10 Minute School
Log in

মুক্তিবেগ (Escape velocity)  

সর্বাপেক্ষা কম যে বেগে কোনো বস্তুকে ওপরের দিকে নিক্ষেপ করলে তা আর পৃথিবীতে ফিরে আসে না সেই বেগকে মুক্তিবেগ(Escape velocity) বলে।

উৎক্ষিপ্ত বস্তুর ভর এবং উপগ্রহের ভর (পৃথিবী) এর উপর মুক্তিবেগের কোনো প্রভাব আছে কি?

যেহেতু পৃথিবীর তুলনায় উৎক্ষিপ্ত বস্তুটি খুবই ছোট তাই পৃথিবীর ভরের উপর নির্ভর করলেও নিক্ষিপ্ত বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে না। স্পষ্টত কোনো উপগ্রহের প্রদক্ষিণ বেগ মুক্তিবেগ (Escape velocity) অপেক্ষা কম হয়, তা না হলে উপগ্রহটি মহল বিলীন হয়ে যেত।

মুক্তিবেগের মান নির্ণয় (Determination of Escape velocity):

মনে কর, উৎক্ষিপ্ত বস্তুটির পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে বস্তুর দূরত্ব r অতএব পৃথিবী ও বস্তুর মধ্যকার আকর্ষন বল,

F=GMmr2

অভিকর্ষের ক্রিয়ার বিরুদ্ধে বস্তুটিকে যদি উপারে ক্ষুদ্র দূরত্ব dr সরানো হয় 

dW=Fdr=GMmr2×dr

ভূ-পৃষ্ঠ হতে বস্তুটিকে অসীম দূরত্বে সরাতে বস্তুটিকে পৃথিবীর পৃষ্ট হতে অসীমে সমাকলন করে পাওয়া যায়,

W=dW=RGMmr2×dr

∴  W=GMmRr-2dr=Gmn 1rR

=GMm1+1R=GMmR

∴W=GMmR

মুক্তিবেগ (Escape velocity) v0   হলে বস্তুর প্রাথমিক গতিশক্তি =12mve2। পৃথিবীর মহাকর্ষীয় আকর্ষণের বাইরে চলে যেতে হলে বস্তুর প্রাথমিক গতিশক্তি অন্তত W এর সমান হওয়া দরকার।

12mve2=GMmR

বা, ve=2GMR

কিন্তু আমরা জানি,

g=GMR2        ∴GM=gR2

সমীকরণ থেকে ve=2gR2R=2gR

সমীকরণগুলো হলো মুক্তিবেগের রাশিমালা। 

উপরিউক্ত সমীকরণে m না থাকায় আমরা বলতে পারি যে, মুক্তি বেগ বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে না। বস্তু ছোট বা বড় যাই হোক না কেন, মুক্তি বেগ একই হবে। 

হিসাব কর: পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R=64×105 m ও g=9.8  ms-2 ধরে মুক্তি বেগ (Escape velocity)নির্ণয় কর।

Escape-velocity

এক্ষেত্রে মুক্তি বেগ(Escape velocity)

vg=2×9.80×64×105=1120×105   ms-1

=1120 kms-1=7 মাইল/ সে. (প্রায়) [ 1 মাইল = 1.6093 km ]

= 25000 মাইল / ঘন্টা(প্রায়)

সুতরাং কোনো বস্তুকে যদি প্রতি ঘণ্টায় 25000 মাইল বেগে বা এর অপেক্ষা অধিক বেগে উৎক্ষেপ করা হয়, তবে তা আর ভূ-পৃষ্ঠে ফিরে আসে না। 

নিজে কর: একই উচ্চতায় দুটি কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর চারদিকে আবর্তিত হচ্ছে। একটি উপগ্রহের ভর অপরটির দ্বিগুণ। কোনটি উচ্চতর বেগে ঘুরবে?

পৃথিবীর চারদিকে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে h উচ্চতায় আবর্তনরত কোনো উপগ্রহের কক্ষীয় বেগ, v=GMR+h যেখানে R, M যথাক্রমে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ ও ভর। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, কক্ষীয় বেগ উপগ্রহের ভরের উপর নির্ভরশীল নয়। অর্থাৎ দুটি উপগ্রহই সমান বেগে আবর্তিত হবে। 

জানার বিষয়: পৃথিবী পৃষ্ঠ হতে কোনো বস্তুকে v বেগে উপর দিকে নিক্ষেপ করলে পৃথিবীর আকর্ষণ বলের দ্বারা বস্তুটির বিভিন্ন পরিণতি হতে পারে। যথা:

(১) যদি v2<vE22 হয়, অর্থাৎ উৎক্ষেপণ বেগ 7.88 kms-1 অপেক্ষা কম হয়, তবে তা উপবৃত্তাকার পথে  পৃথিবী
    প্রদক্ষিণ করবে এবং অবশেষে পৃথিবীতে ফিরে আসবে ।

(২) যদি v2=vE22 হয় অর্থাৎ উৎক্ষেপণ বেগ 7.88 kms-1 হয়, তবে বস্তুটি বৃত্তাকার পথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ
    করবে এবং চাঁদের মতো উপগ্রহে পরিণত হবে ।

(৩) যদি v2>vE22 কিন্তু <vE2 হয়, অর্থাৎ উৎক্ষেপণ বেগ 7.88 kms-1 হতে 112 kms-1 এর মধ্যে থাকে
    তবে পৃথিবীকে একটি ফোকাসে রেখে তা উপবৃত্তাকার পথে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে থাকবে । 

(৪) যদি v=vE হয়, অর্থাৎ উৎক্ষেপণ বেগ 112 kms-1 অর্থাৎ মুক্তি বেগের সমান হয়, তবে বস্তুটি একটি
    অধিবৃত্ত পথে পৃথিবী পৃষ্ঠ ছেড়ে যায় এবং তা পৃথিবীর আকর্ষণ ক্ষেত্র অতিক্রম করে বাইরে চলে যাবে।

(৫) যদি v>vE হয়, অর্থাৎ উৎক্ষেপণ বেগ মুক্তি বেগ অপেক্ষা বেশি হয়, তবে বস্তু পরাবৃত্ত পথে পৃথিবী-পৃষ্ঠ ছেড়ে
    যায় এবং তা আর পৃথিবীতে ফিরে আসে না । 

নিজে কর: পৃথিবী পৃষ্ঠ হতে মুক্তিবেগ চন্দ্র পৃষ্ঠ থেকে মুক্তিবেগ (Escape velocity) অপেক্ষা বড় না ছোট? – ব্যাখ্যা কর।

মনে করি, veve যা যথাক্রমে পৃথিবী ও চন্দ্রে মুক্তিবেগ। আরও মনে করি gR পৃথিবী পৃষ্ঠে অভিকর্ষজ ত্বরণ ও পৃথিবীর ব্যাসার্ধ। আবার g’R’ চন্দ্রের ক্ষেত্রে অনুরূপ রাশি তাহলে,

ve=2gR ve=2gR

 ve ve=gRgR

যেহেতু g>g’ R>R’ অতএব ve>ve

অর্থাৎ পৃথিবীতে চন্দ্র অপেক্ষা মুক্তিবেগের মান বেশি।