10 Minute School
Log in

বলের সংজ্ঞামূলক ধারণা (Intuitive concept of force)

বলের সংজ্ঞা (Definition of force)

যা স্থির বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে তাকে গতিশীল করে বা করতে চায় বা যা গতিশীল বস্তুর ওপর করে তার গতির পরিবর্তন করে বা করতে চায় তাকে বল (Force) বলে।

বলের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of force)

সাধারণ অভিজ্ঞতার আলোকে বলের নিম্নোক্ত চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা যায়।

১. বলের দিক আছে।

যেহেতু টানা বা ঠেলার মান ও দিক উভয়ই আছে, তাই বল একটি ভেক্টর রাশি। বলের দিক টানা বা ঠেলার দিকে।

২. বল জোড়ায় জোড়ায় ক্রিয়া করে।

যদি 𝐴 বস্তু 𝐵 বস্তুর ওপর একটি বল প্রয়োগ করে, তাহলে 𝐵 বস্তুও 𝐴 বস্তুর ওপর একটি বল প্রয়োগ করে।

৩. কোনো বল একটি বস্তুতে ত্বরণ সৃষ্টি করতে পারে।

৪. বল কোনো বস্তুকে বিকৃত করতে পারে।

বলের নিরপেক্ষ নীতি (Independent principle of force)

নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রানুসারে সময়ের সাথে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন বলের ক্রিয়া অভিমুখে সংঘটিত হবে। কাজেই বলের ক্রিয়া অভিমুখে বস্তুতে যে ভরবেগ থাকবে সময়ের সাথে তাই শুধু পরিবর্তিত হবে। একাধিক বলের ক্ষেত্রেও একের ক্রিয়া অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হবে না। বস্তুর উপর বলের ক্রিয়ার এই বৈশিষ্ট্যকে বলের নিরপেক্ষ নীতি বা ভৌত অনির্ভরশীলতা বলা হয়।

নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্র থেকে আমরা যা জানতে পারলাম তা হলো :

(i)   বস্তুর ত্বরণ প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক হয়।

(ii)  বলের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে বস্তুটির ত্বরণ বা মন্দন থাকে না।

(iii) বলের অভিমুখই ত্বরণের অভিমুখ।

(iv)  বস্তুর উপর বল ক্রিয়া করলে বস্তুটি ত্বরণ নিয়ে চলতে থাকে।

মৌলিক বল (Fundamental force) 

যে সকল বল মূল বা স্বাধীন অর্থাৎ যে সকল বল অন্য কোনো বল থেকে উৎপন্ন হয় না বা অন্য কোনো বলের কোনো বলের কোনো রূপ নয় বরং অন্যান্য বল এই সকল বলের কোনো না কোনো রূপের প্রকাশ তাদেরকে মৌলিক বল বলে।

 এ মৌলিক বলগুলো হলো

 ১. মহাকর্ষ বল (Gravitational force),

২. তাড়িতচৌম্বক বল (Electromagnetic force),

৩. সবল নিউক্লিয় বল (Strong Nuclear force) এবং

৪. দুর্বল নিউক্লিয় বল (Weak Nuclear force)

১. মহাকর্ষ বল (Gravitational force):

ভরের কারণে মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুর মধ্যকার পারস্পরিক আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ বলবলে। কোনো বস্তুর ওজন হচ্ছে মহাকর্ষ বলের ফলশ্রুতি। মহাকর্ষ বল সর্বদা আকর্ষণ ধর্মী।

২. তাড়িতচৌম্বক বল (Electromagnetic force):

দুটি আহিত কণা তাদের আধানের কারণে একে অপরের ওপর যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল প্রয়োগ করে তাকে তাড়িতচৌম্বক বল বলে। তড়িৎ বল এবং চৌম্বক বল ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। যখন দুটি আহিত কণা স্থির থাকে তখন তাদের ওপর কেবল তড়িৎ বল ক্রিয়া করে। যখন আহিত কণাগুলো গতিশীল থাকে তখনকার একটি অতিরিক্ত তড়িৎ বল হচ্ছে চৌম্বক বল।

সাধারণভাবে তড়িৎ প্রভাব ও চৌম্বক প্রভাব অবিচ্ছেদ্য সে কারণে বলটিকে তাড়িতচৌম্বক বল নামে অভিহিত করা হয়। মহাকর্ষ বলের ন্যায় তাড়িতচৌম্বক বলের পাল্লাও অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এ বলের ক্রিয়ার জন্য কোনো মাধ্যমেরও প্রয়োজন হয় না। তাড়িতচৌম্বক বল মহাকর্ষ বলের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী দুটি প্রোটনের মধ্যকার তাড়িতচৌম্বক বল এদের মধ্যকার মহাকর্ষ বলের চেয়ে  10^{36}   গুণ বেশি।

আমাদের এই স্থল জগতের যাবতীয় বলসমূহ (মহাকর্ষ বল ব্যতীত) তড়িৎ বলের বহিঃপ্রকাশ। ঘর্ষণ বল, স্পর্শ বল, স্প্রিং বা অন্যান্য বিকৃত বস্তুর মধ্যকার বল আহিত কণাগুলোর তড়িৎ বলেরই ফলশ্রুতি। ফোটন নামক এর প্রকার ভরহীন ও আধানহীন কণার পারস্পরিক বিনিময়ের ফলে এই বল কার্যকর হয়।

৩. সবল নিউক্লিয় বল (Strong Nuclear force):

পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নিউক্লিয় উপাদানসমূহকে একত্রে আবদ্ধ রাখে যে শক্তিশালী বল তাকে সবল নিউক্লিয় বল বলে। সবল নিউক্লিয় বল প্রোটন ও নিউট্রনকে নিউক্লিয়াসে আবদ্ধ্ব রাখে।

সবল নিউক্লিয় বল সকল মৌলিক বলগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। তাড়িতচৌম্বক বল থেকে এটি প্রায় 100 গুণ বেশি শক্তিশালী। এটি আধান নিরপেক্ষ এবং এটি সমানভাবে প্রোটন-প্রোটন, নিউট্রন-নিউট্রন এবং প্রোটন-নিউট্রনের মধ্যে বোসন কণার পারস্পরিক বিনিময়ে কার্যকর হয়।পরবর্তীতে দেখা যায় প্রোটন ও নিউট্রন উভয়েই কোয়ার্ক নামক আরো মৌলিক কণিকা দিয়ে গঠিত আর কোয়ার্ক কণিকাগুলো গ্লুয়ন নামে এক ধরনের আঠালো কণার পারস্পরিক বিনিময়ের ফলে উৎপন্ন তীব্র বলের প্রভাবে একত্রিত থাকে। এর পাল্লা অত্যন্ত কম, প্রায় নিউক্লিয়াসের ব্যসার্ধের সমতুল্য, অর্থাৎ প্রায়  10^{-15} 𝑚। এ বল নিউক্লিয়াসের স্থায়ীত্বের নিয়ামক।  উল্লেখ্য যে, ইলেক্ট্রনের মধ্যে এ ধরনের কোনো বল নেই।

৪. দুর্বল নিউক্লিয় বল (Weak Nuclear force):

যে স্বল্প পাল্লার ও স্বল্প মানের বল নিউক্লিয়াসের মধ্যে মৌলিক কণাগুলোর মধ্যে ক্রিয়া করে অনেক নিউক্লিয়াসের অস্থিতিশীলতার উদ্ভব ঘটায় তাকে দুর্বল নিউক্লিয় বল বলে। দুর্বল নিউক্লিয় বলের উদ্ভব হয় যখন কোনো নিউক্লিয়াস থেকে β রশ্মির আগমন ঘটে। β রশ্মির নির্গমনের সময় নিউক্লিয়াস থেকে একটি ইলেকট্রন এবং একটি অনাহিত কণা নিউট্রিনো (neutrino) নির্গত হয়। দুর্বল নিউক্লিয় বল মহাকর্ষ বলের ন্যায় অত দুর্বল নয় তবে সবল নিউক্লিয় বল ও তাড়িতচৌম্বক বলের চেয়ে অনেকটাই দুর্বল। এ বলের পাল্লা খুবই কম, প্রায় 10^{-16} m থেকে 10^{-18} m । বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন গেজ বোসন কণার পারস্পরিক বিনিয়োগের ফলে এ বল কার্যকর হয়। 

image 14

দুর্বল নিউক্লিয় বলের জন্য বাহক কণিকাগুলো হচ্ছে  𝑊+ ,  𝑊−  এবং 𝑍° বোসন যা গেজ বোসন (gauge boson) নামেও পরিচিত।

ঘাত বল (Impulse of Force)

খুব অল্প সময়ের জন্য খুব বড় মানের যে বল কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত হয় তাকে ঘাত বল বলে।

উদাহরণ : ধরা যাক, একটি র‍্যাকেট দ্বারা টেনিস বলকে আঘাত করলে প্রচন্ড একটি বল টেনিস বলের উপর আরোপিত হয়। এক্ষেত্রে টেনিস বল এবং র‍্যাকেটের মধ্যকার সংঘর্ষের সময় খুব কম হয়। এই ধরনের বল ঘাত বল। আবার ইলেক্ট্রিক সুইচ যখন অফ বা অন করা  হয় তখনও এই ঘাত বল ক্রিয়াশীল হয়। [চিত্র ৪.৫ (খ)]

image 16
(ক) টেনিস বলের উপর বল                                (খ) আলো জ্বালাতে সুইচের উপর বল

চিত্র ৪.৫

কোনো বল ও বলের ক্রিয়াকালের গুণফলকে ঐ বলের ঘাত (impulse of force) বলে।  𝐹  বল কোনো বস্তুর উপর 𝑡 সময় ধরে ক্রিয়া করলে

বলের ঘাত,  J = F \times t……………………………………………………………………………(4.6)

= \frac{m \vec{v} - m \vec{v_0}}{t} \times t = m \vec{v} - m \vec{v_0} = ভরবেগের পরিবর্তন।

∴ বলের ঘাত ভরবেগের পরিবর্তনের সমান।

ক্যালকুলাস পদ্ধতি : মনে করি,  𝐹  ধ্রুব বল কোনো একটি বস্তুর উপরে dt সময় ক্রিয়া করে। তাহলে ঘাত বল,

J = \int_{t_1}^{t_2} \vec{F} dt = \int_{t_1}^{t_2} \frac{d \vec{P}}{dt} \times dt = \int_{\vec{p_1}}^{\vec{p_2}} \vec{dP} = [\vec{P}] = \vec{P_2} - \vec{P_1} = \Delta \vec{P}

∴ বলের ঘাত ভরবেগের পরিবর্তনের সমান।