ভারী ধাতুর যুক্ত হওয়ার কারণ ও প্রভাব (As, Cr, Pb, Cd)
(Causes and Effects of Heavy Metal Addition)
প্রশ্ন-৩৩ : আর্সেনিকের উৎস, দ্রবীভূত হওয়ার কৌশল এবং এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূ-উৎস : গর্ভস্থ পানি আর্সেনিকের প্রধান উৎস। তাছাড়া কিছু কিছু উদ্ভিদ মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণকালে এর খাদ্য শৃঙ্খলে আর্সেনিকের প্রবেশ ঘটে। তাছাড়া বিভিন্ন ধাতু নিষ্কাশন কালে এর সাথে আর্সেনিক অপদ্রব্য হিসেবে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া কয়লার একটি উপাদান হল আর্সেনিক। তাই কয়লার দহনে উৎপন্ন ছাই এর মধ্যে আর্সেনিক বিদ্যমান থাকে। আর্সেনিকের দুটি জারণ অবস্থার মধ্যে A s^{3+} বেশী ক্ষতিকর। এটি অস্থিতিশীল হওয়ায় দ্রুত বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। ফলে অধিক ক্ষতিকারক WHO এর নিয়ম অনুযায়ী পানিতে As এর পরিমাণ 0.05 ppm।
দ্রবীভূত হওয়ার কৌশল : As মূলত বিষ হিসেবে কাজ করে। এটি খাদ্য শৃঙ্খলের মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এনজাইমের বিভিন্ন অংশকে যেমন এনজাইমের –S-H বন্ধনকে আক্রমণ করে। এর ফলে আর্সেনিক এনজাইমের স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যাহত করে। তাছাড়া As এর ধর্ম P এর অনুরূপ তা বিভিন্ন জৈব অণু হতে P কে প্রতিস্থাপিত করে এর কাজে বাধা প্রদান করে। এর ফলে ATP হ্রাস পায় এবং শক্তি উৎপাদনে বাধাযুক্ত জীব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে এটি প্রোটিন কে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
ক্ষতিকর প্রভাব : আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় পালমোনারী ইডিমা অর্থাৎ ফুসফুসে রক্ত নালীর প্রাচীর ক্ষয় হয়। লোহিত রক্ত কণিকার হিমোলাইসিস ঘটায়। বৃক্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। ফ্যাটিলিভার হতে পারে এর বিষক্রিয়ায় DNA এর মিউটেশন ঘটে। ত্বকে কালো দাগ বা কেরাটিনাইজেশন ঘটে। এর ফলে রেনাল ফেলিওর হতে পারে। বিভিন্ন ধরণের আর্সেনিকোসিস দেখা যায়। তাছাড়া হাত ও পায়ের ত্বকের উপর ফুসকুড়ি সৃষ্টি হয় যাকে ব্ল্যাক ফুট ডিজিজ বলে। তাছাড়া জন্মত্রুটি ঘটে, অপরিণত ভ্রুনের গর্ভপাত ঘটে, কারসিনোজেনিক ধর্ম আছে।
প্রশ্ন-৩৪ : ক্যাডমিয়াম ধাতুর উৎস, দ্রবীভূত হওয়ার কৌশল এবং এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর : উৎস : অধিকাংশ ধাতুর আকরিক Cd যুক্ত থাকে, এ সমস্ত ধাতু নিষ্কাশনকালে Cd বর্জ্য পদার্থ হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। এটি C d^{2+} হিসেবে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে। বিভিন্ন ধরণের ব্যাটারী এবং শিল্প ক্ষেত্রে Cd ব্যবহৃত হয় যা বর্জ্য হিসেবে প্রকৃতিতে চলে আসে। পানীয় জলে এর সহনীয় মাত্রা হল 5ppb। তবে মানুষের রক্তের এর স্বাভাবিক পরিমাণ হল 10 ppb।
দ্রবীভূত হওয়ার কৌশল : Cd ধাতু শরীরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত Ca, Cu, Fe, Zn প্রভৃতিকে প্রতিস্থাপিত করে শরীরে খনিজ পদার্থের অভাব সৃষ্টি করে। বিশেষ করে হাড়ের Ca^{2+} কে এটি সহজে প্রতিস্থাপিত করতে পারে বলে অস্থি দ্রুত ক্ষয় হয় এবং হার ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। C d^{2+} নিম্নরূপে বিভিন্ন ধরণের এনজাইমকে আক্রমণ করে। এর ফলে এনজাইমের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
ক্ষতিকর প্রভাব : ১৯৬৮ সালে জাপানে Cd দূষণজনিত যে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে তার নাম ইটাই-ইটাই বা আউচ-আউচ। এ রোগের প্রধান উপসর্গ হল অস্থিতে অস্বাভাবিক যন্ত্রণা, অস্থিতে ক্ষয় এবং ভঙ্গুরতা দেখা দেয়। এর বিষক্রিয়ার ফলে রক্তশূন্যতা, রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং কিডনীতে পাথর জমে ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে।
প্রশ্ন-৩৫ : Pb এর উৎস, দ্রবীভূত হওয়ার কৌশল এবং এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর : উৎস : বিভিন্ন ধাতুর আকরিকের সাথে যুক্ত Pb কয়লার দহনের ফলে তার মধ্যে অবস্থানরত Pb লেডযুক্ত গ্যাসোলিন বা পেট্রোল এর দহনের ফলে Pb স্টোরেজ ব্যাটারী হতে, Pb এর আবরণযুক্ত টিন এর ক্যান পাত্র হতে Pb এর বিষক্রিয়া হতে পারে। পানীয় হলে Pb এর গ্রহণযোগ্য সীমা হল 50 ppb বা 0.5 ppm।
দ্রবীভূত হওয়ার কৌশল : Pb এর সালফারের প্রতি আসক্তি বেশি। তাই এটি সালফার মূলক যুক্ত এনজাইমকে সহজে আক্রমণ করতে পারে। তাছাড়া Pb রক্ত সংশ্লেষণ বাধা প্রদান করে। P b^{2+} ও হাড়েরC d^{2+} কে প্রতিস্থাপিত করতে পারে। হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইমের কার্যকারিতা Pb বাধাগ্রস্ত করে। ফলে হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণ বিঘ্নিত হয়।
ক্ষতিকর প্রভাব : Pb বিষক্রিয়ার ফলে মস্তিস্কের কোষ বিভাজন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে মানসিক ও বুদ্ধিজনিত বিকাশ ও স্মৃতিশক্তি বাধাগ্রস্ত হয়। Pb বিষক্রিয়ায় রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয় লেডের বিষক্রিয়ায় দাঁতের মাড়ি নীলাভ হয়। রক্তের হিমোগ্লোবিনের হিম সংশ্লেষণ বাধা দেয়।
প্রশ্ন-৩৬ : Cr এর উৎস, দ্রবীভূত হওয়ার কৌশল এবং এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর : উৎস : Cr এর উৎস হল চামড়া ট্যানিং এর সময়ে ব্যবহৃত \mathrm{Cr}_{2}\left(\mathrm{SO}_{4}\right)_{3} ইলেক্ট্রোপ্লেটিং এ ব্যবহৃত বিভিন্ন Cr লবণ, রঞ্জন শিল্পে ব্যবহৃত Cr লবণ, Stainless steel এর তৈরী যন্ত্র পাতি।
দ্রবীভূত হওয়ার কৌশল : Cr মৌল ক্ষতিকর নয়। \mathrm{Cr}^{\mathbf{3 +}} অবস্থা মানবদেহের বিভিন্ন জৈবিক রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় আবশ্যক যেমন : \mathrm{Cr}^{\mathbf{3 +}} আয়ন, ইনসুলিন এবং প্রোটিন তৈরির জন্য প্রয়োজন। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন 0.06 mg \mathrm{Cr}^{\mathbf{3 +}} আবশ্যক। \mathrm{Cr}^{\mathbf{3 +}} এর অভাবে গ্লুকোজ, প্রোটিন এবং লিপিড বিপাক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। তবে C r^{6+} সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। কারণ এটি DNA এর সাথে বন্ধন তৈরি করে। ফলে DNA এর কাজে বাধা প্রদান করে এবং জেনেটিক কোডে পরিবর্তন ঘটায়। তাছাড়া C r^{6+} কে কারসিনোজেনিক (ক্যান্সার উৎপাদক) মৌল বলা হয়। C r^{6+} লোহিত রক্ত কোষের মেমব্রেনের ভিতর সহজে অতিক্রম করে হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন অংশের সাথে যুক্ত হতে পারে। পানিতে অনুমোদনযোগ্য ক্রোমিয়াম হল 0.5 ppm।
ক্ষতিকর প্রভাব : এর ফলে ক্যান্সার হয়, অধিক \mathrm{Cr}^{\mathbf{3 +}}দূষণের ফলে লোহিত রক্ত কণিকায় \mathrm{Fe}^{2+} আয়ন শোষণ বাধা পায়। ফলে রক্ত শূন্যতা তৈরি হয়। ত্বকে অ্যালার্জিজনিত রোগ দেখা যায়। এর প্রভাবে জন্মগত ত্রুটিও থাকে। লিভার ক্ষয় হয় এবং খাদ্যনালীতে আলসার ও ক্যান্সার সৃষ্টি করে। হিমোগ্লোবিনের সাথে জটিল যৌগ গঠন করে O_{2}পরিবহন হ্রাস করে।