10 Minute School
Log in

Chemistry and General Concepts | রসায়নের ধারণা

রসায়ন পরিচিতি (Introduction to Chemistry):

বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থের গঠন, পদার্থের ধর্ম এবং পদার্থের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে রসায়ন বলে। এর ইংরেজি Chemistry। শব্দটি এসেছে Chemi থেকে। মধ্যযুগে আরবের রসায়ন চর্চাকে বলা হত আল কেমি এবং যারা চর্চা করত তাদের বলা হত আল কেমিস্ট। জাবির ইবনে হাইয়ানকে রসায়নের জনক বলা হয় তবে আধুনিক রসায়নের জনক অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়ে।

Chemistry evolution

জাবির ইবনে হাইয়ান বিশ্বাস করতেন সকল পদার্থ মাটি, পানি, আগুন আর বাতাস দিয়ে  তৈরি। রসায়নের প্রথম প্রকৃত চর্চাকারী হলেন অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়ে, রবার্ট বয়েল, স্যার বেকন ও জন ডাল্টন রসায়ন আবিষ্কারের পূর্বে মানুষ দুটি ধাতু ব্যবহার করতো। এগুলো হল সোনা ও ব্রোঞ্জ । 

  • প্রথম ব্যবহৃত ধাতু – সোনা
  • ব্রোঞ্জ: খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দের দিকে কপার (৯০%), ও টিন (১০%) ধাতুকে গলিয়ে তরলে পরিণত করে এবং এ দুটি তরলকে একত্রে মিশিয়ে অতঃপর ঠান্ডা করে কঠিন সংকর ধাতু (alloy) তে পরিণত করা হয়। এ সংকর ধাতুর (Alloy) নাম ব্রোঞ্জ।

রসায়নের ক্ষেত্র (Areas of Chemistry):

বস্তু/পদার্থ উপাদান উৎস ও রাসায়নিক পরিবর্তন
বায়ু প্রধানত অক্সিজেন আমরা শ্বাস নেওয়ার সময় যে বায়ু গ্রহণ করি সেই বায়ুর অক্সিজেন শরীরের ভেতরে খাদ্য উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে শক্তি উৎপাদন করে।
খাবারের পানি পানিসহ বিভিন্ন খনিজ লবণ। পানি আমাদের শরীরে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এটি শরীরের মধ্যে বিভিন্ন পদার্থের দ্রাবক হিসেবেও কাজ করে। জীবের শরীরের বেশির ভাগই পানি। শরীরের বিষাক্ত পদার্থ এ পানিতে দ্রবীভূত হয়ে প্রস্রাব ও ঘামের সাহায্যে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। খাবারের পানিতে পানি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ যেমন- ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি ধাতুর লবণ থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী।
সার নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম উল্লিখিত মৌলগুলো উদ্ভিদের জন্য খুব প্রয়োজনীয় উপাদান। বিভিন্ন সারে এসব মৌলের যৌগ থাকে। তাই বিভিন্ন ধরনের সার উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে। ফলে ফসলের উৎপাদন ভালো হয়।
কাগজ সেলুলোজ কাগজের আবিষ্কার মানব সভ্যতার এক অনন্য অবদান। বাঁশ, আখের ছোবড়া ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে সেলুলোজ থাকে। কাগজ তৈরির কারখানায় এই সমস্ত বস্তুকে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কাগজ তৈরি করা হয়।

টেবিল: রসায়নের কিছু ক্ষেত্র

রসায়নের সাথে বিভিন্ন শাখার সম্পর্ক (Relationship of various disciplines to chemistry):

  1. জীব বিজ্ঞানের সাথে রসায়নের সম্পর্ক (Relation of Chemistry to Biology): উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বেশ কিছু রাসায়নিক পদার্থ ও তাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া জীব বিজ্ঞানে আলোচনা করা হয়। যেমন- সালোকসংশ্লেষণ, প্রাণীদেহে পরিপাক ইত্যাদি।
  2. পদার্থ বিজ্ঞানের সাথে রসায়নের সম্পর্ক (Relation of Chemistry to Physics): পদার্থবিজ্ঞানের চুম্বক, বিদ্যুৎ ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি হয় রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে।
  3. গণিতের সাথে রসায়নের সম্পর্ক (Relation of Chemistry to Mathematics): গণিতের অনেক সূত্র ব্যবহার করেই রসায়নের বিভিন্ন তত্ত্ব ও হিসাব নিকাশ করা হয়।

রসায়ন পাঠের গুরুত্ব (Importance of Chemistry):

রসায়নের গুরুত্ব মানব জীবনে খুবই ব্যাপক। সারাদিনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রসায়ন জড়িত। আমরা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমানো পর্যন্ত সার্বক্ষণিক রসায়নকে ব্যবহার করি। আমরা সকালে যে ব্রাশ করি এই ব্রাশ এক ধরনের পলিমার। আবার যে পেস্ট ব্যবহার করে থাকি তাও এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। খাবার পরিপাকের জন্য পানি খেয়ে থাকি, সেটিও রাসায়নিক পদার্থ।

আমরা যে ভাত, রুটি খাই সেগুলো স্টার্চ জাতীয় পদার্থরোগ হলে আমরা ওষুধ সেবন করি। এই ওষুধগুলো রাসায়নিক পদার্থ। মানুষের মৌলিক চাহিদা। 

যেমন: অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা উপকরণ যোগানে রসায়ন সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত। রসায়ন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানব জাতি ও পরিবেশের অনেক কল্যাণ সাধিত হয়। দৈনন্দিন জীবনে রসায়ন ব্যবহার করে আমরা নানাভাবে উপকৃত হতে পারি। মোটকথা প্রাচীন সভ্যতা থেকে আধুনিক সভ্যতায় রসায়নের পরিভ্রমণ সমাজের তথা বিজ্ঞানের প্রায় সর্বক্ষেত্রে লক্ষণীয়।

রসায়নে অনুসন্ধান বা গবেষণা প্রক্রিয়া (The process of inquiry or research in chemistry):

গবেষণা (Research): পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনো কিছু জানার চেষ্টাই গবেষণা।

রসায়নে অনুসন্ধান বা গবেষণা প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ :

Process of Inquiry

 

Research in Chemistry

রসায়ন পাঠের গুরুত্ব (Importance of Chemistry):

রসায়ন পরীক্ষাগারে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য থাকে তার বেশিরভাগই আমাদের জন্য অথবা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই রসায়ন গবেষণাগারে খুব সতর্কতার সাথে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হয়। কারণ এখানে এসিড গায়ে পড়লে ক্ষতি হতে পারে, বিস্ফোরণ সহ আরো নানা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে একটি ভুল পদক্ষেপের জন্য। তাই দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে বেশ কিছু জিনিস ব্যবহার করতে হয়। যেমন: 

  • শরীরের নিরাপত্তার জন্য নিরাপদ পোশাক বা অ্যাপ্রোন
  •  হাতের নিরাপত্তার জন্য হ্যান্ড গ্লাভস
  • চোখের নিরাপত্তার জন্য → সেফটি গ্লাস

Apron safety glass hand gloves

রাসায়নিক দ্রব্যের সাংকেতিক চিহ্ন ও এদের ঝুঁকি (Hazard Pictograms Symbols)

Explosive Gloves

বিস্ফোরক পদার্থ (Explosive Substance)

বৈশিষ্ট্য :

(i) এসব পদার্থ আঘাত লাগলে বা আগুন লাগলে বিস্ফোরিত হতে পারে।

(ii) বিস্ফোরিত হলে তা শরীর এবং গবেষণাগারের জন্য ক্ষতিকর। 

উদাহরণ : টিএনটি, জৈব পার অক্সাইড, নাইট্রোগ্লিসারিন।

Flammable Substance

দাহ্য পদার্থ (Flammable Substance)

বৈশিষ্ট্য : (i) এসব পদার্থে দ্রুত আগুন ধরতে পারে।

(ii) এদেরকে আগুন/তাপ থেকে সবসময় দূরে রাখতে হয়।। 

উদাহরণ : অ্যালকোহল, ইথার, অ্যারোসোল, পেট্রোলিয়াম।

Toxic Substances

বিষাক্ত পদার্থ (Toxic Substance)

বৈশিষ্ট্য :

(i) শরীরে লাগলে বা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে নানা প্রকারের ক্ষতি হয়।

(ii) এসব পদার্থ ব্যবহারের সময় অ্যাপ্রন, হ্যান্ডগ্লাভস, সেফটি গগলস ব্যবহার করতে হয়। 

উদাহরণ : বেনজিন, ক্লোরো-বেনজিন, মিথানল।

Irritant Substances

উত্তেজক পদার্থ (Irritant Substance)

বৈশিষ্ট্য : (i) ত্বক, চোখ, শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি করে।

উদাহরণ : সিমেন্ট ডাস্ট, লঘু এসিড, ক্ষার, নাইট্রাস অক্সাইড।

Radioactive Substances

তেজস্ক্রিয় পদার্থ (Radioactive substance)

বৈশিষ্ট্য :

(i) এসব পদার্থ থেকে যে ক্ষতিকারক রশ্মি বের হয় তা ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধি রোগ সৃষ্টি করে।

(ii) এসব পদার্থের মাধ্যমে মানুষ বিকলাঙ্গও হতে পারে।

উদাহরণ : ইউরেনিয়াম, রেডিয়াম।

Dangerous for Environment

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর  (Dangerous for environment)

বৈশিষ্ট্য :

(i) এ চিহ্নধারী পদার্থগুলো উদ্ভিত ও প্রাণীর উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।

 (ii) এসব পদার্থকে যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

উদাহরণ : লেড (Pb), মারকারি (Hg)।

Corrosive Substances

ক্ষয়কারী পদার্থ (Corrosive Substance)

বৈশিষ্ট্য :

(i) এ চিহ্নধারী পদার্থ শরীরের কোথাও লাগলে ক্ষত সৃষ্টি করবে। 

(ii) শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের ভেতরে ক্ষতিসাধন করতে পারে। 

উদাহরণ : হাইড্রোক্লোরিক এসিড, সালফিউরিক এসিড, সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড এর ঘন দ্রবণ।

Health Hazard Substances

স্বাস্থ্য-ঝুঁকির সংকেত (Health Hazard sign)

বৈশিষ্ট্য :

(i) ত্বকে লাগলে বা শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে শরীরের স্বল্পমেয়াদি ক্ষতি সাধন করে থাকে।

(ii) ক্যান্সারও হতে পারে। 

উদাহরণ : বেনজিন (C_6H_6), টলুইন (C_7H_8), জাইলিন (C_8H_{10})

Other Topics