10 Minute School
Log in

সমাণুতা (Isomerism)

সমাণুতা (Isomerism)

প্রশ্ন : এনানশিওমার বা এনশিওমারিজম বলতে কী বুঝ? (Enantiomer)

উত্তর : অপ্রতিসম কার্বন সম্বলিত কোন যৌগ অণু এর দর্পন প্রতিবিম্ব পরস্পর সমাপতিত না হলে এরূপ দুই ভিন্ন গঠনের অণু আলোক সক্রিয় হয়। যদি এদের আলোক সক্রিয়তার মাত্রার মান সমান হয় কিন্তু আবর্তনের দিক ভিন্ন হয় তাদেরকে পরস্পরের এনানশিওমার বা এন্টিপড বা অ্যান্টিমার বলে এবং এই ধর্মকে এনানশিওমারিজম বলে। অর্থাৎ দুটি আলোক সক্রিয় সমাণুর এক সমতলীয় আলোর প্রতি, আবর্তনের মান সমান কিন্তু দিক বিপরীত হলে তাদেরকে পরস্পরের এনানশিওমার বলে) 

যেমন- d ল্যাকটিক এসিড এর আপেক্ষিক আবর্তনের মান +2.24° 

এবং l ল্যাকটিক এসিড এর আপেক্ষিক আবর্তনের মান – 2.24°

তাই এরা পরস্পরের এনানশিওমার হবে। 

প্রশ্ন: রেসিমিক মিশ্রণ বলতে কী বোঝ? (Racemic Mixture)

উত্তর : দুটি এনানশিওমারের সমমোলার বা সমআনবিক মিশ্রণ আলোক নিষ্ক্রিয় হয় এবং এ মিশ্রণকে রেসিমিক মিশ্রণ বা d, 1/ +,- মিশ্রণ বলে।

যেমন- একই ঘনমাত্রার সমপরিমাণ ল্যাকটিক এসিডের d সমাণু ও l সমাণুর মিশ্রন এর মধ্যে দিয়ে একসমতলীয় আলো চালনা করা হলে d সমাণু একসমতলীয় আলোক দিককে যতটুকু ডানে ঘুরায় l সমাণু ততটুকু বামে ঘুরায় বলে এদের মিশ্রণ পরস্পরের বিপরীত ঘূর্ণন ক্রিয়াকে প্রশমিত করে দেয়। তাই এ ধরনের মিশ্রণ আলোক নিষ্ক্রিয় হয়।

[d-ল্যাকটিক এসিড মাংসপেশীতে পাওয়া যায় এবং l-ল্যাকটিক এসিড টক দই এ পাওয়া যায়] A এর রেসিমিক মিশ্রণ রাসায়নিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়।

প্রশ্ন: এক সমতলীয় আলোর আপেক্ষিক আবর্তন বলতে কী বোঝ? 

উত্তর : একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পালোরিমিটার নলে রক্ষিত আলোক সক্রিয় যৌগের প্রতি ঘন সে.মি. দ্রবণে এর ঘনমাত্রা 1gm হলে এবং ওই দ্রবণের ভিতর দিয়ে এক সমতলীয় আলো এক dm দৈর্ঘ্য প্রতিসরিত হওয়ার ফলে যে পরিমাণ ঘূর্ণন তৈরি হয় তাকে ওই যৌগের আপেক্ষিক আবর্তন বলে ।

Isomerism

প্রশ্ন: ডায়াস্টেরিওমার বলতে কী বোঝ?  (Diastereomer)

উত্তরঃ দুটি অসদৃশ অপ্রতিসম বা কাইরাল C যুক্ত আলোক সক্রিয় যৌগ যদি পরস্পরের দর্পন প্রতিবিম্বের মত আচরণ না করে তবে তাদেরকে ডায়াস্টেরিওমার বলে। দুটি ডায়াস্টেরিওমার এক সমতলীয় আলার তলকে একই দিকে তবে ভিন্ন মাত্রায় আবর্তন করে। তাই রাত ডায়াস্টেরিওমারের সমমোলার মিশ্রণ রেসিমিক মিশ্রণ তৈরি করে না। 

যেমন- 3- ক্লোরো বিউটানল-2 এবং 2-ব্রোমো-3-হাইড্রক্সি বিউটানয়িক এসিডের মধ্যে ২টি করে অসদৃশ কাইরাল কার্বন থাকায় এর ৪টি আলোক সক্রিয় সমাণু আছে। যেমন-

কোন যৌগে n সংখ্যক অপ্রতিসম কার্বন থাকলে এবং প্রতিসম তল না থাকলে আলোক সক্রিয় সমাণু হয় 2n. n জোড় সংখ্যক এবং অণুতে প্রতিসম তল থাকলে আলোক সক্রিয় সমাণু হবে 2n-1  এবং মেসো যৌগ হবে  2n-22 

কোন আণবিক সংকেত থেকে সমাণু নির্ণয়ঃ  

১)  অ্যালকেনের সাথে O সাথে অ্যালকোহল এবং ইথার সমাণু হয়। যেমন-  C4H10O

C3H8O→aCH3-O-C2H5, b CH3-CH-CH3, C CH3-CH2-CH2-OH

২)  অ্যলকিনের সাথে অক্সিজেনের হলে অ্যালডিহাইডযুক্ত কিটোন এবং দ্বিন্ধনযুক্ত অ্যালকোহল হবে। যেমন- C3H6O.

৩) অ্যালকিনের সাথে দুটি O2 পরমাণু থাকলে সেক্ষেত্রে কার্বক্সিলিক এসিড OH-  মূলক যুক্ত অ্যালডিহাইড পাওয়া যায়। যেমন- C4H8O2.

৪)  দ্বিবন্ধনযুক্ত যৌগসমূহ সিস-ট্রান্স সমাণুতা দেখায়। 

যেমন- CH3-CH=CH-CH3.

৫)  কাইরাল C যুক্ত যৌগসমূহ আলোক সক্রিয় সমাণুতা দেখায়। 

যেমন-CH3-CHOH-COOH.

৬)  প্রতিস্থাপিত চাক্রিক যৌগ সিস-ট্রান্স সমাণুতা দেখায়-

সিস-1,3—ডাই মিথাইল সাইক্লোপেন্টেন

ট্রান্স সমাণুর গলনাংক বেশি হলেও সিস সমাণুর স্ফুটনাংক বেশি কেন? (The melting point of Trans isomerism is higher and boiling point of Cis isomerism is higher)

উত্তরঃ একটি আণবিক সংকেত বি তথা আণবিক ভরবিশিষ্ট ২টি যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন: গলনাঙ্ক নির্ভর করে প্রতিসমতার উপর। গঠন যত প্রতিসম হবে এর- অণুগুলো তত বেশি সন্নিবেশিত হয়ে কঠিন কাঠামো গঠন করে। এতে কাঠামোটি সুদৃঢ় হয় ও ভাঙ্গতে বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। সিস অপেক্ষা ট্রান্স সমাণুর প্রতিসমতা বেশি তাই, ট্রান্স সমাণুর কাঠামো অধিক শক্তিশালী হওয়ায় ট্রান্স সমাণুর গলনাংক বেশি হয়। 

অপরদিকে স্ফুটনাংক নির্ভর করে পোলারিটির উপর। পোলারিটি বৃদ্ধি পেলে সমযোজী অণুতে বিস্তারণ বল বৃদ্ধির কারণে অণুমধ্যস্থ আকর্ষণ বল বৃদ্ধি পায়। সিস গঠনে বড় মূলক ২টি একই দিকে থাকায় এরা কাছাকাছি থাকে। ফলে মূলকগুলোর মধ্যে সহজে পোলারায়ন ঘটে। এতে সিস সমাণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ বল বাড়ে। আয়নিক ধর্ম বৃদ্ধির কারনে সিস সমাণুর স্ফুটনাংক বেশি হত। কিন্তু, ট্রান্স গঠনে একই বন্ধন বিপরীত দিকে থাকায় এরা একটি অপরটির পোলারিটিকে- নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে ডাইপোল মোমেন্টের মান শূন্য হয় অর্থাৎ, ট্রান্স সমাণুও পোলারিটি কম হয় বলে, এর স্ফুটনাংকের মান কম হয় ।

অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন

(Aromatic hydrocarbons)

হাকেল নিয়ম কি? (Huckel’s rule)

উত্তরঃ  যে সব বলয়াকার, সমতলীয়, জৈব যৌগের অণুতে (4n + 2) সংখ্যক সঞ্চরণশীল পাই ইলেকট্রন বা সঞ্চারণশীল ইলেকট্রন থাকে, তাদেরকে অ্যারোম্যাটিক যৌগ বলে। এখানে, n = 0, 1, 2, 3………… ইত্যাদি হতে পারে। সঞ্চারণশীল ইলেকট্রনের এ সংখ্যা ভিত্তিক অ্যারোম্যাটিক যৌগের সংজ্ঞাকে হাকেল নিয়ম বলে। (4n + 2) এর মধ্যে n এর মান 0, 1, 2, 3 বসিয়ে যথাক্রমে 2. 6. 10. 14 ইত্যাদি পাওয়া যায়। তাই 2, 6 10, 4 কে হাকেল সংখ্যা বলে। যেমন বেনজিন একটি অ্যারোম্যাটিক যৌগ। কারণ এটি সমতলীয় ও চক্রাকার যৌগ।

এখানে 4n + 2 = 6

         n = 1 

যেহেতু এখানে, n এর মান একটি পূর্ণ সংখ্যা এবং 6 একটি হাকেল সংখ্যা তাই বেনজিন একটি অ্যারোম্যাটিক যৌগ। বেনজিনে সব C -C বন্ধন দৈৰ্ঘ্য 0.139 nm, সব C-H বন্ধন দৈর্ঘ্য 0.109nm এবং সব বন্ধন কোন 120° ।

ন্যাপথলিন

4n + 2 = 10

n = 2 

আনথ্রাসিন

4n + 2 =14

n =3

সাইক্লোপ্রোপিনাইল ক্যাটায়ন

4n + 2 =2

n =0

পিরিডিন

4n + 2 =6

n =1 

পাইরল

4n + 2 =6

n =1 

ফিউরান

4n + 2 =6

n =1 

থায়োফিন

4n + 2 =6

n =1 

1,3 সাইক্লোবিউটাডাইন আরোম্যাটিক নয়।

4n + 2 =4            কিন্তু 4n =4 বা  n =1

n =12 

যেমন, সাইক্লোপ্রোপিনাইল অ্যানায়ন 

1,3,5,7 সাইক্লোঅক্টাট্রেট্রাইন

4n + 2 =8

n =32

এটি সমতলীয় নয় এবং 4n + 2 মানে না তাই এরা নন আরোম্যাটিক।

এক্ষেত্রে, 

4n + 2 =4

n =12 

এরা এন্টি অ্যারোম্যাটিক যৌগ কারণ 4n নিয়ম মেনে চলে

প্রশ্ন:- অ্যারোম্যাটিক যৌগের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর। (Characteristics of aromatic compounds)

বা, টীকা লিখ- অ্যারোম্যাটিসিটি (Aromaticity)

উত্তর:- অ্যারোম্যাটিক যৌগের বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্মকে অ্যারোম্যাটিসিটি বলা হয় । অ্যারোম্যাটিক যৌগসমূহ নিম্নলিখিত ধর্ম প্রদর্শন করে-

১. অ্যারোম্যাটিক যৌগের অণু চক্রিক ও সমতলীয়

২. হাকেল নিয়মানুসারে অ্যারোম্যাটিক যৌগের অণুতে (4n+2) সংখ্যক সঞ্চরণশীল ইলেকট্রন আছে । 

৩. অ্যারোম্যাটিক যৌগের অণু যেমন বেনজিন অণু দ্বিবন্ধনযুক্ত অসম্পৃক্ত যৌগ হওয়া সত্ত্বেও এটি অ্যালিফ্যাটিক অসম্পৃক্ত যৌগ যেমন- ইথিনের এর ন্যায় পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের গোলাপী বর্ণের দ্রবণ বা ব্রোমিনের লাল বর্ণের দ্রবণকে বর্ণহীন করতে পারে না। অনুরনন ধারণার উপর ভিত্তি করে এর কারণ হিসেবে বলা যায় বেনজিনে অ্যালকিন বন্ধন অনুপস্থিত। তাই অ্যারোম্যাটিক যৌগের বা বেনজিনের অসম্পৃক্ততা এক বিশেষ ধরনের। ইথিন বা ইথাইনের মত নয়। 

৪. অসম্পৃক্ত যৌগ হওয়া সত্ত্বেও বেনজিনে বা অ্যারোম্যাটিক যৌগে সংযোজনের পরিবর্তে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বেশী ঘটে। কারণ সংযোজনের ফলে বেনজিনের চাক্রিক ধারা বিনষ্ট হয়। কিন্তু প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় তা ঘটে না। তাই সুস্থিত চাক্রিক ধারা অক্ষুন্ন রাখার জন্য অ্যারোম্যাটিক যৌগসমূহ সহজে ইলেকট্রোফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। অপরদিকে অ্যালকেন প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া দেখায়, অর্থাৎ অ্যারোম্যাটিক যৌগসমূহ কখনও অ্যালকিন বা কখনও অ্যালকেনের মত আচরণ করে।

৫. অ্যারোম্যাটিক বেনজিন বলয়ের সাথে যুক্ত মূলকের বিক্রিয়া এবং অ্যালিফ্যাটিক কার্বন শিকলের সাথে যুক্ত মূলকের বিক্রিয়া একই ধরনের নয়।

৬. অ্যারোম্যাটিক তথা বেনজিনের সঞ্চরণশীল ইলেকট্রনসমূহের অনুরননজনিত স্থিতিশীলতা আছে।

প্রশ্ন: বেনজিনের অসম্পৃক্ততা এক বিশেষ ধরনের- ব্যাখ্যা কর। (The unsaturation of benzene is a special kind)

উত্তর: নিকেল প্রভাবকের উপস্থিতিতে বেনজিনের উপর 200°C তাপমাত্রায় H2গ্যাস চালনা করা হলে এক অণু বেনজিন তিন H2অণু এর সাথে বিক্রিয়া করে সাইক্লোহেক্সেন (C6H12)উৎপন্ন করে।

এই বিক্রিয়া বেনজিনে তিনটি দ্বিবন্ধনের উপস্থিতি প্রমাণ করে। কাজেই দ্বি-বন্ধন বিশিষ্ট অসম্পৃক্ত অ্যালিফ্যাটিক যৌগ। যেমন- ইথিলিনের ধর্ম এবং দ্বি-বন্ধন বিশিষ্ট অ্যারোমেটিক যৌগের ধর্ম প্রায় একই হতে পারে। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, বেনজিন ব্রোমিনের লালবর্ণের দ্রবণ বা পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের গোলাপী বর্ণের দ্রবণকে বর্ণহীন করতে পারে না অর্থাৎ অসম্পৃক্ততার পরীক্ষা দেখায় না।

বেনজিন H2 এবং Cl2 এর সাথে সংযোজন বিক্রিয়া প্রদর্শন করলেও HBr বা HCl এর সাথে সংযোজন বিক্রিয়া প্রদর্শন করে না। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, অনুরণন ধারনা মতে বেনজিনে অ্যালকিন বা অলিফিন বন্ধন অনুপস্থিত। সংযোজন বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করলে অ্যারোম্যাটিক ধর্ম বিনষ্ট হয়। প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বেনজিনের চাক্রিক ধারা অক্ষুন্ন থাকে বলে এটি সহজে ইলেক্ট্রোফিলিক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। কিন্তু অ্যালিফ্যাটিক অসম্পৃক্ত যৌগসমূহ প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না, সম্পৃক্ত যৌগসমূহ শুধুমাত্র প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া দেখায়। যেমন-

কাজেই বেনজিন কখনও অসম্পৃক্ত যৌগের ন্যায় সংযোজন এবং কখনও সম্পৃক্ত যৌগের ন্যায় প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া প্রদর্শন করে। সুতরাং এ আলোচনা হতে বলা যায় বেনজিনের অসম্পৃক্ততা এক বিশেষ ধরনের। ইথিন বা ইথাইন এর মত নয়। 

অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন

(Aromatic hydrocarbons)

প্রশ্ন: অ্যারোম্যাটিক যৌগে নিউক্লিয়াস ও পার্শ্বশিকল বলতে কি বুঝ? (Nucleus and side chain in aromatic compound)

উত্তর: প্রতিস্থাপিত বেনজিন অণুর দুটি অংশের একটিকে অ্যারোম্যাটিক নিউক্লিয়াস এবং অপরটিকে পার্শ্বশিকল বলে। এদের বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হল-

অ্যারোম্যাটিক নিউক্লিয়াস (aromatic nucleus): প্রতিস্থাপিত বেনিজন অণুর একান্তর দ্বি-বন্ধনযুক্ত ছয় কার্বন পরমাণু বিশিষ্ট বেনজিন বলয়কে অ্যারোম্যাটিক নিউক্লিয়াস বলা হয়। যৌগটির এই অংশে অ্যারোম্যাটিক যৌগের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।

পার্শ্বশিকল (Side Chain): প্রতিস্থাপিত বেনজিন অণুর বেনজিন চক্রের সাথে যুক্ত কার্বন পরমাণু বিশিষ্ট অ্যালিফেটিক মূলক। যথা- মিথাইল (-CH3), অ্যালডিহাইড (-CHO) প্রভৃতিকে পার্শ্বশিকল বলা হয়। যৌগটির এই অংশ অ্যালিফেটিক যৌগের ধর্ম প্রদর্শন করে।

উদাহরণঃ টলুইন 

উদাহরণঃ টলুইন 

প্রশ্ন: বেনজিন প্রস্তুতির সাধারণ পদ্ধতিগুলো লিখ। (General methods of preparation of benzene)

উত্তর: 

১ম পদ্ধতি (1st method): ফেনলকে জিংক চূর্ণ এর সাথে উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে জিংক ফেনলকে বিজারিত করে বেনজিন পরিণত করে ।

২য় পদ্ধতি (2nd method): সোডিয়াম বেনজোয়েটকে সোডা লাইমের সাথে উত্তপ্ত করলে ডি-কার্বক্সিলেশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বেনজিন উৎপন্ন হয়।

৩য় পদ্ধতি (3rd method): বেনজয়িক এসিড থেকে : বেনজয়িক এসিডের সোডিয়াম লবণ তথা সোডিয়াম বেনজোয়েটকে সোডা লাইমের সাথে উত্তপ্ত করলে ডি-কার্বোক্সিলেশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বেনজিন তৈরি হয়।

৪র্থ পদ্ধতি (4th method): ইথাইনের (অ্যাসিটিলিনের) পলিমারকরণ দ্বারা : অ্যাসিটিলিনকে 400° – 500° তাপমাত্রায় উত্তপ্ত লাল তপ্ত লোহার নলের ভেতর দিয়ে চালনা করলে অ্যাসিটিলিনের 3টি করে অণু পরস্পর যুক্ত হয়ে বেনজিন উৎপন্ন করে। এখানে বেনজিন অ্যাসিটিলিনের ট্রাইমার।

3HC CH বা, 3C2H2

৫ম পদ্ধতি (5th method): বেনজিন ডায়াজোনিয়াম ক্লোরাইড থেকে : বেনজিন ডায়াজোনিয়াম ক্লোরাইড ও হাইপোফসফরাস এসিডের বিক্রিয়া ঘটালে বেনজিন তৈরি হয়।

৬ষ্ঠ পদ্ধতি (6th method): বেনজিন ডায়াজোনিয়াম ক্লোরাইড বেনজিন সালফোনিক এসিড থেকে: বেনজিন সালফোনিক এসিড স্ফুটনাঙ্ক তাপমাত্রায় ও উপযুক্ত চাপে লঘু খনিজ এসিডের উপস্থিতিতে আর্দ্রবিশ্লেষিত হয়ে বেনজিনে পরিণত হয়। এ বিক্রিয়ায় সালফোনিক মূলক (-SO3H) অপসারণ ঘটে বলে একে ডিসালফোনেশন বলে।

৭ম পদ্ধতি (7th method): গ্রিগনার্ড বিকারক যেমন, ফিনাইল ম্যাগনেসিয়াম ব্রোমাইড পানির সাথে বিক্রিয়ায় বেনজিন উৎপন্ন করে।

৮ম পদ্ধতি (8th method): Pt গুঁড়া ও AL2O3 এর উপস্থিতিতে উচ্চচাপে টলুইন হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে বেনজিন উৎপন্ন করে।

প্রশ্ন: মুক্ত শিকল হাইড্রোকার্বন হতে অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন প্রস্তুত কর: (Free chain hydrocarbons to Aromatic hydrocarbons)

i. n-হেক্সেন থেকে বেনজিন : n-হেক্সেনকে Pt, Al গুঁড়া মিশ্রিত V2O5 এর উপস্থিতিতে 15 atm চাপে 500°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে প্রথমে সাইক্লোহেক্সেন উৎপন্ন হয়। 

(ii) ইথাইন থেকে বেনজিন : 400°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত লৌহ নলের মধ্য দিয়ে ইথাইন গ্যাস প্রবাহিত করলে ইথাইনের পলিমারকরণ

ঘটে এবং বেনজিন উৎপন্ন হয় যা একটি অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন ।

অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন

(Aromatic hydrocarbons)

প্রশ্ন: C6H4Cl2,C6H4NO22,C6H4(CH3)2,C6H4(CH3)Br,C6H3(CH3)3,C6H3(CH3)2NO2,

C6H4(NO2)CH3 

যৌগগুলোর সম্ভাব্য সমাণুগুলোর নাম ও সংকেত লিখ । 

উত্তর:   

ক) C6H4Cl2 এর সম্ভাব্য সমাণুগুলো নিম্নরূপঃ

১,২- ডাই ক্লোরো বেনজিন (অর্থো- ডাই ক্লোরো বেনজিন )

১,৩- ডাই ক্লোরো বেনজিন (মেটা- ডাই ক্লোরো বেনজিন )

১,৪- ডাই ক্লোরো বেনজিন (প্যারা- ডাই ক্লোরো বেনজিন )

খ) C6H4NO22 এর সম্ভাব্য সমাণুগুলো নিম্নরূপঃ

১,২- ডাই নাইট্রো বেনজিন

১,৩- ডাই নাইট্রো বেনজিন

১,৪- ডাই নাইট্রো বেনজিন

গ) C6H4(CH3)2 এর সম্ভাব্য সমাণুগুলো নিম্নরূপঃ

১,২- ডাই মিথাইল বেনজিন

(০-জাইলিন)

১,৩- ডাই মিথাইল বেনজিন

(m-জাইলিন)

১,৪- ডাই মিথাইল বেনজিন

(p-জাইলিন)

প্রশ্ন: তিনটি বিক্রিয়ার সাহায্যে দেখাও যে, বেনজিন অণুতে তিনটি দ্বিবন্ধন আছে । (Show by the three reactions that the benzene molecule has three bindings)

উত্তর: 

(i) H2 সংযোজন :

হ্যালোজেন সংযোজন :

ওজোনালোইসিস :

Isomerism

যেহেতু প্রত্যেকটি বিক্রিয়ায় এক অণু বেনজিন তিন অণু H2,Cl2,O3 এর সাথে বিক্রিয়া করেছে তাই বলা যায় একটি বেনজিন অণুতে তিনটি দ্বি-বন্ধন আছে। 

প্রশ্ন: বেনজিনকে অ্যাসটিলিনের পলিমার বলা হয় কেন? (Benzene is called acetylene polymer)

উত্তর: অ্যাসিটিলিন গ্যাসকে 400° – 500°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত লৌহ নলের ভিতর প্রবাহিত করলে বেনজিন (C6H6) উৎপন্ন হয়। কিন্তু জৈব Ni যৌগ প্রভাবকের ক্ষেত্রে 70°C তাপমাত্রার প্রয়োজন।

উপরোক্ত বিক্রিয়া লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে

(i) এসিটিলিন (C2H2) নামক যৌগের তিনটি সরল ও ক্ষুদ্র অণু উচ্চ তাপে এদের কোন অংশের অপসারণ ছাড়া পরস্পর যুক্ত হয়ে বৃহত্তর যৌগ বেনজিনের একটি জটিল অণু উৎপন্ন করে। 

(ii) এসিটিলিন ও বেনজিনের শতকরা সংযুক্তি (C = 92.4%, H = 7.6%) একই এবং স্থূল সংকেত একই (CH)।

(iii) বেনজিনের আণবিক ভর (৭৮) এসিটিলিনের আণবিক ভরের (২৬) গুণিতক (৩ গুণ)। উপরোক্ত শর্তসমূহ পলিমার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। তাই এখানে এসিটিলিন হলো মনোমার এবং বেনজিন হলো এসিটিলিনের পলিমার। উল্লেখ্য যে, এ বিক্রিয়ার সাহায্যে অ্যালিফ্যাটিক যৌগ হতে অ্যারোমেটিক যৌগ পাওয়া যায় তাই একে অ্যারোম্যাটিকরণ বিক্রিয়াও বলে।

প্রশ্ন: টলুইন সংশ্লেষণের দুইটি পদ্ধতি সমীকরনসহ লিখ। (Equations of two methods of toluene synthesis)

উত্তর: নিম্নলিখিত দুটি পদ্ধতি দ্বারা টলুইন প্রস্তুত করা যায়-

(ক) ফ্রিডেল ক্রাফট বিক্রিয়া দ্বারা (Friedel Craft reaction): অনার্দ্র অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড (AlCl3) প্রভাবকের উপস্থিতিতে বেনজিনের সাথে মিথাইল ক্লোরাইড (CH3Cl) এর বিক্রিয়ায় টলুইন উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়ায় বেনজিনের একটি হাইড্রোজেন পরমাণু এর মিথাইল (-CH3) মূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।

(খ) উর্টজ-ফিটিগ বিক্রিয়া দ্বারা (Ortz-Fitig reaction): শুষ্ক ইথারে দ্রবীভূত ব্রোমোবেনজিন এবং মিথাইল আয়োডাইড (CH3I) মিশ্রণের ধাতব সোডিয়ামের বিক্রিয়ার টলুইন উৎপন্ন হয়, সাথে সোডিয়াম ব্রোমাইড (NaBr) এবং সোডিয়াম আয়োডাইড (Nal) ও পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ব্রোমোবেনজিনের ব্রোমিন পরমাণু CH3I এর মিথাইল (-CH3) মূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।

প্রশ্ন: সাধারণ তাপমাত্রায় হ্যালোজেন বাহকের উপস্থিতিতে টলুইন এবং ক্লোরিন এর বিক্রিয়া কি নিউক্লিয়াসের প্রতিস্থাপন ঘটে?

উত্তর: সাধারণ তাপমাত্রায় হ্যালোজেন বাহক (যেমন- Fe, l2, FeCl3) প্রভৃতির উপস্থিতিতে টলুইনের ভিতর ক্লোরিন চালনা করা হলে ক্লোরিন পরমাণু বেনজিন নিউক্লিয়াসের হাইড্রোজেন পরমাণুকে প্রতিস্থাপিত করে অর্থো-ক্লোরো টলুইন এবং প্যারা ক্লোরোটলুইন ও HCl গ্যাস উৎপন্ন হয়।

অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন

(Aromatic hydrocarbons)

প্রশ্ন: ফুটন্ত টলুইনে ক্লোরিন চালনা করা হলে কি ঘটে? (পার্শ্বশিকলে প্রতিস্থাপন) (Conducting chlorine in boiling toluene (Replacement in side chain))

উত্তর : হ্যালোজেন বাহকের অনুপস্থিতিতে কিন্তু উজ্জ্বল সূর্যালোকের উপস্থিতিতে বা ফুটন্ত টলুইনে ক্লোরিন গ্যাস করা হলে টলুইনের পার্শ্ব শিকল মিথাইল মূলকের তিনটি H পরমাণুর তিনটি একটির পর একটি ক্লোরিন পরমাণু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যথাক্রমে বেনজাইল ক্লোরাইড, বেনজাল ক্লোরাইড, বেনজোট্রাইক্লোরাইড এবং প্রতিক্ষেত্রে HCl গ্যাস উৎপন্ন হয়।

প্রশ্ন: ক্লোরিনের সাথে বিভিন্ন অবস্থার টলুইনের বিক্রিয়ায় কি ঘটে? (Reactions of toluene under different conditions with chlorine)

উত্তর: অবস্থাভেদে টলুইন ক্লোরিনের সাথে নিম্নোক্ত দু’ভাগে বিক্রিয়া করে-

(i) নিউক্লিয়াসে প্রতিস্থাপন : ১নং বিক্রিয়া লিখতে হবে।

(ii) পার্শ্ব শিকল প্রতিস্থাপন : ২নং বিক্রিয়া লিখতে হবে। 

প্রশ্ন: টলুইন হতে কিরূপ বেনজয়িক এসিড পাওয়া যায়? (What kind of benzoic acid is found in toluene?)

উত্তর: টলুইনকে তীব্র জারক যেমন ফুটন্ত লঘু নাইট্রিক এসিড বা H2SO4 যুক্ত K2Cr2O7 দ্বারা জারিত করা হলে টলুইনের পার্শ্বশিকলে মিথাইল (-CH3) মূলক তীব্র জারিত হয়ে কার্বক্সিল (-COOH) মূলকে পরিণত হয়ে বেনজয়িক এসিড এবং পানি উৎপন্ন হয়।

প্রশ্ন: টলুইন হতে কিভাবে বেনজালডিহাইড পাওয়া যায়? (How to get benzaldehyde from toluene)

উত্তর : মৃদু জারক যেমন কার্বন ডাই সালফাইডে (CS2) দ্রবীভূত ক্রোমিল ক্লোরাইড (CrO2Cl2)  দ্বারা জারিত করা হলে টলুইনের পার্শ্বশিকলে (-CH3) মূলক লঘু জারিত হয়ে অ্যালডিহাইড মূলকে (-CHO) পরিণত হয় ফলে বেনজালডিহাইড ও পানি উৎপন্ন হয়। এ বিক্রিয়াকে ইটার্ড বিক্রিয়া বলে।

প্রশ্ন: টলুইন হতে কিভাবে জাইলিন পাওয়া যায়? (How to get xylene to be toluene)

উত্তর: অনার্দ্র AlCl3 এর উপস্থিতিতে টলুইন ও মিথাইল আয়োডাইড বিক্রিয়া করে অর্থো জাইলিন এবং প্যারা জাইলিন উৎপন্ন হয়। 

প্রশ্ন: টলুইনের নাইট্রেশন করলে কি ঘটে? বা টলুইন হতে TNT। (What happens when nitration of toluene? Or TNT to toluene)

উত্তর: গাঢ় H2SO4 এর উপস্থিতিতে গাঢ় HNO3 এর সাথে সাধারণ তাপমাত্রায় টলুইনের বিক্রিয়ায় অর্থো-নাইট্রো টলুইন ও প্যারানাইট্রো টলুইন ও পানি উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন মিশ্রণকে উচ্চ তাপমাত্রায় পুনরায় নাইট্রেশন করলে TNT    

প্রশ্ন:- টলুইন হতে বেনজিন কিরূপে পাওয়া যায়? (How is benzene obtained from toluene?)

উত্তর:

বেনজিন এবং টলুইনের পারস্পরিক রূপান্তর লিখ