10 Minute School
Log in

অ্যামাগার লেখচিত্র, ভ্যান্ডার ওয়ালস, জুলথমসন পরীক্ষা

অ্যামাগার লেখচিত্র, ভ্যান্ডার ওয়ালস, জুলথমসন পরীক্ষা (Amaga chart, Vander Wallace, Julthamson test)

প্রশ্ন : অ্যামাগা রেখা (Amaga Line) বা লেখটি বর্ণনা কর।

উত্তর : বিজ্ঞানী অ্যামাগা (Amaga) স্থির তাপমাত্রায় বিভিন্ন চাপে গ্যাসের আয়তন পরিমাপ করে লেখচিত্র PV এর বিপরীতে P এর মান বসিয়ে যে লেখচিত্র অঙ্কন করেন তাকে আমাগা রেখা বলা হয়। এ লেখচিত্র হতে প্রমাণিত হয়, বাস্তব গ্যাসসমূহ আদর্শ গ্যাসের মত আচরণ করে না।

Amaga chart | অ্যামাগা রেখা

রেখাগুলোকে দুভাগে ভাগ করা যায়।

  1. ১ম ধরণের রেখা সাধারণ তাপমাত্রায় \mathrm{H}_{2} \text {, He } প্রতি হালকা গ্যাসের ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। এসব গ্যাসের ক্ষেত্রে চাপ বৃদ্ধি করলে PVএর পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়।
  2. O_{2}, \mathrm{N}_{2}, \mathrm{CO}_{2} প্রতি ভারী গ্যাসের ক্ষেত্রে ২য় ধরনের রেখা পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে PV এর মান আদর্শ গ্যাস হতে হ্রাস পায় এবং তা একটি নূন্যতম মানে পৌছে । চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে তা আবার বৃদ্ধি পেতে থাকে।

তাপমাত্রার প্রভাব : \mathrm{H}_{2} \text {, He } প্রভৃতির ক্ষেত্রে তাপমাত্রা কমতে থাকলে এদের লেখচিত্র দ্বিতীয় ধরনের চিত্রের মত হয়। আবার যথেষ্ট উচ্চ তাপমাত্রায় দ্বিতীয় ধরনের লেখচিত্র ১ম ধরণের অনুরূপ হয়। এ থেকে সিদ্ধান্ত হলো,

  1. আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে PV বেখাটি p অক্ষের সমান্তরাল হয় যা ডট লাইন দ্বারা দেখানো হয়েছে।
  2. আদর্শ আচরণ হতে বিচ্যুতির ধরন শুধুমাত্র গ্যাসের প্রকৃতির উপর নয় বরং তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল।
  3. তাপমাত্রা যতই ক্রান্তি বা সন্ধি তাপমাত্রার নিকটে হয় এবং গ্যাসের উপর প্রযুক্ত চাপ যত বেশি হয় আর বিচ্যুতি আদর্শ আচরণ হতে তত বেশী হয়।

প্রশ্ন :   অ্যামাগার লেখচিত্রে (Amaga chart) বাস্তব গ্যাসের রেখাগুলো ভিন্ন হবার কারণ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে 1 mol পরিমাণ গ্যাসের জন্য Van der Waal’s সমীকরণকে নিম্নরূপে লেখা যায়,

\left(P+\frac{a}{v^{2}}\right)(v-b)=R T………………(i)

\mathrm{H}_{2}, \mathrm{He} প্রভৃতির ক্ষেত্র :

এ ধরনের গ্যাসের অণুগুলোর ভর কম। ফলে সাধারণ তাপমাত্রা এবং নিম্নচাপে এদের মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের মান খুবই কম পরিমাণে থাকে। এতে অন্তঃআণবিক আকর্ষণজনিত ধ্রুবক এর মান ক্ষুদ্র এবং v এর বড় মানের জন্য \frac{a}{v^{2}} এর মান অত্যন্ত কম হয়। এ অবস্থায় এদের মধ্যে আকর্ষণজনিত সংশোধনী পদ \frac{a}{v^{2}} কে উপেক্ষা করা যায়।

(i) নং সমীকরণকে নিম্নরূপে লেখা যায়,

P(v-b)= RT

বা, PV=RT+Pb

বা, \frac{P V}{R T}=1+P b

বা, Z = 1+Pb

উপরোক্ত সম্পর্ক হতে দেখা যায়, PV এর মান RT অপেক্ষা বেশি হওয়ায় রেখাটি উর্ধ্বগামী হয়। আবার, চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে Pb এর মান ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে বলে PV এর মান ও বাড়ে এবং রেখার উর্ধ্বগামীতা বজায় থাকে। তাছাড়া সব অবস্থায় Z > 1 হওয়ায় রেখাটি আদর্শ রেখার উপরে থাকে।

\mathrm{O}_{2}, \mathrm{~N}_{2}, \mathrm{CO}_{2} প্রভৃতি জারী গ্যাসের ক্ষেত্রে :

নিম্নচাপে : এ অবস্থায় গ্যাসের আয়তন অর্থাৎ V এর মান অনেক বেশি হয়। ফলে V এর তুলনায় গ্যাস অণুসমূহের কার্যকর নিজস্বআয়তন b খুবই কম হয় বলে একে উপেক্ষা করা যায়। ফলে, (i) সমীকরণকে নিম্নরূপে লেখা যায়,

\left(P+\frac{a}{v^{2}}\right) V=R T

বা, P V+\frac{a}{v}=R

বা, P V=R T-\frac{a}{v}

বা, \frac{P V}{R T}=1-\frac{a}{V R T}

বা, Z=1-\frac{a}{V R T}

অর্থাৎ, নিম্নচাপে PV এর মান RT অপেক্ষা কম হয় বলে রেখাটি নিম্নগামী হয়। অর্থাৎ Z<1 হওয়ায় রেখাটি আদর্শ গ্যাসের রেখার নীচে থাকে। আবার চাপ বৃদ্ধি পেলে আয়তন হ্রাস পায়। তাই চাপের মান বাড়াতে থাকলে \frac{a}{v}  এর মান বাড়ে ফলে PV এর মান আরও কমতে থাকে অর্থাৎ রেখা আরও নিম্নগামী হয়।

উচ্চচাপে : উচ্চচাপে গ্যাসের আয়তন খুব কম হয় এবং এ অবস্থায় গ্যাস অণুর নিজস্ব আয়তন b’ এর মানকে V এর সাপেক্ষে উপেক্ষা করা যায় না। উচ্চ চাপে অণুগুলো পরস্পর এত নিকটবর্তী হয় যে, এদের মধ্যে বিকর্ষণ বল ক্রিয়াশীল হয়। তাই এই \frac{a}{v^{2}} এর মান P এর তুলনায় কম হয়। \frac{a}{v^{2}} কে p এর সাপেক্ষে উপেক্ষা করা যায়।

এমতাবস্থায় (ii) ন সমীকরণকে নিম্নরূপে লেখা যায়,

P(V-b)=RT

বা, PV=RT+Pb

বা, \frac{P V}{R T}=1+\frac{P b}{R T}

বা, Z=1+\frac{P b}{R T}

অর্থাৎ উচ্চ চাপে PV এর মান RT অপেক্ষা বৃদ্ধি পাওয়ায় রেখাটি পুনরায় উর্ধ্বগামী হয়। কারণ এক্ষেত্রে Z > 1 তাই \mathrm{O}_{2}, \mathrm{~N}_{2}, \mathrm{CO}_{2} প্রভৃতি গ্যাসের ক্ষেত্রে অ্যামাগা রেখা (Amaga Line) একটি সর্বনিম্ন বিন্দুতে পৌঁছানোর  পর আবার ক্রমাগত বাড়ে।

প্রশ্ন :  পেষণ গুণাঙ্কের মাধ্যমে কীরূপে বাস্তব গ্যাসের আচরণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

উত্তর : আদর্শ গ্যাসসমূহ PV=nRT সমীকরণ মেনে চলে। কিন্তু বাস্তব গ্যাস সমূহের ক্ষেত্রে,

PV≠nRT

PV=ZnRT

Z=\frac{P V}{n R T} Z=\frac{P V}{n R T}

এখানে Z হচ্ছে পেষণ গুনাঙ্ক বা সংকোচনশীল গুণাংক (Corpressibility factor) যা P এবং T এর উপর নির্ভরশীল, 1mol আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে Z = 1

রেখা

একই অপমাত্রা ও চাপে আদর্শ গাস ও বাস্তব গ্যাস তুলনা করে পাই,

\frac{P V_{0}}{n R T}=1 (আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে)

\frac{P V}{n R T}=Z (বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে)

\therefore Z=\frac{V}{V_{0}} =\frac{নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে n মোল বাস্তব গ্যাসের আয়তন} {একই তাপমাত্রা এ চাপে n মোল আদর্শ গ্যাসের আয়তন}

অর্থাৎ পেষন গুণাংক প্রকৃতপক্ষে বাস্তব গ্যাসের মোলার আয়তন এবং আদর্শ গ্যাসের মোলার  আয়তনের অনুপাত নির্দেশ করে। Z এর মান 1 অপেক্ষা কম বা বেশি হলে তা আদর্শ আচরণ হাতে বিচ্যুতি দেখায়। যেমন :

i. যখন V =V_{o} তখন Z = 1 অর্থাৎ বাস্তব গ্যাসটি আদর্শ গ্যাসের মত আচরণ করে।

ii. যখন V>V_{o} তখন Z > 1 হয়, অর্থাৎ একই তাপমাত্রা ও চাপে বাস্তব গ্যাসটি আদর্শ গ্যাস অপেক্ষা বেশি            আয়তন দখল করে।অর্থাৎ বাস্তব গ্যাসটি কম পেষণ যোগ্য বা সংকোনশীল হয় এক বিচ্যুতি বেশি হয়। একে ধনাত্বক                      বিচ্যুতি বলে। হালকা গ্যাসেরক্ষেত্রে এ বিচ্যুতি দেখা যায়। এ ধরনের অণুগুলোর ভর কম হওয়ায় আন্তঃআণবিক আকর্ষণ                বলের মান খুবই কম। তাই এ সমস্ত গ্যাসগুলোকে সহজে তরলে পরিণত করা যায় না। তাছাড়া এদের পানিতে দ্রব্যতা কম              যেমন: \mathrm{H}_{2}, \mathrm{He} ইত্যাদি।

iii. যখন  V < V_o তখন Z < 1 হয়, অর্থাৎ একই তাপমাত্রা ও চাপে বাস্তব গ্যাসটি আদর্শ গ্যাস অপেক্ষা কম            আয়তন দখল করে অর্থাৎবাস্তব গ্যাসটি বেশি পেষণযোগ্য হয়। একে ঋণাত্মক বিচ্যুতি বলে। ভারী গ্যাসের ক্ষেত্রে এ বিচ্যুতি          দেখা যায়। এক্ষেত্রে গ্যাসগুলোর বিচ্যুতি অর্থাৎ PV এর মান প্রথমে কমতে থাকে কারণ এ ধরনের গ্যাসের অণুগুলোর ভর              বেশী হওয়ায় এদেরমধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের মান বেশী। তাই প্রথম দিকে অর্থাৎ নিম্নচাপে সহজে পেষণ যোগ্য            হয়। আস্তে আস্তে চাপ বাড়ালে আন্তঃআনবিক আকর্ষণ বৃদ্ধির কারণে আরও সহজে পেষণ যোগ্য হয়। কিন্তু PV এর মান              নূন্যতম মানে পৌঁছার পর চাপ বাড়লে পেষণ যোগ্যতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায় কারণ উচ্চচাপে গ্যাস অণুগুলো পরস্পরের এত           নিকটবর্তী হয় যে, এদের মধ্যে বিকর্ষণ ফল ক্রিয়াশীল হয়। ফলে PV এর হন পুনরায় বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ ধরনের                          গ্যাসগুলোকে সহজে তরলে পরিণত করা যায়। তাছাড়া এরা পানিতে সহজে দ্রবণীয়। যেমন : \mathrm{CO}_{2}, \mathrm{~N}_{2} ইত্যাদি।

প্রশ্ন : নিম্নের লেখচিত্রটি হতে ব্যাখ্যা কর যে,  \mathrm{~N}_{2} বাস্তব গ্যাস হলেও বিশেষ শর্তে আদর্শ আচরণ করে।

উত্তর :

Amaga

উপরোক্ত লেখচিত্রে বিভিন্ন তাপমাত্রায় \mathrm{~N}_{2} গ্যাসের Z এর বিপরীতে P এর লেখচিত্র দেখানো হয়েছে। এই চিত্র হতে বুঝা যায় যে, নিম্ন তাপমাত্রায় Z এর মান প্রথমে কমে এবং উচ্চ চাপে আবার বৃদ্ধি পেতে থাকে। যেহেতু এক্ষেত্রে Z = 1 নয় তাই এমতাবস্থায় N, আদর্শগ্যাসের মত আচরণ করে না। তবে উচ্চ তাপমাত্রায় প্রথম থেকেই এর মান বাড়তে থাকে।এতে লেখচিত্রের বক্রতা হ্রাস পেতে থাকে। এক্ষেত্রে বুঝা যায় বিচ্যুতির প্রকৃতি তাপমাত্রার উপরও নির্ভর করে। উচ্চ তাপমাত্রায় রেখাটি আদর্শগ্যাসের রেখাটির নিকটবর্তী হতে থাকে।

এক্ষেত্রে প্রায় 700°C এ বা প্রায় 1000k তাপমাত্রায় পেষণ গুণাংক বনাম চাপের রেখাটি আদর্শ রেখার নিকটবর্তী হয়। যে তাপমাত্রায় কোনো বাস্তব গ্যাসের PV বনাম P এর লেখাচিত্রটি নিম্নচাপ বিশিষ্ট অঞ্চলে P অক্ষের সমান্তরাল হয় সেই তাপমাত্রাকে ঐ গ্যাসের বয়েল তাপমাত্রা বলে। অর্থাৎ এ থেকেও প্রমাণিত হয় উচ্চ তাপমাত্রায় এবং নিমচাপে বাস্তব গ্যাস আদর্শ গ্যাসের মত আচরণ করে।

প্রশ্ন :  ভ্যান্ডার ওয়ালস ধ্রুবকের তাৎপর্য লিখ। (Vander Wallace)

উত্তর : ‘a’ এর তাৎপর্য : ‘a’ হল বাস্তব গ্যাসের অণুগুলির মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ জনিত বলের পরিমাপ। গ্যাস অণুগুলির মধ্যেকার আকর্ষণ বল যত বেশি হবে ‘a’ এর মান তত বেশি হবে। ‘a’ এর মান গ্যাসের আণবিক ভরের উপর নির্ভরশীল। আণবিক ভর বেশি হলে ‘a’ এর মান বেশি হয়। যে গ্যাসের ‘a’ এর মান যত বেশি, সেই গ্যাসকে তরলীকরণ করা তত সহজ। a এর একক \text { atm } L^{2} \mathrm{~mol}^{-2}

‘b’এর তাৎপর্য : ‘b’ পদাটি গ্যাস অণুগুলির কার্যকর আয়তন সংক্রান্ত ধারণা দেয়। ‘b’ এর মান বেশি হওয়ার অর্থ গ্যাস অণুগুলোর আকার বা আয়তন বড় পাত্রের আয়তনের তুলনায় তাদের নিজস্ব আয়তন নগণ্য হয় না, এবং ফলে অবাধ বিচরণের জন্য অণুগুলোর আয়তন বা গ্যাসের সংকোচন যোগ্য আয়তনের পরিমাণ কম হয়। ‘b’ এর একক L m o l^{-1}

প্রশ্ন :  গ্যাসের ক্রান্তি বা সন্ধি তাপমাত্রা, চাপ এবং আয়তন বলতে কী বুঝ?

উত্তর : যে তাপমাত্রার উপরে যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করেও কোন গ্যাস তরলীভূত করা যায় না। অথচ ঐ তাপমাত্রায় ও এর নীচে প্রয়োজনীয় চাপ প্রয়োগে তরলে রূপান্তরিত করা যায়। ঐ তাপমাত্রাকে গ্যাসটির ক্রান্তি তাপমাত্রা বলে। একে T_{c} দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

কোন গ্যাসকে এর ক্রান্তি তাপমাত্রায় তরলিত করতে সর্বনিম্ন যে চাপ প্রয়োগ  করতে হয় তাকে ক্রান্তি চাপ বলে।

একে \mathbf{P}_{\mathbf{c}} দ্বারা প্রকাশ করা হয় । কোন গ্যাসের ক্রান্তি চাপ ও তাপমাত্রায় এর এক মোল পরিমাণ আয়তনকে তার ক্রান্তি আয়তন বলে একে V_{c} দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

গ্যা TC PC VC
CO2 31.1℃ 72.9 atm 95.65 mLmol-1
H2 -240℃ 12.8 atm 64.42 mLmol-1
O2 -118.8℃ 49.7 atm 74.42  mLmol-1
N2 -147℃ 34 atm
He -268℃ 2.3 atm
CH4 -83℃ 46 atm

 

প্রশ্ন :  জুলথমসন পরীক্ষা বর্ণনা কর। (Julthamson test)

উত্তর : কোন গ্যাসকে উচ্চচাপে সংকুচিত করে সচ্ছিদ্র পাত্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করে নিম্নচাপ বিশিষ্ট একটি বিরাট কক্ষে হঠাৎ সম্প্রসারিত হতে দিলে গ্যাসটির তাপমাত্রা হ্রাস পায়। এ প্রক্রিয়াকে জুল-থমসন (Julthamson test) প্রভাব বলে।

ব্যাখ্যা : এ ধরনের সম্প্রসারণ হঠাৎ সংঘটিত হওয়ায় কোন তাপ এলাকা থেকে বের হতে পারে না, বা ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না অর্থাৎ রুদ্ধতাপীয় সম্প্রসারণ ঘটে। সম্প্রসারণের পূর্বে গ্যাস সমূহ পরস্পরের যথেষ্ট নিকটে ছিল। সম্প্রসারণের ফলে এগুলো পরস্পর হতে দূরে সরে যায়। তখন তাদের মধ্যকার আকর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয় এ কাজ করতে যে শক্তি প্রয়োজন হয়। তা গ্যাসটির অভ্যন্তরীণ শক্তি হতে শোষিত হয়। ফলে গ্যাসের তাপমাত্রা হ্রাস পায়।

প্রশ্ন : উৎক্রম তাপমাত্রা বা ইনভারশন তাপমাত্রা বলতে কি বুঝ?

উত্তর : প্রত্যেক গ্যাসের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা আছে যার নিম্নে রেখে গ্যাসটিকে নিম্নচাপে সম্প্রসারিত হতে দিলে তবেই গ্যাসটি শীতল হয় এবং এর উচ্চে রেখে সম্প্রসারিত হতে দিলে গ্যাসের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তাকে গ্যাসটির উৎক্রম তাপমাত্রা বলে। \mathrm{H}_{2} এবং He এর উৎক্রম তাপমাত্রা হলো  যথাক্রমে – 80°C এবং –240°C

প্রশ্ন : গ্যাস এ বাষ্প কী?

উত্তর : কক্ষ তাপমাত্রায় যে পদার্থের কণা বা অণুসমূহে স্থানান্তর গতি তাদের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের তুলনায় বেশী হয়, তাকে গ্যাস বলে। প্রত্যেক গ্যাসকে তার ক্রান্তি তাপমাত্রর নীচে উপযুক্ত চাপ প্রয়োগ করে তরলে পরিণত করা যায়। কোন গ্যাসীয় পদার্থের তাপমাত্রা যখন ক্রান্তি তাপমাত্রার নিচে থাকে তাকে এ গ্যাসের বাষ্প বলে। গ্যাসের বাষ্পকে উপযুক্ত চাপ প্রয়োগ  করে তরলে পরিণত করা যায়। তাছাড়া তরলের পৃষ্ঠতলে যে সমস্ত অণুর স্থানান্তর গতি বেশী হয় তাকেও ঐ তরলের বাষ্প বলে। তরলের বাষ্পকে শীতল করে সংশ্লিষ্ট তরলে পরিণত করা যায়।

প্রশ্ন : গ্যাস তরলীকরণের শর্তগুলি উল্লেখ কর ?

উত্তর : গ্যাস তরলীকরণের শর্ত হলো ,

  1. কোন গ্যাসের তাপমাত্রা সন্ধি তাপমাত্রা বা এর নিচে আনতে হবে।
  2. তাপমাত্রা সন্ধি তাপমাত্রায় আনার পর উপযুক্ত চাপ প্রয়োগ  করতে হবে। তাপমাত্রা যত কমে বাস্পীয় চাপও তত কমে। তাই গ্যাসের তাপমাত্রা যত কম হবে। এর তরলীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় চাপও তত কম হবে।

পদ্ধতিসমূহ : 

  1. যে সব গ্যাসের স্কুটনাংক খুব বেশী নয় তাদেরকে বিভিন্ন হিমমিশ্র ব্যবহার করে সরাসরি তরলিত করা যায়। হিমমিশ্র রূপে খাদ্য লবণ ও বরফ ব্যবহার করে 20°C বিগলিত \mathrm{CaCl}_{2} ও বরফ ব্যবহার করে –54°C তাপমাত্রায় পৌঁছানো যায়।
  2. জুল-থমসন পদ্ধতি প্রয়োগ  করে।

প্রশ্ন : গ্যাস সিলিন্ডার জাতকরণের মূলনীতি বর্ণনা কর।

  অথবা, গ্যাস সিলিন্ডার জাতকরণ গ্যাস সূত্র সমূহের বাস্তব ব্যবহাবের চমৎকার উদাহরণ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : গ্যাস সিলিন্ডার জাতকরণে গ্যাস সূত্রসমূহ অনুসৃত হয়। কোন গ্যাস সিলিন্ডারে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস ভর্তি করা হয়। যে কোন গ্যাস সিলিন্ডার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাপ সহ্য করতে পারে। যে চাপ সহা করতে পারে তার 20% – 30%  আয়তন খালি রেখে সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্যে হল বিপুল আয়তনের গ্যাসকে কম আয়তনের মধ্যে সঞ্চিত রাখা যাতে তাপমাত্রা ও মোল সংখ্যা স্থির থাকে।

গ্যাস সিলিন্ডারজাতকরণ করা হয় তরল হিসেবে কি জ্বালানী রূপে ব্যবহৃত হয় গ্যাস হিসেবে। গ্যাসকে তরলে পরিণত করতে হলে গ্যাস অনুসমূহের মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল বৃদ্ধি করতে হবে এবং গ্যাস অনুসমূহের মধ্যে গড় গতিশক্তি হ্রাস করতে হবে। এটি সম্ভব হবে চাপ বৃদ্ধি এবং তাপমাত্রা হ্রাসের মাধ্যমে। বয়েলের সূত্রমতে স্থির তাপমাত্রায় গ্যাসের আয়তন এর উপর প্রযুক্ত চাপের ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ চাপ বৃদ্ধি পেলে গ্যাসের আয়তন কমে গ্যাস অণুগুলো পরস্পরের নিকটে আসার ফলে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল বৃদ্ধি পায়।

চার্লসের সূত্রমতে স্থির চাপে পরম তাপমাত্রা আয়তনের সমানুপাতিক। যথেষ্ট নিম্ন তাপমাত্রায় গ্যাসের আয়তন হ্রাস পেলে পরস্পরের কাছাকাছি আসা অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। গ্যাসের গতিতত্ত্বের স্বীকাৰ্যমতে তাপমাত্রা হ্রাস করলে গ্যাস অণু সমূহের গতিশক্তি এতই হ্রাস পায় যে, এদের মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের মান এমনভাবে বৃদ্ধি পায় যেন, এরা সহজে তরলে পরিণত হতে পারে। তবে অ্যান্ড্রুজের মতে কোন গ্যাসকে তরলে পরিণত করতে হলে তাপমাত্রা ক্রান্তি তাপমাত্রার নিচে এনে উপযুক্ত চাপ প্রয়োগ  করতে হবে। তবে যে সমস্ত গ্যাসের ক্রান্তি তাপমাত্রা কক্ষ তাপমাত্রার মধ্যে থাকে তাকে শুধুমাত্র চাপ প্রয়োগে তরল করা যায়। অতএব বলা যায়, গ্যাস সিলিন্ডার জাতকরণের ক্ষেত্রে গ্যাসের সূত্র মেনে চলা হয়।

উদাহরণ : মনে করি,

20L আয়তনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে 12kg গ্যাস ভর্তি করতে হবে। যদি ব্যবহৃত গ্যাসের প্রধান উপাদানের মোলার  ভর M হয় তাহলে 12kg গ্যাস = \frac{12000}{M} \mathrm{~mol}

S.T.P তে সকল গ্যাসের মোলার  আয়তন 22.414 L

0°C তাপমাত্রায়,

1 mol গ্যাস 22.414 L  আয়তন দখল করে 1 atm চাপ প্রয়োগ  করে

∴1 ,,     ,,      1L       ,,        ,,    ,,  (1×22.414) atm ,, ,,

                                                              [বয়েলের সূত্র মতে আয়তন কমলে চাপ বাড়বে]

∴1 ,,     ,,     20L       ,,        ,,    ,,          \frac{22-414}{20} a t m ,, ,,

                                                              [আয়তন বাড়লে চাপ কমবে]

\therefore \frac{12000}{M} ,,     ,,  20L      ,,        ,,    ,,   \frac{22.414 \times 12000}{20 \times M} a t m,, ,,

অর্থাৎ, হিসাবকৃত চাপের এই মান যে সিলিন্ডার সহ্য করতে পারে এর মধ্যে ঐ গ্যাস ভর্তিকরণ নিরাপদ হবে। তবে সব ক্ষেত্রে গ্যাস 0°C তাপমাত্রায় সিলিন্ডার জাতকরণ করা হয় না। 15° – 35°C তাপমাত্রার মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করা হয়। যেহেতু সিলিন্ডারের আয়তন নির্দিষ্ট তাই তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে গ্যাসের পরিবর্তিত চাপ বয়েল এবং চার্লসের সমন্বয় সূত্র দ্বারা নির্ণয় করা যায়। 

 যেমন :\frac{\text { হিসাবকৃত চাপ } x \text { সিলিন্ডারের আয়তন }}{273 K}=\frac{\text { পরিবর্তিত চাপ x সিলিন্ডারের আয়তন }}{\text { পরিবর্তিত তাপমাত্রা }}\left(\frac{P_{1} V_{1}}{T_{1}}=\frac{P_{2} V_{2}}{T_{2}} \text {, আয়তন স্থির হলে } \frac{P_{1}}{T_{1}}=\frac{P_{2}}{T_{2}}\right)

প্রাকৃতিক গ্যাস সমূহ গন্ধহীন।

সিলিন্ডারজাতকরণের সময় কিছুটা মারক্যাপ্টেন (CH_{3} -SH,CH_{3}-CH_{2}-SHযুক্ত করা হয় যাতে গ্যাস লিক হলে তা সহজে বুঝা যায়।