ছত্রাক (Fungus)
ক্লোরোফিলবিহীন, নিউক্লিয়াসযুক্ত বহুকোষী, অভাস্কুলার, হাইফি সমৃদ্ধ মাইসেলিয়াম দ্বারা গঠিত হেটেরোট্রফিক সুকেন্দ্রিক জীব যারা শোষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য গ্রহণ করে, তাদের ছত্রাক বলে। ছত্রাক নিয়ে গবেষণা করাকে Mycology বা ছত্রাকতত্ত্ব বলে। এ পর্যন্ত প্রায় ৯০,০০০ প্রজাতির ছত্রাক পাওয়া গেছে।
পরিবেশ (Environment):
ছত্রাকের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ হলো আর্দ্রতা, উষ্ণতা, অর্গানিক খাদ্যসমৃদ্ধ ছায়াযুক্ত বা অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা।
মধু ছত্রাক বা হানি মাশরুম (Honey mushroom – Armillaria ostopae):
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জীব হিসেবে গণ্য। করা হয়। ধারণা করা হয় এর বয়স প্রায় ২৪০০ বছর এবং প্রায় ২০০০ একর জমির উপর বিস্তৃত থাকে। এটি বিস্তৃতির সময় বহু বৃক্ষকে নির্মূল করে থাকে। কিছু ছত্রাক যেমন-Armillaria malled অন্ধকারে আলোক (বিচ্ছুরণ) ঘটায়। কিছু ছত্রাক বিষাক্ত এবং কিছু ছত্রাক এত বিষাক্ত যে এরা মানুষ কিংবা প্রাণীর তাৎক্ষণিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব বিষাক্ত ছত্রাকে অ্যামাটক্সিন (amatoxins) নামক পদার্থ থাকে।
ছত্রাকের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of the fungus):
- ছত্রাক ক্লোরোফিলবিহীন, অসবুজ, সালোকসংশ্লেষণে অক্ষম, অপুষ্পক উদ্ভিদ।
- এরা মৃতজীবী (saprophytic), পরজীবী (parasitic) বা মিথোজীবী হিসেবে বাস করে।
- এরা সুকেন্দ্রিক অর্থাৎ এদের কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস ও বিভিন্ন অঙ্গাণু বিদ্যমান।
- ছত্রাকের কোষপ্রাচীর কাইটিন (এক প্রকার জটিল পলিস্যাকারাইড) নির্মিত।
- ছত্রাকের সঞ্চিত খাদ্য প্রধানত গ্লাইকোজেন (glycogen), তৈলবিন্দু, কখনো কখনো কিছু পরিমাণ ভলিউটিন ও চর্বি থাকতে পারে।
- ছত্রাকদেহে ভাস্কুলার টিস্যু নেই।
- এদের জননাঙ্গ এককোষী (unicellular)।
- স্ত্রী জননাঙ্গে থাকা অবস্থায় জাইগোট বহুকোষী ভ্রূণে পরিণত হয় না।
- হ্যাপ্লয়েড স্পোর দিয়ে বংশবিস্তার হয়।
- জাইগোট-এ মায়োসিস বিভাজন ঘটে, তাই থ্যালাস হ্যাপ্লয়েড।
- অধিকাংশ ছত্রাক সদস্যই শশাষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুষ্টি সংগ্রহ করে।
- তীব্র অভিযোজন ক্ষমতা (কতক 5°C নিমতাপমাত্রায় এবং কতক 50°C এর উপর তাপমাত্রায় জন্মাতে পারে)।
- ছত্রাক থ্যালোফাইটা জাতীয় উদ্ভিদ।
- এককোষী ছাড়া সব ছত্রাকের দেহ হাইফি দ্বারা গঠিত।
মার্গুলিস কিংডম ফানজাইকে পাঁচটি ফাইলামে বিভক্ত করেছেন। ফাইলাম পাঁচটি হলো :
- Zygomycota
- Ascomycota
- Basidiomycota
- Deuteromycota
- Mycophycophyta
ছত্রাকের দৈহিক গঠন (Vegetative structure of fungi) :
- অধিকাংশ ছত্রাকই বহুকোষী।
- দেহ সূত্রাকার (filamentous), শাখান্বিত এবং আণুবীক্ষণিক।
- ছত্রাকের সূত্রাকার শাখাকে একবচ নে হাইফা (hypha) এবং বহুবচনে হাইফি (hyphae) বলা হয়।
- হাইফা সরু, স্বচ্ছ ও নলাকার।
- সেপ্টা (Septa): হাইফার ছিদ্রযুক্ত প্রস্থপ্রাচীরকে সেপ্টা (septa) বলে।
- মাইসেলিয়াম (Mycelium): অসংখ্য শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট সূত্রাকার হইফি দ্বারা গঠিত ছত্রাক দেহকে মাইসেলিয়াম (mycelium) বলে।
- সিনোসাইটিক মাইসেলিয়াম : মাইসেলিয়ামে অবস্থিত অনেকগুলো হাইফি যখন প্রস্থপ্রাচীরবিহীন এবং বহু নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট হয় তখন তাকে সিনোসাইটিক মাইসেলিয়াম বলে। যেমন- Saprolegnia sp-এ দেখা যায়।
- হস্টোরিয়াম (Haustorium): পোষক দেহ থেকে খাদ্য শোষণকারী হাইফাকে হস্টোরিয়াম বলে।
- সিনোসাইট : কোষে একাধিক নিউক্লিয়াস থাকলে তাকে সিনোসাইট বলে।
- রাইজয়েড (Rhizoid): পরিবেশ থেকে খাদ্য শোষণকারী হাইফাকে রাইজয়েড বলে।
- রাইজোমর্ফ : কোনো কোনো উচ্চশ্রেণির ছত্রাকে মাইসেলিয়াম শক্ত রশির মতো গঠন সৃষ্টি করে যাকে রাইজোমর্ফ (rhizomorph) বলে। যেমন-Agaricus .
- মাইকোরাইজাল ছত্রাক (Mycorrhiza Fungi): উদ্ভিদের সরু মূল বা মূলরোমের চারদিকে বা অভ্যন্তরে নির্দিষ্ট ছত্রাক জালের মতো বেষ্টন করে রাখে। এদেরকে মাইকোরাইজাল ছত্রাক বলে। যেমন- Suprolegnia sp .
- সঞ্চিত খাদ্য (Reserve Food): ছত্রাক কোষে গ্লাইকোজেন ও তৈলবিন্দু রূপ খাদ্য সঞ্চিত থাকে।
![Fungus](https://10minuteschool.com/content/wp-content/uploads/2022/03/18.1-3-1024x615.png)
- কোষপ্রাচীর (Cell Wall): বিভিন্ন শ্রেণির ছত্রাকের কোষ প্রাচীরে পার্থক্য থাকলেও অধিকাংশ ছত্রাক কোষের কোষ প্রাচীরের মুখ্য উপাদান কাইটিন জাতীয় পদার্থ। কাইটিন হলো এক প্রকার জটিল পলিস্যাকারাইড। প্রোটোপ্লাস্টকে সংরক্ষণ করাই এর প্রধান কাজ। এটি পানি ও অন্যান্য দ্রবণের জন্য ভেদ্য।
- প্রোটোপ্লাস্ট (Protoplast): কোষপ্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত সমুদয় জীবিত পদার্থই প্রোটোপ্লাস্ট নামে পরিচিত। কোষঝিল্লি, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস নিয়ে ছত্রাকের প্রোটোপ্লাস্ট গঠিত হয়ে থাকে। নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো।
- কোষঝিল্লি (Cell membrane): কোষপ্রাচীরের ভেতরের দিকে অবস্থিত এটি একটি পাতলা পর্দা যা কোষপ্রাচীরের সাথে নিবিড়ভাবে লেগে থাকে। ছত্রাকের কোষঝিল্লির প্রধান উপাদান ergosterol। কোষঝিল্লিটি কোনো কোনো স্থানে ক্ষুদ্র পকেটের আকারে ভাঁজ হয়ে লোমোজোম গঠন করে থাকে।
- সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm): কোষঝিল্লির ভেতরের দিকে জেলির ন্যায় পদার্থটির নাম সাইটোপ্লাজম। তরুণ মাইসেলিয়াম ও হাইফার শীর্ষদেশে সাইটোপ্লাজম ঘন দানাদার ও সমস্বত্ব। কিন্তু পরিণত মাইসেলিয়ামে সাইটোপ্লাজম অপেক্ষাকৃত পাতলা ও গহ্বরযুক্ত থাকে। সাইটোপ্লাজমের ভেতরে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, মাইটোকন্ড্রিয়া, কোষ গহ্বর প্রভৃতি থাকে, তবে প্লাস্টিড থাকে না।
- সাইটোপ্লাজমে সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে গ্লাইকোজেন, ভলিউটিন, তৈলবিন্দু, চর্বি প্রভৃতি বিদ্যমান। কতিপয় প্রজাতির ছত্রাকের সাইটোপ্লাজমে বিশেষ করে স্পোরে লাল, নীল বেগুনি বর্ণের ক্যারোটিনয়েড পদার্থ থাকে।
- নিউক্লিয়াস (Nucleus): ছত্রাকের সাইটোপ্লাজমে এক বা একাধিক গোলাকার বা উপবৃত্তাকার নিউক্লিয়াস থাকে। প্রতিটি নিউক্লিয়াসে একটি নির্দিষ্ট ও সচ্ছিদ্র নিউক্লিয়ার মেমব্রেন থাকে। নিউক্লিয়াসের কেন্দ্রীয় অঞ্চলটি অপেক্ষাকৃত ঘন থাকে। কোনো কোনো ছত্রাকবিদ এ কেন্দ্রীয় অঞ্চলটিকে নিউক্লিওলাস হিসাবে গণ্য করে থাকেন।
ছত্রাকের ডাইমর্ফিজম (Dimorphism):
ভিন্নতর পরিবেশের কারণে নিজের আকৃতি পরিবর্তনের যোগ্যতাকে ডাহমফিজম বুলে। Histoplasma capsulatum মাটিতে সূত্রাকার এবং মানুষের ফুসফুসে কোষপিন্ড হিসেবে অবস্থান করে। এটি হিস্টোপ্লাজমোসিস রোগের সৃষ্টি করে।
ছত্রাকের খাদ্যগ্রহণ :
ছত্রাক শোষণ (absorption) প্রক্রিয়ায় খাদ্য গ্রহণ করে। হাইফি তার চারপাশে খাদ্যদ্রব্যে পরিপাকীয় এনজাইম নিঃসরণ করে খাদ্য পরিপাক করে। এই পরিপাককৃত খাদ্য হাইফির অভ্যন্তরে ব্যাপ্ত হয় অথবা সক্রিয়ভাবে কোষাভ্যন্তরে স্থানান্তরিত হয়। এই কার্যটি সাধারণত হাইফির শীর্ষের দিকেই হয়ে থাকে। খাদ্যদ্রব্য পরে সাইটোপ্লাজমিক প্রবাহের (cytoplasmic streaming) মাধ্যমে দেহের পুরাতন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। পরজীবী ছত্রাক পোষক কোষের অভ্যন্তর থেকে হস্টোরিয়া (haustoria)-এর মাধ্যমে খাদ্য শোষণ করে। শর্করা, ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড, খনিজ লবণ ও ভিটামিন ছত্রাকের প্রধান খাদ্য।
ছত্রাকের বৃদ্ধি (Growth of fungus):
বৃদ্ধিকালে অধিকাংশ বিপাকীয় কার্যাবলি হাইফির শীর্ষে ঘটে থাকে। অধিকাংশ নিউক্লিয়াস, মাইটোকন্ড্রিয়া, অন্যান্য অঙ্গাণু বর্ধিষ্ণু শীর্ষের পেছনেই জড় হয়। হাইফির মাথাকে ডোম (dome) বলা হয়। ডোম অঞ্চলে নতুন সৃষ্ট ভেসিকল (vesicle) জড় হয় যা কোষঝিল্লি ও কোষ প্রাচীর তৈরির উপাদান ও এনজাইম বহন করে থাকে।
ছত্রাকের জনন (Reproduction of fungi):
- হলোকারপিক ছত্রাক (Holocarpic fungus): কোনো কোনো ছত্রাক প্রজাতির সমস্ত দেহকোষটিই জনন কাজে ব্যবহৃত হয়, ফলে এ ধরনের ছত্রাকের দৈহিক ও জনন অঙ্গের কোনো পার্থক্য থাকে না। এরূপ ছত্রাককে বলা হয় হলোকারপিক ছত্রাক; যেমন- Synchytrium।
- ইউকারপিক ছত্রাক (Eucharistic fungi): অধিকাংশ ছত্রাকের দেহের অংশবিশেষ হতে জনন যন্ত্রের সৃষ্টি হয়, অন্য অংশ স্বাভাবিক থাকে। এরূপ ছত্রাককে বলা হয় ইউকারপিক ছত্রাক; যেমন- Suprolegnia।
১। অঙ্গজ জনন (Vegetative Reproduction):
দেহাঙ্গের মাধ্যমে অঙ্গজ জনন হয়। নিম্নলিখিত উপায়ে ছত্রাকের অঙ্গজ জনন হয়ে থাকে :
- দৈহিক খন্ডায়ন (Fragmentation): ছত্রাক দেহটি একাধিক খন্ডে বিভক্ত হয় এবং প্রতিটি খন্ড একটি স্বতন্ত্র ছত্রাক দেহে পরিণত হয়, যেমন- Rhizopuss, Penicillium.
- দ্বিভাজন (Binary fission): দৈহিক কোষটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় দু’টি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে এবং প্রতিটি অপত্য কোষ একটি স্বতন্ত্র ছত্রাক কোষে পরিণত হয়। ঈস্ট বা Saccharomyces ছত্রাকে এরূপ দেখা যায়।
- কুঁড়ি সৃষ্টি (Budding): কোনো কোনো ছত্রাকের দেহ থেকে কুঁড়ি সৃষ্টি হয় এবং কুঁড়িটি পৃথক হয়ে একটি স্বতন্ত্র ছত্রাকের সৃষ্টি করে। ঈস্ট বা Saccharomyces ছত্রাকে এরূপ দেখা যায়।
![Fungus](https://10minuteschool.com/content/wp-content/uploads/2022/03/20.1-1-1024x621.png)
২। অযৌন জনন (Asexual Reproduction) :
ছত্রাকের অযৌন জননের প্রধান প্রক্রিয়া হল স্পোর উৎপাদন প্রক্রিয়া। অযৌন স্পোর প্রধানত দু’প্রকার; যথা- স্পোরোঞ্জিওস্পোর ও কনিডিয়া। ছত্রাকের স্পোর উৎপাদন অঙ্গকে স্পোরোঞ্জিয়াম (বহুবচনে স্পোরোঞ্জিয়া) বলে। স্পোরোঞ্জিয়ামের অভ্যন্তরে স্পোর উৎপন্ন হলে তাকে স্পোরোঞ্জিওস্পোরে বলে। স্পোরোঞ্জিওস্পোর দু’ধরনের (i) জুস্পোর ও (ii) অ্যাপ্লানোস্পোর। স্পোরোঞ্জিওস্পোরের সাথে ফ্ল্যাজেলা যুক্ত থাকলে তাকে জুস্পোর বলে; যেমন- Saprolegnia এবং স্পোরোঞ্জিওস্পোর যদি ফ্ল্যাজেলাবিহীন হয় তবে তাকে অ্যাপ্লানোস্পোর বলে।
প্রজাতির উপর নির্ভর করে প্রতিটি স্পোরোঞ্জিয়ামে অ্যাপ্ল্যানোস্পোরের সংখ্যা এক থেকে একাধিক হতে পারে; যেমন- Mucor। কনিডিওফোর নামক বিশেষ হাইফার মাথায়ও স্পোর উৎপন্ন হতে পারে, এরূপ স্পোরকে কনিডিয়া বলা হয়। স্পোর পুরু আবরণ দিয়ে আবৃত থাকলে তাকে ক্ল্যামাইডোস্পোর বলে; যেমন—Mucor, Fusarium। স্পোরগুলো উপযুক্ত পরিবেশে অঙ্কুরিত হয়ে স্বতন্ত্র ছত্রাক উদ্ভিদের জন্ম দেয়। Saprolegnia-তে জুস্পোরের মাধ্যমে অযৌন জনন হয়। ছত্রাকের হাইফাগুলো প্রস্থপ্রাচীর সৃষ্টির মাধ্যমে ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত হয়। ঐ সকল খন্ডকে অয়ডিয়া (oidia) বলে। অয়ডিয়া স্পোরের ন্যায় আবরণ তৈরি করে অংকুরোদগমের দ্বারা নতুন ছত্রাক দেহ গঠন করে; যেমন- Coprinus togopus.
৩। যৌন জনন (Sexual Reproduction) :
দু’টি গ্যামিটের মিলনের মাধ্যমে যৌন জনন ঘটে থাকে। ছত্রাকের জননাঙ্গকে গ্যামিট্যাঞ্জিয়াম (বহুবচনে- গ্যামিট্যাঞ্জিয়া) বলা হয়। গ্যামিট্যাঞ্জিয়ামে গ্যামিট সৃষ্টি হয়। পুং এবং স্ত্রী (বা +,-) গ্যামিট একই রকম (কোনো পার্থক্য বোঝা যায় না) হলে তাকে আইসোগ্যামিট বলে। পুং এবং স্ত্রী গ্যামিট পৃথক যোগ্য হলে সাধারণত পুং গ্যামিট্যাঞ্জিয়ামকে অ্যানথেরিডিয়াম এবং স্ত্রী গ্যামিট্যাঞ্জিয়ামকে উগোনিয়াম বলা হয়। একই রকম জনন কোষের মিলনকে আইসোগ্যামি এবং দুই ধরনের জনন কোষের মিলনকে হেটেরোগ্যামি বা উগ্যামি বলে। প্রাথমিকভাবে দু’টি জনন কোষের প্রোটোপ্লাজমের মিলন ঘটে যাকে বলা হয় প্লাজমাগ্যামী (plasmogamy) এবং পরে নিউক্লিয়াস দু’টির মিলন ঘটে যাকে বলা হয় কারিওগ্যামী। ক্যারিওগ্যামীর মাধ্যমে জাইগোট সৃষ্টি হয়।
গ্যামিট সৃষ্টি, প্লাজমাগ্যামী ও ক্যারিওগ্যামী এই তিনটি পর্যায় শেষে ছত্রাকের যৌন জনন সম্পন্ন হয়। জাইগোটের মায়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে ছত্রাকটি পুনরায় হ্যাপ্লয়েড (n) অবস্থাপ্রাপ্ত হয়। অ্যাসকোমাইকোটা বা স্যাক ফানজাই-তে অ্যাসকাস নামক নলের ভেতরে ৪-৮টি অ্যাসকোম্পাের তৈরি হয়। ব্যাসিডিওমাইকোটা বা ক্লাব-ফানজাই-তে ব্যাসিডিওকার্প-এ সৃষ্ট ব্যাসিডিয়ামের মাথায় ব্যাসিডিওস্পোর উৎপন্ন হয়।
কতক ছত্রাকের যৌন জনন প্রক্রিয়ায় দুটি mating-type-এর (+ এবং-) সাইটোপ্লাজম প্রথম একসাথে মিশে যায় কিন্তু নিউক্লিয়াস দুটি বহু পরে মিলিত হয়। কাজেই নিউক্লিয়াস দুটি মিলিত হওয়ার (ক্যারিওগ্যামী) পূর্ব পর্যন্ত এই হাইফার ভেতরে বংশগতীয়ভাবে দুই প্রকার দুটি হ্যাপ্লয়েড নিউক্লিয়াস বিরাজ করে। বংশগতীয়ভাবে দুই প্রকার দুটি হ্যাপ্লয়েড নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট কোষ বা হাইফাকে dikaryotic কোষ বা dikaryotic হাইফা বলা হয়। পুরো মাইসেলিয়াম এরূপ হলে তাকে dikaryotic মাইসেলিয়াম বলা হয়। দুটি নিউক্লিয়াস থাকে বলে এটি ডাইক্যারিয়ন (dikaryon), আবার দুই প্রকার (+, -) নিউক্লিয়াস থাকে বলে এটি হেটেরোক্যারিয়ন।
![Fungus](https://10minuteschool.com/content/wp-content/uploads/2022/03/22.1-1-942x1024.png)