মানব শারীরতত্ত্ব : শ্বসন ও শ্বাসক্রিয়া | Human Physiology: Respiration Breathing
প্রধান শব্দাবলি (Key word) | |
অ্যালভিওলাই
শ্বাসরঞ্জক সাইনোসাইটিস
|
প্লিউরা
ওটিটিস মিডিয়া কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস |
অক্সিজেন ছাড়া কোনো প্রাণী বাঁচতে পারে না। আমাদের দেহেও বায়ুর সাথে অক্সিজেন শ্বসন অঙ্গে প্রবেশ করে এবং তা রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে দেহের সব অঙ্গের টিস্যুকোষে পৌছায়। এ অক্সিজেন টিস্যুকোষে সঞ্চিত খাদ্য উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে তাপ ও শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে জীবনকে সচল রাখে। উপজাত হিসেবে তৈরি করে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও পানি। CO2 রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে শ্বসন অঙ্গের মাধ্যমে দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়।
যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীব পরিবেশ থেকে গৃহীত অক্সিজেন দিয়ে কোষমধ্যস্থ খাদ্যবস্তুকে জারিত করে খাদ্যের স্থিতিশক্তিকে তাপ ও গতিশক্তিরূপে মুক্ত করে এবং উপজাত পদার্থ হিসেবে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও পানি উৎপন্ন করে তাকে শ্বসন বলে। এ অধ্যায়ে শ্বসন প্রক্রিয়া এবং এ সংক্রান্ত কয়েকটি সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
মানুষের শ্বসনতন্ত্র (Human Respiratory System):
মানুষের শ্বসন অঙ্গ হচ্ছে একজোড়া ফুসফুস (lungs)। যে পথ দিয়ে ফুসফুসে বায়ু প্রবেশ করে এবং ফুসফুস থেকে তা বহির্গত হয় তাকে শ্বসন পথ (respiratory passage) বলে। সম্মুখ নাসারন্ধ্র থেকে শ্বসন পথের শুরু। মানুষের শ্বসনতন্ত্রের পর্যায়ক্রমিক বিভিন্ন অংশকে নিচে বর্ণিত তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে বর্ণনা করা যায়।
ক. বায়ু গ্রহণ ও ত্যাগ অঞ্চল (Air intake and discharge zone)
১. সম্মুখ নাসারন্ধ্র (Anterior nostrils) : নাকের সামনে অবস্থিত পাশাপাশি দুটি ছিদ্রকে সম্মুখ নাসারন্ধ্র বলে। নাক একটি হলেও ন্যাসাল সেপ্টাম (nasal septum) বা নাসা ব্যবধায়ক-এর মাধ্যমে দুটি নাসারন্ধ্রের বিকাশ ঘটেছে। সম্মুখ নাসারন্ধ্র সবসময় উন্মুক্ত থাকে এবং এ পথেই বায়ু দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
২. ভেস্টিবিউল (Vestibule) :
নাসারন্ধ্রের পরে নাকের ভিতরের অংশের নাম ভেস্টিবিউল। এর প্রাচীরে অনেক লোম থাকে। লোমগুলো ছাঁকনির মতো গৃহীত বাতাস পরিষ্কারে সহায়তা করে।
৩. নাসাগহ্বর (Nasal cavity) :
ভেস্টিবিউলের পরের অংশটি নাসাগহ্বর। নাসাগহ্বরের প্রাচীরে সিলিয়াযুক্ত মিউকাস ক্ষরণকারী ও অলফ্যাক্টরী কোষ থাকে। এটি আগত প্রশ্বাস বায়ুকে কিছুটা সিক্ত করে। সিলিয়াযুক্ত ও মিউকাস কোষগুলো ধুলাবালি এবং রোগজীবাণু আটকে দেয়। অলফ্যাক্টরি কোষ ঘ্রাণ উদ্দীপনা গ্রহণে সাহায্য করে।
৪. পশ্চাৎ নাসারন্ধ্র (Posteriornostrils) : নাসা গহ্বরদ্বয় যে দুটি ছিদ্রের মাধ্যমে নাসাগলবিলে উন্মুক্ত হয় তাকে কোয়ানা (choana) বা পশ্চাৎ নাসারন্ধ্র বলে। এসব ছিদ্রপথে বাতাস নাসাগলবিলে প্রবেশ করে।
৫. নাসাগলবিল (Nasopharynx) : পশ্চাৎ নাসারন্ধের পরে নাসাগলবিল অবস্থিত। এর পরেই মুখ-গলবিল (oropharynx), যা স্বরযন্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত।
৬. স্বরযন্ত্র (Larynx): এটি নাসাগলবিলের নিচের অংশের ঠিক সামনের দিকের অংশ এবং কয়েকটি তরুণাস্থি টুকরায় গঠিত। এগুলোর মধ্যে থাইরয়েড তরুণাস্থি সবচেয়ে বড় এবং এটি গলার সামনে উঁচু হয়ে ওঠে (পুরুষে) হাত দিলে এর অবস্থান বোঝা যায় এবং বাইরে থেকে দেখা যায়। একে Adam’s Apple বলে।
স্বরযন্ত্রের উপরে থাকে একটি ছোট এপিগ্লটিস (epiglottis)। স্বরযন্ত্রে অনেক পেশি যুক্ত থাকে। এর অভ্যন্তরভাগে থাকে মিউকাস আবরণী ও স্বররজ্জু (vocal cord)। পেশির সংকোচন-প্রসারণই স্বররজ্জুর টান (tension) বা শ্লথন (relaxation) নিয়ন্ত্রণ করে । টানটান অবস্থায় বাতাসের সাহায্যে স্বররজ্জু কম্পিত হয়ে শব্দ সৃষ্টি করে। এপিগ্লটিস খাদ্য গলাধঃকরণের সময় স্বরযন্ত্রের মুখটি বন্ধ করে দেয়। ফলে খাদ্য স্বরযন্ত্রে প্রবেশ করতে পারে না, অন্য সময় এটি শ্বসনের উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত থাকে। স্বরযন্ত্রে স্বর সৃষ্টি হয়।
খ. বায়ু পরিবহন অঞ্চল (Air transport zone)
৭. শ্বাসনালি বা ট্রাকিয়া (Trachea) : স্বরযন্ত্রের পর থেকে পঞ্চম বক্ষদেশীয় কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ১২ সেমি. দীর্ঘ ও ২ সেমি. ব্যাসবিশিষ্ট ফাঁপা নলাকার অংশকে ট্রাকিয়া বলে। এটি ১৬-২০টি তরুণাস্তি নির্মিত অর্ধবলয়ে (C-আকৃতির) গঠিত। তন্তুময় টিস্যু দিয়ে অর্ধবলয়গুলো আটকানো থাকে ট্রাকিয়ার অন্তঃপ্রাচীরে সিলিয়াযুক্ত মিউকাস আবরণী রয়েছে। ট্রাকিয়া চুপসে যায় না বলে সহজে এর মধ্য দিয়ে বায়ু চলাচল করতে পারে। এর অন্তঃপ্রাচীরের সিলিয়া অবাঞ্ছিত বস্তুর প্রবেশ রোধ করে।
৮. ব্রঙ্কাস (Bronchus) : বক্ষগহ্বরে ট্রাকিয়ার শেষ প্রান্ত দুটি (ডান ও বাম) শাখায় বিভক্ত হয়; এদের নাম ব্রঙ্কাই (bronchi –বহুবচন)। এগুলো ফুসফুসের হাইলাম (hilum) দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে। ডান ব্রঙ্কাসটি অপেক্ষাকৃত ছোট কিন্তু প্রশস্ত এবং তিনভাগে ভাগ হয়ে ডান ফুসফুসের তিনটি অ্যালভিওলাই দৃশ্যমান খণ্ডে প্রবেশ করে। বাম ব্রঙ্কাসটি দুভাগে ভাগ হয়ে বাম ফুসফুসের দুটি খন্ডে প্রবেশ করে। ফুসফুসের অভ্যন্তরে প্রতিটি ব্রঙ্কাস পুনঃপুনঃ বিভক্ত হয়ে অসংখ্য ক্ষুদ্রাকায় ব্রঙ্কিওল (bronchiole) গঠন করে। ব্রঙ্কিওল দুধরনের –প্রান্তীয় ব্রঙ্কিওল ও শ্বসন ব্রঙ্কিওল। ব্রঙ্কাসে তরুণাস্থি থাকলেও ব্রঙ্কিওলগুলো তরুণাস্থিবিহীন।
গ. শ্বসন অঞ্চল (Respiratory zone):
৯. ফুসফুস (Lungs) : ফুসফুস সংখ্যায় দুটি এবং হালকা গোলাপী রঙের স্পঞ্জের মতো নরম অঙ্গ। বাম ফুসফুসটি আকারে ছোট, ওজনে ৫৬৫ গ্রাম, দুই লোব বিশিষ্ট এবং ডান ফুসফুস আকারে বড়, ওজনে ৬২৫ গ্রাম, তিন লোব বিশিষ্ট। ফুসফুস দ্বিস্তরী পিউরাল পর্দা (pleural membrane) দিয়ে আবৃত থাকে। ভিতরের পর্দাকে ভিসেরাল প্লিউরা এবং বাইরের পর্দাকে প্যারাইটাল প্লিউরা বলে। দুই স্তরের মাঝে প্লিউরাল গহ্বরে প্লিউরালরস নামক এক ধরনের রস থাকে। ব্রঙ্কাস যে অংশে ফুসফুসে প্রবেশ করে তাকে হাইলাম (hilum) বলে । হাইলামের মাধ্যমে ধমনি ফুসফুসে প্রবেশ এবং শিরা ও লসিকা নালি বেরিয়ে আসে। ব্রঙ্কাস, ধমনি, শিরা, লসিকা নালি, ঘন যোজক টিস্যুতে পরিবেষ্টিত হয়ে পালমোনারি মূল (pulmonary root) গঠন করে এবং এর সাহায্যেই ফুসফুস ঝুলে থাকে। ফুসফুসের প্রতিটি লোব কয়েকটি সেগমেন্ট (bronchopulmonary segments)-এ বিভক্ত। ডান ফুসফুসে ১০টি এবং বাম ফুসফুসে ৮টি সেগমেন্ট থাকে। প্রত্যেকটি সেগমেন্ট আবার অসংখ্য লোবিওল (lobule)-এ বিভক্ত। লোবিওলগুলো ফুসফুসের কার্যকরী একক। ফুসফুসে রক্ত সংবহনতন্ত্র এবং পরিবেশের মধ্যে O2 ও CO2 এর বিনিময় ঘটে।
১০. ব্রঙ্কিয়াল বা শ্বসন বৃক্ষ (Bronchial or Respiratory tree) : ট্রাকিয়ার দ্বিবিভাজনে সৃষ্ট যে ব্রঙ্কাস ডান ও বাম ফুসফুসে প্রবেশ করে তাকে প্রাইমারি ব্রঙ্কাস বলে। প্রাইমারি ব্রঙ্কাস বিভক্ত হয়ে প্রত্যেক লোবের জন্য একটি করে সেকেন্ডারি ব্রঙ্কাস বা লোবার ব্রঙ্কাস (lobar bronchus) গঠন করে (ডান ফুসফুসে ৩টি এবং বাম ফুসফুসে ২টি) সেকেন্ডারি ব্রঙ্কাস থেকে টার্সিয়ারী ব্রঙ্কাস বা সেগমেন্টাল ব্রঙ্কাস সৃষ্টি হয়ে একটি করে পালমোনারি সেগমন্টে প্রবেশ করে। সেগমেন্টাল ব্রঙ্কাস বার বার বিভক্ত হয়ে যে সূক্ষ্ম নালির সৃষ্টি হয় সেগুলোকে ব্রঙ্কিওল (bronchiole) বলে যা একএকটি লোবিওলে প্রবেশ করে। সমগ্র বায়ুনালি সিস্টেমকে দেখতে একটি উল্টানো বৃক্ষের মতো দেখায় বলে একে সাধারণভাবে শ্বসন বৃক্ষ-ও বলে।
ব্রঙ্কাস প্রাচীরে তরুণাস্থি (cartilage) থাকে, ব্রঙ্কিওলে থাকেনা। ব্রঙ্কিওল ব্রঙ্কাসের চেয়ে বেশি মসৃণ পেশি ধারণ করে, তবে ব্রঙ্কাস এবং ব্রঙ্কিওল উভয়ে সিলিয়াসম্পন্ন স্তম্বাকার এপিথেলিয়াম (columner epithelium)-এ আবৃত। প্রতিটি লোবিওলে ব্রঙ্কিওল বিভক্ত হয়ে প্রান্তীয় ব্রঙ্কিওল, শ্বসন ব্রঙ্কিওল, অ্যালভিওলার নালি, অ্যাট্রিয়াম, আলভিওলার থলি এবং সর্বশেষে অ্যালভিওলাস (alveolus, Pl.-alveloli) সৃষ্টি করে। অ্যালভিওলার নালি এবং অ্যালভিওলাই সরল আঁইশাকার এপিথেলিয়াম (squamous epithelium) দিয়ে আবৃত।
অ্যালভিওলাস-এর গঠন (Structure of alveolus):
অ্যালভিওলাস ফুসফুসের কার্যকরী একক। এগুলো আঙ্গুরের থোকার মতো গুচ্ছাবদ্ধ, অতি ক্ষুদ্রাকায়, বুদবুদ সদৃশ বায়ুথলি এবং গ্যাস বিনিময়ের তল (gas cxchange surface) গঠন করে। ফুসফুসে অ্যালভিওলাসের সংখ্যা বয়সের সাথে সম্পর্কিত। নবজাতক শিশুর ফুসফুসে মাত্র ২০ মিলিয়ন অ্যালভিওলাই থাকে, ৮ বছরে এ সংখ্যা ৩০০ মিলিয়ন; অন্যদিকে একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের দুটি ফুসফুসে থাকে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন অ্যালভিওলাই এবং এগুলো প্রায় ১১,৮০০ বর্গ সেন্টিমিটার শ্বসনতল সৃষ্টি করে। অ্যালভিওলাসের ব্যাস ২০০-৩০০ মাইক্রোমিটার এবং প্রাচীর মাত্র ০৪ মাইক্রোমিটার পুরু এগুলোর বাইরের দিকে প্রচুর কৈশিকজালিকা নিবিড়ভাবে অবস্থান করে। পালমোনারি ধমনি থেকে এগুলোর উৎপত্তি হয় এবং পুনরায় মিলে পালমোনারি শিরা গঠন করে। প্রত্যেক অ্যালভিওলাসের প্রাচীর অত্যন্ত পাতলা, চাপা স্কোয়ামাস এপিথেলিয়াল কোষে গঠিত হওয়ায় সহজেই গ্যাসের ব্যাপন ঘটতে পারে। অ্যালভিওলাস প্রাচীর ফ্যাগোসাইটিক অ্যালভিওলার ম্যাক্রোফেজ ধারণ করে। ম্যাক্রোফেজ অণুজীব এবং অন্যান্য বহিরাগত কণা ধ্বংস করে। তাছাড়া প্রাচীরে কোলাজেন ও স্থিতিস্থাপক তন্তু থাকে। এ স্থিতিস্থাপক সূত্রের কারণে প্রশ্বাস-নিঃশ্বাসের সময় অ্যালভিওলাস সহজেই প্রসারিত হতে পারে, আবার পূর্বাবস্থায় ফিরেও আসতে পারে।
প্রত্যেক অ্যালভিওলাসের প্রাচীর অত্যন্ত পাতলা, চাপা স্কোয়ামাস এপিথেলিয়াল কোষে গঠিত হওয়ায় সহজেই গ্যাসের ব্যাপন ঘটতে পারে। অ্যালভিওলাস প্রাচীর ফ্যাগোসাইটিক অ্যালভিওলার ম্যাক্রোফেজ ধারণ করে। ম্যাক্রোফেজ অণুজীব এবং অন্যান্য বহিরাগত কণা ধ্বংস করে। তাছাড়া প্রাচীরে কোলাজেন ও স্থিতিস্থাপক তন্তু থাকে। এ স্থিতিস্থাপক সূত্রের কারণে প্রশ্বাস-নিঃশ্বাসের সময় অ্যালভিওলাস সহজেই প্রসারিত হতে পারে, আবার পূর্বাবস্থায় ফিরেও আসতে পারে।
অ্যালভিওলাস প্রাচীরে সেপ্টাল কোষ নামক কিছু বিশেষ কোষ থাকে যা প্রাচীরের ভিতরের দিকে সারফ্যাকট্যান্ট (surfactant; dipalmitoyl lecithin) নামক ডিটারজেন্ট (detergent)-এর অনুরূপ ফসফোলিপিড রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে। সারফ্যাকট্যান্ট সারফেস টেনসন হ্রাস করে অ্যালভিওলাসকে চুপসে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। সারফ্যাকট্যান্টবিহীন অ্যালভিওলাস তথা ফুসফুস যথাযথ কাজ করতে পারে না। ২৩ সপ্তাহ বয়স্ক মানবভ্রূণে সর্বপ্রথম সারফ্যাকট্যান্ট ক্ষরণ শুরু হয়। এ কারণে ২৪ সপ্তাহের আগে মানবভ্রূণকে স্বাধীন অস্তিত্বের অধিকারী গণ্য করা হয় না। অনেক দেশে তাই এ সময়কাল পর্যন্ত গর্ভপাতের অনুমতি দেয়া হয়।
শ্বসন তন্ত্রের প্রধান অঙ্গসমূহের নাম এবং কাজ (Names and functions of the major organs of the respiratory system):
অঙ্গ | প্রধান কাজ |
১. নাসা গহ্বর | আগম্যমান (incoming) বায়ুকে ফিল্টার, গরম ও সিক্ত করে। মুখগলবিলে বায়ু প্রবেশের পথ হিসেবে কাজ করে। |
২. মুখগলবিল | নাক এবং স্বরথলির মধ্যে বায়ু প্রবাহের জন্য, এবং মুখ থেকে অন্ননালিতে খাদ্যের চলনের জন্য করিডোর (passageway) হিসেবে কাজ করে। |
৩. স্বরযন্ত্র | মুখগলবিল এবং শ্বসন নালির অবশিষ্ট অংশে বায়ু চলনের জন্য করিডোর প্রদান করে। শব্দ তৈরি করে। ট্রাকিয়াকে বহিরাগত বস্তু থেকে রক্ষা করা। |
৪. ট্রাকিয়া | বক্ষ গহ্বর থেকে বায়ু যাতায়াতের করিডোর প্রদান করে। সিলিয়া দ্বারা বহিরাগত বস্তুকে আটকায় এবং বহিষ্কার করে। |
৫. ডায়াফ্রাম | প্রশ্বাসের/শ্বাস গ্রহণের জন্য বক্ষ গহ্বরকে বিস্তৃত করে এবং তারপর শ্বাসত্যাগ/নিঃশ্বাসের জন্য মূল আকৃতিতে ফেরত আসে। |
৬. ব্রঙ্কাই | ফুসফুসে বায়ুর যাতায়াতের জন্য করিডোর প্রদান করে। বায়ু ফিল্টার করে। |
৭. ব্রঙ্কিওল | অ্যালভিওাসে বায়ুর যাতায়াতের জন্য করিডোর প্রদান করে। |
৮. অ্যালভিলাই | শ্বসন গ্যাস (O2এবংCO2) বিনিময়ের স্থান। ফুসফুসের কার্যকরী একক (functional unit of lung) |
৯. ফুসফুস | প্রধান শসন অঙ্গ। |
১০. প্লিউরা | ফুসফুসের বহিঃপৃষ্ঠকে রক্ষা করে; প্রকোষ্ঠে বিভক্ত করে (compartmentalize) এবং পিচ্ছিল করে। |
শ্বসনতন্ত্রের কাজ (function of Respiratory system)
১. শ্বসন গ্যাসের বিনিময়
২. শক্তি উৎপাদন
৩. পানি সাম্য
৪. তাপ নিয়ন্ত্রণ
৫. এসিড ও ক্ষারের সাম্যতা
৬. শব্দ উৎপন্ন
৭. হোমিওস্ট্যাসিস
৮. উদ্বায়ী গ্যাস
শ্বসনের শারীরবৃত্ত (Physiology of Respiration)
পরিবেশ থেকে গৃহীত O2 দিয়ে কোষমধ্যস্থ খাদ্য (গ্লুকোজ) জারিত করে শক্তি উৎপাদন শেষে CO2পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়ার জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ার নাম শ্বসন। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া ও মানবদেহে নিরন্তর চলমান প্রক্রিয়া। নিচে বর্ণিত দুটি পর্যায়ের মাধ্যমে সমগ্র প্রক্রিয়াটি সম্পাদিত হয়।
১. বহিঃশ্বসন (External respiration) :
এটি ভৌত রাসায়নিক প্রক্রিয়া যা ফুসফুসে সংঘটিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় এনজাইমের কোন ভূমিকা নেই এবং কোন শক্তি উৎপন্ন হয় না। ফুসফুসের অ্যালভিওলাইয়ে প্রশ্বাসের মাধ্যমে গৃহীত O2এবং দেহকোষ থেকে উৎপন্ন এবং রক্তবাহিত CO2 গ্যাসের বিনিময় ঘটে।
২. অন্তঃশ্বসন (Internal respiration) :
এটি জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়া যা দেহকোষ ও রক্তে সংঘটিত হয়। এখানে এনজাইমের ভূমিকা ব্যাপক এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়। ফুসফুস কর্তৃক বায়ুমণ্ডল থেকে গৃহীত O2 রক্ত দ্বারা বাহিত হয়ে দেহকোষে পৌঁছায় যেখানে গ্লুকোজ জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে। উপজাত বস্তু হিসেবে নির্গত CO2রক্ত দ্বারা পরিবাহিত হয়ে ফুসফুসে পৌঁছায়।