10 Minute School
Log in

ঘাসফড়িং, এর মুখোপাঙ্গের বিভিন্ন অংশ

প্রতীক প্রাণী : ঘাসফড়িং (The Grasshopper, Poekilocerus pictus)

আরশোলার মতো ঘাসফড়িংও একটি অতিপরিচিত পতঙ্গ (insect)। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সবখানে সবুজ শস্যক্ষেত বা সবজির বাগানে বিভিন্ন ধরনের ঘাসফড়িং একা বা দলবদ্ধ হয়ে বিচরণ করে। ঘাসফড়িং-এর কিছু প্রজাতি পঙ্গপাল (locust) নামে পরিচিত। এগুলো বাদামি বর্ণের মাঝারি আকৃতির পতঙ্গ এবং ঝাঁক বেঁধে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। কখনও কখনও এদের সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে মুহুর্তের মধ্যে একটি ক্ষেতের সমস্ত ফসল খেয়ে সাবাড় করে ফেলতে পারে। পঙ্গপাল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের শস্যক্ষেতের জন্য মারাত্মক হুমকি।

ঘাসফড়িং একটি করে কাইটিনময় বহিঃকঙ্কাল, একটি তিনখণ্ডবিশিষ্ট দেহ (মস্তক, বক্ষ ও উদর), তিনজোড়া সন্ধিযুক্ত পা, জটিল পুঞ্জাক্ষি এবং একজোড়া অ্যান্টেনা বহন করে সে কারণে এদের Insecta শ্রেণিভূক্ত সদস্য বা পতঙ্গ বলে। ঘাস ও লতাপাতার মধ্যে থেকে সেখানেই লাফিয়ে চলে, তাই এর নাম হয়েছে ‘‘ঘাসফড়িং”। ঘাসফড়িং দুধরনের, যথা—লম্বা অ্যান্টেনাযুক্ত ঘাসফড়িং-এরা Tettinonidae গোত্রের এবং খাটো অ্যান্টেনাযুক্ত ঘাসফড়িং-এরা Acrididae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত Poekilocerus pictus আমাদের দেশের খাটো অ্যান্টেনাযুক্ত ঘাসফড়িংয়ের অন্যতম।

পৃথিবীতে প্রায় বিশ হাজার প্রজাতির ঘাসফড়িং শনাক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যে বিশ প্রজাতির ঘাসফড়িংয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে সেগুলো হচ্ছে- Acrida exaltata, Phlaeoba infumata, Choroedocus robustus. Xenocatantops humilis, Chondracris rosea, Cyrtacanthacris tatarica, Exprepocnemis rosea, Aulacobothrus luteipes, Hieroglyphus banian, Gastrimargus marmoratus, Oedaleus abruptus, Sphingonotus longipennis, Trilophidia annulata, Gesonula punctifrons, Oxya fuscovittata, Spathosternum prasiniferum, Atractomorpha crenulata, Chrotogonus trachypterus, এবং Pockilocerus pictus 

ঘাসফড়িং (Grasshopper) কেন Insecta বা ‘পতঙ্গ’ শ্রেণিভুক্ত প্রাণী ?

১. অন্যান্য পতঙ্গের মতো ঘাসফড়িং এর দেহ কাইটিনময় এবং মস্তক, বক্ষ ও উদর-এ বিভক্ত।

২. বক্ষদেশে তিনজোড়া সন্ধিযুক্ত পা ও একজোড়া ডানা থাকে; এবং উদর উপাঙ্গবিহীন । 

৩. ট্রাকিয়া নামক শাখা-প্রশাখাযুক্ত বায়ু নালিকার মাধ্যমে শ্বাসক্রিয়া সম্পন্ন করে।

৪. মুক্ত রক্ত সংবহনতন্ত্র বর্তমান।

৫. ম্যালপিজিয়ান নালিকার সাহায্যে রেচন ক্রিয়া সম্পন্ন করে।

শ্রেণিতাত্ত্বিক অবস্থান

Phylum: Arthropoda (সন্ধিপদী, কাইটিননির্মিত বহিঃকঙ্কাল)

Class: Insecta (দেহ মস্তক, বক্ষ ও উদর-এ বিভক্ত)

Subclass: Pterygota (ডানাবিশিষ্ট পতঙ্গ)

Order: Orthoptera (দুজোড়া ডানাবিশিষ্ট) 

Family: Acrididae (খাটো অ্যান্টেনা)

Genus: Pockilocerus

Species: Poekilocerus pictus

চিত্র : Poekilocerus pictus (প্রাকৃতিক পরিবেশ)

বাসস্থান (Habitat) : ঘাসফড়িং যেহেতু ঘাস, পাতা, শস্য ও শস্যের কচিপাতা আহার করে সে কারণে এমন ধরনের নিচু বসতি এদের পছন্দ। মূলত সব ধরনের আবাসেই (তৃণভূমি, বারিবন, চারণভূমি, মাঠ, মরুভূমি, জলাভূমি প্রভৃতি) বিভিন্ন প্রজাতির ঘাসফড়িং দেখা যায়। স্বাদুপানির ও ম্যানগ্রোভ জলাশয়ে যেহেতু পানির উঠানামা বেশি হয় এবং ডিম পাড়ার জায়গা প্লাবিত হয়ে যায় সে কারণে এসব বসতিতে ঘাসফড়িং কম বাস করে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঘাসফড়িং বিপুল সংখ্যায় পরিযায়ী (migratory) হয়, তখন দিনে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।  

খাদ্য (Food) : ঘাসফড়িং তৃণভোজী বা শাকাশী (herhivorous) প্রাণী। ডিম থেকে ফোটার পরপরই, নিম্ফ অবস্থায় ঘাসফড়িং চার পাশের যে কোন ছোট ছোট, সহজপাচ্য গাছ, ঘাস বা নতুন কোমল শাখা-প্রশাখা খেতে শুরু করে৷ দু’একবার খোলস মোচনের পর একটু বড় হলে শক্ত উদ্ভিজ খাবার গ্রহণ করে। তরুণ ঘাসফড়িং পূর্ণাঙ্গদের মতোই নির্দিষ্ট উদ্ভিজ খাবার গ্রহণ করে। তখন খাদ্য তালিকায় ঘাস, পাতা ও শস্য প্রধান খাবার হিসেবে উঠে আসে। বেশির ভাগ ঘাসফড়িং অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে আহার সংগ্রহ করে, দু’একটি প্রজাতি সুনির্দিষ্ট উদ্ভিদ থেকে আহার গ্রহণ করে।

বাহ্যিক অঙ্গসংস্থান (External Morphology)

ঘাসফড়িং-এর দেহ সরু, লম্বাটে, বেলনাকার (cylindrical) এবং দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম। পূর্ণাঙ্গ প্রাণী লম্বায় ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেহের রঙ অনেকটা হলদে-সবুজ (yellowish green) ধরনের অথবা বাদামি রঙের মাঝে নানা ধরনের ফোঁটা (spots) বা ডোরাকাটা (markings) হতে পারে। মিশ্রিত এ রঙ তাদের পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে এমনকি শত্রুর হাত থেকেও রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কিছু ঘাসফড়িং আছে উজ্জ্বল নীল-হলুদ রঙের (যেমন- Poekilocerus pictus)।

চিত্র : ঘাসফড়িড়ং-এর বাহ্যিক গঠন

ঘাসফড়িং-এর সারাদেহ কাইটিনযুক্ত কিউটিকল (cuticle)- এ আবৃত। বহিঃকঙ্কাল হাইপোডার্মিস (hypodermis) নিঃসৃত পদার্থে সৃষ্ট এবং প্রত্যেক দেহখন্ডকে স্ক্লেরাইট (sclerite) নামক কঠিন প্লেটের মতো গঠন সৃষ্টি করে। স্কেলেরাইটগুলোর সংযোগস্থল সূচার (suture) নামে পাতলা নরম ঝিল্লিতে আবৃত। সূচারের উপস্থিতির কারণে দেহখণ্ডক ও উপাঙ্গগুলো সহজেই নড়াচড়া করতে পারে। কিউটিকলের ভিতরে ও নিচে নানা ধরনের রঞ্জক পদার্থ (pigments) থাকায় ঘাসফড়িং-এ বর্ণময়তা দেখা যায়।

ঘাসফড়িং-এর দেহ খণ্ডকায়িত এবং অন্যসব পতঙ্গের মতো তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত, যেমন— 

ক. মস্তক (Head)- পুঞ্জাক্ষি, অ্যান্টেনা ও মুখোপাঙ্গ বহন করে।

খ. বক্ষ (Thorax)- তিনজোড়া পা ও দুজোড়া ডানার সংযোগ সাধন করে এবং বহন করে। 

গ. উদর (Abdomen)- শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাকল (spiracle) এবং জনন অঙ্গসমূহ (genitaliae) ধারণ করে।

ক. মস্তক (Head)

বাইরে থেকে অখগুকিত (একক) মনে হলেও মূলত ৬টি ভ্রূণীয় খণ্ডকের (embryonic segments) সমন্বয়ে মস্তক গঠিত। এটি দেখতে নাশপাতি আকৃতির এবং হাইপোগন্যাথাস (hypognathous) ধরনের অর্থাৎ মুখছিদ্র নিম্নমুখী হয়ে মস্তকের নিচে অবস্থান করে। মস্তক একটি ছোট ও স্থিতিস্থাপক গ্রীবার সাহায্যে বক্ষলগ্ন হয়ে দেহের সমকোণে অবস্থান করে। ঘাসফড়িং গ্রীবার মাধ্যমে মস্তককে বিভিন্ন দিকে ঘোরাতে পারে। মস্তকের বহিঃকঙ্কালের নাম হেড ক্যাপস্যুল (head capsule) বা এপিক্রেনিয়াম (epicranium)। মস্তকের বহিঃকঙ্কাল কয়েকটি অংশে বিভক্ত, যেমন- পৃষ্ঠদেশের ত্রিকোণাকার অঞ্চলটি ভার্টেক্স (vertex), দুপাশে অবস্থিত জেনা (gena), কপালের দিকে চওড়া ফ্রন্স (frons) এবং ফ্রন্সের নিচে আয়তাকার প্লেটটি ক্লাইপিয়াস (clypeus)।

চিত্র : ঘাসফড়িং-এর মস্তক; a. সম্মুখদৃশ্য এবং b. পার্শ্বদৃশ্য

 

ঘাসফড়িং-এর মস্তক একজোড়া পুঞ্জাক্ষি, তিনটি সরলাক্ষি বা ওসেলি (ocilli), একজোড়া অ্যান্টেনা (antenna) ও এক সেট মুখোপাঙ্গ বহন করে। নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো।

১. পুঞ্জাক্ষি (Compound eye) : ঘাসফড়িং (Grasshopper)-এর মস্তকের উভয়দিকে পৃষ্ঠ-পার্শ্বদেশে, ১ম খণ্ডকে একজোড়া পুঞ্জাক্ষি থাকে। এগুলো অবৃন্তক এবং মস্তকের এক বিরাট অংশ দখল করে থাকে। দৃষ্টিশক্তির দিক থেকে ঘাসফড়িং আর্থোপোড অপেক্ষা উন্নত। এরা সম্ভবত রঙিন বস্তুও সঠিকভাবে দেখতে পায়। গঠনগত ও কার্যকারিতার দিক থেকে যে কোনো ঘাসফড়িং-এর পুঞ্জাক্ষি আরশোলা, চিংড়ি প্রভৃতি আর্থোপোড প্রাণীর মতো। অসংখ্য ওমাটিডিয়া (ommatidia)-র সমন্বয়ে একেকটি পুঞ্জাক্ষি গঠিত হয়। ওমাটিডিয়াই পুঞ্জাক্ষির গঠন ও কাজের একক।

২. ওসেলি (Ocelli; একবচনে-occllus) : ঘাসফড়িং-এর দুটি পুঞ্জাক্ষির মাঝখানে তিনটি সরলাক্ষি বা ওসেলি থাকে । প্রত্যেক ওসেলাস পুরু, স্বচ্ছ কিউটিকলনির্মিত লেন্স ও একগুচ্ছ আলোক সংবেদী কোষ নিয়ে গঠিত। প্রতিটি কোষ রঞ্জক পদার্থসমৃদ্ধ। ওসেলাসের তলদেশে মস্তিষ্কে গমনকারী স্নায়ুতন্ডু (nerve libre) অবস্থিত। এর অভ্যন্তরে আলোক সংবেদী কোষ থাকে যারা রেটিনার মতো কাজ করে।

৩. অ্যান্টেনা (Antenna; বহুবচনে-antennae) বা শুঙ্গ : ঘাসফড়িং-এর পুঞ্জাক্ষির সামনে, মাথার দুপাশে দুটি লম্বা অ্যান্টোনি প্রসারিত থাকে। অ্যান্টোনি দুটি সামনে রেখে চলাফেরা করে এবং ইচ্ছামতো এগুলোকে নাড়াতে পারে। এদুটি নাড়িয়ে এরা স্পর্শ, ঘ্রাণ ও শব্দতরঙ্গ অনুভর করে। স্কেল, পেডিসেন্স ও ফ্লাজেলাম-এ তিনটি অংশ নিয়ে প্রত্যেক অ্যান্টেনা গঠিত। পেডিসেল খাটো ও অবিভক্ত। ফ্লাজেলাম বেশ লম্বা ও প্রায় ২৫টি খণ্ডকে বিভক্ত।

৪. মুখোপাঙ্গ (Mouth parts) : মুখের চারদিক ঘিরে অবস্থিত নড়নক্ষম, সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গগুলোকে একত্রে মুখোপাঙ্গ বলে। ঘাসফড়িং-এর মুখোপাঙ্গ মস্তকের অঙ্কীয়দেশে অবস্থিত। কচিপাতা বা কাণ্ড চর্বনে ব্যবহৃত হয় বলে ঘাসফড়িং-এর মুখোপাঙ্গকে চর্বন-উপযোগী (chewing) বা ম্যান্ডিবুলেট (mandibulate) মুখোপাঙ্গ বলে। পাঁচটি অংশের সমন্বয়ে মুখোপাঙ্গ গঠিত- ল্যাব্রাম, ম্যান্ডিবল, ম্যাক্সিলা, ল্যাবিয়াম ও হাইপোফ্যারিংক্স। 

ঘাসফড়িং-এর মুখোপাঙ্গের বিভিন্ন অংশ

ল্যাব্রাম (Labrum) : এটি দেখতে অনেকটা চাপা চাকতির মতো এবং উপরের ওষ্ঠ (lip) গঠন করে। রঙ সবুজ, বাদামি বা অন্য ধরনের হতে পারে। এর মাঝ বরাবর অংশে একটি খাঁজ দেখা যায়। খাঁজটি খাবার ধরে রাখতে, ম্যান্ডিবলের দিকে ঠেলে দিতে ও স্বাদ নিতে সাহায্য করে।

ম্যান্ডিবল (Mandible) : মুখছিদ্রের দুপাশে অবস্থিত, তিনকোণা ও কালো বা বাদামি রঙের বেশ শক্ত ও ভিতরের দিকে সুঁচালো করাতের মতো দাঁতযুক্ত দুটি উপাঙ্গের নাম ম্যান্ডিবল বা চোয়াল। খাদ্য কেটে চিবানোয় চোয়াল সাহায্য করে।

ম্যাক্সিলা (Maxilla) : ম্যান্ডিবলের পিছনে ও বাইরের দিকে প্রতিপাশে একটি করে লম্বাকার ম্যাক্সিলা থাকে। প্রত্যেক ম্যাক্সিলা কয়েকটি খন্ডে বিভক্ত। সবচেয়ে গোড়ার খণ্ডটিকে কার্ডো (cardo) ও এরপর অবস্থিত খণ্ডককে স্টাইপস (stipes) বলে। স্টাইপসের অগ্রভাগে নখের মতো ল্যাসিনিয়া (lacinia) ও ঢাকনির মতো গ্যালিয়া (galea) নামক দুটি খণ্ড পাশাপাশি অবস্থান করে। গ্যালিয়ার পাশে পাঁচ অংশবিশিষ্ট ম্যাক্সিলারি পাল্প (maxillary palp) রয়েছে। এর উপর থাকে সূক্ষ্ণ রোম। খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ, এটি ধরে রাখতে, মুখের ভিতর প্রবেশ করাতে এবং খাদ্য চূর্ণকরণে সাহায্য করা ম্যাক্সিলার কাজ। ম্যাক্সিলারি পাল্প অ্যান্টেনা ও পায়ের অগ্রভাগ পরিষ্কারে অংশ নেয়, খাদ্যবস্তু হরণ প্রতিরোধ করে এবং সংবেদী অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।

 

চিত্র : ঘাসফড়িং-এর মুখোপাঙ্গের বিভিন্ন অংশের অবস্থান

ল্যাবিয়াম (Labium): ঘাসফড়িং-এর মুখছিদ্রের নিচে মধ্যাংশ বরাবর স্থানে বহুসন্ধিল একটি ল্যাবিয়াম বা অধঃওষ্ঠ রয়েছে। ল্যাবিয়ামকে দ্বিতীয় জোড়া ম্যাক্সিলির প্রতিনিধি মনে করা হয়। এটি মূলত দুটি খণ্ডে বিভক্ত, যথা—মেন্টাম (mentum) সাবমেন্টাম (submentum)। প্রতিপাশে মেন্টামের মুক্ত প্রান্তে দুটি নড়নশীল লিগুলি (ligulae) এবং তিন সন্ধিযুক্ত ল্যাবিয়াল পাল্প (labial palp) থাকে। এটি খাবার ফসকে যাওয়া রোধ করে ও চর্বিত খাদ্য মুখে প্রবেশ করায়। ল্যাবিয়াল পাল্প সংবেদনশীল অঙ্গ হিসেবে কাজ করায় এটি উপযুক্ত খাদ্য নির্বাচনে সাহায্য করে।

হাইপোফ্যারিংক্স (Hypopharynx) : ল্যাব্রামের নিচে ক্ষুদ্র, মাংসল হাইপোফ্যারিংক্স বা উপজিহ্বাটি অবস্থিত। এটি চারদিকে ম্যান্ডিবল, ম্যাক্সিলা ও ল্যাবিয়াম দিয়ে পরিবৃত থাকে। ল্যাবিয়ামের ভিতরের কিনারা থেকে সৃষ্ট একটি ঝিল্লি হাইপোফ্যারিংক্সের অংকীয়তলের সাথে যুক্ত থাকে। খাদ্যবস্তুকে নাড়াচাড়া করে লালার সাথে মেশাতে সাহায্য করাই এর কাজ। 

হাইপোফ্যারিংক্স (Hypopharynx) : ল্যাব্রামের নিচে ক্ষুদ্র, মাংসল হাইপোফ্যারিংক্স বা উপজিহ্বাটি অবস্থিত। এটি চারদিকে ম্যান্ডিবল, ম্যাক্সিলা ও ল্যাবিয়াম দিয়ে পরিবৃত থাকে। ল্যাবিয়ামের ভিতরের কিনারা থেকে সৃষ্ট একটি ঝিল্লি হাইপোফ্যারিংক্সের অংকীয়তলের সাথে যুক্ত থাকে। খাদ্যবস্তুকে নাড়াচাড়া করে লালার সাথে মেশাতে সাহায্য করাই এর কাজ। 

চিত্র : ঘাসফড়িং-এর মুখোপাঙ্গের বিভিন্ন অংশের চিত্ররূপ

খ. বক্ষ (Thorax) : মস্তকের পিছনে মাংসল বক্ষ একটি খাটো, সরু ও নমনীয় গ্রীবা (neck)-র সাহায্যে যুক্ত। ঘাসফড়িং-এর বক্ষাঞ্চল তিনটি অংশে বিভক্ত; যথা-অগ্রবক্ষ (prothorax), মধ্যবক্ষ (mesothorax) এবং পশ্চাৎবক্ষ (metathorax)। প্রত্যেক অংশের পৃষ্ঠদেশ টার্গাম (tergum), অঙ্কীয়দেশ স্টার্নাম (stermum) ও পার্শ্বদেশ প্লিউরন (pleuron)-এ গঠিত। এগুলো পাতলা কিউটিকলের পর্দা দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত। অগ্রবক্ষের টার্গাম অংশটি বেশ বড়, চওড়া এবং পিছনে ও পাশে প্রসারিত । এর নাম প্রোনোটাম (pronotum) বক্ষাঞ্চলে রয়েছে শ্বাসরন্ধ্র, ডানা ও পা।

১. শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাকল (Spiracle) : বক্ষের অঙ্কীয়-পার্শ্বদেশে দুজোড়া শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাকল অবস্থিত। প্রথম জোড়া প্রোনোটামের নিচে অগ্র ও মধ্যবক্ষের মাঝে এবং দ্বিতীয় জোড়া মধ্য ও পশ্চাৎবক্ষের মাঝে অবস্থিত ।

২. ডানা (Wings) : মধ্য ও পশ্চাৎবক্ষের পিঠের দিকে অর্থাৎ টার্গাম ও প্লিউরনের মধ্যবর্তীস্থান থেকে একজোড়া করে মোট দুজোড়া পাতলা কিউটিকল নির্মিত ডানা রয়েছে। ডানাগুলো প্রথম অবস্থায় দ্বিস্তরবিশিষ্ট প্রাচীর হিসেবে থলির মতো সৃষ্টি হয়, পরে পূর্ণাঙ্গ ডানায় পরিণত হয়। প্রত্যেক ডানা অসংখ্য ছোট নালির মতো ও রক্তে পূর্ণ শিরা-উপশিরায় গঠিত। দুজোড়া ডানার গঠন ও কাজ পৃথক ধরনের। মধ্যবক্ষীয় (mesothoracic) ডানা অর্থাৎ সামনের ডানাদুটি বেশ শক্ত, ছোট, সরু এবং কখনও উড়তে সাহায্য করে না। এগুলো পিছনের দুই ডানাকে ঢেকে রাখে। সেজন্য এগুলোকে এলিট্রা (elytra), ডানার আবরণ (wing covers) বা টেগমিনা (tegmina) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পিছনের বা পশ্চাৎবক্ষীয় (metathoracic) ডানাদুটি বেশ বড়, চওড়া, পর্দার মতো (membranous), স্বচ্ছ এবং উড়তে সাহায্য করে। বিশ্রামের সময় পিছনের ডানাজোড়া অগ্র ডানার নিচে গুটানো থাকে। 

চিত্র : ঘাসফড়িং-এর ডানা

৩. পা (Legs) : বক্ষের প্রত্যেক অংশে একজোড়া করে মোট তিনজোড়া পা রয়েছে। প্রতিটি পা পাঁচখণ্ডে বিভক্ত। একেবারে গোড়ায় স্থূল, তিনকোণা কক্সা (coxa); এর পরের ত্রিভূজাকার ক্ষুদ্র ট্রোক্যান্টার (trochanter); পরের লম্বা, নলাকার ও দৃঢ় ফিমার (femur); তার পরবর্তী সরু টিবিয়া (tibia); এবং সবশেষে টার্সাস (tarsus) । টার্সাস তিনটি ছোট উপখণ্ডকে বিভক্ত । এগুলোকে টার্সোমিয়ার (tarsomeres) বলে । টার্সাসের মাথায় সূঁচালো নখর (claws) থাকে। এ ছাড়াও প্রত্যেক পায়ের টিবিয়া ও টার্সাস অংশের পার্শ্বদেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সূঁচালো কাঁটা থাকে। ঘাসফড়িং-এর পা হাঁটা ও আরোহণে ব্যবহৃত হয়। তবে ফিমার অংশ অনেক বড় ও মাংসল গড়নের হওয়ায় এরা লাফিয়ে দূরের পথ অতিক্রম করতে পারে। টিবিয়া ও টার্সাস শক্ত কাঁটাযুক্ত হওয়ায় খাদ্য ধরতে সাহায্য করে। 

চিত্র : ঘাসফড়িং (Grasshopper)-এর একটি পায়ের বিভিন্ন অংশ

গ. উদর (Abdomen) : ঘাসফড়িং-এর উদর বেশ লম্বা, সরু এবং ১১টি খণ্ডকে বিভক্ত। প্রত্যেক খণ্ডকের পৃষ্ঠদেশে টার্গাম (tergum) এবং অঙ্কীয়দেশে স্টার্নাম (sternum) থাকে, কোন প্লিউরন থাকে না। ১ম উদরীয় খণ্ডকটি অসম্পূর্ণ; কারণ, এর স্টার্নাম পশ্চাৎবক্ষের সাথে যুক্ত থাকে । এতে শুধু টার্গাম থাকে । 

ঘাসফড়িং-এর উদরাঞ্চল নিচে বর্ণিত অঙ্গসমূহ বহন করে।

১. টিমপেনাম (Tympanum) : ১ম খণ্ডকের প্রতিপাশে একটি করে পর্দা রয়েছে যা শ্রবণ অঙ্গ বা শ্রবণ থলি (auditory sac)-কে আবৃত রাখে । এর নাম টিমপেনিক পর্দা বা টিমপেনাম ।

২. শ্বাসরন্ধ্র (Spiracle) : ১ম থেকে ৮ম দেহখণ্ডক পর্যন্ত প্রতিটি খন্ডকের পার্শ্বদেশে একজোড়া করে মোট আটজোড়া শ্বাসবন্ধ্র বা স্পাইরাকল থাকে যার প্রথমটি অন্যগুলো হতে আকারে বড় ।

৩. পায়ু ও বহিঃজনন অঙ্গ : ৯ম ও ১০ম উদরীয় খণ্ডকের টার্গাম আংশিকভাবে ও স্টার্নাম পুরোপুরি একীভূত। ১১শ খণ্ডকের টার্গাম পায়ুর উপরে প্লেটের মতো একটি আবরণ (supra anal plate) তৈরি করে। পুরুষ ও স্ত্রী ঘাসফড়িংয়ের উদর অঞ্চলের গঠনে কিছু পার্থক্য দেখা যায় । পুরুষ ঘাসফড়িং-এর ১০ম খন্ডের পেছন দিকের উভয় পাশে একজোড়া ছোট প্রক্ষেপক রয়েছে যা অ্যানাল সারকাস (anal cercus, বহুবচনে anal cerci) নামে পরিচিত। স্ত্রী ঘাসফড়িং-এর ৯ম স্টার্নাম লম্বাকৃতির যা স্ত্রীজননরন্ধ্র ধারণ করে। এদের উদরের শেষ প্রান্তে ৮ম ও ৯ম খন্ড অঙ্কীয়ভাবে একটি নলাকৃতি বিশেষ অঙ্গ তৈরি করে, যার নাম ওভিপজিটর (ovipositor)।

 

পুরুষ ও স্ত্রী ঘাসফড়িংয়ের পার্থক্য
পুরুষ ঘাসফড়িং স্ত্রী ঘাসফড়িং
১. পুরুষ ঘাসফড়িং তুলনামূলকভাবে আকারে ছোট। ১. স্ত্রী ঘাসফড়িং তুলনামূলকভাবে আকারে বড়।
২. পুরুষ ঘাসফড়িংয়ের উদর সরু। ২. স্ত্রী ঘাসফড়িংয়ের উদর কিছুটা প্রশস্ত।
৩. পা অপেক্ষাকৃত খাটো। ৩. এদের পা অপেক্ষাকৃত বেশি লম্বা
৪. পুরুষ ঘাসফড়িংয়ের উদরের ৯ম খণ্ডাংশে পুংজনন ছিদ্র বিদ্যমান। ৪. স্ত্রী ঘাসফড়িংয়ের উদরের ৮ম ও ৯ম খণ্ডাংশ মিলে জননছিদ্র গঠন করে।
৫. পুরুষ ঘাসফড়িংয়ের নবম খণ্ডকের স্টার্নাম প্রলম্বিত হয়ে সাবজেনিটাল প্লেট গঠন করে যা উক্ত খণ্ডকের শেষে বিদ্যমান জনন ছিদ্রকে ঢেকে রাখে। ৫. স্ত্রী ঘাসফড়িংয়ের নবম খণ্ডকের স্টার্নাম প্রলম্বিত ও রূপান্তরিত হয়ে ডিম পাড়ার অঙ্গ ওভিপজিটর (ovipositor) গঠন করে।