আদর্শ উদ্ভিদকোষ ও কোষ প্রাচীর (Ideal Plant Cell & Cell Wall)
আদর্শ উদ্ভিদকোষের(Ideal Plant Cell) বিভিন্ন অংশ
কোষপ্রাচীর (Cell Wall)
ভৌত গঠন (Physical Structure):
- মধ্যপর্দা (Middle Lamella) : একটি বিকশিত কোষ প্রাচীরকে(Cell Wall) প্রধানত তিনটি স্তরে বিভক্ত দেখা যায়। এর প্রথম স্তরটি হলো মধ্যপর্দা (middle lamella)। মাইটোটিক কোষ বিভাজনের টেলোফেজ পর্যায়ে এর সূচনা ঘটে। সাইটোপ্লাজম থেকে আসা ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট এবং গলগি বডি থেকে আসা পেকটিন জাতীয় ভেসিকলস্ মিলিতভাবে মধ্যপর্দা সৃষ্টি করে।
- প্রাথমিক প্রাচীর (Primary Wall) : দ্বিতীয় স্তরটি হলো প্রাথমিক প্রাচীর (primary wall)। মধ্যপর্দার ওপর সেলুলোজ (cellulose), হেমিসেলুলোজ (hemicellulose) এবং গ্লাইকোপ্রোটিন (glycoprotein) ইত্যাদি জমা হয়ে একটি পাতলা স্তর (১-৩ mপুরু) তৈরি করে। এটি প্রাথমিক প্রাচীর।
- সেকেন্ডারি প্রাচীর (Secondary Wall) : দ্বিতীয় স্তরের ওপরের স্তরে সাধারণত সেলুলোজ এবং লিগনিন জমা হয়। এটি সেকেন্ডারি প্রাচীর (secondary wall) বা তৃতীয় স্তর। ভাজক কোষ এবং অধিক মাত্রায় বিপাকীয় অন্যান্য কোষে সেকেন্ডারি প্রাচীর তৈরি হয় না। সেকেন্ডারি প্রাচীর তিন স্তরবিশিষ্ট হয়।
- টারশিয়ারি প্রাচীর (Tertiary Wall) : বিরল ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি প্রাচীরের ভেতরের দিকে টারশিয়ারি প্রাচীর (tertiary wall) জমা হতে পারে।
- কূপ এলাকা (Pit fields) :
- পিট মেমব্রেন (Pit membrane): দুটি পাশাপাশি কোষের কূপও একটি অপরটির উল্টোদিকে মুখোমুখি অবস্থিত এবং কূপ দুটির মাঝখানে কেবল মধ্যপর্দা থাকে। মধ্যপর্দাকে পিট মেমব্রেন বলে।
- পিট পেয়ার (Pit Pair) : মুখোমুখি দুটি কূপকে পিট পেয়ার (pit pair) বলে।
- প্লাজমোডেসমাটা (Plasmodesmata) : দুটি পাশাপাশি কোষের প্রাচীরের সূক্ষ্ম ছিদ্র পথে নলাকার সাইটোপ্লাজমিক সংযোগ স্থাপিত হয়। একে প্লাজমোডেসমাটা (একবচন : প্লাজমোডেসমা) বলে ।
রাসায়নিক গঠন (Chemical Composition)
মধ্যপর্দায় অধিক পরিমাণে থাকে পেকটিক অ্যাসিড। এ ছাড়া অদ্রবণীয় ক্যালসিয়াম পেকটেট এবং ম্যাগনেসিয়াম পেকটেট লবণ থাকে- যাকে পেকটিন বলা হয়। এ ছাড়াও অল্প পরিমাণে থাকে প্রোটোপেকটিন। প্রাথমিক প্রাচীরে থাকে প্রধানত সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ এবং গ্লাইকোপ্রোটিন। হেমিসেলুলোজ-এ xylans, arabans, galactans ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পলিস্যাকারাইডস থাকে। গ্লাইকোপ্রোটিনে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং অন্যান্য পদার্থ থাকে। Xyloglucan নামক হেমিসেলুলোজ প্রাচীর গঠনে ক্রসলিংক (cross-link) হিসেবে কাজ করে। অনেক সেকেন্ডারি প্রাচীরে লিগনিন (lignin) থাকে। কোনো কোনো প্রাচীরে সুবেরিন (suberin), ওয়াক্স ইত্যাদি থাকে। ছত্রাকের প্রাচীর কাইটিন এবং ব্যাকটেরিয়ার প্রাচীর লিপিড-প্রোটিন পলিমার দিয়ে গঠিত।
প্রোটোপ্লাস্ট (Protoplast)
প্রোটোপ্লাজমের বৈশিষ্ট্য | |
ভৌত বৈশিষ্ট্য | (i)প্রোটোপ্লাজম অর্ধস্বচ্ছ, বর্ণহীন, জেলি সদৃশ অর্ধতরল আঠালো পদার্থ। (ii)এটি দানাদার ও কলয়ডালধর্মী। (iii)ইহা কোষস্থ পরিবেশ অনুযায়ী জেলি থেকে তরলে এবং তরল থেকে জেলিতে পরিবর্তিত হতে পারে। (iv)প্রোটোপ্লাজমের আপেক্ষিক গুরুত্ব পানি অপেক্ষা বেশি। (v)উত্তাপ, অ্যাসিড ও অ্যালকোহলের প্রভাবে প্রোটোপ্লাজম জমাট বাঁধে। |
রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য | রাসায়নিকভাবে প্রোটোপ্লাজমে জৈব এবং অজৈব পদার্থ আছে। এতে অধিক পরিমাণে আছে পানি। জৈব পদার্থের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন, এরপর আছে কার্বোহাইড্রেট ও লিপিড ও ভিটামিন। এছাড়াও আছে অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন, কপার, জিঙ্ক, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সালফার, আয়রন ইত্যাদি। |
জৈবিক বৈশিষ্ট্য | প্রোটোপ্লাজম বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনায় সাড়া দেয়। খাদ্য তৈরি, খাদ্য হজম, আত্তীকরণ, শ্বসন, বৃদ্ধি, জনন ইত্যাদি সকল মেটাবলিক কার্যকলাপ প্রোটোপ্লাজম করে থাকে। প্রোটোপ্লাজমের জৈবিক বৈশিষ্ট্যই জীবের বৈশিষ্ট্য। অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় প্রোটোপ্লাজম পানি গ্রহণ ও ত্যাগ করতে পারে। এদেরও মৃত্যু ঘটে। |
প্রোটোপ্লাজমের চলন
চলন | চলন প্রকৃতি | উদাহরণ |
একমুখী আবর্তন | যে চলনে প্রোটোপ্লাজম একটি গহ্বরকে কেন্দ্র করে কোষপ্রাচীরের(Cell Wall) পাশ দিয়ে নির্দিষ্ট একদিকে ঘুরতে থাকে তাকে একমুখী আবর্তন বলে। | পাতা ঝাঁঝির কোষস্থ প্রোটোপ্লাজম চলন। |
বহুমুখী আবর্তন | যে চলনে প্রোটোপ্লাজম কতগুলো গহ্বরকে কেন্দ্র করে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন দিকে ঘুরে তখন তাকে বহুমুখী আবর্তন বলে। | Tradescantia-র কোষস্থ প্রোটোপ্লাজম চলন। |
কোষঝিল্লি (Cell Membrane)
- কোষঝিল্লি কী : কোষঝিল্লি হলো কোষকে ঘিরে রাখা দেওয়ালের মতো। তবে এই দেওয়াল সজীব। এর কাজ হলো :
- প্রতিরক্ষামূলক (Defensive) :
- এটি কোষীয় সব বস্তকে ঘিরে রাখে।
- বাইরের প্রতিকূল অবস্থা হতে অভ্যন্তরীণ বস্তুকে রক্ষা করে।
- কোষঝিল্লিটি একটি কাঠামো হিসেবে কাজ করে যাতে বিশেষ এনজাইম এতে বিন্যস্ত থাকতে পরে।
- আদান-প্রদানমূলক (Communicative) :
- কোষঝিল্লির মধ্য দিয়ে বস্তুর স্থানান্তর, ব্যাপন নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় (control and coordinate) হয়।
- ভেতর থেকে বাইরে এবং বাইরে থেকে ভেতরে বস্তু স্থানান্তর করে।
- বিভিন্ন রকম তথ্যের ভিত্তি (information source) হিসেবে কাজ করে।
- ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কঠিন ও পিনোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় তরল বস্তু গ্রহণ করে।
- এনজাইম ও অ্যান্টিজেন ক্ষরণ করে।
- কোষের বাইরে থেকে নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন ইত্যাদি রূপে তথ্য সংরহ করে।
- স্নায়ু উদ্দীপনা সংবহন করে।
- সংশ্লেষণমূলক (Synthetic):
- ঝিল্লিটি একটি কাঠামো হিসেবে কাজ করে যাতে বিশেষ এনজাইম এতে বিন্যস্ত থাকতে পারে।
- পারস্পরিক বন্ধন, বৃদ্ধি ও চলন ইত্যাদি কাজেও এর ভূমিকা আছে।
স্যান্ডউইচ মডেল
- প্রবক্তা : Danielli Davson
- বর্ণনা : তাঁদের মতে কোষঝিল্লি দ্বিস্তরবিশিষ্ট এবং প্রতি স্তরে প্রোটিন (monomolecular) এবং লিপিড (bimolecular) উপ-স্তর আছে।
ইউনিট মেম্বব্রেন
- প্রবক্তা: রবার্টসন
- বর্ণনা : সব বায়োলজিক্যাল মেমব্রেনের আণবিক গঠন একই প্রকার অর্থাৎ ফসফোলিপিড বাইলেয়ার দিয়ে গঠিত যার স্থানে স্থানে প্রোটিন গ্রোথিত থাকে। স্থানে স্থানে গ্রোথিত প্রোটিনসহ ফসফোলিপিড বাইলেয়ারকে কখনো কখনো ইউনিট মেমব্রেন বলা হয়। অন্যভাবে, প্লাজমামেমব্রেনসহ সকল কোষীয় অঙ্গাণুর আবরণী মেমব্রেনই হলো ইউনিট মেমব্রেন।
ফ্লুইড মোজাইক মডেল
- প্রবক্তা: এস.জে সিঙ্গার, জি. এল নিকোলাস
- বর্ণনা : এ মডেল অনুযায়ী কোষঝিল্লি দ্বিস্তরবিশিষ্ট। প্রতিটি স্তর ফসফোলিপিড দিয়ে গঠিত। উভয় স্তরের হাইড্রোকার্বন লেজটি সামনাসামনি (মুখোমুখী) থাকে এবং পানিগ্রাহী বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে।
(ক) ফসফোলিপিড বাইলেয়ার : এটি দুই স্তরবিশিষ্ট ফসফোলিপি অণু দিয়ে তৈরি।
(খ) মেমব্রেন প্রোটিন : কোষঝিল্লিতে তিন ধরনের প্রোটিন শনাক্ত করা হয়েছে। যেমন :
- (i) ইন্টিগ্রাল প্রোটিন – এগুলো ঝিল্লির উভয় সার্ফেস পর্যন্ত ব্যপ্ত থাকে।
- (ii) পেরিফেরাল প্রোটিন – এগুলো ঝিল্লির সার্ফেসে থাকে।
- (iii) লিপিড সম্পৃক্ত প্রোটিন – এগুলো লিপিড কোর এ সম্পৃক্ত থাকে। মেমব্রেনে অবস্থিত প্রোটিনই মেমব্রেন প্রোটিন।
(গ) গ্লাইকোক্যালিক্স : এটি ঝিল্লির ওপর একটি চিনির স্তর বিশেষ।
(ঘ) কোলেস্টেরল : এটি লিপিড জাতীয় পদার্থ। ফসফোলিপিড অণুর ফাঁকে ফাঁকে এগুলো অবস্থান করে।