মৌলিক ও লব্ধ এককের মাত্রা ও মাত্রা সমীকরণ | Dimensions and dimension equations of basic and derived units
মাত্রা (Dimension) :
আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি যে উৎপত্তি অনুসারে রাশি দুই প্রকার—একটি মৌলিক রাশি এবং অপরটি যৌগিক রাশি। আমরা আরও জানি, যে সকল রাশি অন্য কোনো রাশির ওপর নির্ভর করে না, তাদেরকে মৌলিক রাশি বলে। এখন আমরা আলোচনা করব, কোনো রাশির ‘মাত্রা’ বলতে কী বুঝি ? কোনো রাশির মাত্রার নিম্নলিখিত যে কোনো একটি সংজ্ঞা দেয়া যেতে পারে।
(১) কোনো একটি রাশি এবং তার মৌলিক এককের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যে সংকেত ব্যবহার করা হয় তাকে উক্ত রাশির মাত্রা বলে।
উদাহরণস্বরূপ দৈর্ঘ্য একটি রাশি। ফুট বা সেমি বা মিটার তার মৌলিক একক। দৈর্ঘ্য এবং এর মৌলিক এককের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ‘L’ সংকেত ব্যবহার করা হয়। এখানে L দৈর্ঘ্য বুঝায়। আবার ফুট বা সেমি বা মিটার এরাও প্রত্যেকে দৈর্ঘ্য প্রকাশ করে। সুতরাং ‘L’ অক্ষর দৈর্ঘ্য এবং এর মৌলিক এককের মধ্যে যােগসূত্র স্থাপনের একটি সংকেত। অতএব দৈর্ঘ্যের মাত্রা L।
(২) কোনো একটি প্রাকৃতিক রাশির মাত্রা উক্ত রাশি এবং তার মৌলিক এককের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।
(৩) কোনো লব্ধ একক গঠন করতে মৌলিক এককগুলোকে যে ঘাতে উন্নীত করা হয়, সে ঘাতকে ওই লব্ধ এককের মাত্রা বলে।
মাত্রা সমীকরণ (Dimensional equation) :
পদার্থবিজ্ঞানের তিনটি মৌলিক রাশি হলো দৈর্ঘ্য, ভর এবং সময়। এদের মাত্রা যথাক্রমে L, M এব T। দৈর্ঘ্যকে L দ্বারা প্রকাশ করা হয় বলে দৈর্ঘ্য এক L-মাত্রিক রাশি, ক্ষেত্রফল হলো দৈর্ঘ্য x দৈর্ঘ্য =L\times L= L^2 অতএব ক্ষেত্রফল দুই L-মাত্রিক রাশি। অনুরূপভাবে, আয়তন হলো দৈর্ঘ্য x দৈর্ঘ্য x দৈর্ঘ্য =L\times L\times L=L^3 অতএব আয়তন হলো তিন L-মাত্রিক রাশি ইত্যাদি। এখানে [L].[L^2].[L^3]–কে মাত্রিক বা মাত্রা সমীকরণ (Dimensional equation) বলা হয়।
দৈর্ঘ্যের মাত্রা সমীকরণ = [L]। ভরকে M দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এর মাত্রা সমীকরণ =[M]। সময়কে T দ্বারা প্রকাশ করা হয়। T এর মাত্রা সমীকরণ = [T]। মাত্রা সমীকরণের নিম্নরূপ সংজ্ঞা দেওয়া যেতে পারে।
যে সমীকরণ মৌলিক একক এবং লব্ধ এককের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে তাকে মাত্রা সমীকরণ বলে।
মাত্রা সমীকরণের প্রয়োজনীয়তা :
পদার্থবিজ্ঞানে মাত্রা সমীকরণের ভূমিকা অপরিসীম। নিম্নে এর ভূমিকা বা প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হলো :
(১) এক পদ্ধতির একককে অন্য পদ্ধতির এককে রূপান্তর করা যায়।
(২) সমীকরণের নির্ভুলতা যাচাই করা যায়।
(৩) বিভিন্ন রাশির সমীকরণ গঠন করা যায়।
(8) কোনো ভৌত রাশির একক নির্ণয় করা যায়।
(৫) কোনো ভৌত সমস্যার সমাধান করা যায়।
সমমাত্রিক নীতি (Principle of dimensional homogeneity) :
কোনো সঠিক সম্পর্ক বা সমীকরণের দুটি দিকের মাত্রা সব সময় অভিন্ন হবে। এটিই সমমাত্রিক নীতি।
একটি মাত্রাহীন ভৌত রাশির নাম লিখ এবং দেখাও যে রাশিটি মাত্রাহীন।
মাত্রাহীন ভৌত রাশিটি হলাে সমতলিক কোণ (Plane angle) θ। এখন কোণের সংজ্ঞানুযায়ী, আমরা জানি,
θ=বৃত্তচাপ/ব্যাসার্ধ
বৃত্তচাপ ও ব্যাসার্ধ উভয় রাশিরই মাত্রা হলো দৈর্ঘ্যের মাত্রা [L]
∴কোণ (θ)= \frac{[L]}{[L]}=1
সুতরাং সমতলিক কোণ একটি মাত্রাহীন রাশি।