10 Minute School
Log in

বাংলাদেশের সংবিধান এবং প্রশাসনিক কাঠামো

‘বাংলাদেশ সংবিধান’ রচনার ইতিহাস (Constitution of Bangladesh)

  • সংবিধান রচনা কমিটি গঠন করা হয় ১১ এপ্রিল, ১৯৭২। সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ড: কামাল হোসেন, কমিটির সদস্যসংখ্যা ছিল ৩৪। খসড়া সংবিধান গণপরিষদে উত্থাপন করা হয় ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর এবং সেটি গৃহীত হয় ৪ নভেম্বর, ১৯৭২ সালে। 
  • ৪ নভেম্বর ‘সংবিধান দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
  • এ কে এম আব্দুর রউফ খসড়া সংবিধানের পাণ্ডুলিপি হাতে লেখেন ।
  • খসড়া সংবিধানের পর্যালোচনায় ভাষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলেন- ড. আনিসুজ্জামান (আহবায়ক), সৈয়দ আলী আহসান, মযহারুল ইসলাম।
  • সংবিধান কার্যকর করা হয় ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২-এ।

বাংলাদেশ সংবিধান বিষয়ক মৌলিক কিছু তথ্য

বাংলাদেশ সংবিধান’-এর মোট ১১টি অধ্যায় বা ভাগ রয়েছে এবং ১৫৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান প্রস্তাবনা দিয়ে শুরু এবং ৭টি তফসিল দিয়ে শেষ হয়েছে।

সাংবিধানিক পদসমূহ

  1. রাষ্ট্রপতি
  2. প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী
  3. স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার
  4. সংসদ সদস্যগণ
  5. প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতি
  6. নির্বাচন কমিশনার
  7. অ্যাটর্নি জেনারেল
  8. সরকারী কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান
  9. মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক

রাষ্ট্রপতি সম্পর্কিত কিছু তথ্য

  • রাষ্ট্রপতি হওয়ার ন্যূনতম বয়স ৩৫ বছর।
  • রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান স্পীকার।
  • বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ অংশের ৪৮-৫৪ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি সম্পর্কিত বিধানাবলি উল্লেখ রয়েছে।
  • রাষ্ট্রপতি অপসারণ করতে সংসদের দুই- তৃতীয়াংশের ভোট প্রয়োজন
  • রাষ্ট্রপতি শপথ বাক্য পাঠ করান- প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, স্পীকার, ডেপুটি স্পীকারকে।
  • বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৬(২) ধারা মোতাবেক রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর নিয়োগ দেন।
  • পদাধিকার বলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিষয়ক কিছু তথ্য

  • প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নূন্যতম বয়স ২৫ বছর
  • প্রধানমন্ত্রীকে বলা হয় বাংলাদেশ সরকারের প্রধান নির্বাহী
  • প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে এর সাথে পুরো মন্ত্রীসভাও ভেঙ্গে যায়।
  • ECNEC বা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী।
  • সংবিধানের ৫৫ ও ৫৬ ধারা মতে মন্ত্রীপরিষদের শীর্ষে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের মন্ত্রী পরিষদ:

১) মন্ত্রীপরিষদের নেতা হলেন প্রধানমন্ত্রী।

২) বাংলাদেশের মোট মন্ত্রণালয়/বিভাগ সংখ্যা ৪৩। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, রাষ্ট্রপতি কার্যালয় সহ ৪১টি মন্ত্রণালয় ও দুইটি বিভাগ (সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ) রয়েছে।

৩) সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সর্বাধিক এক-দশমাংশ Technocrat মন্ত্রী নিয়োগ করা যায়।

৪) বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে উত্থাপিত সরকারি বিল বলতে বুঝায় কেবলমাত্র মন্ত্রীদের দ্বারা উত্থাপিত বিল।

৫) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয় ১৫ জুলাই ১৯৯৮ সালে।

৬) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয় ২৩ অক্টোবর ২০০১ ।

৭) বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত প্রকাশনার নাম ‘মুক্তিবার্তা’।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা

মন্ত্রণালয় অধীন সংস্থা
রাষ্ট্রপতির কার্যালয় জন বিভাগ, আপন বিভাগ
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমি, লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মুদ্রণ ও প্রকাশনা, বিয়াম ফাউন্ডেশন

সচিবালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো

বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন
গ্রামভিত্তিক স্থানীয় সরকার শহরভিত্তিক স্থানীয় সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ
উপজেলা পরিষদ জেলা পরিষদ ১। বান্দরবান পাহাড়ি জেলা পরিষদ
ইউনিয়ন পরিষদ সিটি কর্পোরেশন ২। রাঙ্গামাটি পাহাড়ি জেলা পরিষদ
  পৌরসভা ৩। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি জেলা পরিষদ

বাংলাদেশের আইনসভা

  • বাংলাদেশের আইনসভার নাম জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এককক্ষবিশিষ্ট। 
  • জাতীয় সংসদের মোট আসন ৩৫০টি, নির্বাচিত আসন ৩০০টি ও সংরক্ষিত আসন ৫০টি।
  • জাতীয় সংসদের ১নং আসন পঞ্চগড়৩০০নং আসন বান্দরবান
  • সংসদে কাস্টিং ভোট হলো স্পীকারের ভোট।
  • ফ্লোর ক্রসিং হলো নিজ দলের বিপক্ষে ভোটদান।
  • জাতীয় সংসদে কোরাম হয় ৬০ জন।
  • জাতীয় সংসদের প্রথম নারী স্পীকার ডঃ শিরিন শারমিন চৌধুরী।
  • জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সংখ্যা ৫০টি। 
  • জাতীয় সংসদে এ পর্যন্ত দুইজন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান বক্তৃতা দিয়েছেন। তারা হলেন- সাবেক যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো (৩১জানুয়ারি,১৯৭৪) এবং ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভি ভি গিরি (১৮জুন, ১৯৭৪)।

জাতীয় সংসদের সাথে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ পদ ও কার্যাবলী

রাষ্ট্রপতি
  • জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহ্বান
  • অধিবেশন মুলতবি বা স্থগিত এবং
  • অধিবেশন ভেঙে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
স্পীকার
  • জাতীয় সংসদের সভাপতি।
  • নিয়মিত অধিবেশনে বিল উত্থাপন ও আলোচনার সুযোগ প্রদান।
  • কাস্টিং ভোট প্রদানের ক্ষমতা।
  • সংসদীয় কার্য উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি।
ডেপুটি স্পীকার
  • স্পীকারকে অধিবেশন পরিচালনায় সহযোগিতা করা। 
  • স্পীকারের অনুপস্থিতিতে জাতীয় সংসদের সভাপতিত্ব করা।
  • সংসদীয় স্থায়ী লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি।
প্রধানমন্ত্রী
  • জাতীয় সংসদের নেতা
হুইপ
  • জাতীয় সংসদের সর্বাত্মক বিধি অনুযায়ী শৃঙ্খলা রক্ষা করা ও দলীয় ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখা।

সাংবিধানিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান

নির্বাচন কমিশন
  • সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রয়োজন সাপেক্ষে কয়েকজন নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের বিধান রয়েছে।
  • রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের (প্রয়োজন সাপেক্ষে) নিয়োগ দেবেন।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)
  • বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি) বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় প্রতিষ্ঠিত একটি আধা বিচারিক সংস্থা।
  • এটি সংবিধানের ১৩৭ ও ১৪০ অনুচ্ছেদ এবং আরও কিছু সরকারি বিধি-বিধান অনুসারে কাজ করে।
কন্ট্রোলার ও অডিটর জেনারেল (সিএজি)
  • গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কন্ট্রোলার ও অডিটর জেনারেল (সিএজি) বা মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়কে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করে।
  • মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি।
  • সিএজি কর্তৃপক্ষের অধীনে প্রজাতন্ত্রের সরকারি একাউন্টস, সরকারি এজেন্সি, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং পাবলিক কোম্পানিসমূহের অডিট পরিচালনা করা হয় এবং তা সংসদে উপস্থাপিত হয়।
এটর্নি জেনারেল
  • সংবিধানের ৬৪(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সুপ্রীম কোর্টের বিচারক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন।
  • সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উত্থাপিত যেকোনো রেফারেন্সের ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব মত প্রকাশ করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত।

বাংলাদেশের বিচার বিভাগ

সুপ্রিম কোর্ট

  • বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আদালত। এর দুইটি বিভাগ- আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ।
  • সুপ্রিম কোর্ট এর একজন বিচারপতি রয়েছেন যাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি বলা হয়। তিনি রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিযুক্ত হন।
  • সুপ্রিম কোর্টে বিচারক হতে হলে কমপক্ষে ১০ বছরের এডভোকেট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা বাংলাদেশে বিচার বিভাগীয় পদে ১০ বছর বিচারক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
  • সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত স্বীয় পদে কর্মরত থাকতে পারেন।
  • সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়, ডিক্রি বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ করে শুনানির ব্যবস্থা করতে পারে।
  • রাষ্ট্রপতি আইনের কোনো ব্যাখ্যা চাইলে এই বিভাগ রাষ্ট্রপতিকে তা প্রদান করে। 

অধস্তন আদালত

  • বিচারবিভাগের অধীনে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় অধস্তন আদালত রয়েছে। এই আদালতগুলো ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা পরিচালনা করে।

জেলা জজ আদালত

  • জেলা আদালতের প্রধান হলেন জেলা জজ।
  • এই আদালত জেলা পর্যায়ের দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করে।
  • জেলা জজের সহায়তায় থাকেন অতিরিক্ত জেলা জজ ও সাব-জজ। 

গ্রাম আদালত

  • বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর হলো গ্রাম আদালত। এটি ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠন করা হয়।
  • ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিবাদমান দুই গ্রুপের দুই জন করে মোট পাঁচ জন সদস্য নিয়ে গ্রাম আদালত গঠিত।
  • যে সকল মামলা স্থানীয় পর্যায়ে বিচার করা সম্ভব সেগুলো এবং ছোটখাট ফৌজদারি মামলাও এই গ্রাম আদালতে বিচার করা হয়ে থাকে।
  • গ্রাম আদালত (সংশোধন) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, এই আদালত ৭৫ হাজার টাকার মূল্যমানের ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে।