অ্যালকেন, অ্যালকিন, অ্যালকাইন
অ্যালকেন, অ্যালকিন, অ্যালকাইন
(Alkane, Alkene, Alkyne)
অ্যালকেন (Alkane)
প্রশ্ন: অ্যালকেন প্রস্তুতির মূলনীতি লিখ। (Principles of Alkane Preparation)
উত্তর : সাধারণত কার্বক্সিলিক এসিডের সোডিয়াম লবণের সাথে সোডালাইমের (NaOH.CaO) মিশ্রণকে তীব্রভাবে উত্তপ্ত করলে অ্যালকেন উৎপন্ন হয়। এখানে সোডালাইমের তীব্র ক্ষার NaOH কার্বক্সিলিক এসিডের সোডিয়াম লবণের অণু থেকে CO2 কে সোডিয়াম কার্বনেট হিসেবে অপসারনের মাধ্যমে ডিকার্বক্সিলেশন ঘটিয়ে অ্যালকেন উৎপন্ন করে। এ বিক্রিয়ায় উৎপাদনে 1টি C পরমাণুর সংখ্যায় হ্রাস ঘটে। এ বিক্রিয়া বা পদ্ধতিকে অবরোহ পদ্ধতি বলে।
প্রশ্ন : সোডা লাইম কি? এর প্রস্ততি ও ব্যবহার লিখ। (Soda lime with it’s preparation and use)
উত্তরঃ
সোডালাইম:- গাঢ় কষ্টিক সোডা (NaOH) এবং চুনের (CaO) মিশ্রণকে সোডালাইম বলা হয়। এটি প্রধানত কষ্টিক সোডার কাজ করে।
প্রস্তুতিঃ চুন এর সাথে গাঢ়কষ্টিক সোডা দ্রবণ উত্তরুপে মিশিয়ে মিশ্রণ হতে উত্তাপের সাহায্যে পানি বিতাড়িত করে যে শুস্ক CaO এবং NaOH এর মিশ্রণ পাওয়া যায় তাকে সোডালাইম বলে।
ব্যবহার ও ব্যবহারে সুবিধা : এটি প্রধানত কষ্টিক সোডা কাজ করে। তবে-
(i) কষ্টিক সোডা অপেক্ষা এর ক্ষয়কারী ধর্ম কম
(ii) ইহা সহজে গলে না
(iii) পানি বাষ্প শোষন করে তরল হয় না
(iv) সছিদ্র বলে এর ছিদ্র দিয়ে উৎপন্ন গ্যাস সহজে নির্গত হতে পারে।
প্রশ্ন : টীকা লিখ: ডিকার্বক্সিলেশন (Decarboxylation)
উত্তর : সংজ্ঞা : যে বিক্রিয়ায় কোন কার্বক্সিলিক এসিড হতে অথবা, কার্বক্সিলিক এসিডের সোডিয়াম লবণ হতে কার্বক্সিল মূলককে কার্বন ডাই অক্সাইড হিসাবে অপসারিত করে কার্বনেট লবণে পরিণত করা হয় তাকে ডিকার্বক্সিলেশন বা কার্বক্সিল মূলকের অপসারণ বিক্রিয়া বলা হয়।
উদাহরণঃ ডিকার্বক্সিলেশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে জৈব এসিডের সোডিয়াম লবণ হতে সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন এবং অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন পাওয়া যায়। যেমন-
প্রশ্নঃ অ্যালকেন প্রস্তুতির দুইটি সাধারণ পদ্ধতি লিখ । (Common methods of preparing Alkane)
উত্তর : অ্যালকেনের শিল্পোৎপাদনের দুইটি পদ্ধতি নিম্নে দেওয়া হল:
(ক) উর্টজ বিক্রিয়ার সাহায্যে (Wurtz reaction): অ্যালকাইল হ্যালাইডের শুষ্ক ইথারীয় দ্রবণে ধাতব সোডিয়াম যোগ করে রিফ্লাক্স করলে উচ্চতর অ্যালকেন উৎপন্ন হয়। উচ্চতর অ্যালকেন উৎপাদনের এ বিক্রিয়াকে উদ্ভাবকের নামানুসারে উর্টজ বিক্রিয়া বলে। এ বিক্রিয়াকে আরোহ পদ্ধতি বল। কারণ, উৎপাদে কার্বন সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
2RX + 2Na → R- R+2NaX
উদাহরণ : মিথাইল আয়োডাইড থেকে এ পদ্ধতিতে ইথেন পাওয়া যায়।
2CH3l + 2Na→CH3 –CH3+2NaX
(খ) ক্লিমেনসেন বিজারণ (Clemmensen reduction): কার্বনাইল যৌগ যেমন অ্যালডিহাইড ও কিটোনকে জিংক অ্যামালগাম (Zn. Hg) ও গাঢ় HCl সহযোগে বিজারিত করলে কার্বনিল বা কার্বনাইল মূলকটি (C = 0) সরাসরি বিজারিত হয়ে মিথিলিন মূলক (-CH2-) এ পরিণত হয়ে সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন উৎপন্ন করে। এ বিজারণ প্রক্রিয়াকে আবিস্কারকের নামানুসারে ক্লিমেনসেন বিজারণ বলে। যেমন, ইথ্যান্যালকে জিংক অ্যামালগাম ও গাঢ় HCI দ্বারা বিজারিত করলে ইথেন উৎপন্ন হয়।
(গ) গ্রিগনার্ড বিকারক হতে (Grignard reagent):
গ্রিগনার্ড বিকারককে আর্দ্র বিশ্লেষণ করে অ্যালকেন পাওয়া যায়।
উদা:
(ঘ) অ্যালকিন এবং অ্যালকাইনের হাইড্রোজেনেশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে (Through the hydrogenation reaction of Alkene and alkyne):
অ্যালকেনের হাইড্রোজেনেশন বিক্রিয়া
অ্যালকিন (Alkene)
প্রশ্ন : অলেফিনস কি? (Olefins)
উত্তর : অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনসমূহের কার্বন শিকলে পাশাপাশি দুইটি কার্বন পরমাণু অন্তত একটি দ্বিবন্ধন অথবা একটি ত্রিবন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে। একটি দ্বিবন্ধন সংবলিত মুক্ত শিকল অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনকে অ্যালকিন বা অলেফিনস বলে । ল্যাটিন olefinis থেকে ‘অলেফিনস্’ নামের উৎপত্তি । অলেফিন্ শব্দের অর্থ তৈল উৎপন্নকারী। এ শ্রেণীর হাইড্রোকার্বনের নিম্নতর সদস্য ক্লোরিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তৈল জাতীয় ডাইক্লোরাইড গঠন করে। তাই অ্যালকিন শ্রেণীকে অলেফিনস বলা হয়।
CH2 = CH2. + Cl2→CH2Cl–CH2Cl
ইথিলিন ক্লোরাইড (তৈল সদৃশ)
প্রশ্ন: ইথিলিন বা ইথিনের পরীক্ষাগার প্রস্তুতি বর্ণনা কর। (Describe laboratory preparations of ethylene)
উত্তর : মূলনীতিঃ
পরীক্ষাগারে ইথানল (CH3CH2OH) কে অতিরিক্ত ঘন সালফিউরিক এসিডের (H2SO4) সাথে প্রায় ১৬০° C – ১৭০° C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে নিরুদন দ্বারা ইথিন (CH2=CH2) প্রস্তুত করা হয় । ঘন সালফিউরিক এসিড নিরুদক হিসেবে কাজ করে।
বিক্রিয়াটি নিম্নলিখিত দুধাপে সম্পন্ন হয়-
(i) প্রথমে ইথানল ১০০°C তাপমাত্রায় H2SO4 এর সাথে বিক্রিয়া করে ইথাইল হাইড্রোজেন সালফেট (CH3CH2SO4H) এবং পানি উৎপন্ন করে।
(ii) পরে ১৬৫°C তাপমাত্রায় CH3CH2-SO4H বিযোজিত হয়ে ইথিলিন বা ইথিন উৎপন্ন করে এবং H2SO4 পুন:উৎপাদিত হয়।
অ্যালকিনের একটি শিল্পোৎপাদন পদ্ধতি লিখ । (Industrial method of preparing alkene)
উত্তর: বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতির মাধ্যমে অ্যালকিনের শিল্পোৎপাদন করা যায়। নিম্নে এর একটি বর্ণনা করা হল:-
(i) অ্যালকোহলের প্রভাবকীয় নিরুদন দ্বারা:– প্রায় ৩৫০°C • ৪০০° তাপমাত্রায় অ্যালুমিনা Al2O3 গুড়ার উপর দিয়ে অ্যালকোহলের বাস্পকে চালনা করলে অ্যালকোহল থেকে এক অণু পানি অপসারিত হয়ে অ্যালকিন উৎপন্ন হয়।
সাধারণ বিক্রিয়া:
উদাহরণ-
প্রশ্নঃ অ্যালকিন প্রস্ততির দুইটি সাধারণ পদ্ধতি লিখ। (Two common methods of preparing Alkene)
উত্তরঃ
- অ্যালকাইল হ্যালাইড হতে (Alkyl Halide): অ্যালকাইল হ্যালাইডকে অ্যালকোহলীয় KOH দ্বারা উত্তপ্ত করা হলে অপসারণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে। অ্যালকিন পাওয়া যায়।
অ্যালকিনের রাসায়নিক বিক্রিয়া
(ii) ভিসিন্যাল- ডাই হ্যালাইড যৌগ হতে (vicinal Dihalide): ভিসিন্যাল ডাই হ্যালাইড অর্থাৎ, ১, ২ ডাই হ্যালো অ্যালকেনকে অ্যালকোহল জিংক চূর্ণের উপস্থিতিতে উত্তপ্ত করা হলে অ্যালকিন পাওয়া যায় ।