10 Minute School
Log in

পরিমাপে ভুল বা ত্রুটি (Errors in measurements)

পরিমাপে ভুল বা ত্রুটি (Errors in measurements)

কোনো ভৌত রাশির নির্ভুল পরিমাপ পেতে রাশির সাথে সম্পর্কযুক্ত যে সূত্র থাকে তার অন্তর্গত সকল রাশির মাপ নির্ভুল হওয়া প্রয়োজন। এর ব্যত্যয় ঘটলে পরিমাপ সঠিক হবে না। একে ভুল বা ত্রুটি বলে। যেকোনো ভৌত রাশি পরিমাপে প্রকৃত শুদ্ধ মান পাওয়া যায় না। কিছু না কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। এই ত্রুটির উৎস পরীক্ষণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির সূক্ষ্মভাবে রাশি পরিমাপের সীমাবদ্ধতা এবং যিনি পরিমাপ করছেন পাঠ গ্রহণে তার ত্রুটির কারণ। এর অর্থ হলো যেকোনো পরিমাপ্য রাশির পরিমাপে একটি অনিশ্চয়তা বিদ্যমান থাকে।


পরিমাপের ত্রুটিগুলোকে উৎপন্নের ধরন অনুযায়ী কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়; যথা—
(১) যান্ত্রিক ত্রুটি (Instrumental error)
(২) পর্যবেক্ষণমূলক বা ব্যক্তিগত ত্রুটি (Observational or personal error)
(৩) এলােমলাে বা অনিয়মিত ত্রুটি (Random error)
(৪) পুনরাবৃত্তিক বা নিয়মিত ত্রুটি (Systematic error)
(৫) লঘিষ্ঠ গণন ত্রুটি (Least count error)

১. যান্ত্রিক ত্রুটি (Instrumental error) :

ভৌত রাশি পরিমাপে যে সমস্ত যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেগুলো সঠিক এবং সুবেদী না হলে পরিমাপে ত্রুটি দেখা দেয়। একে যান্ত্রিক ত্রুটি বলে। বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— (i) শূন্য ত্রুটি (zero error), (ii) পিছট ত্রুটি (backlash error) ও (iii) লেভেল ত্রুটি (level error)।

(i) শূন্য ত্রুটি (zero error) :

সাধারণত ভার্নিয়ার স্কেল, স্ক্রু-গজ, স্লাইড ক্যালিপার্স, স্ফেরোমিটার ইত্যাদির প্রধান স্কেলের ‘0’ দাগ ভার্নিয়ার বা বৃত্তাকার স্কেলের ‘0’ দাগের সাথে না মিলে যদি আগে বা পিছনে থাকে, তবে একে শূন্য ত্রুটি বলে।

(ii) পিছট ত্রুটি (backlash error) :

নাট-স্ক্রু নীতির উপর ভিত্তি করে যে সকল যন্ত্র তৈরি সেসব যন্ত্রে এই ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। নতুন যন্ত্রের তুলনায় পুরাতন যন্ত্রে এই ত্রুটি বেশি দেখা যায়। কারণ অনেকদিন ব্যবহারের ফলে নাটের গর্ত বড় হয়ে যেতে পারে বা স্ক্রু ক্ষয় হয়ে আলগা হয়ে যায়; ফলে স্ক্রুকে উভয় দিকে ঘুরালে সমান সরণ হয় না। এ ধরনের ত্রুটিকে পিছট ত্রুটি বলে। পাঠ নেওয়ার সময় যন্ত্রকে একই দিকে ঘুরালে এ ত্রুটি দূর হয়।

(iii) লেভেল ত্রুটি (level error) :

কতকগুলো পরীক্ষণের ক্ষেত্রে যন্ত্রকে ভালোভাবে লেভেলিং করে না নিলে সঠিক পাঠ পাওয়া যায় না। যেমন নিক্তি, বিক্ষেপ চৌম্বকমান যন্ত্র, ট্যানজেন্ট গ্যালভানোমিটার ইত্যাদি। লেভেলিং স্ক্রু এবং স্পিরিট লেভেলের সাহায্যে লেভেলিং করে নিতে হয়। এই সকল যন্ত্রে লেভেল ত্রুটি দেখা যায়।

২. পর্যবেক্ষণমূলক বা ব্যক্তিগত ত্রুটি (Observational or personal error) :

পর্যবেক্ষকের পর্যবেক্ষণে ভুল এবং সঠিক মূল্যায়নের অভাবে এ ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। একে পর্যবেক্ষণমূলক ত্রুটি বা ব্যক্তিগত ত্রুটি বলে। পর্যবেক্ষণ ত্রুটি বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন—
(i) ব্যক্তিগত ত্রুটি
(ii) প্রান্ত দাগ ত্রুটি
(iii) লম্বন ত্রুটি
(iv) সূচক ত্রুটি
(v) পরিবেশগত ত্রুটি।
দৃষ্টিভ্রম (Parallax error) এ ধরনের একটি ত্রুটি।
প্রতিকার (Remedy) : পর্যবেক্ষণ সতর্কতার সাথে করে এবং একাধিকবার পাঠ নিয়ে এ ত্রুটি দূর করা যায়।

৩. এলোমেলো বা অনিয়মিত ত্রুটি (Random error) :

ত্রুটির বিভিন্ন বিষয়ে উপযুক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও কোনো একটি রাশির পাঠ বার বার ভিন্ন হতে দেখা যায়। পরিমাপে এ ধরনের ভিন্নতা বা পার্থক্য দুই ভাবে হতে পারে। যথা—
(১) পর্যবেক্ষকের পর্যবেক্ষণের ত্রুটির জন্য হতে পারে কিংবা
(২) পরীক্ষাকালে যন্ত্রের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ পরিমাপের ক্ষেত্রে T পরিমাপ করার জন্য স্টপ ওয়াচ (stop watch) এবং l মাপার জন্য স্কেল সূচক ব্যবহার করা হয়। T পরিমাপের জন্য যদি ঘড়িটি ঠিকমতো চালানো এবং থামানো না হয় তবে T-এর পরিমাপে ভুল হবে। l পরিমাপের সময় সূচক যদি স্কেলের একটি নির্দিষ্ট দাগের সাথে না মিলে দুটি সন্নিহিত দাগের মধ্যে থাকে, তবে পর্যবেক্ষকের পক্ষে সূচকের অবস্থানের নির্ভুল মান স্কেল থেকে নেয়া সম্ভব হয় না। এ ধরনের ভুলগুলোকে অনিয়মিত বা এলোমেলো ত্রুটি বলে। এলোমেলো ত্রুটির ফলে চূড়ান্ত ফলাফল হয়ত অত্যন্ত বেশি অথবা খুব কম হতে পারে।

প্রতিকার (Remedy) :

অনিয়মিত ত্রুটি পরিবর্তনশীল। প্রাপ্ত পাঠ প্রকৃত পাঠ অপেক্ষা বেশি হলে ধনাত্মক এবং কম হলে ঋণাত্মক হবে। এই ত্রুটি এড়াতে হলে সতর্কতার সাথে পাঠ নিতে হয়, এই ত্রুটি কমাতে হলে পরিমাপটি বার বার করতে হয়। অর্থাৎ এই ত্রুটি দূর করতে হলে অধিক সংখ্যক পাঠ গ্রহণ করে তাদের গড় পাঠ বের করতে হবে।

৪. পুনরাবৃত্তিক বা নিয়মিত ত্রুটি (Systematic error) :

পরীক্ষাকালে কোনো কোনো ত্রুটির ফলে পরীক্ষাধীন রাশির পরীক্ষালব্ধ মান সর্বদাই এবং নিয়মিতভাবে রাশিটির প্রকৃত মান অপেক্ষা কম বা বেশি হতে পারে। এ ধরনের জুটিকে নিয়মিত বা পুনরাবৃত্তিক ত্রুটি বলে। মিটার ব্রিজের প্রান্তিক ত্রুটি, পোটেনশিওমিটারের প্রান্তিক ত্রুটি, স্ক্রু-গজের শূন্য তুটি এই ত্রুটির অন্তর্গত। অবশ্য পুনরাবৃত্তিক ত্রুটি নির্ণয় করার কোনো যুক্তিযুক্ত বা প্রামাণ্য উপায় নেই।

প্রতিকার (Remedy) :

এই ত্রুটি সংশোধনের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অবস্থায় পরীক্ষাকার্যটি পুনরাবৃত্তি করা হয়।

পরম ত্রুটি (Absolute error) :

কোনো একটি রাশির প্রকৃত মান ও পরিমাপকৃত মানের পার্থক্যকে পরম ত্রুটি বলে। পরম ক্রুটির পরিবর্তে আমরা কখনও কখনও আপেক্ষিক ত্রুটি বা শতকরা ত্রুটিটি ব্যবহার করে থাকি। অতএব, পরম ত্রুটি = প্রকৃত মান – পরিমাপ্য মান

\text { শতকরা ত্রুটি : } \frac{\text { প্রকৃত মান } \sim \text{ পরীক্ষালব্ধ মান }}{\text { প্রকৃত মান }} \times 100 \%

সামগ্রিক বা মোট ত্রুটি (Gross error) :

পর্যবেক্ষকের অসতর্কতা বা অমনোযোগিতার কারণে এ ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষণ কর্ম সম্পাদন করে এ ত্রুটি দূর করা যায়।

৫. লঘিষ্ঠ গণন ত্রুটি (Least count error):

ন্যূনতম যে পরিমাপ কোনো যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা সম্ভব তাকে ওই যন্ত্রের লঘিষ্ঠ গুণন বলে। যেমন একটি মিটার স্কেলের সাহায্যে 1 mm বা 0.1 cm সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা যায়। সুতরাং মিটার স্কেলের লঘিষ্ঠ গুণন 1 mm বা 0.1 cm। অনুরূপভাবে স্লাইড ক্যালিপার্সের ক্ষেত্রে লঘিষ্ঠ গুণন 0.01 mm, 0.001 cm৷ সূক্ষ্ম বা উন্নত মানের যন্ত্র ব্যবহার করে লঘিষ্ঠ গুণন ত্রুটি কমানো যায়। তবে একই পরিমাপ্য রাশির অধিক সংখ্যক পাঠ নিয়ে এবং ওই পাঠসমূহের গড় মান নির্ণয় করে পরিমেয় রাশির সঠিক মানের কাছাকাছি মান পাওয়া যায়। এলোমেলো বা অনিয়মিত এবং পুনরাবৃত্তি বা নিয়মিত ত্রুটির ক্ষেত্রে লঘিষ্ঠ গুণন  ত্রুটি লক্ষ করা যায়।

সঠিকতাসূক্ষ্মতা (Accuracy and Precision) :

বিভিন্ন ভৌত রাশি পরিমাপের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি। যন্ত্রগুলি ব্যবহারের পূর্বে তাদের সঠিকতা ও সূক্ষ্মতা সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। এখন আমরা সঠিকতা ও সূক্ষ্মতা বলতে কী বুঝি তা আলোচনা করব।

সঠিকতা (Accuracy) :

কোনো যন্ত্রের সঠিকতা বলতে বোঝায় যে ওই যন্ত্র সংশ্লিষ্ট রাশিটির প্রকৃত মানের কত কাছাকাছি পরিমাপ করতে সক্ষম। রাশিটির প্রকৃত মান ও যন্ত্রটি দ্বারা পরিমাপ্য মান যত কাছাকাছি হয় যন্ত্রের সঠিকতা তত বেশি হয়।

ধরা যাক, একটি তুলাযন্ত্র (balance) দ্বারা 50 g ভরের একটি বস্তু পরিমাপ করে 45 g পাওয়া গেল। সুতরাং বলা যায় যে তুলা যন্ত্রটির সঠিকতা ভালো নয়। আবার, অন্য একটি তুলা যন্ত্র দ্বারা ওই বস্তুটি মেপে 49.5 g পাওয়া গেল। অতএব, দ্বিতীয় যন্ত্রটির সঠিকতা অনেক উন্নত মানের।

সূক্ষ্মতা (Precision) :

কোনো যন্ত্রের সূক্ষ্মতা বলতে বোঝায় যে ওই যন্ত্র দ্বারা সংশ্লিষ্ট রাশিটি পরিমাপ করতে পরপর (repeatedly) পরিমাপে প্রাপ্ত পাঠগুলি পরস্পরের কত কাছাকাছি হয়। পরপর পাঠগুলির পার্থক্য যত কম হবে যন্ত্রটির সূক্ষ্মতা তত বেশি হবে। উদাহরণ—ধরা যাক একটি বস্তুর ভর  50g৷ এটি তুলা যন্ত্রে ছয়বার পাঠ নিয়ে ভর পাওয়া গেল 48 g, 49.2 g, 49 g, 49.2 g, 49.6 g, 49.5 g। এক্ষেত্রে পরপর পাঠগুলোর পার্থক্য কম। তাই যন্ত্রটির সূক্ষ্মতা ভালো।             

পরীক্ষালব্ধ ফলে তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যার হিসাব (Calculation of significant figure in experimental result) :

পরিমাপ্য রাশির সূক্ষ্মতা ঐ রাশির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রাশিগুলাের পরিমাপের সূক্ষ্মতার উপর নির্ভর করে। কিন্তু আমরা যখন ক্যালকুলেটরের সাহায্যে হিসাব করি, তখন অনেক ডিজিট পাওয়া যায়। দশমিকের পরের সব ডিজিট ফলাফলে লিপিবদ্ধ করা অর্থহীন। দশমিকের পরে কতকগুলো সংখ্যা রাখতে হবে তা পর্যবেক্ষণ সূক্ষ্মতার উপর নির্ভর করে। কাজেই পরীক্ষালব্ধ ফলে অপ্রয়োজনীয় সংখ্যা বাদ দিয়ে যে সব সংখ্যার পরিমাপ বিশ্বাসযোগ্য তাই রাখতে হবে। যেমন মিটার স্কেল দিয়ে কোনো দৈর্ঘ্য মাপলে এক মিলিমিটারের কম দৈর্ঘ্য সূক্ষ্মভাবে মাপা যায় না। সুতরাং দৈর্ঘ্য পরিমাপের সূক্ষ্মতার পরিমাপ হবে  ±1 mm। 

গড় ভুল (Mean error) :

বিভিন্ন সতর্কতা অবলম্বন করে পরিমাপ্য কোনো রাশির প্রকৃত মানের কাছাকাছি মান আমরা পেতে পারি, তবে প্রকৃত মান পরিমাপ করতে পারি না। কোনো রাশি অনেকবার পরিমাপের পাঠগুলোর গড় মানকে ঐ ভৌত রাশির সঠিক মান বলা সঙ্গত নয়। ঐ পরিমাপে ত্রুটি উল্লেখ করা প্রয়োজন। পরিমাপে যে মান পাওয়া যায় তা উভয় পাশে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে সামান্য পরিমাণ ভুল থাকার সম্ভাবনা আছে, যা  ± শতকরা মান দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

(i) গড় ভুল বা গড় বিচ্যুতি নির্ণয় (Determination of mean error or mean deviation):

ধরা যাক, পরিমাপ্য একটি রাশির কেবল অনিয়মিত ভুল অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। রাশিটি যদি n সংখ্যক বার মাপ নেওয়া হয়ে থাকে এবং এর মান যথাক্রমে x_{1}, x_{2}, x_{3} \ldots x_{n} পাওয়া যায়, তবে রাশিগুলাের গড় হবে,

A=\frac{x_{1}+x_{2}+x_{3} \ldots + x_{n}}{n}

এই পরিমাপে কেবল অনিয়মিত ভুলই অন্তর্ভুক্ত থাকায় পরিমাপে প্রাপ্ত গড় মান A প্রকৃত মানের কাছাকাছি হবে। রাশিটির প্রত্যেকটি মাপ এই গড় সংখ্যা A হতে সামান্য বিচ্যুত থাকে বলে ঐ মাপের ভুল ধরা যায়। সুতরাং, রাশিটির বিভিন্ন পরিমাপে যে বিচ্যুতি থাকবে তা যথাক্রমে,

d_{1}=x_{1}-A , d_{2}=x_{2}-A , d_{3}=x_{3}-A, \ldots \ldots d_{n}=x_{n}-A

এখন বিচ্যুতির চিহ্ন বাদ দিয়ে এগুলোর গড় নিলেই গড় বিচ্যুতি বা গড় ভুল পাওয়া যায়।
অতএব, গড় বিচ্যুতি বা গড় ভুল, d=\frac{d_{1}+d_{2}+d_{3}+\cdots \ldots \ldots \ldots \ldots+d_{n}}{n} সুতরাং পরিমাপ্য রাশিটির প্রকৃত মাপ, x=(A \pm d)

(ii) প্রমাণ বিচ্যুতি (Standard deviation) :

অনেক সময় এই বিচ্যুতিগুলাের গড় নির্ণয়ের পরিবর্তে তাদের বর্গের গড় বের করে তার বর্গমূল নির্ণয় করা হয়। এই বর্গমূলের পরিমাণকে প্রমাণ বিচ্যুতি বলে।

সুতরাং, প্রমাণ বিচ্যুতি, D=\sqrt{\frac{d_{1}{ }^{2}+d_{2}{ }^{2}+d_{3}{ }^{2} \ldots \ldots \ldots \ldots \ldots \ldots+d_{n}{ }^{2}}{n}}=\sqrt{\frac{\sum_{d}{ }^{2}}{n}}  

অতএব, রাশিটির প্রকৃত মাপ হবে, x=(A \pm D)

এবার পরিমাপ্য রাশিটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মান প্রাকৃতিক ধুবক তালিকা (Physical constant table) থেকে সংগ্রহ করে রাশিটির শুদ্ধতার শতকরা হিসাব নিম্নোক্তভাবে নির্ণয় করতে পারি।

পরিমাপ্য রাশির শুদ্ধ মান= =\frac{\text { রাশিটির সঠিক} \sim \text { মান প্রান্ত মান }}{\text { সঠিক মান }} \times 100 \% ; ইহাই ভুলের শতকরা হার। 

তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্কসংখ্যা (Significant figures) :

একটি ভৌত রাশিকে পরিমাপ করে প্রাপ্ত মানে যতগুলি অঙ্কসংখ্যা পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত হওয়া যায় তার পরবর্তী অঙ্ক পর্যন্ত অঙ্কগুলোকে তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্কসংখ্যা বলে। তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্কসংখ্যা বোঝার জন্য নিম্নে একটি উদাহরণ দেওয়া হলো।

মনে করি একটি মিটার স্কেল দিয়ে একটি দণ্ডের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হলো। দেখা গেল যে দণ্ডটির দৈর্ঘ্য 26.5 cm অপেক্ষা বেশি, কিন্তু 26.6 cm অপেক্ষা কম। যদি পাঠটি 26.5 cm এর কাছাকাছি হয় তবে দণ্ডটির দৈর্ঘ্য ধরা হয় 26.5 cm। লক্ষণীয় যে এই পাঠের শেষ অঙ্কটির পরিমাপে অনিশ্চয়তা (uncertainty) রয়েছে। সুতরাং পরিমাপে প্রাপ্ত পাঠে তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্ক সংখ্যা = 3।

তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্কসংখ্যা নির্ণয়ের নিয়ম

তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্কসংখ্যা নির্ণয়ের নিয়মগুলি নিম্নে দেখানো হলো :

(i) শূন্য নয় এমন সকল অঙ্কই তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন 1657 সংখ্যাটিতে তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যা হলো চারটি।

(ii) অশূন্য (non-zero) দুটি অঙ্কের মাঝখানে অবস্থিত শূন্যগুলো তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন 38075 সংখ্যাটিতে তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্কসংখ্যা হলো পাঁচটি।

(iii) দশমিক বিন্দুর বামদিকে অবস্থিত শূন্যগুলি এবং অশূন্য অঙ্কের বামদিকে শূন্যগুলি তাৎপর্যপূর্ণ নয়। যেমন 0.000385 সংখ্যাটিতে তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্কসংখ্যা তিনটি। এই সংখ্যার দশমিক বিন্দুর বামদিকের শূন্য তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্ক নয়। আবার 3-এর বামদিকে অবস্থিত শূন্য তিনটিও তাৎপর্যপূর্ণ নয়।

(iv) কোনো সংখ্যার বামদিকের প্রথম অশূন্য অঙ্ক থেকে শুরু করে ডানদিকের শেষ অঙ্ক পর্যন্ত সকল অঙ্কই তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন 29.570 সংখ্যাটিতে তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্কসংখ্যা হলো পাঁচটি।

(v) যদি কোনো সংখ্যার দশমিক বিন্দুর পর প্রথম অশূন্য অঙ্কের পূর্বে কিছু শূন্য থাকে তবে ওই শূন্যগুলি তাৎপর্যহীন। যেমন 0.00569 সংখ্যাটিতে তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্কসংখ্যা হলো তিনটি।

(vi) দশমিক বিন্দুর পরের শূন্য অঙ্কগুলি তাৎপর্যপূর্ণ হয় যদি ওই শূন্যগুলির পূর্বে কোনো অশূন্য অঙ্ক থাকে। যেমন 2789.00 সংখ্যাটিতে তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্কসংখ্যা ছয়টি।

(vii) যদি কোনো পাঠকে এক একক থেকে অন্য এককে রূপান্তরিত করার সময় দশমিক বিন্দুকে সরিয়ে অতিরিক্ত শূন্য বসানো হয় তবে অতিরিক্ত শূন্য অঙ্কগুলি তাপৎপর্যপূর্ণ হয় না। যেমন 408.0 m কে যদি 40800 cm বা 4.080 km এককে রূপান্তরিত করা হয় তবে তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্কসংখ্যা চারই থাকে।

(viii) যোগ ও বিয়োগের ক্ষেত্রে যে সংখ্যাটির দশমিক চিহ্নের পরের অঙ্কগুলির সংখ্যা ন্যূনতম, ফলাফলে দশমিকের পরে অঙ্কসংখ্যা তার সমান রাখতে হয়। যেমন 1.256 + 2.7 = 3.956। যোগফলটির তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যা হবে 3.9।

(ix) গুণ ও ভাগের ক্ষেত্রে উত্তরফলের তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যা হবে সবচেয়ে কম তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যাযুক্ত রাশির সমান। যেমন \frac{2.312 \times 1.5}{132}=2.6271। এক্ষেত্রে 1.5 এর তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্কসংখ্যা দুই। অতএব, উত্তরফলের তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যা হবে 2.6।

(x) Round off প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো রাশিকে নিম্নোক্ত উপায়ে তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্কবিশিষ্ট রাশিতে প্রকাশ করা হয়।

(ক) নির্দিষ্ট অঙ্কসংখ্যার পরে কোনো অঙ্ক 5-এর বেশি হলে, এর পূর্ববর্তী অঙ্কের সাথে 1 যোগ করে প্রকাশ করা হয়। যেমন 3.78 = 3.8 আবার, 2.23 = 2.2।

(খ) যে অঙ্কটিকে রাউন্ডিং করা হবে সেটি 5 হলে এবং এর পূর্ববর্তী সংখ্যা অযুগ্ম সংখ্যা হলে পূর্ববর্তী অঙ্কের সাথে 1 যোগ করতে হয়। যুগ্ম সংখ্যা হলে অপরিবর্তিত থাকবে। যেমন 2.75 = 2.8, কিন্তু 3.45 = 3.4 হবে।