10 Minute School
Log in

কিৰ্শফের সূত্রের ব্যবহার (Application of Kirchhoff’s Circuit laws)

হুইটস্টোন ব্রীজে কির্শফের সূত্রের ব্যবহার (Use of Kirchhoff’s formula at Wheatstone Bridge)

চারটি রোধ শ্রেণিবদ্ধভাবে সজ্জিত করে একটি আবদ্ধ লুপ তৈরি করলে যে চারটি সংযোগস্থল তৈরি হয়, তার যে কোনো দুটি বিপরীত সংযোগস্থলের মাঝে একটি বিদ্যুৎ কোষ এবং অপর দুটি সংযোগস্থলের মাঝে গ্যালভানোমিটার (galvanometer) সংযোগে যে বর্তনী তৈরি হয় তাকে হুইটস্টোন ব্ৰীজ (Wheatstone Bridge) বলে।

ধরা যাক, চারটি রোধ P, Q, R ও S দ্বারা গঠিত একটি চতুর্ভুজ ACDF এর ন্যায় যুক্ত করে সংযোগ বিন্দু A ও D বিন্দুকে একটি ব্যাটারি বা বিদ্যুৎ উৎস B একটি প্লাগ চাবি K ও একটি পরিবর্তনশীল রোধ X দ্বারা এবং সংযোগ বিন্দু C ও F কে একটি গ্যালভানোমিটার G দ্বারা যুক্ত করে হুইটস্টোন ব্রীজ তৈরি করা হলো।

kirchhoff’s circuit laws, wheatstone bridge

ধরা যাক গ্যালভানোমিটারের রোধ G এবং রোধ P, R, Q, S ও G-এর ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহমাত্রা যথাক্রমে i_{1}, i_{2}, i_{3}, i_{4}i_{g} । 

এখন কির্শফের প্রথম সূত্রটি C ও F বিন্দুতে প্রয়োগ করে যথাক্রমে পাওয়া যায়,

i_{1}-i_{3}-i_{g}=0  অর্থাৎ i_{1}=i_{3}+i_{g}

এবং i_{2}+i_{g}-i_{4}=0  অর্থাৎ i_{4}=i_{2}+i_{g}

আবার কির্শফের দ্বিতীয় সূত্রটি (kirchhoff’s second law) বদ্ধ বর্তনী ACFA ও CDFC-এ প্রয়োগ করে যথাক্রমে পাওয়া যায়,

i_{1} P+i_{g} G-i_{2} R=0

এবং i_{3} Q+i_{4} S-i_{g} G=0

কিন্তু ব্রীজের সাম্যাবস্থায়, i_{g}=0

কাজেই এ অবস্থায় সমীকরণ (3.18) ও (3.19) অনুসারে, i_{1}=i_{3} এবং i_{4}=i_{2}

সমীকরণ (3.20) ও (3.21) অনুসারে, i_{1} P=i_{2} R

এবং i_{3} Q=i_{4} S

এখন সমীকরণ (3.22)-কে (3.23) দ্বারা ভাগ করে পাওয়া যায়,

\frac{i_{1} P}{i_{3} Q}=\frac{i_{2} R}{i_{4} S}  কিন্তু  i_{1}=i_{3}i_{4}=i_{2}

\therefore \frac{P}{Q}=\frac{R}{S}

সমীকরণ (3.24) অনুসারে হুইটস্টোন ব্রীজের সাম্যাবস্থায় চারটি রোধের যে কোনো তিনটি জানা থাকলে, চতুর্থ রোধটি নির্ণয় করা যাবে। একে রোধ পরিমাপের হুইটস্টোন ব্রীজের (Wheatstone Bridge) নীতি বলে।

সাম্যাবস্থায়−

(i) গ্যালভানোমিটারের দুই প্রান্তের বিভব বৈষম্য শূন্য হবে অর্থাৎ গ্যালভানোমিটারের মধ্য দিয়ে কোনো বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে না এমতাবস্থায়

\left(\mathrm{V}_{A}-\mathrm{V}_{D}\right)=(\mathrm{P}+\mathrm{Q}) i_{1}=(\mathrm{R}+\mathrm{S}) i_{2} 

(ii) একইক্ৰমে গ্যালভানোমিটারের উভয় প্রান্তের দুই পার্শ্বে যুক্ত রোধ দুটির অনুপাত সমান হবে অর্থাৎ

\frac{P}{Q}=\frac{R}{S}

গ্যালভানোমিটারের বিক্ষেপ শূন্য হওয়ার শর্ত কী ?

গ্যালভানোমিটারের (galvanometer) দুই প্রান্তের বিভব শূন্য হলে বিক্ষেপ শূন্য হয়। 

সাধারণত নিম্ন মানের রোধ বা উচ্চ মানের রোধ পরিমাপ করার জন্য হুইটস্টোন ব্রীজ ব্যবহার করা হয় না কেন ব্যাখ্যা কর

কোনো নিম্ন মানের রোধকে S-এর স্থানে রাখা হলে সংযোগকারী তারগুলোর রোধ S-এর মানের কাছাকাছি হয়। ফলে S-এর সঠিক মান পাওয়া যায় না। তাই পরিমাপ্য মান ত্রুটিপূর্ণ হয়। আবার S-এর স্থলে উচ্চ মানের রোধ রাখা হলে, ওই রোধের মধ্য দিয়ে খুব বেশি মানের তড়িৎ প্রবাহিত হয় না। ফলে ব্রীজের সুবেদিতা (sensitivity) কমে যায়, তাই নিস্পন্দ অবস্থা শনাক্ত করা কঠিন হয়। এ কারণে কম মানের রোধ বা উচ্চ মানের রোধ পরিমাপে হুইটস্টোন ব্রীজ (Wheatstone Bridge) ব্যবহার করা হয় না

শ্রেণি সমবায়ে কির্শফের সূত্রের ব্যবহার (Application of Kirchhoff’s laws in case of series combination of cells)

বিদ্যুৎ প্রবাহ নির্ণয় (Measuring electric current):

মনে করি তিনটি বিদ্যুৎ কোষ আছে। এদের বিদ্যুচ্চালক বল যথাক্রমে \mathrm{E}_{1}, \mathrm{E}_{2}, \mathrm{E}_{3} এবং অভ্যন্তরীণ রোধ যথাক্রমে r_{1}, r_{2}, r_{3} (চিত্র)। এদেরকে R রোধের একটি পরিবাহীর সাহায্যে শ্রেণি সমবায়ে যুক্ত করা হয়েছে। মনে করি বর্তনীতে প্রবাহমাত্রা =i.

kirchhoff’s circuit laws, wheatstone bridge

উক্ত বর্তনীতে কির্শফের দ্বিতীয় সূত্র (kirchhoff’s second law) প্রয়োগ করে পাই,

\begin{array}{l} \mathrm{E}_{1}+\mathrm{E}_{2}+\mathrm{E}_{3}=i r_{1}+i r_{2}+i r_{3}+i R \\ i\left(r_{1}+r_{2}+r_{3}+R\right)=\mathrm{E}_{1}+\mathrm{E}_{2}+\mathrm{E}_{3} \\ \therefore i=\frac{\mathrm{E}_{1}+\mathrm{E}_{2}+\mathrm{E}_{3}}{r_{1}+r_{2}+r_{3}+R} \end{array}

যদি n সংখ্যক কোষ অনুরূপে যুক্ত করা হয় তাহলে,

i=\frac{\mathrm{E}_{1}+\mathrm{E}_{2}+\mathrm{E}_{3} \ldots+\mathrm{E}_{\mathrm{n}}}{\mathrm{R}+r_{1}+r_{2}+r_{3}+\cdots+r_{n}}

প্রতিটি কোষের বিদ্যুচ্চালক বল E এবং অভ্যন্তরীণ রোধ r হলে,

i=\frac{\mathrm{nE}}{\mathrm{R}+\mathrm{nr}}

(i) \mathrm{R} \gg n r হলে, i=\frac{\mathrm{nE}}{\mathrm{R}} অর্থাৎ বহিস্থ রোধ ব্যাটারির মোট অভ্যন্তরীণ রোধ অপেক্ষা অনেক বেশি হলে বহিস্থ রোধে প্রবাহমাত্রা একটি মাত্র কোষ যে প্রবাহমাত্রা সরবরাহ করে তার n গুণ হবে

(ii) \mathrm{R} \ll n r হলে, i=\frac{n \mathrm{E}}{n r}=\frac{E}{r}; অর্থাৎ ব্যাটারির অভ্যন্তরীণ রোধ অপেক্ষা বহিথ রোধ অত্যন্ত ক্ষুদ্র হলে যে প্রবাহমাত্রা পাওয়া যাবে তা কার্যত একটি কোষ যে সর্বাধিক প্রবাহমাত্রা প্রদান করে তার সমান 

বিভব পার্থক্য নির্ণয় (Determining Potential difference:):

মূল প্রবাহ i রোধক R এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবার জন্য R এর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য,

V=i \mathrm{R}=\frac{\mathrm{nER}}{\mathrm{R}+n r}

সমান্তরাল সমবায়ে কির্শফের সূত্রের প্রয়োগ (Application of Kirchhoff’s laws in case of parallel combination of cells)

মনে করি A, B এবং C তিনটি বিদ্যুৎ কোষ। এদের বিদ্যুচ্চালক বল যথাক্রমে \mathrm{E}_{1}, \mathrm{E}_{2}, \mathrm{E}_{3} এবং অভ্যন্তরীণ রোধ যথাক্রমে r_{1}, r_{2}, r_{3}। এদেরকে সমান্তরাল সমবায়ে যুক্ত করে প্রান্তদ্বয়কে R রোধের একটি পরিবাহীর সাহায্যে সমান্তরালভাবে যুক্ত করা আছে [চিত্র]। \mathrm{E}_{1}, \mathrm{E}_{2}, \mathrm{E}_{3} কোষ হতে প্রবাহিত প্রবাহমাত্রা যথাক্রমে i_{1}, i_{2}, i_{3}

kirchhoff’s circuit laws, wheatstone bridge

এখন P অথবা Q বিন্দুতে কির্শফের ১ম সূত্র (kirchhoff’s first law) প্রয়োগ করে পাই,

i_{1}+i_{2}+i_{3}=i   ………   3.27

কির্শফের দ্বিতীয় সূত্র (kirchhoff’s second law) প্রয়োগ করে, 

বর্তনী PAQRP হতে পাই, i_{1} r_{1}+i R=\mathrm{E}_{1}     ………   3.28

বর্তনী PBQRP হতে পাই, i_{2} r_{2}+i R=\mathrm{E}_{2}     ………   3.29

বর্তনী PCQRP হতে পাই, i_{3} r_{3}+i R=\mathrm{E}_{3}     ………   3.30

সমীকরণ (3.28), (3.29) ও (3.30) কে যথাক্রমে r_{1}, r_{2}, r_{3} দ্বারা ভাগ করে ভাগফলগুলিকে যোগ করে পাই,

\left(i_{1}+i_{2}+i_{3}\right)+i\left(\frac{R}{r_{1}}+\frac{R}{r_{2}}+\frac{R}{r_{3}}\right)=\frac{\mathrm{E}_{1}}{r_{1}}+\frac{\mathrm{E}_{2}}{r_{2}}+\frac{\mathrm{E}_{3}}{r_{3}}

বা, i+i\left(\frac{R}{r_{1}}+\frac{R}{r_{2}}+\frac{R}{r_{3}}\right)=\frac{\mathrm{E}_{1}}{r_{1}}+\frac{\mathrm{E}_{2}}{r_{2}}+\frac{\mathrm{E}_{3}}{r_{3}}

বা, i\left\{1+R\left(\frac{1}{r_{1}}+\frac{1}{r_{2}}+\frac{1}{r_{3}}\right)\right\}=\frac{\mathrm{E}_{1}}{r_{1}}+\frac{\mathrm{E}_{2}}{r_{2}}+\frac{\mathrm{E}_{3}}{r_{3}}

i=\frac{\frac{\mathrm{E}_{1}}{r_{1}}+\frac{\mathrm{E}_{2}}{r_{2}}+\frac{\mathrm{E}_{3}}{r_{3}}}{1+R\left(\frac{1}{r_{1}}+\frac{1}{r_{2}}+\frac{1}{r_{3}}\right)}      ………   3.31

এখন R, r_{1}+r_{2}+r_{3} এবং \mathrm{E}_{1}+\mathrm{E}_{2}+\mathrm{E}_{3} এর মান বসিয়ে i নির্ণয় করা যায়। প্রতিটি বিদ্যুৎ কোষের তড়িচ্চালক বল E ও অভ্যন্তরীণ রোধ r হলে,

        i=\frac{\frac{n \mathrm{E}}{r}}{1+\frac{n R}{r}}=\frac{n \mathrm{E}}{n R+r}   ………   3.32

(i) R \gg \frac{r}{n} হলে, \mathrm{I}=\frac{\mathrm{E}}{\mathrm{R}}; অর্থাৎ মোট প্রবাহমাত্রা একটি কোষ যে প্রবাহমাত্রা প্রদান করে তার সমান

(ii) R \ll \frac{r}{n} হলে, \mathrm{I}=\frac{n \mathrm{E}}{\mathrm{R}} অর্থাৎ মোট প্রবাহমাত্রা একটি কোষ যে সর্বাধিক প্রবাহমাত্রা দেয় তার n গুণ

বিভব পার্থক্য (Potential difference):

R এর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য, V=i R=\left(\frac{n \mathrm{E}}{n R+r}\right) \times \mathrm{R} 

উচ্চ মানের তড়িৎ প্রবাহ পাঠাতে পারে, এমন ব্যাটারি হুইটস্টোন ব্রীজ (Wheatstone Bridge) বর্তনীতে ব্যবহার করা সঙ্গত নয় ব্যাখ্যা কর।

যদিও হুইটস্টোন ব্রীজের নিস্পন্ধ বিন্দুর শর্ত, \frac{\mathrm{P}}{\mathrm{Q}}=\frac{\mathrm{R}}{\mathrm{S}} ব্যাটারির তড়িচ্চালক বলের ওপর নির্ভর করে না, তথাপি উচ্চ মানের তড়িৎ উৎস ব্যবহার করা হয় না। কেননা সেক্ষেত্রে জুল ক্রিয়ার ফলে প্রতিটি বাহুর রোধ বেড়ে যেতে পারে। ফলে ফলাফলে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। এজন্য উচ্চ মানের তড়িৎ উৎস ব্যবহার করা হয় না।