চৌম্বকত্ব, তড়িৎ চৌম্বক | Magnetism, Electromagnetism
চৌম্বকত্ব, তড়িৎ চৌম্বক এর আলোচনা:
- যে সকল বস্তু চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি করে ফলে অন্য একটি চুম্বক বা চৌম্বক পদার্থের অপর বল প্রয়োগ করে , তাদের চুম্বক বলে।
- চুম্বকের আকর্ষণী ও দিক নির্দেশক ধর্মকে এর চৌম্বকত্ব বলে।
- চৌম্বকত্ব চুম্বকের একটি ভৌত ধর্ম।
- চুম্বকের মেরু অঞ্চলে অর্থাৎ দুই মেরুতে আকর্ষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। পৃথিবী একটি বিরাট চুম্বক। এ কারণে চুম্বক সবসময় উত্তর–দক্ষিণ বরাবর অবস্থান করে।
- আধুনিক সভ্যতায় চুম্বকের অস্তিত্ব প্রায় সবখানেই দেখা যায়। যেমন: তড়িৎ উৎপাদক যন্ত্রে, ট্রান্সফর্মার, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি ইত্যাদিতে।
- চুম্বক, চৌম্বক ও অচৌম্বক পদার্থ- চৌম্বক ধর্ম অনুযায়ী পদার্থকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
- যে সকল পদার্থ চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয় এবং যাদেরকে চুম্বকে পরিণত করা যায়, তাদের চৌম্বক পদার্থ বলে। উদাহরণ– নিকেল, লোহা, কোবাল্ট ইত্যাদি।
- যে সকল পদার্থ কোন চুম্বক পদার্থ দ্বারা আকর্ষিত হয় না, কিংবা যেসব পদার্থকে চুম্বকে পরিণত করা যায় না, ঐ সকল পদার্থকে অচৌম্বক পদার্থ বলে। উদাহরণ– তামা, পিতল, সোনা ইত্যাদি।
- চুম্বক মূলত দুই প্রকার ১) প্রাকৃতিক চুম্বক ও ২) কৃত্রিম চুম্বক।
- খনিতে যে সকল চুম্বক পাওয়া যায় তাদের প্রাকৃতিক চুম্বক বলে । প্রাকৃতিক চুম্বকের চুম্বকত্ব স্থায়ী, কিন্তু শক্তিশালী হয় না । বর্তমানকালে প্রাকৃতিক চুম্বকের ব্যবহার নেই বললেই চলে । অতীতে প্রাকৃতিক চুম্বককে লোড স্টোন বা সন্ধানী পাথর বলা হত কারণ এর দ্বারা নাবিকেরা দিক নির্ণয় করতে পারতেন। প্রাকৃতিক চুম্বক মধ্য এশিয়া, সাইবেরিয়া, কানাডা, স্ক্যান্ডিনেভিয়া ইত্যাদি স্থানে পাওয়া যায় ।
- লোহা, ইস্পাত, নিকেল, কোবাল্ট প্রভৃতি চৌম্বক পদার্থকে বিশেষ উপায়ে চুম্বকে পরিণত করা হলে তাকে কৃত্রিম চুম্বক বলে।
- শিল্প ও বৈজ্ঞানিক কাজে কৃত্রিম চুম্বক ব্যবহার করা হয়। কৃত্রিম চুম্বক বিভিন্ন আকারের হতে পারে, যেমন: দণ্ড চুম্বক, অশ্বখুরাকৃতি বা U আকৃতির চুম্বক, শলাকা চুম্বক, তাড়িতচুম্বক ইত্যাদি ।
- কৃত্রিম চুম্বক মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়–১. স্থায়ী চুম্বক ও ২. অস্থায়ী চুম্বক।
- অস্থায়ী চুম্বক: চৌম্বক পদার্থকে কোন চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে আনলে সেটি চুম্বকে পরিণত হয়। চৌম্বকক্ষেত্রটি অপসারিত হওয়ার সাথে সাথে যে কৃত্রিম চুম্বকের চুম্বকত্ব বিলুপ্ত হয় তাকে অস্থায়ী চুম্বক বলে । সাধারণত কাঁচা লোহা, নিকেল, লোহার সংকর ধাতু পারমালয় (Permalloy) অস্থায়ী চুম্বক তৈরি করে। মোটর, জেনারেটর, ট্রান্সফর্মার প্রভৃতি তৈরিতে অস্থায়ী চৌম্বক পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
- স্থায়ী বা কঠিন চুম্বক: চৌম্বকক্ষেত্র অপসারিত হলেও যে কৃত্রিম চুম্বকের চুম্বকত্ব সহজে বিলুপ্ত হয় না, তাকে স্থায়ী চুম্বক বলে। লোহার মধ্যে ০.৮% এর বেশি কার্বন থাকলে তা স্থায়ী চুম্বক তৈরি করে। লোহা, নিকেল, কোবাল্ট, তামা প্রভৃতির মিশ্রণ দিয়ে বর্তমানে শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বক তৈরি করা হচ্ছে।
- সবচেয়ে শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বক হচ্ছে নিয়োডিমিয়াম বোরন আয়রন।
- স্থায়ী চুম্বক দুই ধরনের – সংকর চুম্বক ও সিরামিক চুম্বক।
- টেপ রেকর্ডার ও কম্পিউটার স্মৃতির ফিতায় এ সিরামিক চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
- ক্যাসেটের ফিতায় ক্রোমিয়াম অক্সাইড (CrO_2) ব্যবহার করা হয়।
- এলনিকো (Alnico) সংকর যা লোহা, নিকেল, কোবাল্ট, তামা এবং অ্যালুমিনিয়ামের মিশ্রণে তৈরি শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বক।
- লোহা, ইস্পাত, কোবাল্ট, নিকেল প্রভৃতি ধাতু চৌম্বক পদার্থ। সাধারণত লোহা, লোহার যৌগ এবং সেসব সংকর ধাতু যেগুলোতে লোহা বা ইস্পাত আছে এবং নিকেল ও কোবাল্ট চৌম্বক পদার্থ।
- সোনা, রূপা, তামা, পিতল, অ্যালুমিনিয়াম, দস্তা, টিন ইত্যাদি ধাতুকে চুম্বক আকর্ষণ করে না – এরা অচৌম্বক পদার্থ। বেশির ভাগ অধাতু যেমন – কাঠ, কাচ, কাগজ, প্লাস্টিক, রাবার ইত্যাদি অচৌম্বক পদার্থ।
- যে সকল পদার্থকে চৌম্বক ক্ষেত্রে স্থাপন করলে চুম্বকায়নকারী ক্ষেত্রের দিকে সামান্য চুম্বকত্ব লাভ করে তাদেরকে প্যারাচৌম্বক পদার্থ বলে । যেমন: প্লাটিনাম, অ্যালুমিনিয়াম, ক্রোমিয়াম, তরল অক্সিজেন, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি।
- যে সকল পদার্থকে চৌম্বক ক্ষেত্রে স্থাপন করলে চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে পদার্থের পরমাণুর ইলেকট্রনের ঘূর্ণন সামান্য প্রভাবিত হয় এবং এ সকল পদার্থ সামান্য চুম্বকত্ব লাভ করে তাদেরকে ডায়াচৌম্বক পদার্থ বলে । যেমন : বিসমাথ, তামা, পারদ, সীসা ইত্যাদি।
- যে সকল পদার্থকে চৌম্বক ক্ষেত্রে স্থাপন করলে চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে পদার্থের পরমাণুর ইলেকট্রনের ঘূর্ণন সামান্য প্রভাবিত হয় এবং এ সকল পদার্থ সামান্য চুম্বকত্ব লাভ করে তাদেরকে ডায়াচৌম্বক পদার্থ বলে। যেমন : বিসমাথ, তামা, পারদ, সীসা ইত্যাদি।
- কোনো একটি চুম্বককে বারবার বিভাজন করলে যে ক্ষুদ্রতম বিভাজিত অংশ পাওয়া যায়, সেটিও একটি ক্ষুদ্র চুম্বক। এইরূপ চুম্বককে অণুচুম্বক বলে। বিজ্ঞানী ওয়েবারের নাম অনুসারে এই অণুচুম্বকগুলিকে ওয়েবারের উপাদান বলা হয়।
- চুম্বকের মেরুশক্তির একক হল: অ্যাম্পিয়ার–মিটার (A-m)। Magnetic length = 0.84 × physical length
- ক্যুরি তাপমাত্রা বা ক্যুরি বিন্দু (ক্যুরি পয়েন্ট) হলো সেই তাপমাত্রা, যার উপরে চুম্বক পদার্থের চুম্বকত্ব লোপ পায়। পিয়েরে ক্যুরির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে।
- লোহার ক্যুরি তাপমাত্রা ৭৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
- ভূ–চুম্বকের উত্তর মেরু ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু থেকে 2200 কিমি পূর্বে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের দক্ষিণে ভিক্টোরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত।
- চৌম্বক বলরেখা ধর্ম আবিষ্কার করেন মাইকেল ফ্যারাডে।
- ভূ–চুম্বকের সীমা ৬৫,০০০ কিলোমিটার বা ৪০,০০০ মাইল।
- স্ট্যালয় হচ্ছে লোহা ও ১৫–৯০% সিলিকনের মিশ্রণে তৈরি চুম্বক।
- ভূ-চুম্বকের উত্তর মেরুকে নীল মেরু (blue pole) এবং দক্ষিণ মেরুকে লাল মেরু (red pole) বলা হয় ।
- ১৮১৯ সালে ওরস্টেড সর্বপ্রথম তড়িৎ চুম্বকের ধারণা দেন।
- ১৮৩১সালে বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের ধারণা দেন। ডায়নামো, মোটর, ট্রান্সফর্মার ইত্যাদি তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের ধারণা থেকে তৈরি।
- তড়িৎ পরিবাহী কুন্ডলীকে মুখ্য কুন্ডলী ও যে তারের কুন্ডলীতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক প্রবাহ উৎপন্ন হয়, তাকে গৌণ কুন্ডলী বলে।