কোষ বিভাজন | Cell Division
Walter Fleming সামুদ্রিক স্যালামান্ডার নিয়ে গবেষণাকালে দেখতে পান যে, একটি কোষ ভাগ হয়ে একাধিক কোষ তৈরি করছে। এই কোষের ভাগ হওয়া এবং নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়াই হলো কোষ বিভাজন। যে কোষটি থেকে নতুন কোষ তৈরি হয় সেটি মাতৃকোষ (Mother Cell) এবং নতুন কোষটি হলো অপত্য কোষ (daughter Cell)।
কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ (Types of cell division)
জীবজগতে তিন ধরনের কোষ বিভাজন হয়:
- অ্যামাইটোসিস (Amitosis)
- মাইটোসিস (Mitosis)
- মিয়োসিস (Meiosis)
কোষ চক্র (Cell Cycle)
একটি কোষের সৃষ্টি থেকে শুরু করে এর বৃদ্ধি, বিভাজন সহ সমগ্র জীবনকে কোষচক্র বলে (cell cycle)। সর্বপ্রথম এটি প্রত্যক্ষ করে হাওয়ার্ড ও পেল্ক। প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় কোষ চক্রকে। সর্বমোট চার ভাগে।
ইন্টারফেজ (Interphase) :
বিভাজনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য কোষের অভ্যন্তরে বহু পরিবর্তন হয়। এই দশায় কোষের নিউক্লিয়াসকে বলা হয় বিপাকীয় নিউক্লিয়াস। তিনটি ধাপে এই পরিবর্তনগুলো সম্পন্ন হয়।
- G_1 দশা (গ্যাপ ১): একটি কোষ পরবর্তীতে বিভাজন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে কিনা, তার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় G_1 উপপর্যায়ে। G_1-এর প্রথমেই সাইক্লিন নামক এক প্রকার প্রোটিন তৈরি হয় যা Cdk (Cyclin dependent kinase) এর সাথে যুক্ত হয়ে সমগ্র প্রক্রিয়ার গতি ত্বরান্বিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। Cdk ফসফোরাইলেশন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় প্রয়োজনীয় অন্যান্য প্রোটিন, RNA এবং DNA রেপ্লিকেশনের সকল উপাদান তৈরি হয়। যে কোষটি আর বিভাজিত হবে না তা এক সপ্তাহ বা এক বছর অর্থাৎ আমৃত্যু G_1 উপপর্যায়েই আবদ্ধ হয়ে যায়। মোট কোষ চক্রের ৩০-৪০% সময় এই উপপর্যায়ে ব্যয় হয়।
- S দশা (সিনথেসিস = S): এই উপপর্যায়ের প্রধান কাজ হলো নিউক্লিয়াসে ক্রোমোসোমস্থ DNA সূত্রে রেপ্লিকেশন। পরবর্তী উপ-পর্যায়ে প্রবেশের আগেই DNA রেপ্লিকেশন সম্পন্ন হয়। এই উপপর্যায়ে সময় ব্যয় হয় মোট সময়ের ৩০-৫০ ভাগ।
- G_2 দশা (গ্যাপ): এটি হলো M. Phase-এ (মাইটোসিস দশা) প্রবেশ করার প্রস্তুতি পর্যায়। এই উপপর্যায়ে প্রধান কাজ হলো মাইক্রোটিউবিউল গঠনকারী পদার্থ সংশ্লেষণ যা দিয়ে মাইটোসিস পর্যায়ে স্পিন্ডল তন্তু তৈরি হবে। একটি সেন্ট্রোসোম থেকে দুটি সেন্ট্রোসোম-এ পরিণত হয়। সেন্ট্রোসোম মাইক্রোটিউবিউল তৈরি সূচনা করে। বিভাজন প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি (ATP) তৈরি হয়। G_2 থেকে মাইটোসিস-এ প্রবেশ করতে হলে ম্যাচুরেশন প্রোমোটিং ফ্যাক্টর (MPF) নামক প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে। কিছু সংখ্যক কোষ G2 উপপর্যায়ে এসেও আটকা পড়ে যায়, আর কখনো বিভাজন পর্যায়ে প্রবেশ করে না। মোট সময়ের ১০-২০ ভাগ সময় এ উপপর্যায়ে ব্যয় হয়।
- G_1 থেকে S-উপপর্যায় এবং S-উপপর্যায় থেকে G2-তে স্থানান্তরের জন্য Cdk প্রোটিনের অ্যাক্টিভেশন প্রয়োজন হয়।
- Phase বা মাইটোটিক ফেজ: কোষ চক্র G_2 ফেজ থেকে মাইটোসিস বা বিভাজন পর্যায়ে প্রবেশ করে। একটি জটিল প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াসের বিভাজন ও পুনঃগঠন, সাইটোপ্লাজমের নতুন দুই কোষে গমন, সেল মেমব্রেন এবং উদ্ভিদ কোষে কোষপ্রাচীর গঠনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে M. Phase সমাপ্ত হয়। কোষ চক্রের মোট সময়ের মাত্র ৫-১০ ভাগ সময় ব্যয় হয় মাইটোটিক ফেজের জন্য। স্তন্যপায়ীদের কোষ চক্র মাইটোটিক দশা ১-১.৫ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এভাবেই ইন্টারফেজ → M. ফেজ → ইন্টারফেজ চক্রাকারে চলতে থাকে।