10 Minute School
Log in

কৌণিক ভরবেগ | Angular Momentum

সংজ্ঞা :

ঘূর্ণনরত কোনো বস্তুকণার ব্যাসার্ধ ভেক্টররৈখিক ভরবেগের ভেক্টর গুণফলকে কৌণিক ভরবেগ (Angular Momentum) বলে।

 

angular-momentum

কৌণিক ভরবেগ চিত্র

ব্যাখ্যা :

মনে করি  𝑟  =ঘূর্ণন কেন্দ্রের সাপেক্ষে কোনো বস্তুকণার ব্যাসার্ধ ভেক্টর এবং  𝑃 = বস্তুর রৈখিক ভরবেগ। অতএব, সংজ্ঞানুসারে বস্তুটির কৌণিক ভরবেগ 𝐿 = 𝑟 × 𝑃 

এটি একটি ভেক্টর রাশি।

মান ও দিক :

কৌণিক ভরবেগের মান, 𝐿 = 𝑟𝑃𝑠𝑖𝑛𝜃

এখানে 𝜃 হচ্ছে  𝑟  ও  𝑃  এর মধ্যবর্তী কোণ [চিত্র]। ঘূর্ণন কেন্দ্র হতে ভরবেগের ক্রিয়ারেখার লম্ব দূরত্ব হচ্ছে 𝑟𝑠𝑖𝑛𝜃 । অতএব, কোনো বস্তুকণার ভরবেগ ও ঘূর্ণন কেন্দ্র হতে ভরবেগের ক্রিয়া রেখার লম্ব দূরত্বের গূণফল কৌণিক ভরবেগের মান নির্দেশ করে।

 𝑟  ও  𝑃  যে তলে অবস্থিত  𝐿  এর দিক হবে ঐ তলের লম্ব বরাবর। ক্রস গুণনের নিয়ম দ্বারা  𝐿 -এর দিক নির্ধারিত হবে।

অনুসিদ্ধান্ত:

কণাটি বৃত্তাকার পথে বৃত্তের কেন্দ্রের সাপেক্ষে গতিশীল হলে,  𝑟  ও  𝑃  এর মধ্যবর্তী কোণ 𝜃 = 90°। সেক্ষেত্রে,

L = r P \sin \theta = r(mv) = mr(r \omega) = m r^{2} \omega

কৌণিক ভরবেগ (Angular Momentum)

একক ও মাত্রা সমীকরণ :

এম. কে. এস. ও এস. আই. পদ্ধতিতে কৌণিক ভরবেগের একক হচ্ছে  kg m^{2} s^{-1} এবং মাত্রা সমীকরণ

[L] = [ ভরবেগ \times দূরত্ব ] = [MLT^{-1}L] = [ML^{2}T^{-1}]

কৌণিক ভরবেগ এবং কৌণিক বেগের মধ্যে সম্পর্ক (Relation between angular momentum and angular velocity)

মনে করি একটি বস্তু 𝜔 কৌণিক বেগে একটি অক্ষের চারিদিকে ঘুরছে। বস্তুটি অনেকগুলো বস্তুকণার সমষ্টি হলে আমরা লিখতে পারি,

[এখানে  l_1 , l_2 , \cdot \cdot \cdot , l_n পরস্পর সমান্তরাল ]

L= l_1 + l_2 + \cdot \cdot \cdot + l_n L= r_1 P_1 + r_2 P_2 + \cdot \cdot \cdot + r_n P_n

= r_1 m_1 v_1 + r_2 m_2 v_2 + \cdot \cdot \cdot + r_n m_n v_n
= r_1 m_1 \omega r_1 + r_2 m_2 \omega r_2 + \cdot \cdot \cdot

= m_1 r_1^{2} + m_2 r_2^{2} + \cdot \cdot \cdot = \sum m r^{2} =\omega \sum m r^{2} = I \omega

অর্থাৎ,  L = L = I \omega

কৌণিক ভরবেগ সংক্রান্ত রাশিমালা (Terms Related to Angular Momentum)

কৌণিক সরণ (Angular displacement)

মনে করি, এই বইয়ের পাতার মতো যেকোনো একটি সমতলের উপর একটি কণা কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু 𝑂 এর চারিদিকে বৃত্ত পথে ঘুরছে। এখানে ঘূর্ণাক্ষ বৃত্তের কেন্দ্র 𝑂 বিন্দু দিয়ে যাবে এবং বৃত্তের তলের সঙ্গে লম্ব হবে। কোণকে কণার কৌণিক সরণ (angular displacement) বলে। 𝑂𝑃 ব্যাসার্ধ ভেক্টর।

সংজ্ঞা : বৃত্তীয় গতিতে সচল কণার ব্যাসার্ধ ভেক্টর কোনো নির্দিষ্ট সময়ের অবকাশে যে কোণে সরে যায়, তাকে ঐ সময়ের অবকাশে কণাটির কণাটির কৌণিক সরণ(Angular displacement) বলে।

রেডিয়ান এককে প্রকাশ করলে কৌণিক সরণ 𝜃 এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বৃত্তের চাপ 𝑠-এর সম্পর্ক খুবই সরল হয়।

বৃত্তের ব্যাসার্ধ r হলে লেখা যায়, \theta = \frac{s}{r}  

কৌণিক বেগ (Angular Velocity)

রৈখিক গতির মতো কৌণিক গতিও সম বা অসম (ত্বরিত) হতে পারে। কৌণিক গতি অসম হলে কৌণিক সরণ এবং অতিক্রান্ত সময়ের অনুপাতকে কণার গড় কৌণিক বেগ (average angular velocity) বলে।

একে 𝜔 অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কৌণিক সরণের মতো একই রীতি এখানে অনুসরণ করা হয়।

 

angular-velocity

 

অতি ক্ষুদ্র সময়ের অবকাশ Δ𝑡 তে কণার সরণ Δ𝜃 হলে [চিত্র] ঐ সময়ের অবকাশে কণার গড় কৌণিক বেগ হবে।

কৌণিক বেগের মান স্থির থাকলে বৃত্তীয় গতিকে সমবৃত্তীয় গতি(uniform circular motion) বলে।

সমবৃত্তীয় গতির ক্ষেত্র t সময়ে  কৌণিক সরণ 𝜃 হলে কৌণিক বেগের মান হয় \omega = \frac{\theta}{t}   অথবা 𝜃 = 𝜔𝑡 

এই সমীকরণটি সমরৈখিক গতির সমীকরণ 𝑠 = 𝑣𝑡 এর অনুরূপ।

একক : সাধারণত কৌণিক বেগকে রেডিয়ান/সেকেন্ড ( 𝑟𝑎𝑑𝑖𝑎𝑛/sec⁡ বা সংক্ষেপে 𝑟𝑎𝑑/ 𝑠) এককে প্রকাশ করা হয়। যন্ত্রবিদ্যা বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ আরেকটি এককে প্রচলিত আছে। এর নাম আবর্তন/মিনিট ( revolution per minute, সংক্ষেপে 𝑟𝑝𝑚)

কৌণিক বেগের মাত্রা :  [\omega] = [\frac{রৈখিক বেগ}{ব্যাসার্ধ}] = \frac{[LT^{-1}]}{[L]} = [T^{-1}]

একবার পূর্ণ আবর্তন করতে কণার যে সময় লাগে তাকে পর্যায়কাল (time period) বলে।একটি পূর্ণ আবর্তন বলতে 2π রেডিয়ান কোণিক সরণ বোঝায়। সুতরাং পর্যায়কাল T হলে (4.25) সমীকরণ অনুযায়ী

\omega = \frac{2 \pi}{T}

\frac{1}{T}  একক সময়ে পূর্ণ আবর্তনের সংখ্যা বোঝায়। একে কম্পাঙ্ক (frequency) বলে। কম্পাঙ্ককে ‘𝑛’ দিয়ে সূচিত করলে আমারা পাই, \omega = 2 \pi n  

কৌণিক বেগ ও রৈখিক বেগের মধ্যে সম্পর্ক (Relation between angular velocity and linear velocity)

আমরা জানি, রৈখিক পথে নির্দিষ্ট দিকে কোনো একটি বস্তুর প্রতি সেকেন্ডের রৈখিক সরণই রৈখিক বেগ এবং বৃত্তাকার পথে কোনো একটি বস্তুর প্রতি সেকেন্ডের কৌণিক সরণই কৌণিক বেগ (angular velocity)। রৈখিক বেগকে 𝑣 এবং কৌণিক বেগকে 𝜔 দ্বারা প্রকাশ করা হয়। রৈখিক বেগ এবং কৌণিক বেগের সম্পর্কজনিত সমীকরণটি এখন প্রতিপাদন করা হবে।

 

angular-velocity-and-linear-velocity

 

মনে করি, একটি বস্তুকণা 𝑟 ব্যাসার্ধবিশিষ্ট একটি বৃত্তের পরিধি বরাবর 𝜔 সমকৌণিক বেগে ঘুরছে [ চিত্র] । বেগের সংজ্ঞানুসারে,

\omega =  কৌণিক দূরত্ব / সময় = \frac{2 \pi}{T}

বা, T = 2 \pi \omega …………….……………………………………(4.28)

এখন যদি বৃত্তাকার পথে না ঘুরে কণাটি 𝑣 বেগে একই সময়ে সরলরেখায় বৃত্তের পরিধির সমান পথ 𝑇 সময়ে অতিক্রম করে, তবে 𝑣= বৃত্তের পরিধি / পরিধির সমান দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় =  \frac{2 \pi r}{T}  

বা, 𝑇= \frac{2 \pi r}{v}  

সমীকরণ(4.28) এবং সমীকরণ (4.29) হতে আমরা পাই,

𝑇= \frac{2 \pi}{\omega} = \frac{2 \pi r}{v}

বা,  \frac{1}{\omega} = \frac{r}{v}

বা, 𝑣 = \omega 𝑟

অর্থাৎ, রৈখিক বেগ = কৌণিক বেগ × বৃত্তের ব্যাসার্ধ

কৌণিক ত্বরণ (Angular acceleration)

অনেক ক্ষেত্রে আবর্তনরত কণার কৌণিক বেগ বাড়ে বা কমে। কৌণিক বেগ পরিবর্তিত হলে বোঝা যায় যে কণাটি কৌণিক ত্বরণ নিয়ে চলছে।

আবর্তনরত কণার গড় কৌণিক ত্বরণ (average angular acceleration) বলতে কোনো নির্দিষ্ট সময়ের অবকাশে সময়ের সঙ্গে কৌণিক বেগের পরিবর্তনের হার বোঝায়।

সুতরাং, অতি ক্ষুদ্র সময়ের অবকাশ Δ𝑡 – তে কৌণিক বেগের পরিবর্তন Δ𝜔 হলে ঐ অবকাশে গড় কৌণিক ত্বরণ হবে,

\lim_{\Delta t \to 0} \frac{\Delta \omega}{\Delta t}     বা, α=\frac{d\omega}{dt}= \frac{d}{dt} \frac{d \theta}{dt}=\frac{d^{2} \theta}{dt^{2}}

কৌণিক ত্বরণ বলতে সাধারণত তাৎক্ষণিক কৌণিক ত্বরণ বোঝায়। এর একক রেডিয়ান প্রতি সেকেন্ড প্রতি সেকেন্ড অর্থাৎ রেডিয়ান/সেকেন্ড ^2 (𝑟𝑎𝑑 𝑠^{−2} )

আবর্তনরত কণার কৌণিক ত্বরণ ধ্রুবক হলে তাৎক্ষণিক কৌণিক ত্বরণ যেকোনো সময়ের অবকাশে গড় কোণিক ত্বরণের সমান হয়। এক্ষেত্রে 𝑡 সময়ে কৌণিক বেগের বৃদ্ধি 𝜔 হলে, কৌণিক ত্বরণ, \alpha = \frac{\omega}{t}

কৌণিক ত্বরণের মাত্রা, [\alpha] = \frac{[\omega]}{[T]} = \frac{[T^{-1}]}{[T]} = [T^{-2}] 

কৌণিক ত্বরণ ও রৈখিক ত্বরণের মধ্যে সম্পর্ক (Relation between angular acceleration and linear acceleration)

 

angular-acceleration-and-linear-acceleration

 

মনে করি একটি বস্তুকণা 𝑟 ব্যাসার্ধবিশিষ্ট [ চিত্র ] বৃত্তের পরিধি বরাবর অসম বৃত্তাকার গতিতে আবর্তন করছে। বস্তুকণাটির t সময়ে রৈখিক বেগ = 𝑣, কৌণিক বেগ = 𝜔, রৈখিক ত্বরণ = 𝑎 এবং কৌণিক ত্বরণ = 𝛼।

আমরা জানি, v = \omega r

\alpha = \frac{d \omega}{dt}

এবং  𝑎= \frac{dv}{dt}

সমীকরণ 4.33- এর উভয় পক্ষকে 𝑡− এর সাপেক্ষে ব্যবকলন করে পাই,

\frac{dv}{dt}= \omega \frac{dr}{dt}+ \frac{d\omega}{dt}r=r \frac{d\omega}{dt}   [ ∵ r =    ধ্রুবক ]

বা, a = \alpha r , [\because \frac{d\omega}{dt} = \alpha]

অর্থাৎ   রৈখিক ত্বরণ = কৌণিক ত্বরণ × ব্যাসার্ধ

টর্ক বা বলের ভ্রামক (Torque or Moment of a force)

কোন দৃঢ় বস্তু একটি বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরতে পারে। যেমন দেয়ালে ঝুলানো ফটো পেরেক ও সুতার সংযোগ বিন্দুর সাপেক্ষে ঘুরতে থাকে; আবার গাড়ির চাকা তার অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরতে পারে।

কোন নির্দিষ্ট অক্ষের চারদিকে ঘুর্ণায়মান কোনো বস্তুতে ত্বরণ সৃষ্টির জন্য প্রযুক্ত দ্বন্দ্বের ভ্রামককে টর্ক বা বলের ভ্রামক বলে। একে 𝜏 (টাউ) দ্বারা সূচিত করা হয়।

 

torque

 

ব্যাখ্যা: ধরা যাক, 𝑂 বিন্দুতে একটি পাতলা পাত অনুভূমিক অবস্থ্যা এমনভাবে আছে যে তা উলম্ব অক্ষ 𝑋𝑂𝑌-এর চতুর্দিকে 𝑂-কে কেন্দ্র করে ঘুরতে পারে [চিত্র]। পাতটিকে তার কোনো বিন্দু 𝐶-তে বল প্রয়োগ করে ঘুরালে যেখা যায় যে,

(১) প্রযুক্ত বলের মান যত বেশি হবে, তার ঘুর্ণন সৃষ্টির ক্ষমতাও তত বেশি হবে।

(২) 𝑂 হতে প্রযুক্ত বল 𝐹-এর লম্ব দূরত্ব 𝑑 যত বেশি হবে, ঐ বলে ঘুর্ণন সৃষ্টির ক্ষমতাও তত বেশি হবে।

(৩) বলের ক্রিয়ামুখ 𝑂 বিন্দু অভিমুখী হলে, পাতটিতে কোনো ঘুর্ণন হবে না।

উপরিউক্ত কারণে কোনো অক্ষ বা বিন্দুর সাপেক্ষে কোনো বলের ভ্রামকের মান বলের পরিমাণ ও অক্ষ হতে বলের ক্রিয়া রেখার লম্ব দূরত্ব 𝑑-এর গুণফল দ্বারা নির্দিষ্ট হয়।

\tau = d \times F

বা, বলের ভ্রামক বা টর্ক =বল×লম্ব দূরত্ব

চিত্র ৪.২৫-এ O হতে F বলের ক্রিয়াবিন্দু C-এর দূরত্ব = r ও F বলের ক্রিয়ারেখা NC-এর দূরত্ব = d এবং ∠𝑁𝐶𝑂=𝜃 নির্দেশ করা হয়েছে।

কাজেই, 𝑂𝑁 = 𝑑 = r sin \theta

\tau = d \times F = 𝑟 𝐹 sin \theta

ভেক্টর বীজগণিতের সাহায্যে 𝜏-কে নিম্ন উপায়ে লেখা হয়,

\tau = r \times F

সংজ্ঞা: অক্ষের সাপেক্ষে ঘুর্ণনরত বস্তুর উপর যে বিন্দুতে বল ক্রিয়াশীল ঐ বিন্দুর অবস্থান ভেক্টর ও প্রযুক্ত বলের ভেক্টর গুণফলকে টর্ক বলে।

টর্ক বা বলের ভ্রামকের একক (Unit of torque or moment of a force)

এস. আই. পদ্ধতিতে টর্ক বা বলের ভ্রামকের একক নিউটন-মিটার (𝑁−𝑚)

টর্ক বা বলের ভ্রামকের মাত্রা সমীকরণ (Dimension of torque or moment of a force)

টর্ক বা বলের ভ্রামকের সংজ্ঞা হতে এর মাত্রা সমীকরণ প্রতিপাদন করা যায়। বলের ভ্রামকের মাত্রা সমীকরণ,  টর্ক বা বলের ভ্রামক = বল×দূরত্ব = [MLT^{-2} \times L] = [ML^{2}T^{-2}]