশ নিয়ে প্রোক্টোডিয়াম গঠিত।

ক. ইলিয়াম (Iluem) : এটি প্যাচবিহীন, চওড়া নলাকার প্রথম অংশ।

কাজ : এর প্রাচীরের মাধ্যমে পরিপাককৃত খাদ্যরস শোষিত হয় ।

খ. কোলন (Colon) : এটি ইলিয়ামের পিছনে অবস্থিত সরু নলাকার অংশ।

কাজ : পাচিত খাদ্যবস্তুর বাকি অংশ পানিসহ শোষিত হয়। 

গ. রেকটাম বা মলাশয় (Rectum) : এটি পৌষ্টিকনালির সর্বশেষ স্ফীত ও পুরু প্রাচীরযুক্ত অংশ। এর অন্তঃস্থ প্রাচীরে ছয়টি রেকটাল প্যাপিলা (rectal papilla; বহুবচনে-papillae) নামক অনুলম্ব ভাঁজ রয়েছে।

কাজ : মল থেকে অতিরিক্ত পানি, খনিজ লবণ, অ্যামিনো এসিড শোষণ করা এবং অপাচ্য অংশ সাময়িক জমা রাখা এর কাজ।

ঘ. পায়ুছিদ্র (Anus) : এটি মলাশয়ের শেষপ্রান্তে অবস্থিত ছিদ্রপথ। এটি দশম দেহখণ্ডকের অঙ্কীয়দেশে উন্মুক্ত।

কাজ : অপাচ্য অংশ মল (faeces) হিসেবে দেহ থেকে অপসারণ করে।

চিত্র : রেকটামরে প্রস্থচ্ছেদ

পৌষ্টিকগ্রন্থি (Digestive Glands)

ঘাসফড়িং-এর লালাগ্রন্থি, মেসেন্টেরনের অন্তঃআবরণ এবং হেপাটিক সিকা পৌষ্টিকগ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। নিচে এসব অংশের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো।

১. লালাগ্রন্থি (Salivary glands) : এটি ঘাসফড়িং-এর প্রধান পৌষ্টিকগ্রন্থি। ত্রুপের নিচে ক্ষুদ্র, শাখাপ্রশাখা-যুক্ত একজোড়া লালাগ্রন্থি অবস্থিত। লালাগ্রন্থির নালি ল্যাবিয়ামের গোড়ায় গলবিলে উন্মুক্ত হয়।

কাজ : লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারস (saliva) খাদ্য গলাধঃকরণ ও চর্বণে সাহায্য করে। কিছু শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাকেও এটি ভূমিকা পালন করে।

২. মেসেন্টেরন বা মধ্য-পৌষ্টিকনালির অন্তঃআবরণ : মেসেন্টেরনের অন্তঃপ্রাচীরে বেশ কিছু ক্ষরণকারী কোষ (secretary cells) আছে যা থেকে পাচকরস ক্ষরিত হয়।

কাজ : ক্ষরিত পাচকরস খাদ্য পরিপাকে অংশ নেয়। 

৩. হেপাটিক সিকা (Hepatic caeca) : অগ্র ও মধ্য-পৌষ্টিকনালির সংযোগস্থলে অবস্থিত কোণ (cone) আকৃতির ছয়জোড়া লম্বা স্বচ্ছ নালিকাকে হেপাটিক বা গ্যাস্ট্রিক সিকা বলে।

কাজ : হেপাটিক সিকার অন্তঃপ্রাচীরে অবস্থিত ক্ষরণকারী কোষ থেকে পাচকরস ক্ষরিত হয়ে খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে।

খাদ্য গ্রহণ ও পরিপাক (Feeding & Digestion)

খাদ্য : ঘাসফড়িং সম্পূর্ণ তৃণভোজী বা শাকাশী (herbivorous) প্রাণী। ঘাস, শস্যদানা, লতা-পাতা খেয়ে এরা জীবনধারণ করে। এদের খাবারে শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় সমস্ত উপাদানই থাকে।

খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতি : ঘাসফড়িংয়ের যে মুখোপাঙ্গ তা শুধু চিবানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই এদের খাদ্য গ্রহণকে চর্বণ (chewing) এবং মুখোপাঙ্গকে চর্বণ-উপযোগী বা ম্যান্ডিবুলেট (chewing or mandibulate) মুখোপাঙ্গ বলে। ঘাসফড়িং প্রথমে ম্যাক্সিলারি ও ল্যাবিয়াল পাল্পের সাহায্যে খাদ্য নির্বাচন করে। অগ্রপদ, ল্যাব্রোম এবং ল্যাবিয়াম খাদ্যবস্তু আটকে ধরে। ম্যান্ডিবল ও ম্যাক্সিলি খাদ্যবস্তুর ক্ষুদ্র অংশ কেটে চোষণ করে।

পরিপাক : খাদ্য প্রাকমৌখিক প্রকোষ্ঠে পৌঁছার পরই লালাগ্রন্থি নিঃসত লালারস-এর সাথে মিশিতে হয়। লালারসে অ্যামাইলেজ, কাইটিনেজ ও সেলুলেজ এনজাইম থাকে যা বিভিন্ন শর্করাকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করে। খাদ্যবস্তু প্রাকমৌখিক প্রকোষ্ঠ থেকে ক্রপে পৌছায়, এখান থেকে গিজার্ডে প্রেরিত হয়। আংশিক পরিপাককৃত খাদ্য গিজার্ডে প্রবেশ করলে কাইটিনময় দাঁতে পিষ্ট হয়ে অতি সূক্ষ্ম কণাসমৃদ্ধ পেস্ট (paste)-এ পরিণত হয়। এগুলো গিজার্ডে অবস্থিত সূক্ষ্ণ রোমে পরিস্রত হয়ে মেসেন্টেরনে প্রবেশ করে । মেসেন্টেরনের অন্তঃর্গাত্র এবং হেপাটিক সিকা ক্ষরণ ও শোষণতলরূপে কাজ করে ।

মেসেন্টেরনে মলটেজ, ট্রিপটেজ, অ্যামাইলেজ, ইনভার্টেজ, লাইপেজ প্রভৃতি এনজাইমের উপস্থিতিতে খাদ্যবস্তু সরল, তরল খাদ্যরসে পরিণত হয়। পরিপাককৃত খাদ্য  মেসেন্টেরনের  কোষীয় প্রাচীরের  মাধ্যমে  পরিশোধিত হয়ে হিমোসিলে প্রবেশ করে সারা দেহে পরিবাহিত হয়। অজীর্ণ খাদ্যবস্তু কোলনের ভিতর দিয়ে মলাশয়ে পৌছার আগেই কোলনের প্রাচীর তা থেকে পানি, লবণ, অ্যামিনো এসিড ও অজৈব আয়ন শোষণ করে নেয়। পরে কঠিন অপাচ্য বস্তু মলরূপে পায়ু পথে বাইরে নির্গত হয় ।

ঘাসফড়িং-এর রক্ত সংবহনতন্ত্র (Blood Circulatory System)

ঘাসফড়িং-এর দেহে রক্তরুপী হিমোলিম্ফ সংবহনের জন্য হৎযন্ত্ররূপী পৃষ্ঠীয় বাহিকা ও অন্যান্য বাহিকা নিয়ে গঠিত তন্ত্রকে রক্ত সংবহনতন্ত্র বলে। রক্তের পথ অনুসারে প্রাণিদেহে দুধরনের রক্ত সংবহনতন্ত্র দেখা যায়, যেমন- মুক্ত (open) বা ল্যাকুনার (locumar) এবং বদ্ধ (closed) সংবহনতন্ত্র।

  • মুক্ত সংবহন : যে সংবহনতন্ত্রে রক্ত হৃদযন্ত্র থেকে নালিকা পথে বেরিয়ে উন্মুক্ত দেহগহ্বরে প্রবেশ করে এবং দেহগহবর থেকে পুনরায় নালিকা পথে হৃৎযন্ত্রে ফিরে আসে তার নাম মুক্ত সংবহন। অর্থাৎ রক্ত সবসময় রক্তবাহিকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় না। পতঙ্গ, মলাস্কা প্রভৃতি প্রাণীর দেহে এ ধরনের সংবহন দেখা যায়।
  • বদ্ধ সংবহন : যে সংবহনতন্ত্রে রক্ত সবসময় রক্তবাহিকা ও হৃদযন্ত্রের মাধ্যমে সম্পূর্ণ আবদ্ধ থেকে প্রবাহিত হয় এবং কখনোই দেহ গহবরে মুক্ত হয় না তাকে বলে বদ্ধ সংবহন। অ্যানিলিড জাতীয় ননকর্ডেট প্রাণিদেহে এবং কর্ডেট প্রাণীতে এ ধরনের সংবহন দেখা যায়।
মুক্ত ও বদ্ধ সংবহনতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য
মুক্ত সংবহনতন্ত্র বদ্ধ সংবহনতন্ত্র
১. এ ধরনের সংবহনতন্ত্রে রক্ত হৃৎযন্ত্র, রক্তবাহিকা ও বিভিন্ন সাইনাসে অবস্থান করে। ১. এ ধরনের সংবহনতন্ত্রে রক্ত হৃৎযন্ত্র ও রক্তবাহিকার অভ্যন্তরে অবস্থান করে।
২. হৃৎযন্ত্র, সংক্ষিপ্ত রক্তনালি ও সাইনাস নিয়ে এটি গঠিত। ২. হৃৎযন্ত্র, শিরা, ধমনি ও কৈশিকজালিকা সমন্বয়ে এটি গঠিত।
৩. এক্ষেত্রে দেহগহ্বরে রক্ত প্রবেশ করে; এজন্য একে হিমোসিল বলে। ৩. এক্ষেত্রে দেহগহবরে রক্ত প্রবেশ করে না।
৪. রক্ত সরাসরি কোষ টিস্যুর সংস্পর্শে এসে পুষ্টি পদার্থ ও গ্যাসের বিনিময় ঘটায়। ৪. রক্ত কোষ টিস্যুর সরাসরি সংস্পর্শে আসে না। টিস্যুরসের মাধ্যমে পুষ্টি পদার্থ ও গ্যাসের বিনিময় ঘটে।
৫. Arthropoda ও Mollusca পর্বের প্রাণীতে দেখা যায়। ৫. Annelida ও Chordata পর্বের প্রাণীতে দেখা যায়।

ঘাসফড়িং-এর রক্ত সংবহনতন্ত্র অনুন্নত ও মুক্ত ধরনের এবং তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত- হিমোসিল, হিমোলিম্ফ পৃষ্ঠীয় বাহিকানিচে এসব অংশের বর্ণনা দেয়া হলো।

ক. হিমোসিল (Haemocoel: গ্রিক, haima = রক্ত + koiloma = গহরর) : ভ্রুণীয় পরিস্ফুটনের সময় প্রধান সিলোমিক গহ্বর ব্লাস্টোসিলের সঙ্গে একীভূত হয়ে যে নতুন গহ্বরের সৃষ্টি করে তাকে হিমোসিল বা মিক্সোসিল (mixocoel) বলে। হিমোসিল তখন মেসোডার্মাল পেরিটোনিয়ামের পরিবর্তে বহিঃকোষীয় মাতৃকায় (extra cellular matrix) আবৃত হয়। এটি রক্তপূর্ণ থাকে।

ঘাসফড়িং-এর হিমোসিল দুটি অনুপ্রস্থ পর্দা (diaphragm) দিয়ে তিনটি প্রকোষ্ঠ বা সাইনাস (sinus)-এ বিভক্ত। হৃৎযন্ত্রের তলদেশ বরাবর অবস্থিত পর্দাকে পৃষ্ঠীয় পর্দা এবং স্নায়ুরজ্জুর ঠিক উপরে বিস্তৃত পর্দাকে অঙ্কীয় পর্দা বলে। এসব পর্দার উপস্থিতির ফলে সৃষ্ট সাইনাস-তিনটি নিম্নরূপ-

  1. পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস (Pericardial sinus) : এটি পৃষ্ঠীয় পর্দার ঠিক উপরে অবস্থিত। এতে হৃৎযন্ত্র অবস্থান করে।

চিত্র : ঘাসফড়িং-এর রক্ত সংবহনতন্ত্র

  1. পেরিভিসেরাল সাইনাস (Perivinecral sinus) : এটি পৃষ্ঠীয় পর্দার নিচে অবস্থিত এবং পৌক্টিকনালিকে ##NOTE##  করে।

iii. পেরিনিউরাল সাইনাস (Perin,,ural sinus) : এটি অঙ্কীয় পর্দার নিচে অবস্থিত গহ্বর। এতে স্নায়ুরজ্জু অবস্থান করে। পর্দাগুলো ছিদ্রযুক্ত হওয়ায় রক্ত প্রয়োজন মতো এক সাইনাস থেকে অন্য সাইনাসে যাতায়াত করতে পারে। অঙ্কীয় পর্দাটি পায়ের ভিতরেও বিস্তৃত।

কাজ : হিমোসিল দেহের বিভিন্ন অঙ্গ, রক্ত ও লসিকা ধারণ করে। এর মাধ্যমে খাদ্যরস ও বর্জ্যবস্তু পরিবাহিত হয়।

চিত্র : হৃৎযন্ত্রের আংশিক বর্ধিত চিত্র

খ. হিমোলিম্ফ (Haemolymph) বা রক্ত : বর্ণহীন প্লাজমা এবং এর মধ্যে ভাসমান অসংখ্য বর্ণহীন রক্তকণিকা বা হিমোসাইট (hacmocyte) নিয়ে ঘাসফড়িং-এর রক্ত গঠিত। রক্ত হিমোসিল নামক গহ্বরে লসিকা (lymph)-র সাথে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে বলে ঘাসফড়িংসহ বিভিন্ন পতঙ্গের রক্তকে হিমোলিম্ফ বলে। হিমোগ্লোবিন বা অন্য কোন ধরনের শ্বাসরঞ্জকে না থাকায় এর রক্ত বর্ণহীন, শ্বসনে তেমন কোন ভূমিকা রাখে না।

কাজ : খাদ্যসার, রেচনদ্রব্য, হরমোন ইত্যাদি পরিবহনে; অ্যামিনো এসিড, কার্বোহাইড্রেট প্রভৃতি জমা রাখা; জীবাণু ধ্বংস করা; তঞ্চনে সাহায্য করা; এবং ডানার সঞ্চালন ও খোলস মোচনে সহায়তা করা হিমোলিম্ফের কাজ।

গ. পৃষ্ঠীয় বাহিকা (Donal vowel) : দেহের মধ্য-পৃষ্ঠীয় অবস্থানে রক্ষিত এটি প্রধান স্পন্দনশীল অঙ্গ। এ অঙ্গ দুটি অংশে বিভক্ত- (i) অস্টিয়াবিহীন সোজা নলাকার সম্মুখ ও পশ্চাৎ অ্যাওর্টা এবং (ii) হৃৎযন্ত্র। ঘাসফড়িং-এ একটি লম্বাটে, নলাকার হৃদযন্ত্র থাকে। এটি উদরীয় অঞ্চলের পৃষ্ঠদেশে মাঝ বরাবর যে গহ্বরে থাকে তাকে পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস (jericardial sinus) বলে। হৃৎযন্ত্রটি সাতটি ফানেল আকার প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। প্রতিটি প্রকোষ্ঠ পার্শ্বীয় দিকে একটি করে মোট একজোড়া ছিদ্র রয়েছে। ছিদ্রগুলোকে অস্ট্রিয়া (ovtis, একবচনে-ostium) বলে।

প্রতিটি অস্টিয়ামে কপাটিকা (valve) থাকে, যা রক্তকে হৃৎযন্ত্রে শুধু প্রবেশ করতে দেয়, বের হতে দেয় না। টারগামের অঙ্কীয় তলের দুপাশ থেকে অ্যালারি পেশি (alary mucle) নামক ত্রিকোণাকার পাখার মতো বিশেষ ধরনের পেশি উৎপন্ন হয়ে পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসের প্রাচীরে যুক্ত হয় এবং হৃৎযন্ত্রের পার্শ্বীয়-অঙ্কীয় দেশেও যুক্ত থাকে। ঘাসফড়িংয়ে ৬ জোড়া অ্যালারি পেশি থাকে। এগুলোর সংকোচন-প্রসারণ রক্ত সংবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রক্ত সংবহন প্রক্রিয়া (Mechanism of Blood Circulation)

হৃৎযন্ত্র ও অ্যালারি পেশির সংকোচন-প্রসারণের ফলেই ঘাসফড়িং-এর দেহের বিভিন্ন অঞ্চলে রক্ত প্রবাহিত হয়। হৃৎযন্ত্রের প্রত্যেক প্রকোষ্ঠ ক্রমাগত ঢেউয়ের মতো সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হয়। ঘাসফড়িং-এর হৃৎযন্ত্রে স্পন্দন প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১১০ বার। রক্ত সংবহন প্রক্রিয়াটি নিম্নোক্তভাবে সম্পাদিত হয়। অ্যালারি পেশির সংকোচনের ফলে রক্ত পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস থেকে অস্ট্রিয়ার মাধ্যমে হৃৎযন্ত্রে প্রবেশ করে। পরে পর্যায়ক্রমে পিছন দিক থেকে সামনের দিকে সংকুচিত হওয়া রক্ত সম্মুখে প্রবাহিত হয় এবং অ্যাওর্টার ভিতর দিয়ে হিমোসিলে পৌছে।

অস্ট্রিয়ায় কপাটিকা থাকায় রক্ত তন্ত্র থেকে বাইরে আসতে পারে না। একইভাবে হৃৎযন্ত্রের প্রকোষ্ঠসমূহের সংযোগস্থলে কপাটিকা থাকায় রক্ত পিছন দিকে প্রবাহিত হতে পারে না। রক্তে প্রথম মস্তকে প্রবেশ করে। এবং ধীরে ধীরে পিছন দিকে প্রবাহিত হয়। হৃৎযন্ত্র যখন আবার প্রসারিত হয় তখন হিমোসিল থেকে পেরিকার্ডিয়ামের প্রাচীরের ছিদ্রপথে রক্ত পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসে ফিরে আসে। ঘাসফড়িং-এর সমগ্র দেহে একবার রক্তপ্রবাহ সম্পন্ন হতে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট সময় লাগে।

চিত্র : ঘাসফড়িং-এর রক্ত সংবহন প্রক্রিয়া

 

সিলোম ও হিমোসিল-এর মধ্যে পার্থক্য
সিলোম হিমোসিল
১. মেসোডার্ম উদ্ভূত পেরিটোনিয়াম আবরণে পরিবৃত দেহপ্রাচীর ও পৌষ্টিকনালির মধ্যবর্তী সিলোমিক রসপূর্ণ গহ্বর। ১ মেসোডার্ম উদ্ভূত পেরিটোনিয়াম আবরণবিহীন দেহপ্রাচীর ও পৌষ্টিকনালির মধ্যবর্তী রক্তপূর্ণ গহ্বর।
২. সিলোম দেহের কোন অঙ্গ বা উপাঙ্গে প্রসারিত হয় না। ২. হিমোসিল দেহের সকল উপাঙ্গে প্রসারিত হয়।
৩. সিলোম রক্ত সংবহনতন্ত্রের অংশ গঠন করে না। ৩. হিমোসিল রক্ত সংবহনতন্ত্রের অংশ গঠন করে।
8. সিলোমে পুষ্টি পদার্থ পরিবাহিত হয় না। 8. হিমোসিলে পুষ্টি পদার্থ পরিবাহিত হয়।
৫. Annelida ও Chordata পর্বের প্রাণীতে সিলোম পাওয়া যায়। ৫. Arthropoda ও Mollusca পর্বের প্রাণীতে হিমোসিল পাওয়া যায়।