পাকস্থলীতে খাদ্য পরিপাক (Digestion of Food in Stomach)
পাকস্থলীটি ডায়াফ্রামের নিচে উদরের উপরের অংশে অবস্থিত প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১৫ সেন্টিমিটার চওড়া বাঁকানো থলির মতো অংশ। সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর দেহে পাকস্থলীর ধারণ ক্ষমতা থাকে ৩০ মিলিলিটার ১ আউন্স বয়সন্ধিকালে হয় ১ লিটার, আর প্রাপ্তবয়স্কের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১.৫ – ২ লিটার। পাকস্থলী নিম্নোক্ত কয়েকটি অংশে বিভক্ত :
- যে অংশে অন্ননালী উন্মুক্ত হয় তা কার্ডিয়া (cardia)।
- কার্ডিয়ার বামপাশে পাকস্থলী-প্রাচীর যা গম্বুজ আকার ধারণ করে তা ফানডাস (fundus)।
- ডান অবতল ও বাম উত্তল কিনারা যথাক্রমে ছোট ও বড় বাঁক (lesser and greater curvatures)।
- যে অংশটি ডিওডেনামে উন্মুক্ত হয়েছে তা পাইলোরাস (pylorus)।
কার্ডিয়াক ও পাইলোরিক অংশে একটি করে বৃত্তাকার পেশী বলয় আছে। বল দুটিকে যথাক্রমে কার্ডিয়াক ও পাইলোরিক স্ফিংক্টার বলে।
যান্ত্রিক পরিপাক (Mechanical Digestion)
- মুখ থেকে চর্বিত খাদ্য অন্ননালি পথে পাকস্থলীতে এসে 2-6 ঘণ্টা কাল অবস্থান করে।
- এ সময় প্যারাইটাল কোষ থেকে HCL ক্ষরিত হয় খাদ্যবাহিত অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়।
- মসৃণ পেশির 3টি স্তর নিয়ে পাকস্থলী গঠিত। পেশিস্তর বিভিন্ন দিকমুখী হওয়ায় পাকস্থলী প্রাচীর নানা দিকে সঞ্চালিত হয়ে মোচড় দিয়ে সংকোচিত হয়ে মুখগহ্বর থেকে আসা অর্ধপূর্ণ খাদ্যকে পিষে পেস্ট (paste)-এ পরিণত করে।
- এ সময় গ্যাস্ট্রিক জুস (gastric juice) ক্ষরিত হয় পাকস্থলীর যান্ত্রিক চাপে পিষ্ট খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে ঘন সুপের মিশ্রণে পরিণত হয়। তাদের এই অবস্থা কাইম (chyme) বা মন্ড নামে পরিচিত। এর উপর গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি নিঃসৃত বিভিন্ন এনজাইমের পরিপাক কাজ শুরু হয়ে যায়।
রাসায়নিক পরিপাক (Chemical Digestion)
শর্করা পরিপাক (Digestion of sugars) :
শর্করা জাতীয় খাদ্যের কোন পরিবর্তন ঘটে না।
আমিষ পরিপাক (Non-vegetarian digestion) :
গ্যাস্ট্রিক জুসে পেপসিনোজেন ও প্রোরেনিন নামক নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ (আমিষ বিশ্লেষী) এনজাইম থাকে। এ দুটি নিষ্ক্রিয় এনজাইম গ্যাস্ট্রিক জুসের HCL এর সাথে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে পেপ্সিন ও রেনিন নামক সক্রিয় এনজাইমের পরিণত হয়। পেপসিন অম্লীয় মাধ্যমে জটিল আমিষের আর্দ্র বিশ্লেষণ ঘটিয়ে প্রোটিওজ ও পেপটোন-এ পরিণত হয়। রেনিন দুগ্ধ ধোয়া কেসিনকে প্যারাকেসিন-এ পরিণত করে।
স্নেহ পরিপাক (Digestion of affection) :
অম্লীয় মাধ্যমে স্নেহ বিশ্লেষ্যকারী এনজাইম কাজ করতে পারে না কিন্তু পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক লাইপেজ নামক খুব দুর্বল স্নেহ বিশ্লেষকারী এনজাইম থাকে। এ এনজাইমটি কেবল মাখনের চর্বির (butter fat) উপর কাজ করে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাকস্থলির পাইলোরিক প্রান্তে অবস্থিত স্ফিংক্টার পাকস্থলী থেকে দূরে ডিওডেনামে খাদ্যের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে।
পাকস্থলি নিজেই এনজাইমে পরিপাক হয়ে যায় না। কারণ –
১. পাকস্থলীর অন্তর্গত থেকে নিঃসৃত পুরু মিউকাস স্তর HCL আক্রমণ রোধ করে ভৌত প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে।
২. পাকস্থলির অন্তর্গাত্র থেকে ক্ষরিত বাইকার্বনেট প্রকৃতপক্ষে একটি ক্ষার এবং এটি HCl-কে প্রশমিত করে।
৩. এনজাইম পেপসিন প্রথমে পেপসিনোজেন নামক প্রোএনজাইম হিসেবে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ক্ষরিত হয়। HCl-এর সংস্পর্শে এলে এটি সক্রিয় পেপসিন-এ পরিণত হয়। এনজাইম নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে।
Helicobacter pylori নামে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে কিংবা NSAID (Non Steroidal Anti Inflammatory Drug; ব্যথানাশক ওষুধ) ধরনের ঔষধ এর প্রভাবে পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে যা গ্যাস্ট্রিক আলসার (gastric ulcer) নামে বহুল পরিচিত।