ইন্টারকাইনেসিস ও ক্রসিং ওভার | Interkinesis and Crossing Over
ইন্টারকাইনেসিস (Interkinesis)
মায়োসিস প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াসের প্রথম ও দ্বিতীয় বিভক্তির অন্তর্বর্তীকালীন বা মধ্যবর্তী সময়কে ইন্টারকাইনেসিস বলে (Interkinesis)। এ সময়ে প্রয়োজনীয় RNA, প্রোটিন ইত্যাদি সংশ্লেষিত হয়। DNA-র প্রতিরূপ সৃষ্টি হয় না।
মায়োসিস-২
মায়োসিস-২ এর প্রধান তাৎপর্য হলো দুটি কোষ হতে চারটি কোষের উৎপত্তি। এটি মূলত মাইটোসিস বিভাজন।
প্রোফেজ-২
- জলবিয়োজনের ফলে ক্রোমোসোমগুলো পুনরায় সংকুচিত হয়।
- এ পর্যায়ের শেষ দিকে নিউক্লিয়োলাস ও নিউক্লিয়ার এনভেলপ-এর বিলুপ্তি ঘটে বা অদৃশ্য হয়ে যায়।
মেটাফেজ-২
- এ পর্যায়ে স্পিন্ডল যন্ত্র সৃষ্টি হয় এবং ক্রোমোসোমগুলো বিষুবীয় অঞ্চলে এসে অবস্থান করে এবং ট্র্যাকশন ফাইবারের সাথে যুক্ত হয়।
- শেষ পর্যায়ে সেন্ট্রোমিয়ার একেবারে বিভক্ত হয়ে যায়।
অ্যানাফেজ-২
- ট্র্যাকশন ফাইবারের সংকোচন ও কাণ্ডদেহের সম্প্রসারণের মাধ্যমে ক্রোমাটিডগুলো ধীরে ধীরে বিপরীত মেরুতে পৌছায়।
- মেরুমুখী চলনকালে সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমাটিডগুলোকে V, L, J এবং I আকৃতির দেখায়।
টেলোফেজ-২
- মেরুতে ক্রোমাটিড তথা ক্রমোসোমগুলো স্থির হয় এবং এদের চারদিকে নিউক্লিয়ার এনভেলপের আবির্ভাব ঘটে এবং স্যাট ক্রমোসোমে নিউক্লিয়োলাস সৃষ্টি হয়; ফলে দুটি পৃথক নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়।
সাইটোকাইনেসিস-২:
দুটি নিউক্লিয়াসের মাঝখানে কোষঝিল্লি এবং উদ্ভিদ কোষে কোষঝিল্লি ছাড়াও কোষপ্রাচীর গঠন হয় এবং সাইটোপ্লাজম বিভক্ত হয় অর্থাৎ প্রত্যেকটি নিউক্লিয়াস তার চারপাশে সাইটোপ্লাজম, কোষঝিল্লি ও কোষপ্রাচীর সহযোগে একটি স্বতন্ত্র কোষে পরিণত হয়।
ক্রসিং ওভার (Crossing Over)
মায়োসিস-১ এর প্যাকাইটিন উপ-পর্যায়ে এক জোড়া সমসংস্থ ক্রোমোসোমের দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিড-এর মধ্যে বিনিময় হওয়াকে ক্রসিং ওভার বলে। ক্রসিং ওভারের ফলে ক্রোমোসোমের জিনসমূহের মূল বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটে এবং লিঙ্কড জিনসমূহের মধ্যে নতুন সমন্বয় (combination) তৈরি হয়।
ক্রসিং ওভারের কৌশল :
- প্রথমে দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিড একই স্থান বরাবর ভেঙে যায় (Endonuclease এনজাইম এর কারণে)
- পরে একটি সাথে অপরটির অন্য অংশ পুনরায় জোড়া লাগে ligase এনজাইমের প্রভাবে। ফলে কায়াজমা (X আকৃতি) সৃষ্টি হয়।
- শেষ পর্যায়ে প্রান্তীয়করণের মাধ্যমে ক্রোমাটিডের বিনিময় শেষ হয়। ক্রসিং ওভারের ফলে ক্রোমাটিডের মধ্যে অংশের বিনিময় ঘটে, সাথে সাথে জিনেরও বিনিময় ঘটে (যেহেতু জিন ক্রোমোসোমেই বিন্যস্ত থাকে)। জিন-এর বিনিময়ের ফলে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিনিময় হয়, ফলে জীবে চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটে।
ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব বা তাৎপর্য :
কিছু সংখ্যক নিম্নশ্রেণির জীব ছাড়া সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে ক্রসিং ওভার ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব নিচে উল্লেখ করা হলো :
- ক্রসিং ওভারের ফলে দুটি ক্রোমাটিডের মধ্যে অংশের বিনিময় ঘটে, ফলে জিনগত পরিবর্তন সাধিত হয়।
- জিনগত পরিবর্তন সাধনের ফলে সৃষ্ট জীবে বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন সাধিত হয়।
- বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টিকুলে আসে বৈচিত্র্য, সৃষ্টি হয় নতুন পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা, আবার কখনো সৃষ্টি হয় নতুন প্রজাতি।
- ক্রসিং ওভারের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নত বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট নতুন প্রকরণ সৃষ্টি করা যায়। এভাবেই ফসলি উদ্ভিদের ক্রমাগত উন্নতি সাধন করা হয়।
- কৃত্রিম উপায়ে ক্রসিং ওভার ঘটিয়ে বংশগতিতে পরিবর্তন আনা সম্ভব। কাজেই প্রজননবিদ্যায় ক্রসিং ওভারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
- গবেষণার ক্ষেত্রেও ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, ক্রোমোসোমে জিনের রেখাকার বিন্যাস প্রমাণে বা ক্রোমোসোম ম্যাপিং-এ ক্রসিং ওভার বৈশিষ্ট্য ব্যবহৃত হয়।
- জেনেটিক ম্যাপ তৈরি করা ও ক্রোমোসোমে জিনের অবস্থান নির্ণয়।