পরিপাক (Digestion)
যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্যবস্তু বিভিন্ন হরমোনের প্রভাবে ও এনজাইমের সহায়তায় ভেঙ্গে দ্রবণীয় সরল ও তরল এবং দেহকোষের গ্রহণীয় ক্ষুদ্র অনুতে পরিণত হয় তাকে পরিপাক বলে।
মানুষের খাদ্য পরিপাক প্রণালী (Process of Human Digestion)
খাদ্যের উপাদান | প্রধান এনজাইম | উৎপন্ন দ্রব্য |
শর্করা (Carbohydrate) (ভাত, রুটি, চিনি, শাক-সবজি) | অ্যামাইলোলাইটিক (Amylolytic enzymes) (টায়ালিন, অ্যামাইলেজ, মল্টেজ, সুক্রেজ) | গ্লুকোজ |
আমিষ (Protein) (মাছ, মাংস, ডাল) | প্রোটিওলাইটিক এনজাইম (Proteolytic enzymes) (পেপসিন, ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন, অ্যামিনোট্রিপসিন) | অ্যামিনো এসিড |
স্নেহ দ্রব্য (Lipid) (ভোজ্য তেল, ঘি, মাখন, প্রাণীজ চর্বি) | লাইপোলাইটিক এনজাইম (Lipolytic enzymes) (পাকস্থলীয় ও আন্ত্রিক লাইপেজ, ফসফোলাইপেজ, কোলেস্টেরল ও গ্লিসারোল এস্টারেজ, লেসিথিনেজ) | ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারোল |
মুখগহ্বরে খাদ্য পরিপাক (Digestion of Food in Buccal Cavity)
- মানুষের পৌষ্টিকনালী মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত এবং 8 থেকে 10 মিটার লম্বা।
- মুখগহ্বরের ঊর্ধ্ব প্রাচীর তালুর অস্থি ও পেশি দিয়ে, সামনের প্রাচীর ঠোঁটের পেশি দিয়ে এবং পাশের প্রাচীর গালের পেশি নিয়ে গঠিত।
- তালুর অগ্রভাগ অস্থিনির্মিত ও শক্ত, পশ্চাৎভাগ পেশল ও নরম।
- কোমল তালুর পিছনের প্রান্তের মধ্যভাগ থেকে একটি পেশল আলজিভ (uvula) মুখগহবরে ঝুলে থাকে।
স্বাদকুড়ি (Taste Buds) :
নিম্ন চোয়ালের অস্থির সাথে জিহ্বা যুক্ত থাকে। এর পৃষ্ঠতলে থাকে ফ্লাস্ক আকৃতির স্বাদকুড়ি (taste buds)। স্বাদকুড়িগুলো খাদ্যে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বস্তুর প্রতি সংবেনশীল। যেমন :-
- জিহ্বার অগ্রপ্রান্ত মিষ্টি।
- জিহ্বার অগ্রভাগের দুপাশে নোনা।
- জিহ্বার অগ্রভাগের দুপাশে টক (অম্লতা)।
- জিহ্বার পিছন দিকে তিক্ত স্বাদ অনুভব করে।
ঝাল জাতীয় খাবারের জন্য কোন স্বাদকুড়ি নাই। তবে ঝালজাতীয় খাদ্য জিহ্বার জ্বালা (irritation) ঘটায়। পাঁচ-দশ দিনের মধ্যে খাদ্যের ঘষায় স্বাদকুড়ি নষ্ট বা ছিন্ন হয়ে যায় এবং প্রতিস্থাপিত হয়।
লালাগ্রন্থি (Salivary gland) :
মানুষের মুখগহ্বরের দুপাশে তিন জোড়া লালাগ্রন্থি (salivary gland) থাকে।
মুখগহ্বরে খাদ্যবস্তু দুভাবে পরিপাক হয় – যান্ত্রিক (mechanical) ও রাসায়নিক (chemical)।
যান্ত্রিক পরিপাক
- চার ধরনের দাঁত যেমন : ইনসিসর (Incisor), ক্যানাইন (canine), প্রিমোলার (Pre – molar) ও মোলার (Molar)।
- জিহ্বা নড়া- চড়া সংকোচন ও প্রসারণক্ষম পেশল অংশ। এটি স্বাদ নেওয়া ছাড়াও দাঁতে আটকে থাকা খাদ্যকণা সরাতে, মুখের চারপাশে ঘুরিয়ে বিভিন্ন দাঁতের নিচে পৌঁছাতে, লালা মিশ্রণে এবং সবশেষে গিলতে সাহায্য করে।
- যান্ত্রিক পরিপাকের সময় খাদ্যখন্ড নিষ্পেষিত হয়ে নরম খাদ্যমন্ড (bolus) –তে পরিণত হয়। জিহ্বার উপরিতল যখন খাদ্যকে শক্ত তালুর (hard plate) বিপরীতে রেখে চাপ দেয় তখন খাদ্যমন্ড পেছনদিকে যেতে বাধ্য হয়।
- পিছনের কোমল তালু (soft plate) থাকায় খাদ্যমন্ড নাসাছিদ্রপথে প্রবেশে বাধা পায়।
- কোমল তালু পার হলেই খাবার গলবিলে এসে পৌঁছায়। গলবিল থেকে দুটি নালি চলে গেছে – একটি শ্বসন নালি (traehea), অন্যটি অন্ননালি (oesophagus)।
- জিহ্বার গোড়ার দিকের শ্বাসনালীর অংশের ছোট উদগত অংশ হিসেবে অবস্থিত এপিগ্লটিস (epiglottis) অন্যনালির উপর এমন এক ঊর্ধ্বগামী বল প্রয়োগ করে যাতে চিবানো খাদ্য শ্বাসনালীর ভেতর প্রবেশ না করে অন্ননালির ভেতর প্রবেশ করে।
রাসায়নিক পরিপাক
লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারসে টায়ালিন ও মল্টেজ (অল্প) নামে শর্করা বিশ্লেষী এনজাইম পাওয়া যায়। এগুলো জটিল শর্করাকে মল্টোজ এবং সামান্য মল্টোজ গ্লুকোজে পরিণত করে।
আমিষ পরিপাক :
মুখগহ্বরের লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারসে প্রোটিওলাইটিক (আমিষ বিশ্লেষী) এনজাইম না থাকায় এখানে আমিষ জাতীয় খাদ্যের কোন রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে না।
স্নেহ পরিপাক :
মুখগহ্বরে স্নেহ জাতীয় খাদ্য পরিপাকের জন্য কোনো এনজাইম না থাকায় এ ধরনের খাদ্যের পরিপাকও ঘটে না।