10 Minute School
Log in

মানুষের রেচনতন্ত্র (Human Excretory System)- বৃক্কের গঠন ও কাজ (Structure and Functions of Kidney)

রেচন পদার্থ নিষ্কাশনের জন্য মানবদেহে একটিমাত্র সুনির্দিষ্ট তন্ত্র রয়েছে যা রেচনতন্ত্র (Excretory System) নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে শতকরা ৮০ ভাগ রেচন পদার্থ নিষ্কাশিত হয়। বাকি ২০ ভাগ রেচন পদার্থ বিভিন্ন ক্রিয়াকর্মে উৎপন্ন ও বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়। এসব অঙ্গ সহকারী রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে। মানুষের রেচনতন্ত্র (Human Excretory System)-একজোড়া বৃক্ক, একজোড়া ইউরেটার, একটি মূত্রথলি ও একটি মূত্রনালি নিয়ে গঠিত।

বৃক্ক (Kidney)

বক্ষপিঞ্জরের ঠিক নিচে উদর গহ্বরের কটি অর্থাৎ কোমর অঞ্চল (lumbar region)-এ মেরুদণ্ডের দুপাশে একটি করে মোট দুটি বৃক্ক থাকে। বৃক্কের উপরের প্রান্ত দ্বাদশ থোরাসিক কশেরুকার নিচে এবং নিচের প্রান্ত তৃতীয় লাম্বার কশেরুকার উপরে অবস্থিত। উদর গহ্বরে যকৃতের অবস্থানের কারণে বাম বৃক্কটি ডান বৃক্কের তুলনায় সামান্য উপরে অবস্থিত । বৃক্ক দেখতে অনেকটা শিম বীজের মতো। এর পার্শ্বদেশ উত্তল, ভিতরের দিক অবতল।

রেচন নালি বা ইউরেটার (Ureter)

বৃক্কের পেলভিস থেকে সৃষ্টি হয়ে পৃষ্ঠউদরীয় প্রাচীর ঘেঁষে পশ্চাৎভাগে অগ্রসর হয়ে যে নালি মূত্রথলিতে উন্মুক্ত হয়েছে তাকে ইউরেটার বলে । প্রত্যেকটি নালি দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার । এ নালি বৃক্ক থেকে মুত্রথলিতে মূত্র পরিবহন করে না।

মূত্রথলি (Urinary Bladder)

মূত্রথলি পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট এবং ডেট্রুসর (detrusor) নামক অনৈচ্ছিক পেশি, দিয়ে গঠিত একটি ত্রিকোণাকার থলি বিশেষ)।  এটি সংকোচন প্রসারণক্ষম। মূত্রথলি ৭০০-৭৫০ মিলিলিটার মূত্র ধারণ করতে পারে। তবে ২৮০-৩২০ মিলিলিটার মূত্র মূত্রথলিতে জমা হলেই ত্যাগের ইচ্ছা জাগে) মূত্র সাময়িকভাবে ধারণ করা ও সময়ে সময়ে নিষ্কাশন করা এর কাজ।

মূত্রনালি বা ইউরেথ্রা (Urethra)

পুরুষে মূত্রথলির পশ্চাৎপ্রান্ত থেকে মূত্রনালি উৎপন্ন হয়ে লিঙ্গের মধ্য দিয়ে হয়ে শেষ পর্যন্ত একটি ছিদ্রের মাধ্যমে বাইরে উন্মুক্ত। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষে এ নালির দৈর্ঘ্য ১৮-১৯ সেন্টিমিটার।  নারীদের দেহে মূত্রনালি একটি পৃথক ছিদ্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে উন্মুক্ত এবং এর দৈর্ঘ্য মাত্র ৩.৫-৪ সেন্টিমিটার। মূত্র বাইরে নিষ্কাশন করা এর প্রধান কাজ। তাছাড়া পুরুষের ইউরেথ্রার মাধ্যমে বীর্য দেহের বাইরে নির্গত হয়।

মানুষের রেচনতন্ত্র (Human Excretory System)

বৃক্কের গঠন ও কাজ (Structure and Functions of Kidney) 

বাহ্যিক গঠন (External Structure) :

প্রতিটি বৃক্ক নিরেট, চাপা দেখতে অনেকটা শিম বীজের মতো এবং কালচে লাল রংয়ের। একটি পরিণত বৃক্কের দৈর্ঘ্য ১০-১২ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৫-৬ সেন্টিমিটার এবং স্থূলত্ব ৩ সেন্টিমিটার। একেকটির ওজন পুরুষে ১৫০-১৭০ গ্রাম এবং নারীদেহে ১৩০-১৫০ গ্রাম। বৃক্কের বাইরের দিক উত্তল ও ভিতরের দিক অবতল। অবতল অংশের ভাজকে হাইলাম বলে। হাইলামের মধ্য দিয়ে ইউরেটার ও রেনাল শিরা বহির্গত হয় এবং রেনাল ধমনি ও স্নায়ু বৃক্কে প্রবেশ করে। সম্পূর্ণ বৃক্ক ক্যাপসুল নামক তন্তুময় যোজক টিস্যুর সুদৃঢ় আবরণে বেষ্টিত। 

অন্তর্গঠন (Internal Structure) :

বৃক্কের লম্বচ্ছেদে তিনটি সুস্পষ্ট অংশ দেখা যায়। বাইরে অবস্থিত অপেক্ষাকৃত গাঢ় অঞ্চলটি কর্টেক্স, মধ্যখানে হালকা লাল রঙের মেডুলা এবং ভিতরে সাদাটে পেলভিস। বৃক্কের সর্ববহিঃস্থ ও শক্ত তন্তুময় যোজক টিস্যুতে এবং অসংখ্য রেনাল করপাসল (খালি চোখেও দেখা যায়) ও নেফ্রনের অংশবিশেষ নিয়ে কর্টেক্স গঠিত।

কর্টেক্সের নিচে হালকা লাল রঙের মেডুলা অংশ ৮-১৮টি পিরামিড আকতির অংশ নিয়ে গঠিত। এগুলো রেনাল পিরামিড। নেফ্রনের নালিকাময় অংশ ও রক্তবাহিকা নিয়ে একেকটি পিরামিড নির্মিত হয়। পিরামিডের গোড়া থাকে কর্টেক্সের দিকে, আর ১০-২৫টি ছিদ্রযুক্ত চূড়া বা প্যাপিলা থাকে রেনাল পেলভিসে উন্মুক্ত। দুই রেনাল পিরামিডের কর্টেক্সের কিছু অংশ স্তম্ভের মত মেডুলার গভীরে প্রবেশ করেছে। এগুলোকে রেনাল কলাম বলে।

বৃক্কের অভ্যন্তরে অবস্থিত ইউরেটারের অংশটি উপর দিকে ফানেলের মতো প্রসারিত অংশে পরিণত হয়ে রেনাল পেলভিস গঠন করেছে। প্রশস্ত পেলভিসটি উপর দিকে কয়েকটি শখা-প্রশাখায় রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে ২-৩টি হচ্ছে প্রধান শাখা যা মেজর ক্যালিক্স নামে পরিচিত। মেজর ক্যালিক্স বিভক্ত হয়ে মোট ৮-১৪টি মাইনর ক্যালিক্স সৃষ্টি করে।  বৃক্কে মূত্র সৃষ্টি হলে প্রথমেই তা রেনাল প্যাপিলা হয়ে মাইনর ক্যালিক্সে প্রবেশ করে। এখান থেকে মূত্র মেজর ক্যালিক্স হয়ে রেনাল পেলভিস অতিক্রম করে ইউরেটারে বাহিত হয়। ক্যালিক্সে পেলভিস ও ইউরেটারের প্রাচীরে এমন এক ধরনের সংকোচনশীল উপাদান থাকে যার প্রভাবে মূত্র মূত্রথলির দিকে ধাবিত হয়। 

বৃক্কের কাজ (Functions of Kidney) : 

  • রক্ত থেকে প্রোটিন বিপাকে সৃষ্ট নাইট্রোজেন জাত বর্জ্য অপসারণ করা। 
  • দেহে এবং রক্তে পানির ভারসাম্য রক্ষা করা।
  • রক্তে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফেট এবং ক্লোরাইডসহ বিভিন্ন আয়রণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা।
  • রক্তে অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা। 
  • যথাযথ আয়নিক ভারসাম্য বজায় রাখা। হরমোন (যথা- এরিথ্রোপয়েটিন; রেনিন) ক্ষরণ করা। 
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা। 
  • দেহে প্রবিষ্ট প্রতিবিষ ও ভেষজ পদার্থসমূহকে দেহ থেকে অপসারণ করা।