10 Minute School
Log in

অপবর্তন গ্রেটিং (Diffraction Grating)

অপবর্তন গ্রেটিং (Diffraction Grating)

অপবর্তন সৃষ্টি করার জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থার নাম গ্রেটিং(Grating) বা ঝাঁঝরি। অনেকগুলো সমপ্রস্থের রেখাছিদ্র পাশাপাশি স্থাপন করে গ্রেটিং বা ঝাঝরি গঠন করা হয়। গ্রেটিং প্রধানত দুই প্রকার, যথা—
১। নিঃসরণ বা নির্গমন গ্রেটিং (Transmission grating) এবং
২। প্রতিফলন গ্রেটিং (Reflection grating)।

নিঃসরণ গ্রেটিং
(Transmission grating) :

আলোক উৎসকে বিশ্লেষণের একটি অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ হলো অপবর্তন গ্রেটিং। একটি সূচালো অগ্রভাগ-বিশিষ্ট হীরার টুকরা দিয়ে একটি স্বচ্ছ সমতল কাচ পাতে দাগ কেটে গ্রেটিং তৈরি করা হয়। গ্রেটিং-এ প্রতি সেন্টিমিটারে প্রায় 10,000টি দাগ কাটা থাকে। এক একটি চিড়ের প্রস্থ প্রায় 10^{-4} cm।

সংজ্ঞা : পাশাপাশি স্থাপিত অনেকগুলো সমপ্রস্থের সূক্ষ্ম চিড়সম্পন্ন পাতকে নিঃসরণ গ্রেটিং বলে। সাধারণ কাজের জন্য পরীক্ষাগারে আর এক প্রকারের নিঃসরণ গ্রেটিং ব্যবহার করা হয়। প্রকৃত রেখাঙ্কিত গ্রেটিং হতে সেলুলয়েড ফিল্মের ওপর ঢালাই পদ্ধতিতে এই গ্রেটিং প্রস্তুত করা হয়। এর নাম প্রতিলিপি গ্রেটিং (Replica grating)।

গ্রেটিং ধ্রুবক
Grating constant :

যে কোনো একটি চিড়ের শুরু থেকে পরবর্তী চিড়ের শুরু পর্যন্ত দূরত্বকে গ্রেটিং ধ্রুবক বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে কোনো চিড়ের শেষ প্রান্ত থেকে পরবর্তী চিড়ের শেষ প্রান্তের দূরত্বকে গ্রেটিং ধ্রুবক বলে।

ব্যাখ্যা : মনে করি, একটি গ্রেটিং-এর প্রতিটি চিড়ের বেধ বা প্রস্থ = a
এবং প্রতিটি রেখার বেধ বা প্রস্থ = b
সংজ্ঞানুসারে, গ্রেটিং ধুবক, d = a + b
d-কে অনেক সময় গ্রেটিং উপাদান (Grating element) বলা হয়।
গ্রেটিং-এর ‘d’ দৈর্ঘ্যে রেখার সংখ্যা = 1টি
অতএব, একক দৈর্ঘ্যে রেখার সংখ্যা, N=\frac{1}{d}=\frac{1}{a+b}                                    

গ্রেটিং-এর (a + b) ব্যবধানে অবস্থিত দুটি বিন্দুকে বলা হয় অনুরূপ বিন্দু (corresponding points)।

গ্রেটিং-এর ব্যবহার
Uses of grating :

গ্রেটিং বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। নিম্নে এর ব্যবহার উল্লেখ করা হলো—
(১) আলোকের তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্ণয় করা যায়।
(২) একই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দুটি বর্ণালি রেখা পৃথক করা যায়।
(৩) তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সাপেক্ষে অপবর্তন কোণের পরিবর্তনের হার নির্ণয় করা যায়।

সমতল নিঃসরণ গ্রেটিং কর্তৃক অপবর্তন
Diffraction by a plane transmission grating

মনে করি, ABCD কাগজের অভিলম্ব তলে একটি সমতল নিঃসরণ গ্রেটিং [চিত্র  ]। ধরি এর প্রতিটি
অস্বচ্ছ রেখার বেধ ‘b’ ও স্বচ্ছ অংশের বেধ ‘a’. এখানে (a+b) দূরত্বকে বলা হয় গ্রেটিং উপাদান (grating element) বা গ্রেটিং ধ্রুবক (grating constant)। গ্রেটিং-এর (a+b) ব্যবধানে অবস্থিত দুইটি বিন্দুকে বলা হয় অনুরূপ বিন্দু (Corresponding points)। চিত্রে A ও C অথবা B ও D এক একজোড়া অনুরূপ বিন্দু।

মনে করি একটি একরঙ্গা সমতল তরঙ্গমুখ অর্থাৎ সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ গ্রেটিং-এর ওপর অভিললম্ব ভাবে আপতিত হলো। বেশির ভাগ রশ্মি অপবর্তিত হয়ে সরাসরি সোজা পথে যাবে এবং L উত্তল লেন্স দ্বারা এর ফোকাস তলে অবস্থিত S_1 S_2 , পর্দার O বিন্দুতে একত্রিত হবে। ফলে O বিন্দুটি খুবই উজ্জ্বল দেখাবে। একে কেন্দ্রীয় চরম বিন্দু (Central maxima) বলে।

এখানে অন্যান্য আলোক রশ্মি প্রতিটি রেখা বা দাগ অতিক্রম করবার সময় অপবর্তিত হয়ে বিভিন্ন দিকে গমন করবে। এই অপবর্তিত সমান্তরাল রশ্মিসমূহ উত্তল লেন্স দ্বারা প্রতিসৃত হয়ে লেন্সের ফোকাস তলে স্থাপিত পর্দার P বিন্দুতে একত্রিত হবে। ওই বিন্দুতে অপবর্তিত রশ্মিসমূহ যে গঠনমূলক বা ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার সৃষ্টি করে তার ওপর ওই বিন্দুর উজ্জ্বলতা নির্ভর করে। এখন A হতে অপবর্তিত রশ্মিসমূহের ওপর AKMN লক্ষ্ম টানি।

Grating

A ও C হতে রশ্মিদ্বয় কোণে অপবর্তিত হলে আলোক রশ্মি দুইটির পথ-পার্থক্য, CM = AC \sin\theta = (a+b) \sin\theta

একইভাবে B ও D দুইটি অনুরূপ বিন্দু হতে রশিদ্বয় কোণে ব্যবর্তিত হওয়ায় আলোক রশ্মি দুইটির পথ-পার্থক্য,

= DN-BK 

= (a+b+a)\sin\theta - a \sin\theta

= (a+b) \sin\theta  

এরূপে দেখানো যায় প্রতিক্ষেত্রেই যে কোনো দুইটি অনুরূপ বিন্দুর মধ্যে পথ-পার্থক্য = (a+b) \sin\theta  

\therefore P বিন্দু চরম বা উজ্জ্বল হলে,

(a+b) \sin\theta = n\lambda  

এবং অবম বা অন্ধকার হলে,

(a+b) \sin \theta=(2 n+1) \frac{\lambda}{2}

এখানে, n = একটি পূর্ণ সংখ্যা, এর মান 0, 1, 2, 3 ইত্যাদি অথবা – 1, – 2, – 3 ইত্যাদি হতে পারে ও \lambda = আলোকের তরঙ্গদৈর্ঘ্য।

n = 0 হলে কেন্দ্রীয় চরম বিন্দু পাওয়া যাবে। এই বিন্দুকে মুখ্য চরম বিন্দু (Principal maxima) বলে।
n = 1 বা – 1 বসালে মুখ্য চরম বিন্দুর দুই পার্শ্বে প্রথম উজ্জ্বল রেখা (first order maxima) দেখা যাবে। পুনঃ n = 2, বা -2 হলে, মুখ্য চরম বিন্দুর দুই পার্শ্বে দ্বিতীয় উজ্জ্বল রেখা (second order maxima) দেখা যাবে ইত্যাদি। অনুরূপভাবে অবম বিন্দুর শর্তে n = 0, 1, 2, 3 ইত্যাদি বসালে তাদের অবস্থান পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য প্রতি দুইটি চরম বিন্দুর মধ্যে একটি অবম বিন্দু থাকে। মুখ্য চরম বা মুখ্য অবম বিন্দু ব্যতীত যেসব চরম বা অবম বিন্দু পাওয়া যায় তাদেরকে যথাক্রমে গৌণ চরম বা গৌণ অবম বিন্দু বলে।

গ্রেটিং-এর প্রতি একক দৈর্ঘ্যে N সংখ্যক রেখা থাকলে,
N(a+b) = 1

বা, N = \frac{1}{a+b}

\therefore সমীকরণ (7.26) হতে পাই, \frac{1}{N} \sin\theta = n\lambda

বা, \lambda = \frac{\sin\theta}{N.n}

এখন, N, n\theta এর মান জেনে আলোকের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য \lambda এর মান বের করা হয়।